আব্রাহাম বেঞ্জামিন ডে’ভিলিয়ার্সকে নিয়ে ভয়মিশ্রিত একটা শ্রদ্ধা তাঁর আছে বরাবর। দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানের নির্মম প্রহার সহ্য করেছেন মাঠে দাঁড়িয়ে, অসহায় ভাবে। আজও যদি কেউ জামাইকানকে জিজ্ঞেস করে কে তাঁর ব্যাটিং-মহাগুরু, ক্রিস গেইল বাদে যে নামটা সশ্রদ্ধ সম্মান-সহ বেরোবে সেটা এবি ডে’ভিলিয়ার্সের।
এবি ডে’ভিলিয়ার্সের ক্রিজের ব্যবহার তাঁকে আশ্চর্য করে। এবি ডে’ভিলিয়ার্সের শটগুলো তাঁকে বিস্ময়ে নিশ্চল করে দেয়। বাইশ গজে এবি ডে’ভিলিয়ার্সের ব্যাটিং দেখলে মনে হয়, আরে এ তো যাচ্ছেতাই কাণ্ডকারখানা ঘটিয়ে যাচ্ছে!
কিন্তু তার পরেও আন্দ্রে ডোয়েন রাসেল কিছুতেই টি-টোয়েন্টির এক নম্বর ব্যাটসম্যানের তাজ ‘দ্রোণাচার্য’ ডে’ভিলিয়ার্সকে দেবেন না। ওটা নিজের কাছেই রাখবেন! যতই মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে এবি-সংহার টিভিতে বসে দেখুন। যতই তাঁকে নিজেও সময়-সময় ‘অত্যাচারিত’ হতে হোক!
‘‘এবি না, ফর্মে থাকলে আমিই এক নম্বর। এটা মানতে অসুবিধে নেই যে এবি অসাধারণ। বিশ্বকাপের আগে একত্রিশ বলে একটা সেঞ্চুরি করেছিল আমাদের বিরুদ্ধে। যে দু’জনকে জীবনে আদর্শ মনে করি তাদের একজন এবি। ও যে ভাবে ক্রিজকে ব্যবহার করে সেটা আমিও শিখতে চাই। কিন্তু ও এক নম্বর, এটা বলতে পারব না। টি-টোয়েন্টিতে সেরা আমিই,’’ রবিবার সন্ধেয় কেকেআর টিম হোটেলের মিটিং রুমে শীতল হুঙ্কারটা দিচ্ছিলেন আন্দ্রে রাসেল। ক্রিস গেইল, কায়রন পোলার্ডদের যে টিপিক্যাল ক্যারিবিয়ান ঔদ্ধত্য নিয়ে বিচরণ করতে দেখে ক্রিকেট-বিশ্ব, সেটা কেকেআরের জামাইকানের মধ্যেও প্রবল বিদ্যমান। এবি-বিস্ফোরণে মুম্বই ছিন্নভিন্ন হওয়ায় যে কেকেআরের সুবিধে হল (এমনিই টিম আরও শক্তিশালী হচ্ছে সাকিব আল হাসান চলে আসছেন বলে), সেটা চিবিয়ে-চিবিয়ে বলবেন। আবার বোলাররা যে তাঁর কাছে পিপীলিকা-সম, বুঝিয়ে দেবেন প্রতি মুহূর্তে। শ্রেষ্ঠত্ব— সেটা নিয়েও সরব গর্জন তুলতে দেড় সেকেন্ড সময় নেবেন না আন্দ্রে রাসেল।
‘‘আরে, আমার ব্যাটিংয়ে কোনও দুর্বলতা আছে বলেই মনে হয় না! পরিষ্কার বলছি ভাই, আমার কোনও উইক জোন নেই। তাই বোলার নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করি না। ভাবি, ভুল শট যেন না মারি। আমার ব্যাটিংয়ের দর্শনটাও খুব সহজ। সি দ্য বল, হিট দ্য বল। দেখো আর চালাও! আর যদি বলটা নিজের জোনে না পাও, তা হলে এক রান নিয়ে ছেড়ে দাও। ব্যস,’’ বান্ধবীর দিকে এক ঝলক তাকিয়ে আনন্দবাজারকে বলে দেন রাসেল। সঙ্গে বুঝিয়ে দেন উনিশ বলে পঞ্চাশের ইনিংস যেমন বাইশ গজে আসে, তেমন বাইশ গজের বাইরেও আসে।
লোকে ইতিমধ্যেই তাঁকে বলতে শুরু করেছে কেকেআরের নতুন গেইল। পঞ্জাব কোচ বলছেন, আমাদের চিরকালীন ‘নেমেসিস’। কেউ কেউ অবাক হচ্ছেন ভেবে, যিনি কেকেআর জার্সিতে একের পর এক প্রতিপক্ষ ‘মার্ডার’ করে যাচ্ছেন, তিনি কী ভাবে চুপচাপ থাকেন দেশজ জার্সিতে? আর তিনি একা কেন? গেইল, পোলার্ড, ব্র্যাভোদের নিয়েও তো বড় টুর্নামেন্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রাপ্তির ব্যালান্স শিটে প্রায় শুধুই ব্যর্থতা।
কেন এটা হয়?
প্রথম দুই প্রসঙ্গ লজ্জায় ফেললে, এটা আন্দ্রে রাসেলকে কিছুটা বিব্রত করে গেল। ‘‘ভাল প্রশ্ন। আমি বলব, আমরা যখনই যেখানে খেলি, দেখাতে চেষ্টা করি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানদের পক্ষে কী করা সম্ভব। গেইল, পোলার্ড, আমি, সবাই সেটা বোঝাতে চাই। দেশের জার্সিতেও আমরা একই চেষ্টা করি,’’ বলে একটু থেমে আবার, ‘‘সত্যি বলতে, যে ইনিংসগুলো কেকেআরের জন্য খেলছি, সেগুলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য খেললে বেশি খুশি হতাম। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ জার্সি পরলে ওটা স্রেফ হয় না। আসলে ওখানে পরিবেশটা খুব ভাল নয়। ফ্রি থাকতে পারি না।’’
আইপিএলে যা হয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজে তার সিকিভাগও নয়— এটা যদি ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে আশ্চর্যের বিষয় হয়, তা হলে আশ্চর্যের ওখানেই শেষ নয়। আন্দ্রে রাসেল যদি দানবীয় ঠ্যাঙানিতে বোলার আধমরা করে দিতে পারেন, তা হলে সুরেলা কণ্ঠস্বরে শ্রোতাদের মুগ্ধও করতে পারেন! তাঁর ব্যাটিং ভিডিও বিপক্ষের রাতের ঘুম উড়িয়ে দিলে, গানের অ্যালবাম আবার লোককে সুরের মাদকতায় ঘুম পাড়িয়েও দেয়।
আন্দ্রে রাসেল শিল্পীও বটে!
‘‘গানের অ্যালবাম আছে, গানকে অনেক দূর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে আছে। তবে ক্রিকেট ছাড়ার পর। আপাতত চাই, লোকে আমার মাঠের রুদ্রমূর্তি বিশ্বাস করুক। কিন্তু ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার পর যদি আর ক্রিকেটে না ফিরি, তখন শুধুই গান নিয়ে থাকব,’’ বলে চলেন ক্যারিবিয়ান মহাতারকা। সঙ্গে নিজের আরও একটা স্বপ্নের কথা বলে ফেলেন। যা ঘটবে কলকাতায়, ঘটবে চব্বিশ মে কেকেআর চ্যাম্পিয়ন হলে। রাসেলের অবাক রূপান্তরও তখন নাকি দেখবে কলকাতা।
আন্দ্রে রাসেল কথা দিচ্ছেন, নিজের অ্যালবামের কয়েকটা গান সে দিন ইডেনকে গেয়ে শোনাবেন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy