অভিমন্যু ঈশ্বরন
রাখি বন্ধন উৎসবে দিদির সঙ্গে যে কত বছর পরে দেখা হয়েছে, তা হিসেব করে বলতে পারলেন না অভিমন্যু ঈশ্বরন। এ বার রাখির সময় তিনি দিল্লিতে থাকায় দিদির সঙ্গে দেখা হয়েছিল। দিদির পরিয়ে দেওয়া রাখি পকেটে নিয়েই ব্যাট করতে নেমেছিলেন দলীপ ট্রফি ফাইনালে। দেড়শো রানের গণ্ডি পেরোনোর পরে পকেট থেকে সেই রাখি বার করে ড্রেসিংরুমের দিকে তুলে ধরলেন বাংলার নতুন অধিনায়ক। এই বিশেষ ইনিংস অভিমন্যু উৎসর্গ করলেন তাঁর দিদি পল্লবী ঈশ্বরনকে।
অভিমন্যুর মতো পল্লবীও ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটভক্ত। দেহরদূনে থাকাকালীন ভাইয়ের প্রত্যেকটি ম্যাচ দেখতে যেতেন। ইডেনেও এসেছেন বেশ কয়েক বার। অভিমন্যুর জীবনে দিদির যে কতটা অবদান তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারলেন না ভারত ‘রেড’ দলের ওপেনার। শুক্রবার ৩০০ বলে ১৫৩ রানের ইনিংস শেষ করে উঠে বেঙ্গালুরু থেকে আনন্দবাজারকে ফোনে তিনি বলেন, ‘‘আমার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার পিছনে দিদির অবদান প্রচুর। সব সময় উৎসাহ দিয়ে এসেছে। ম্যাচের আগের দিন ওর ফোন না পেলে চাপে পড়ে যাই। কখনও ঘাবড়ে গেলে ওকে ফোন করি। কিছুক্ষণ কথা বললেই সব চাপ দূর হয়ে যায়।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘এ বার রাখি বন্ধন উৎসবের সময় আমি দিল্লিতে ছিলাম। তাই অনেক বছর পরে দিদির হাত থেকে রাখি পরার সুযোগ পেয়েছি। সেই রাখি যত্ন করে রেখেছিলাম।’’
হঠাৎ দলীপ ট্রফির ফাইনালে সেই রাখি নিয়ে ব্যাট করতে নামলেন কেন? ঈশ্বরনের উত্তর, ‘‘বিশ্বাস করি, এই রাখির সঙ্গেই জড়িয়ে আছে দিদির আশীর্বাদ। কুসংস্কার বলতে পারেন, কিন্তু দলীপ ট্রফি ফাইনালের মতো মঞ্চকে আমি নষ্ট করতে চাইনি। এই কুসংস্কার যদি একটি ভাল ইনিংস আমার মধ্যে থেকে বার করে আনতে পারে, তা হলে খারাপ কি! তাই দিদিকেই উৎসর্গ করলাম এই ইনিংস।’’
মোট ১৬টি চার ও দু’টি ছয়ের সৌজন্যে ইনিংস গড়েন অভিমন্যু। বিপক্ষে অঙ্কিত রাজপুত, মায়াঙ্ক মার্কণ্ডে, রাজেশ মোহান্তির মতো তারকার বিরুদ্ধে সাবলীল ব্যাট করে গেলেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৩তম সেঞ্চুরি করে ৩৪৫-৬ স্কোরে ভারত ‘রেড’ দলকে পৌঁছে দিয়েছেন ঈশ্বরন। ২৩১ রানে ভারত ‘গ্রিন’ দলের প্রথম ইনিংস শেষ হওয়ার পরে অভিমন্যুর দাপট ১১৪ রানে এগিয়ে দিয়েছে ‘রেড’ দলকে। ম্যাচের এক দিন বাকি। যা পরিস্থিতি তাতে প্রথম ইনিংসে এগিয়ে থাকা দলই ট্রফি তুলবে।
অভিমন্যুর এই ইনিংস বিশেষ জায়গা করে নেওয়ার আরও একটি কারণ রয়েছে। ৬ সেপ্টেম্বর ২৪ বছরে পা দিলেন বাংলার অধিনায়ক। যদিও জন্মদিনের উৎসবকে কখনওই তিনি মাহাত্ম্য দেন না। এ বারও দেননি। অভিমন্যুর বক্তব্য, ‘‘একজন ব্যাটসম্যান যদি তার জন্মদিনে ভাল ইনিংস খেলতে পারে, তার চেয়ে বড় উপহার বা উৎসব হতে পারে না। জন্মদিন তো প্রত্যেক বছরই আসবে, কিন্তু দলীপ ট্রফির ফাইনাল প্রত্যেক বছর খেলার সুযোগ নাও পেতে পারি। আপাতত এই কৃতিত্বই উপভোগ করতে চাই।’’
অভিমন্যুর এই ইনিংস হয়তো জাতীয় নির্বাচকদের হাতে একজন টেস্ট ওপেনারের বিকল্প তুলে ধরল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেই দেখা গিয়েছে বর্তমান টেস্ট ওপেনারেরা এখনও নিজেদের প্রমাণ করে উঠতে পারেননি। আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে নতুন ওপেনার দেখে নেওয়া হতে পারে। ঈশ্বরনের এই ইনিংস কিন্তু সেই দাবি আরও জোরালো করল। দিনের নায়ক যদিও এই সব ভেবে নিজেকে চাপে ফেলতে চান না। বললেন, ‘‘ভাল খেললে তার প্রতিদানও পাওয়া যাবে। আমার কাজ ভাল খেলে যাওয়া। প্রতিদানের জন্য অপেক্ষা করলে ভাল খেলার তাগিদ হারিয়ে যেতে পারে। নিজের উপর চাপ বাড়াতে চাই না। সুযোগ এলে, তার সদ্ব্যবহার করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy