অক্ষর রাজেশভাই পটেল
ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম ব্যাটিং মহীরূহ যে তিনি, সেটা সর্বজনবিদিত। তাঁর ব্যাটিং ম্যানুয়ালও যে কোনও ক্রিকেটারের পক্ষে জীবদ্দশায় কপি-পেস্ট করা সম্ভব নয়, তাতেও আশ্চযের্র কিছু নেই।
কিন্তু বীরেন্দ্র সহবাগ তো এখন বোলারও তৈরি করে দিচ্ছেন! নেট থেকে ম্যাচ ভুলত্রুটি শুধরে দিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছেন ভারতীয় ড্রেসিংরুমের ঠিকানায়!
কাকে? কেন, অক্ষর পটেল! ভারতীয় ক্রিকেট সংসারের নতুন তারা বলে যাঁকে ধরা হচ্ছে।
বছরখানেক আগেও কেউ চিনত না গুজরাতের বাঁ-হাতি অলরাউন্ডারকে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স তাঁকে নিয়েছিল একটা সময়, কিন্তু তার পর বসিয়ে রেখেছিল পুরো একটা বছর। কিঙ্গস ইলেভেন পঞ্জাবে ঢোকার পর নিয়মিত মাঠে নামতে শুরু করেন, বোলিং থেকে ব্যাটিং দু’টোই ধরা পড়ে জাতীয় নির্বাচকদের অনুবীক্ষণ যন্ত্রে, সেখান থেকে শ্রীলঙ্কা সিরিজে সুযোগ পাওয়া এবং শেষে সোজা বিশ্বকাপ স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্তি।
“গত বছরও এই সময়ে জানতামই না যে জীবনটা এ ভাবে পাল্টে যেতে পারে। আসলে পঞ্জাবে আসার পর বুঝতে পারি এটা এমন একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি যেখানে নতুনদের বসিয়ে রাখা হবে না। খেলানো হবে। তাদের সুয়োগ দেওয়া হবে। আর এখানকার সিনিয়রদের থেকেও প্রচুর সাহায্য পেয়েছি,” ফোনে শুক্রবার আনন্দবাজারকে বলছিলেন অক্ষর।
যেমন?
অক্ষরের কথা ধরলে, নামটা বীরেন্দ্র সহবাগ। মাঠে, মাঠের বাইরে যাঁর নিরন্তর পরামর্শ ছাড়া অক্ষরের পক্ষে নাকি সম্ভব হত না আজকের অক্ষর হওয়া। “আমাদের কোচ সঞ্জয় বাঙ্গারও খুব খেটেছেন আমাকে নিয়ে। কিন্তু বীরু পাজির ব্যাপারটা আলাদা। আসলে একজন ব্যাটসম্যানের পক্ষেই বোঝা সম্ভব বোলারের কোথায় ভুল হচ্ছে না হচ্ছে। বীরু পাজি সে সব দেখিয়ে দিতেন। একদম প্রথম দিন থেকে। নেটে, ম্যাচে সব জায়গায়,” বলছিলেন অক্ষর।
উদাহরণও দিলেন। “গত বছরই ধরা যাক। ওয়াংখেড়েতে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে আইপিএল ম্যাচে খেলছি। কোরি অ্যান্ডারসন প্রচণ্ড মারছিল আমাকে। নিজের বিচারবুদ্ধিতে হচ্ছে না দেখে সোজা বীরু পাজির কাছে গেলাম। বললাম, কী করব ওকে থামাতে? উনি বললেন, অ্যান্ডারসন টার্গেট করে নিয়েছে তোমাকে। ও ধরতে পেরে গিয়েছে যে তুমি খালি লেগ স্টাম্প লাইনে ফেলে যাচ্ছ। সেটা না করে অফের বাইরে রাখো। ওকে কাট মারতে দাও। কয়েকটা বল পরে ওই কাট মারতে গিয়েই আউট হল কোরি। সত্যি বলতে গেলে বীরু পাজি না থাকলে, ওঁর সাহায্য না পেলে আমি এই জায়গায় পৌঁছতে পারতাম না,” এক নিঃশ্বাসে গড়গড়িয়ে বলে যান অক্ষর।
একটা সময় গুজরাতের নাদিয়াদে গলি ক্রিকেটে ‘জয়সূর্য’ বলে ডাকা হত অক্ষরকে। আক্রমণাত্মক বাঁ-হাতি ব্যাটিংয়ের সঙ্গে বাঁ হাতি স্পিন বোলিংটাও করতে পারতেন বলে। আজ তাঁকে ভারতীয় টিমের রবীন্দ্র জাডেজার যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী ধরা হয়। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের আগে কোনও কোনও ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ এটাও বলতে শুরু করেছিলেন যে, বিশ্বকাপে জাডেজা না পারলেও মারাত্মক ক্ষতি নেই। অক্ষর তো থাকবেন পরিবর্ত হিসেবে। জাডেজার সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের তুলনা দেখলে কী মনে হয়?
“কোনও তুলনাই হয় না। জাডেজা এত দিন ধরে খেলছে। আর মিডিয়া বললেও আমাদের ক্রিকেট খেলার ধরনটা দু’রকমের।” কারও সঙ্গে তুলনা-টুলনা নয় অক্ষর বরং মনে রাখতে চান গত এক বছর ধরে প্রাপ্ত জীবনকে। বিশ্বকাপে ভারতীয় টিমের সঙ্গে থাকার অভিজ্ঞতাকে। “বিশ্বকাপ কী জিনিস হয়, সেখানে ভারতীয় ড্রেসিংরুমের কী অবস্থা থাকে এগুলো তো কিছুই জানতাম না। যে ভাবে আমার মতো জুনিয়রকেও ওখানে সাপোর্ট দেওয়া হল, না খেললেও বলা হল ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হতে, ভুলব না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy