ছবি: সংগৃহীত।
তিন স্পিনার বনাম এবিডি। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর বনাম কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের খেলায় এই লড়াইটাই ঠিক করে দিল ম্যাচের ভাগ্য। পঞ্জাবের তিন স্পিনার— আর অশ্বিন, অক্ষর পটেল এবং মুজিব উর রহমান একটা সময় চাপে ফেলে দিয়েছিল আরসিবি ব্যাটিংকে। কিন্তু এ বি ডিভিলিয়ার্স (৪০ বলে ৫৭) পাল্টা আক্রমণ করে ম্যাচ বার করে নিল। পঞ্জাবের ১৫৫ রান তাড়া করে ১৯.৩ ওভারে ছয় উইকেট হারিয়ে জয়ের রান তুলে নেয় আরসিবি।
এত দিন আইপিএল দেখছি, কিন্তু মনে পড়ছে না কোনও দিন এমন ঘটনা ঘটেছে বলে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে স্পিনাররা অনেক ম্যাচেই বোলিং শুরু করেছে ঠিকই, কিন্তু পাওয়ার প্লের ছ’ওভারের মধ্যে পাঁচ ওভার স্পিনাররা করছে, এমনটা দেখিনি। পঞ্জাব অধিনায়ক অশ্বিন সেটাই করল। প্রথমে ব্যাট করে পঞ্জাব ১৫৫ রানের বেশি করতে পারেনি। তাই প্রথম থেকেই উইকেট তোলার জন্য ঝাঁপিয়েছিল অশ্বিন। আর ও জানত, স্পিনাররাই ওকে উইকেট এনে দিতে পারে। সেটাই হল। আরসিবির প্রথম চার উইকেটেই তুলে নিল স্পিনাররা। অক্ষর ও মুজিব একটা করে, অশ্বিন দু’টো।
যার মধ্যে একটা উইকেটের কথা ভুলতে পারব না। যে বলটায় বিরাট কোহালিকে আউট করল ১৭ বছরের আফগান স্পিনার মুজিব। বিরাট গুগলিটা বুঝতেই পারেনি। রহমানকে খেলতে ব্যাটসম্যানদের সমস্যা হচ্ছিল দেখে অশ্বিন ওকে রেখে দেয়। শেষ দিকে ম্যাচ যখন জমে গিয়েছে তখন নিয়ে আসে। তবে ১৭ নম্বর ওভার করাবে কি না, এই নিয়ে দেখলাম প্রথমে একটু দ্বিধায় ছিল অশ্বিন। শেষ পর্যন্ত মুজিবকেই বল করতে আনল। বোঝাই যাচ্ছিল, ওই ওভারেই ম্যাচের ভাগ্য ঠিক হয়ে যাবে। আর তা-ই হল। তবে বাজি জিততে পারল না পঞ্জাব অধিনায়ক। কারণ ওই ডিভিলিয়ার্স। দু’টো বিশাল ছয় মারল। ও আর মনদীপ সিংহ মিলে ১৯ রান নিল ওই ওভারে। ম্যাচ ওখানেই শেষ!
ডিভিলিয়ার্স অবশ্য সেরা শটটা তুলে রেখেছিল পরের ওভারের জন্য। যখন মোহিত শর্মার ‘নাকল বল’টা সোজা ফেলে দিল গ্যালারিতে। ডিভিলিয়ার্সের ব্যাটিংই বুঝিয়ে দিল, কেন সব রকম ফর্ম্যাটে ও বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান।
এই ম্যাচটায় আরও দু’জনের কথা বলতেই হবে। এক জন, পঞ্জাবের ওপেনার কে এল রাহুল (৩০ বলে ৪৭)। অন্য জন, আরসিবির পেসার উমেশ যাদব (৩-২৩)।
এ বারের আইপিএলে দেখছি নিজের খেলার ধরন কিছুটা পাল্টেছে রাহুল। দারুণ আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। এই ছেলেটা কিন্তু যে কোনও ধরনের ক্রিকেটে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। তাই পাঁচ দিনের ক্রিকেটে যেমন সফল, তেমনই সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও সাবলীল। চিন্নাস্বামীতে শুক্রবার ক্রিস ওক্সের বিরুদ্ধে শুরু করল দু’টো ছয় মেরে। এবং, দু’টোই ক্রিকেটীয় শট। একটা কভারের ওপর দিয়ে, অন্যটা ফ্লিক করে।
রাহুল এবং করুণ নায়ার— দু’জনেই ঘরের মাঠে খেলছে। পিচের গতি এবং বাউন্স সম্পর্কে ওদের ভালই ধারণা আছে। ফলে প্রথম থেকেই বড় শট মারতে শুরু করেছিল। যখন মনে হচ্ছিল, প্রথমে ব্যাট করতে নেমে পঞ্জাব বড় রান তুলে দেবে, তখনই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিল উমেশ যাদবের একটা ওভার। এ সব পারফরম্যান্সকেই ‘গেম চেঞ্জার’ বলা হয়। এক ওভারে তিন উইকেট তুলে নিল উমেশ। প্রথমে ময়ঙ্ক অগ্রবাল আউট হল উইকেটে পিছনে খোঁচা দিয়ে। পরের বলেই অ্যারন ফিঞ্চ এলবিডব্লিউ। তিন বল পরে যুবরাজ সিংহ বোল্ড। ফিঞ্চ এবং যুবরাজের ক্ষেত্রে বলব, বলের গতির কাছে হার মেনেছে ওরা।
আইপিএলের আগে বিশ্রামে ছিল উমেশ। যে ক’দিন পেয়েছে, তাতে ও রীতিমতো তরতাজা হয়ে উঠেছে। পুরো গতিতে বল করতে পারছে। ওর এক ওভারে তিন উইকেট উমেশকে ম্যাচের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার এনে দিল। উমেশের বোলিংয়ে গতি যেমন ছিল, তেমন লাইন-লেংথও দেখলাম নিখুঁত। ব্যাটসম্যানকে শট খেলার জায়গা দেয়নি। যে ২৪টা বল করেছে, তার মধ্যে ২১টাই ঠিক জায়গায় রেখেছে।
স্কোরকার্ড
কিংস ইলেভেন পঞ্জাব ১৫৫ (১৯.২)
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ১৫৯-৬ (১৯.৩)
কিংস ইলেভেন পঞ্জাব
রাহুল ক সরফরাজ বো ওয়াশিংটন ৪৭
মায়াঙ্ক ক ডি’কক বো উমেশ ১৫
অ্যারন ফিঞ্চ এলবি়়়ডব্লিউ বো উমেশ ০
যুবরাজ সিংহ বো উমেশ ৪
করুণ নায়ার বো কুলবন্ত ২৯
স্টয়নিস স্টা. ডি’কক বো ওয়াশিংটন ১১
অক্ষর পটেল এলবিডব্লিউ বো কুলবন্ত ২
আর অশ্বিন স্টা. ডি’কক বো চহাল ৩৩
অ্যান্ড্রু টাই ক কোহালি বো ওক্স ৭
মোহিত শর্মা ন.আ. ১
মুজিব ক সরফরাজ বো ওক্স ০
অতিরিক্ত ৬
মোট ১৫৫ (১৯.২)
পতন: ৩২-১ (মায়াঙ্ক, ৩.১), ৩২-২ (ফিঞ্চ, ৩.২), ৩৬-৩ (যুবরাজ, ৩.৬), ৯৪-৪ (রাহুল, ১১.১), ১০২-৫ (করুণ, ১২.৬), ১১০-৬ (স্টয়নিস, ১৩.৪), ১২২-৭ (অক্ষর, ১৪.৬), ১৪২-৮ (টাই, ১৭.৫), ১৫৩-৯ (অশ্বিন, ১৮.৫), ১৫৫-১০ (মুজিব, ১৯.২)।
বোলিং: ক্রিস ওক্স ৩.২-০-৩৬-২, উমেশ যাদব ৪-০-২৩-৩, কুলবন্ত খেজরোলিয়া ৪-০-৩৩-২ যুজবেন্দ্র চহাল ৪-০-৩৮-১, ওয়াশিংটন সুন্দর ৪-০-২২-২।
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর
কুইন্টন ডি’কক বো অশ্বিন ৪৫
ম্যাকালাম ক মুজিব বো অক্ষর ০
বিরাট কোহালি বো মুজিব ২১
ডিভিলিয়ার্স ক করুণ বো টাই ৫৭
সরফরাজ খান ক করুণ বো অশ্বিন ০
মণদীপ সিংহ রান আউট (ডাগার) ২১
ক্রিস ওক্স ন.আ. ১
ওয়াশিংটন ন.আ. ৯
অতিরিক্ত ৪
মোট ১৫৯-৬ (১৯.৩)
পতন: ১-১ (ম্যাকালাম, ০.২), ৩৩-২ (কোহালি, ৪.৫), ৮৭-৩ (ডি’কক, ১১.২), ৮৭-৪ (সরফরাজ, ১১.৩) ১৪৬-৫ (ডিভিলিয়ার্স, ১৮.১), ১৫০-৬ (১৮.৪)।
বোলিং: অক্ষর পটেল ৪-০-২৫-১ আর অশ্বিন ৪-০-৩০-২, মুজিব উর রহমান ৪-০-২৯-১, অ্যান্ড্রু টাই ৪-০-২৭-১, মোহিত শর্মা ৩.৩-০-৪৫-০।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy