Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

হঠাৎ তারকা হারিয়ে এখন দুই কোচের নজরেই রক্ষণ

বিমর্ষ ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের গলায় শুক্রবার সকালে অনুশীলনের পর  আক্ষেপ ঝরে পড়ছিল। এটা ভেবে যে, এনরিকের যা চোট, সেই একই সমস্যা নিয়ে আসিয়ান কাপ জিতিয়েছিলেন মাইক ওকোরো।

যুযুধান: ডার্বির আগের দিন মুখোমুখি দুই কোচ। আলেসান্দ্রো ও শঙ্করলাল। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

যুযুধান: ডার্বির আগের দিন মুখোমুখি দুই কোচ। আলেসান্দ্রো ও শঙ্করলাল। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

রতন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:২০
Share: Save:

এ যেন ডার্বির উলট পুরাণ!

প্রায় শতবর্ষ ছোঁয়া বাঙালির চিরকালীন আবেগের এই ম্যাচে এত দিনের মিথ ছিল, ডার্বি নতুন তারকার জন্ম দেয় আবার মহা তারকাকে আছড়েও ফেলে মাটিতে।

কিন্তু যুবভারতীতে আজ রবিবাসরীয় বিকেলে বল গড়ানোর আগেই যে একের পর এক তারকা ছিটকে গেলেন! যাঁর উপর নির্ভর করে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা জেতার স্বপ্ন দেখছিলেন, সেই মেক্সিকান স্ট্রাইকার এনরিকে এসকুয়েদা পাঁজরের হাড়ে চিড় ধরায় দেশে ফিরে গিয়েছেন। আর খেলা শুরুর চব্বিশ ঘণ্টা আগে হঠাৎ-ই বাইরে চলে গেলেন মোহনবাগান জনতার হার্টথ্রব সনি নর্দে। তাঁর কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী জানিয়ে দিলেন, ‘‘সনিকে দু’সপ্তাহ মাঠে নামতে বারণ করেছেন ডাক্তার।’’

বিমর্ষ ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের গলায় শুক্রবার সকালে অনুশীলনের পর আক্ষেপ ঝরে পড়ছিল। এটা ভেবে যে, এনরিকের যা চোট, সেই একই সমস্যা নিয়ে আসিয়ান কাপ জিতিয়েছিলেন মাইক ওকোরো। সে বার বালিশের মতো বুকে ব্যান্ডেজ বেঁধে এবং ইঞ্জেকশন নিয়ে ওকোরো নেমেছিলেন দলের স্বার্থে। এনরিকে সেটা করলে মশালে আগুন ধরাতেই পারতেন।

আরও পড়ুন: সনির বিকল্প তৈরি রেখেছেন শঙ্করলাল

আর সনি নর্দে? ইদানীং দেখা যাচ্ছে ডার্বি সামনে এলেই চোটের কবলে পড়ছেন হাইতি মিডিয়ো! প্রতি বারই তিনি ‘খেলবেন’, ‘খেলবেন’ এ রকম একটা পরিবেশ তৈরি হয়। তাঁকে শেষ পর্যন্ত আর খেলতে দেখা যায় না। এ বারও সেটাই হয়েছে। ফিজিয়োর কাছে অনুশীলন করে বেরোনোর সময় সনির মুখ থেকে বেরিয়েছে, ‘‘ডার্বি সবাই খেলতে চায়। পারলাম না।’’ এমনিতে সাতটা ডার্বি খেলে তাঁর গোল মাত্র একটি। কিন্তু সনির মতো তারকা ফুটবলার থাকা মানেই যে কোনও দলের মনোবল বেড়ে যায়। সেই সাহায্য আজ পাচ্ছে না মোহনবাগান। সনি অবশ্য এ দিন মাঠের মধ্যেই সতীর্থদের নানা পরামর্শ দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: ডিকাদের আক্রমণকে সমীহ আলেসান্দ্রোর

একেই হঠাৎ তারকাহারা দুই প্রধান। তার উপর লিগ টেবলের সাত বনাম আটের লড়াই! কলকাতা লিগ তো বটেই, আই লিগে এ রকম বিশ্রী অবস্থায় দুই প্রধান কখনও মুখোমুখি হয়েছে কি না, তা নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে। দুই ক্লাবের পরিবেশেও তার ছাপ। শুক্রবার সকালে মোহনবাগান মাঠে বা যুবভারতী সংলগ্ন মাঠের লাল-হলুদের অনুশীলনে মেরেকেটে শ’খানেক সমর্থক। সাধারণ ম্যাচেই যা থাকে! ফুল, মালা, পোস্টার নিয়ে হাজির যারা, তাদের অনেকেরই অনুশীলন দেখা বা আবেগের চেয়েও বেশি নজর সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার দিকে। রবিবার ম্যাচ বলেই মাঠ হয়তো ভরবে। তবে সেই উন্মাদনা বা উচ্ছ্বাস কি দেখা যাবে, কোনও দল জিতলে বা হারলে? আসলে এই ম্যাচটার তো খেতাবের যুদ্ধে বাড়তি কোনও গুরুত্বই নেই। আবেগের কথা বাদ দিলে, এটা শুধুই লিগের একটা সাধারণ ম্যাচ।

এ রকম ফ্যাকাশে আবহে আবার গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিয়েছে ইস্টবেঙ্গলের মাঠ ঘিরে লাগানো কালো পর্দা। ‘পর্দে কে পিছে কেয়া হ্যায়’ তা দেখতে দিতে নারাজ কোচ আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস। তিন দিন ধরে ঘিরে রাখা হয়েছে মাঠ। তার মধ্যেই তৈরি হয়েছে রণনীতি। যে পনেরো মিনিট সংবাদমাধ্যমের জন্য বরাদ্দ ছিল, সেই সময় লাল-হলুদের স্প্যানিশ কোচ দল নিয়ে চলে গেলেন এমন জায়গায়, যেখানে ফুটবলারদের চেনা কঠিন। যা খবর, তাতে গোপনে মূলত রক্ষণ সংগঠন ও সেট পিসের বৈচিত্রের উপর জোর দেওয়া হয়েছে অনুশীলনে।

মোহনবাগানের অনুশীলন দেখার উপর কোনও নিষেধাজ্ঞা ছিল না। তবে ফুটবল নয়, কোচ শঙ্করলাল হ্যান্ডবল খেলালেন দিপান্দা ডিকা-হেনরি কিসেক্কাদের। দৌড়াদৌড়িও কিছুক্ষণ হল। সঙ্গে শারীরিক সক্ষমতা বাড়ানোর পাঠও। মোহনবাগান কোচ মাঝমাঠ ও রক্ষণের সমন্বয়ের উপর জোর দিলেন।

দুই কোচের মুখাবয়বে তারকা পতনের ধাক্কায় সতর্কতা। চিন্তাও। রিয়াল মাদ্রিদের যুব দলে কোচিং করিয়ে আসা আলেসান্দ্রোর সঙ্গে বরাহনগরের শঙ্করলালের কপালের বলিরেখায় তাই কোনও ভেদ নেই। এনরিকে না থাকা নিয়ে আলেসান্দ্রোর জবাব, ‘‘আমাদের এটা ক্ষতি। তবে সেটা সামাধানের চেষ্টা চলছে।’’ সমাধান মানে, নতুন আসা স্প্যানিশ উইঙ্গার খাইমে কোলাদোকে সঠিক জায়গায় ব্যবহার করা। যাঁকে জবি জাস্টিনের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে গোলের রাস্তা খুঁজতে চাইছেন লাল-হলুদ কোচ। ৪-৪-১-১ ফর্মেশনে দল নামিয়ে কোলাদোকে সাপোর্টিং স্ট্রাইকার হিসাবে খেলানো হবে। কিন্তু রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলে আসা জনি আকোস্তা কি খেলবেন? চার বার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এই প্রশ্ন করা হয়েছিল আলেসান্দ্রোকে। পরিষ্কার কোনও উত্তর মেলেনি। দল নিয়ে ধোঁয়াশাও রেখে দিয়েছেন তিনি। যদি আকোস্তা খেলেন, তা হলে চার বিদেশি খেলবেন লাল-হলুদে। আর যদি বোরখা গোমেসের সঙ্গী হন সালামরঞ্জন সিংহ, তবে দলে থাকবেন তিন বিদেশি। মোহনবাগানের শেষ ছয়টি ম্যাচের ভিডিয়ো বারবার দেখে আলেসান্দ্রো বুঝে গিয়েছেন, প্রতিপক্ষের আসল শক্তি তাদের দুই স্ট্রাইকার জুটি ডিকা এবং হেনরি। ‘‘ওদের আক্রমণ খুব শক্তিশালী। সেটা মাথায় রেখে আমরা প্রস্তুত হচ্ছি,’’ বলে দেন ইস্টবেঙ্গল কোচ।

আলেসান্দ্রো বা তাঁর দলের দুই নতুন বিদেশি— তিন স্প্যানিশেরই কলকাতার শব্দব্রহ্মে এই ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নেই। যা আছে শঙ্করলাল এবং তাঁর দলের চার বিদেশির। এটা মোহনবাগানের বাড়তি সুবিধা। টানা সাত ডার্বিতে অপরাজিত মোহনবাগান। সে জন্যই সম্ভবত শঙ্করলালের মুখ থেকে বেরিয়েছে, ‘‘সনি ছাড়াও তো আমরা ডার্বি জিতেছি।’’ পনেরো দিন পর ফের ম্যাচ খেলতে নামছেন কিংসলে ওবুমনেমেরা। ফলে দল গোছানোর সময় পেয়েছেন সবুজ-মেরুন কোচ। শেখ ফৈয়াজ দলে ঢোকায় এবং আজহারউদ্দিন মল্লিক সুস্থ হয়ে ওঠায় ৪-৪-২ ফর্মেশনও ভাঙতে হচ্ছে না শঙ্করলালকে।

কিন্তু ম্যাচের আসল অঙ্ক লুকিয়ে আছে অন্য জায়গায়। এবং সেটা দু’দলের রক্ষণ সংগঠনে। লিগ এখনও মাঝরাস্তা পেরোয়নি। ফলে দু’দলের কোচই চার ডিফেন্ডারের সামনে দুই রক্ষণ-পর্দা রাখছেন। কারণটা সহজ, জিততে না পারি, কিন্তু হারব না। ফলে দুই কোচ ম্যাচ জেতার জন্য পুরোপুরি ঝাঁপাবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।

রবিবার: মোহনবাগান বনাম ইস্টবেঙ্গল (যুবভারতী, বিকেল ৫টা)। সরাসরি স্টার স্পোর্টস থ্রি চ্যানেলে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE