ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের অভ্যন্তরীণ আকচাআকচি এ বার রাস্তায় নেমে এল! শুধু তাই নয়, শ্রীনি বনাম অনুরাগ লড়াই অন্য মাত্রা পেয়ে গেল পুরো ঘটনায় রাজনীতির রং লাগায়। গত রবিবার কলকাতায় বোর্ডের ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠকের পর প্রকাশ্যে অভিযোগ ওঠে বোর্ড সচিব অনুরাগ ঠাকুরের বিরুদ্ধে। বলা হয়, তিনি নাকি বুকির সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। আইসিসি যা নিয়ে বোর্ডকে চিঠিও দেয়। অনুরাগের সঙ্গে কর্ণ গিলহোত্র নামের ওই বুকির ছবি চ্যানেলে দেখানোও শুরু হয়ে যায়।
যার জবাব সোমবার অনুরাগ দিলেন সম্পূর্ণ অভাবনীয় ভাবে। ভারতীয় বোর্ডের ইতিহাসে যা কখনও দেখা যায়নি, সেটাই ঘটল। স্বয়ং বোর্ড সচিব আইসিসি চেয়ারম্যানকে আক্রমণ করে যে চিঠি লিখলেন, সেটাই আবার পাঠিয়ে দিলেন মিডিয়ায়! বললেন, কর্ণকে তিনি চেনেন অন্য ভাবে। তিনি বুকি কি না, সে বিষয়ে কোনও খবর অনুরাগের কাছে নেই। শুধু তাই নয়, নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের বিরুদ্ধে আরও বড় তোপ দাগলেন নবনিযুক্ত সচিব অনুরাগ। বলে দিলেন, সন্দেহভাজনদের ওই তালিকাটা যেন শ্রীনিবাসন নিজের পরিবারের সদস্যদেরও দিয়ে দেন, ‘বেটিংয়ের সঙ্গে যাদের যোগসূত্র ইতিমধ্যেই প্রমাণিত’। সন্দেহ নেই, এই মন্তব্য শ্রীনির জামাই গুরুনাথ মইয়াপ্পন সম্পর্কে করা। ২০১৩ সালে আইপিএলে স্পট-ফিক্সিং কাণ্ডে যিনি জড়িয়ে পড়েন। এ সব বিস্ফোরক মন্তব্যের পর শ্রীনি শুধু বলেছেন, মিডিয়া মারফত তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না। তাঁর যা বলার, অনুরাগ ঠাকুরকে ব্যক্তিগত ভাবে জানাবেন।
বোর্ডের একটা অংশ মনে করছে, সিএসকে-র ভ্যালুয়েশন কম করার মতোই এই চালটাও খুব ভুল দিলেন শ্রীনিবাসন। কারণ অনুরাগকে আক্রমণ করতে গিয়ে বিজেপি-কে পুরোপুরি বিরোধীপক্ষ বানিয়ে ফেললেন তিনি। এবং বিক্ষুব্ধের এই তালিকায় খুব সম্ভবত আছেন স্বয়ং অরুণ জেটলিও। রাজধানীর রাজনৈতিক মহলের খবর, বিষয়টি নিয়ে রাজনীতির পারদ চড়তে দেখে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির পরামর্শ নেন অনুরাগ। তার পরপরই শ্রীনিকে খোলা চিঠিটা লেখেন।
আইসিসি-র চিঠিকে কেন্দ্র করে এ দিন ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়ে কংগ্রেস। এই প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকে আক্রমণ করে তারা। এ দিন সংসদ ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করে কংগ্রেস মুখপাত্র সুস্মিতা দেব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, না তিনি ‘খাবেন’, না কাউকে ‘খেতে দেবেন’। অথচ বিজেপির এক তরুণ নেতা, যাঁকে প্রায়শই বিজেপি সভাপতির সঙ্গে দেখা যায়, তাঁর বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে।
আইসিসি-র চিঠির উত্তরে সেই ‘তরুণ নেতা’ এ দিন লেখেন যে, শ্রীনির নির্দেশেই আইসিসি ভারতীয় বোর্ডকে জানায়, সন্দেহভাজন বুকির সঙ্গে যেন সম্পর্ক না রাখেন অনুরাগ। তিনি লিখেছেন, ‘খুব ভাল হত যদি সন্দেহভাজনদের এই তালিকাটা আপনি আমাকে এবং আমার সহকর্মীদের জানিয়ে দিতেন। তা হলে আমরা এ রকম লোক চিনে তাদের থেকে দূরে থাকতে পারতাম।’ তিনি আরও জানিয়েছেন, পঞ্জাব এবং তার আশপাশের রাজ্যে রাজনৈতিক এবং ক্রিকেটীয় কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত গিলহোত্র। সেই সূত্রেই গিলহোত্রকে চেনেন তিনি। বুকি হিসেবে তাঁর কার্যকলাপের খবর তিনি রাখেন না।
আইসিসির চিঠিতে ছিল, তাদের তথ্যের ভিত্তিতে বোর্ডের দুর্নীতিদমন শাখার প্রধান রবি সওয়ানি সমস্ত ফ্র্যাঞ্চাইজিকে গিলহোত্র নিয়ে সতর্ক করে দেন। কিন্তু অনুরাগের ব্যাপারটা যেহেতু তাঁর নিজের ভালর জন্য, তাই তাঁকে যেন দ্রুত সচেতন করে দেওয়া হয়। অনুরাগের দাবি, শ্রীনির নির্দেশে আইসিসির এই প্রস্তাব প্রকাশ্য করা হয়। পাশাপাশি অনুরাগ এও বলছেন, বোর্ড সচিব হিসেবে তাঁর নিযুক্তি সহ্য করতে পারছেন না শ্রীনি। আর তাই তাঁকে পাল্টা আক্রমণ করছেন।
সব শেষে অনুরাগ লিখেছেন যে, যেহেতু আইসিসির প্রস্তাবটা প্রকাশ্যে আনা হয়েছে, তাই শ্রীনিকে লেখা এই চিঠিও তিনি জনসমক্ষে পেশ করছেন। সোশ্যাল মিডিয়া ও বোর্ডের সরকারি তালিকায় থাকা সংবাদমাধ্যমে চিঠিটা পাঠিয়ে দেওয়া হয় এ দিন বিকেলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy