Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

মীরপুরে বারুদ ছড়িয়ে দিলেন বুম বুম আফ্রিদি

শনিবার মীরপুরে ভারত-পাক ম্যাচের প্রথম বল পড়ার আগেই একটা ছয় হাঁকিয়ে দিলেন শাহিদ আফ্রিদি। আর সেই ওভার বাউন্ডারিটা মাঠের বাইরে নয়, প্রায় বোমা হয়ে এসে আছড়ে পড়ল যেন নয়াদিল্লিতেই।

কুন্তল চক্রবর্তী
ঢাকা শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৫৯
Share: Save:

শনিবার মীরপুরে ভারত-পাক ম্যাচের প্রথম বল পড়ার আগেই একটা ছয় হাঁকিয়ে দিলেন শাহিদ আফ্রিদি। আর সেই ওভার বাউন্ডারিটা মাঠের বাইরে নয়, প্রায় বোমা হয়ে এসে আছড়ে পড়ল যেন নয়াদিল্লিতেই।

শনিবার মীরপুরে ভারত-পাক ক্রিকেট যুদ্ধের আগে পাক ক্যাপ্টেন বলে দিলেন, ‘‘পাকিস্তানের মানুষ যেমন চায় ভারত আমাদের দেশে গিয়ে খেলুক, তেমন ভারতের মানুষও চায় আমরা ওখানে খেলি। রাজনীতির যুদ্ধের মধ্যে খেলাটাকে টেনে নিয়ে যাওয়া ঠিক না। দেশের মানুষের কথা শুনে দুই দেশের সরকারেরই এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। পাকিস্তান সরকারই বরাবর আগে সে দিকে পদক্ষেপ করে এসেছে।’’

ভারত-পাক ক্রিকেট ম্যাচ যেখানে হয়, তার আগের দিন সেখানকার আবহাওয়ায় একটা যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাব থাকে। এ বারও আছে। কিন্তু শনিবার দুপুরে আফ্রিদির এই মন্তব্যে যেন মীরপুরের আকাশে বারুদের গন্ধটা বেশ চড়া হয়ে উঠল। যে মেজাজে কথাগুলো বললেন আফ্রিদি, তাতে উপস্থিত সাংবাদিকদের বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, কয়েক দিন আগে পর্যন্ত ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক সিরিজ নিয়ে তৈরি হওয়া সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তিনি বেশ বিরক্ত। এবং সেটাই এ দিন স্পষ্ট ফুটে উঠল তাঁর অভিব্যক্তিতে, কথায়।

মাঠের বাইরে যখন ছয় হাঁকাচ্ছেন আফ্রিদি, তখন মাঠের ভিতর নেট প্র্যাকটিসে ভারতীয়দের আগ্রাসনটাও বেশ বোঝা যাচ্ছিল। এমনকী যাঁরা সদ্য দেশের জার্সি গায়ে মহারণে নামতে চলেছেন, সেই জসপ্রীত বুমরাহ, হার্দিক পাণ্ড্যদের মধ্যেও যেন হঠাৎ যুদ্ধের ঝাঁঝটা ঢুকে পড়েছে।

নেটে ব্যাট হাতে শেষ ছ’টা বলে ক’টা ছয় মারতে পারেন নেগি-হরভজনদের, তা নিয়ে নিয়ে বোলিং কোচ ভরত অরুণকে যেন অঘোষিত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন হার্দিক। প্রথম চারটে বলে মেরেও দিলেন। পঞ্চম বলটায় নেগি তাঁর স্টাম্প ছিটকে দিলেও শেষ বলে আবার ছয়। ছ’টা বল শেষে হার্দিকের অনুরোধ, আর একটা বল, এটাই শেষ। ছ’নম্বর ছয়টা এটাতেই মারবেন। এবং মারলেনও।

ম্যাচটা মীরপুরে। কিন্তু ম্যাচ ঘিরে যে উন্মাদনা প্রতিবেশি দেশের রাজধানীতে, তাতে বোঝার উপায় নেই ম্যাচটা মীরপুর না মুম্বইয়ে। ২৫ হাজার দর্শকাসনের সমস্ত টিকিট অনেক আগেই শেষ। এখনও টিকিট যে পাওয়া যাচ্ছে না, তা নয়। যাচ্ছে কালোবাজারে, দশ গুণ দামে।

ভারত-পাক ম্যাচে কার জন্য গলা ফাটাবে বাংলাদেশ? অঙ্কের হিসাব বলছে, এই ম্যাচে পাকিস্তান হারলে বাংলাদেশের পক্ষে ভাল। তাই ছুটির দিন শের-ই-বাংলায় নীল জার্সির আধিক্য দেখলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচে যেমন মাঠে সাকুল্যে দুশো ভারতীয় সমর্থকও হয়েছিল কি না সন্দেহ, শনিবারের ম্যাচে ধোনিদের সমর্থন করার জন্য হয়তো তার চেয়ে বেশি মানুষকে পাওয়া যাবে গ্যালারিতে। এদের মধ্যে কলকাতা থেকে আসা একদল ক্রিকেটপ্রেমীকে তেরঙা হাতে ঘুরতে দেখা গেল ঢাকার রাস্তায়। এ দিন বিরাট কোহলিদের প্র্যাকটিস দেখতে ফতুল্লাহও এসেছিলেন প্রচুর সমর্থক। দেখা গেল সাধারণের চেয়ে বেশি নিরাপত্তারক্ষীও। শোনা গেল, শনিবার ম্যাচে নিরাপত্তা আরও বেশি থাকবে।

সব মিলিয়ে ভারতের যে কোনও শহরে ভারত-পাক ম্যাচ হলে যে সব খণ্ডচিত্র চোখের সামনে ভেসে ওঠে, এখানেও সেগুলোই ভেসে উঠছে।

কিন্তু শনিবার সন্ধের এই ক্রিকেট যুদ্ধ জিতবে কারা?

প্রাক্তন পাক পেসার আকিব জাভেদ যতই ভারতীয়দের উড়িয়ে দিন, আর এক পেস তারকা শোয়েব আখতার কিন্তু উল্টো কথা বলছেন। ‘‘পাকিস্তানের কাজটা যেমন সোজা হবে না, ভারতের কাছেও হবে না। এমনিতেই টি-টোয়েন্টিতে কী হবে কিছু বলা যায় না। তার উপর ভারত-পাকিস্তান। এই ম্যাচটা শুধু ক্রিকেটের লড়াই নয়, স্নায়ুরও। আমি যখন এই ম্যাচটা খেলতে নামতাম, আমারও বুক ঢিপঢিপ করত। এই পাকিস্তানের অনভিজ্ঞ ছেলেগুলোর কী অবস্থা হচ্ছে, কে জানে।’’

আফ্রিদি যেখানে ম্যাচ শুরুর আগেই ভারতকে ‘টার্গেট’ করে ধুন্ধুমার বাধিয়ে দিলেন, সেখানে শনিবার ম্যাচ শুরুর পর চাপটা তাঁর দলের ছেলেরা নিতে পারেন কি না, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

মীরপুরের আকাশে বারুদ-গন্ধ ধরে রাখার জন্য তো এখানকার ক্রিকেট-পাগলরা আছেনই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy