আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বছরে বা এক-একটা সময় মোহনবাগানের অবস্থাও এখনকার জোসে মলিনার টিমের মতো হত। শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে হেরে যেতাম বা ড্র করতাম আমরা। সেই রোগটা সারাতে বারবার ডিফেন্ডারদের সঙ্গে তখন কথা বলতাম। অনুশীলনে ভুলগুলো ধরিয়ে দিতাম। তাতে অনেক কাজ হয়েছিল। সুফলও পেয়েছিলাম পরে। আটলেটিকো দে কলকাতাও এখন সেই রোগে আক্রান্ত। মলিনা বুদ্ধিমান কোচ। নিশ্চয়ই টিমের রক্ষণ নিয়ে অন্য রকম ভাবনাচিন্তা করছেন। অর্ণব-সেরেনো-প্রীতমদের ভুলত্রুটি নিশ্চয়ই ধরিয়ে দেবেন বা দিচ্ছেন তিনি। যা খুব জরুরি জামব্রোতার টিমের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলার সময়। তা না হলে কিন্তু বিপদে পড়বে কলকাতা।
আইএসএলে জিকো, মাতেরাজ্জি বা হাবাস—দু’বছর কোচিং করিয়ে ফেলেছেন। তাঁদের অভিজ্ঞতা হয়ে গিয়েছে আইএসএল সম্পর্কে। কিন্তু ইতালির হয়ে বিশ্বকাপ জেতা জামব্রোতা এ বারই প্রথম এখানে এসেছেন কোচিং করতে। ওঁর টিমের কিছু খেলা দেখেছি। এবং আমার মনে হয়েছে এ বারের টুনার্মেন্টে দিল্লি-ই সবথেকে ধারালো টিম। শুধু লিগ শীর্ষে থাকার জন্যই নয় বা পরপর জিতছে বলেই নয়, টিমটার দলগত সংহতি দেখার মতো। সত্যি বলতে কী, এখনও পর্যন্ত জামব্রোতার টিমকেই দেখাচ্ছে চ্যাম্পিয়নের মতোই ঝকঝকে। সৌভিক-কেন লুইসদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কথা হয় আমার। ওরা বলছিল, জামব্রোতা নাকি ওদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশে গেছেন। শুনলাম, এক সময়ের বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুলব্যাক হলেও ও নাকি ফুটবলারদের ধরে ধরে ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেন। যে টোটকাটা দিল্লিকে আরও সংহতি ও একাত্মতায় বেঁধেছে বলেই আমার মনে হচ্ছে। সে জন্যই হয়তো মার্সেলো, গাদজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কেন লুইসও গোল করছে। আনাস দু’টো ম্যাচে সেরা হয়েছে। আমি সৌভিককে মাঝমাঠে খেলাতাম বাগানে। জামব্রোতা দেখলাম ওকে সাইডব্যাক করে দিয়েছে। বেশ ভালই খেলছে ছেলেটা। এ সবই তো একজন কোচের মগজাস্ত্র প্রয়োগের লক্ষণ।
সনি নর্ডি বা কাতসুমিরা এখনও পর্যন্ত যা করতে পারেনি তা করে ফেলেছে কেন লুইস। তিন-তিনটে গোল। আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি এ বার যত মার্কি ফুটবলার খেলছে, তাদের মধ্যে মালুদাকে আমার সবথেকে ফিট মনে হচ্ছে। ও দিল্লি টিমটার পিভট। গতবারের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাইয়ানকে চার গোল দেওয়ার দিনে দিল্লির দু’টো গোলই তো ছিল মালুদার।
নিজেদের মাঠে কয়েকদিন আগে এই দিল্লিকেই হারিয়েছিল এটিকে। কিন্তু বাইরের মাঠে গিয়ে সেই ফলই হবে এটা বলা যায় না। লিখতে বাধ্য হচ্ছি, কলকাতার রক্ষণ কিন্তু এখনও সে ভাবে দানা বাঁধতে পারেনি। ডিফেন্সিভ ব্লকার হিসেবে বোরহাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই স্প্যানিশ ফুটবলার কিন্তু একেবারেই খেলতে পারছে না। অর্ণব-তিরি বা অর্ণব-সেরেনো কেউই এখনও নিজেদের মধ্যে সমঝোতা তৈরি করতে পারেনি। প্রীতমও নিজের খেলাটা খেলতে পারছে না। এটা কিন্তু আশঙ্কার। একসঙ্গে সবাই খারাপ খেললে সমস্যায় তো পড়তে হবেই। ছ’টা খেলা বাকি রয়েছে এখনও। একটু অঙ্ক করে খেললে কলকাতা শেষ চারে যাবেই। সমস্যা হবে না। তবে প্রতিদিনই নানা অপ্রত্যাশিত ফল হচ্ছে টুনার্মেন্টে। তাই ঝুঁকি না নিয়ে দ্রুত পয়েন্ট তুলে নিতে হবে কলকাতাকে। আমার নিজের ধারণা, মলিনা এক পয়েন্টের জন্য খেলবেন আজ। তবে ওটা মাথায় নিয়ে হিউমরা নামলে কিন্তু ডুবতে হবে। পস্টিগা ফিরে আসায় কলকাতার গোল করার লোক বেড়েছে। তবে জাভি লারাকে কেন বসিয়ে রাখছেন মলিনা তা বুঝতে পারছি না। সেট পিসে ছেলেটা ভাল। এ রকম একজনকে টিমে সবসময় দরকার হয়।
এ বারের আইএসএল এখনও সে ভাবে জমে ওঠেনি। তবে তা ক্রমশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে বলেই মনে হয়। কারণ শুরুতে যে টিমগুলোর খেলা দেখে মনে হচ্ছিল এরাই হয়তো শেষ চারে যাবে, এখন মনে হচ্ছে শেষ পর্যন্ত হয়তো অনেক হিসাব উল্টে যেতে পারে। কলকাতাকে তাই সতর্ক থাকতে হবে দিল্লির বিরুদ্ধে। পয়েন্ট তুলে আনতে হবেই। পুণের কাছে হারের পর এটাই এখন চ্যালেঞ্জ মলিনার সামনে।
আজ আইএসএলে
এটিকে বনাম দিল্লি ডায়নামোস
(স্টার স্পোর্টস ২, সন্ধে ৭-০০)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy