Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Yashpal Sharma

Yashpal Sharma Death: বিশ্বাসই করতে পারছি না, কাঁদতে কাঁদতে বলল কপিল

কপিলদের ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলের প্রথম এক সদস্য না-ফেরার দেশে চলে গেল। সেই নামটা যে যশপালের হবে, তা কখনওই ভাবতে পারিনি।

স্মরণীয়: হার-না-মানা ব্যাটিংয়ের জন্য পরিচিত ছিলেন যশপাল।

স্মরণীয়: হার-না-মানা ব্যাটিংয়ের জন্য পরিচিত ছিলেন যশপাল। ছবি টুইটার।

অশোক মলহোত্র
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২১ ০৭:১১
Share: Save:

কপিলের ফোনটা পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। মঙ্গলবারের সকালে এ কী খবর পেলাম! আমাদের প্রিয় বন্ধু যশপাল শর্মা আর নেই! খবরটা দিতে গিয়ে কেঁদেই ফেলল কপিল। বলছিল, ‘‘বিশ্বাস করতে পারছি না। গত কালই আমার সঙ্গে কথা হয়েছে। একেবারে ভাল ছিল। কী থেকে কী হয়ে গেল...!’’

সত্যিই, বিশ্বাস না হওয়ার মতোই। কপিলদের ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলের প্রথম এক সদস্য না-ফেরার দেশে চলে গেল। সেই নামটা যে যশপালের হবে, তা কখনওই ভাবতে পারিনি। আমাদের বয়সি যে সব প্রাক্তন ক্রিকেটার আছে, তাদের মধ্যে যশপালই সম্ভবত সব চেয়ে ফিট ছিল। নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত শারীরচর্চা করত। রোজ সকালে হাঁটতে বেরোত। এই তো মাস ছয়েক আগে দিল্লিতে দেখা হয়েছিল। আমাকে বলল, ‘শরীরটাকে ঠিক রাখো। রোজ সকালে হাঁটতে বেরোও।’ অথচ ওই কি না চলে গেল! কপিল বলছিল, নয়ডাতে নতুন বাড়ি কিনেছে। সেখানে কয়েক দিনের মধ্যে যাওয়ার কথা ছিল। সেই বাড়িতে আর যাওয়া হল না যশপালের।

সেই কবে থেকে যশপালকে চিনি। কোচবিহার ট্রফি থেকে খেলা শুরু করেছিলাম। সেই ১৯৭২ সালে। ও পঞ্জাবের হয়ে খেলত। আমি হরিয়ানার। তখন পঞ্জাব আর হরিয়ানার মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি সব ম্যাচ হত। মনে আছে, ওই বছর প্রথম ম্যাচেই আমাদের বিরুদ্ধে একটা ছেলে সেঞ্চুরি করেছিল। তখন পঞ্জাব-হরিয়ানা— দুটো দল একটাই বাসে যাতায়াত করত। বাসে উঠে দেখি, ওই ছেলেটা বসে বসে আপেল খাচ্ছে। সবাই বলাবলি করছিল, দেখ প্রথম ম্যাচেই সেঞ্চুরি করে
দিল যশপাল।

সেই শুরু। কখনও প্রতিদ্বন্দ্বী দলে, কখনও একসঙ্গে খেলে গিয়েছি। দারুণ বন্ধুত্বও গড়ে উঠেছিল দু’জনের। এমনকি, আমরা দু’জনে জাতীয় নির্বাচকও হয়েছিলাম। আমি আগে, ও পরে। মনে আছে, কখনও কখনও দিল্লিতে একটা ম্যাচ খেলে ট্রেনে উঠে লখনউ চলে যেতাম আর একটা ম্যাচ খেলতে। খেলে পরের দিন ফেরা। ওর মতো আমুদে, মজা করতে পারা ছেলে খুব কমই ছিল। আমরা কত সিনেমা দেখেছি একসঙ্গে। দিলীপ কুমারের সিনেমা খুবই ভালবাসত ও।

যশপাল শর্মাকে বেশির ভাগ লোক মনে রাখবে কপিলের ভারতের হয়ে ১৯৮৩ সালে বিশ্বকাপ জয়ের জন্য। কিন্তু যশপাল এতেই শেষ হয়ে যায় না। ওর লড়াই, ওর সাহস, দেশের প্রতি ওর ভালবাসা বোঝার জন্য বিশ্বকাপের আগে ১৯৮৩ সালের সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরটার দিকে চোখ ফেলতেই হবে। যে দলে আমিও ছিলাম এক সদস্য।

আমার আগেই ভারতের জার্সিতে খেলা শুরু করেছিল যশপাল। আমার টেস্ট অভিষেক হয় ১৯৮২ সালে, চেন্নাইয়ে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। আর সেই টেস্টেই ১৪০ রানের ইনিংস খেলেছিল বন্ধু যশপাল। তার পরেই সেই ক্যারিবিয়ান সফর। সেখানেই দেখেছিলাম, কী ধাতুতে তৈরি ও।

সাবাইনা পার্কে খেলতে নেমেছিল ম্যালকম মার্শাল, অ্যান্ডি রবার্টস, মাইকেল হোল্ডিং আর জোয়েল গার্নারের বিরুদ্ধে। মার্শালের বলে মাথায় চোট পেয়ে ওকে বেরিয়ে আসতে হয়। কিন্তু তার পরে ফিরে গিয়ে দুরন্ত হাফসেঞ্চুরি করেছিল। পরে ফিরে এসে ড্রেসিংরুমে জামা খুলে দেখায়, কী ভাবে মার্শালদের বিষাক্ত বাউন্সারে পাঁজরের কাছে লাল ছোপ ছোপ দাগ হয়ে গিয়েছে!

এর পরে বিশ্বকাপ। ইংল্যান্ডের মাটিতে ঐতিহাসিক বিশ্বকাপ জয়ের কথা বললেই সবার মনে পড়ে যায় কপিলের সেই ১৭৫ রান, কী ফাইনালে ভিভ রিচার্ডসের সেই অসাধারণ ক্যাচ ধরা। বা সেমিফাইনাল, ফাইনালে মোহিন্দর অমরনাথের ম্যান অব দ্য ম্যাচ হওয়া। কিন্তু ক’জন জানে প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভয়ঙ্কর বোলিং আক্রমণ সামলে যশপালের ম্যাচ জেতানো ৮৯ রানের কথা? ওই ইনিংসটা দলের মধ্যে বিশ্বাস এনে দিয়েছিল, আমরাও পারি। এর পরে সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৬১ রানের সেই ইনিংস। ওই ছিল নেপথ্যের নায়ক।

যশপালকে আমারা বলতাম ‘সঙ্কটমোচন।’ যে কোনও সমস্যায় ও এগিয়ে আসত। আজ থেকে আর আসবে না।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy