ওয়ান ডে- র এই আগ্রহের মধ্যেও অশনি সঙ্কেত।
বিশ্বকাপের অভাবিত সাফল্য নিয়ে সংগঠকেরা ডগমগ। মেলবোর্নে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে এমসিজি উজাড় করে ভিড় হয়েছে। নিউজিল্যান্ডের প্রথম খেলায় মাঠ ভর্তি ছিল। অ্যাডিলেডে নাকি দশ হাজার লোক ফ্লাইটের টিকিট না পাওয়ায় এবং অন্যান্য কারণে টিকিট থেকেও মাঠে ঢুকতে পারেননি। তাতেও এই অবস্থা ছিল।
এমনকী রোববার ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের টিকিট বিক্রিও খুব ভাল। নিরপেক্ষ দেশের মাঠে খেলা হয়েও সত্তর হাজার লোক এমসিজিতে হয়ে যেতে পারে!
সংগঠকদের মধ্যে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া আপাতত ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের মাঠের বাইরের সব ভিডিও ফুটেজ দিয়ে ছোট ফিল্ম বানাচ্ছে। নিজস্ব ওয়েবসাইট এবং অন্যান্য প্রচারের জন্য তারা সেই ভিসুয়্যালগুলো ব্যবহার করবে।
এই অবধি পড়ে মনে হবে ওয়ান ডে ক্রিকেটের তা হলে পুনর্জন্ম ঘটল সেই দেশে যারা শুধু একদিনের ক্রিকেটের আবির্ভাব ম্যাচই দেখেনি, আধুনিক ক্রিকেটেরও জন্ম দিয়েছে প্যাকার-উদ্ভাবিত নানান আবিষ্কারের মধ্যে দিয়ে। এখানেই ফ্যালাসিটা।
বিশ্বকাপের তুমুল সাফল্যের পরেও তার অন্যতম সংগঠক ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার আশঙ্কা, একদিনের ক্রিকেটকে অন্তত তাদের দেশে নতুন করে গরিয়ান করা যাবে না। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার স্ট্র্যাটেজিক ম্যানেজার অ্যালেক্স ওয়াট বলছিলেন, এই বিশ্বকাপে বিজ্ঞাপন বেশি না করলেও তাঁরা স্ট্র্যাটেজিক কনজিউমার বেস-এ আবেদন করেছেন।
অস্ট্রেলীয় মহিলারা বেশি একদিনের ক্রিকেট দেখতে আসেন না। যেটা এক সময় খুব আসতেন। মহিলাদের আকৃষ্ট করার জন্য তাঁরা নানা উদ্ভাবনী বিজ্ঞাপন করছেন। যেমন অ্যাডিলেড ওভালের ধারে ব্রিজের ওপর পুরোটা ভারত-পাক সমর্থক ভরা ছবি দেখিয়ে ক্যাপশন করা হবে, রিয়াল বিশ্বপর্যায়ের স্পোর্ট। যা আবেগে আমাদের দেশে আমাদেরই পরাধীন করে দিচ্ছে। আমিরশাহি ক্রিকেটারদের ট্রেনিংয়ের ছবি দেখিয়ে বলা হবে, পুরো উপসাগরীয় অঞ্চলের সেন্টিমেন্ট জড়িত। দক্ষিণ আফ্রিকার মারমার-কাটকাট সাফল্য তুলে ধরে বলা হবে, ম্যান্ডেলা স্বয়ং চাইতেন আফ্রিকান স্পোর্ট ক্রিকেটের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করুক। এ দেশে ওয়ান ডে-র বিরুদ্ধে নাকি ইদানীং প্রচার হচ্ছে যে, ফালতু দেখতে ছয়-সাত ঘণ্টা যায়। আবার বিশ্বজনীন স্পোর্টও না। তা হলে দেখব কেন?
এই সমালোচনায় প্রভাবিত হয়ে অনেকে মাঠে আসা কমিয়ে দিয়েছেন। তাই অস্ট্রেলিয়ায় ইদানীং ওয়ান ডে সিরিজে ভিড়ই হচ্ছে না। অ্যালেক্স ওয়াটের অ্যাকাডেমিক রেকর্ড খুব ভাল। ক্রিকেটজীবনও সঙ্গে রয়েছে। রোডস স্কলার এবং একই সঙ্গে ভিক্টোরিয়া টিমে লেগস্পিনার হিসেবে শেন ওয়ার্নের ডেপুটি ছিলেন। অ্যালেক্স বলছিলেন, “ওয়ান ডে কাস্টমার বেস নিয়ে আমরা গভীর দুশ্চিন্তায় পড়েছি। টেস্ট ম্যাচে দর্শক আকর্ষণ করা প্রবলেম নয়। বক্সিং ডে টেস্ট ম্যাচে আজও সত্তর-আশি হাজার লোক হয়। বিগ ব্যাশে তো কথাই নেই। দিন-দিন আকর্ষণ বাড়ছে। এখন আমরা ভাবছি আরও টিম বাড়াব। কিন্তু ওয়ান ডে ক্রিকেটকে কিছুতেই লোকের মনে ফেরানো যাচ্ছে না। বিশ্বকাপ বিক্রি হচ্ছে দারুণ, কিন্তু সেটার ফল খারাপও হতে পারে, এর পর লোকে এতগুলো দেশের স্বাদ পেয়ে গিয়ে হয়তো দু’দেশীয় ক্রিকেট দেখতেই চাইবে না।”
শুনলাম অস্ট্রেলিয়ায় ওয়ান ডে ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে আগামী সোমবার বৈঠকে বসছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। সে দিন সম্ভবত আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে দেশে একদিনের ক্রিকেট আয়োজনের সংখ্যা বছরে একেবারে কমিয়ে আনার। কী অদ্ভুত বৈপরীত্য! অস্ট্রেলীয় মহাদেশে যখন গমগম করে ওয়ান ডে বিশ্বকাপ চলছে, তখনই কি না সিদ্ধান্ত হচ্ছে ওয়ান ডে চলছে না। ওটা যথাসম্ভব কমাও!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy