স্ট্রেন্থ লিফটিং-এ সফল পাঁচ কন্যা। নিজস্ব চিত্র
রাজ্য ‘স্ট্রেন্থ লিফটিং’-এ ফের জেলার মুখ উজ্জ্বল করল পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়ার পাঁচ কন্যা। তাঁরা হলেন— সুস্মিতা কর্মকার, পল্লবী দাস, মোম মাঝি, জেহেরুন খাতুন ও রিয়া দাস। এই সাফল্যের জন্য তাঁরা সুযোগ পেয়ে গিয়েছেন জাতীয় স্তরে বাংলার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার। জেলা ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ২৯ মার্চ পঞ্চাবে তিনদিনের এই প্রতিযোগিতার আসর বসবে।
গত ১৬ ডিসেম্বর হুগলির উত্তরপাড়ায় আয়োজিত ‘স্ট্রেন্থ লিফটিং’ প্রতিযোগিতায় রাজ্যের মধ্যে প্রথম হয়েছেন কাটোয়ার ছাত্রী সুস্মিতা কর্মকার, পল্লবী দাস, মোম মাঝি ও জেহেরুন খাতুন। দ্বিতীয় হয়েছেন রিয়া দাস। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই পাঁচ কন্যার কারও পরিবার আর্থিক দিক থেকে স্বচ্ছল নয়। কারও বাবা কাটোয়া শহরে টোটো চালান। কারও বা রিকশা চালক। কেউ আবার ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছেন। কাটোয়া শহরের ঘোষহাটের বাসিন্দা কাটোয়া কলেজের ছাত্রী সুস্মিতার বাবা সুনীল কর্মকার টোটো চালান। তিনি বলেন, ‘‘এর আগেও মেয়ে ভারত্তোলনে জাতীয় স্তরে খেলার সুযোগ পেয়েছিল। অনেক মেডেলও পেয়েছে। সবই ওর নিজের চেষ্টায়।’’ একই কলেজে পড়েন কেশিয়া মাঠপাড়ার বাসিন্দা জেহেরুন। তাঁর বাবা শোভান শেখ পেশায় রিকশাচালক। তাঁর কথায়, ‘‘পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলো চালিয়ে যাওয়ার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন হয়, তা জোগাড় করা কষ্টের। তবে মেয়ের স্বপ্ন পূরণের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।’’ কাশীগঞ্জ পাড়ার মেয়ে পল্লবী কাটোয়া বালিকা বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। তাঁর বাবাও রিকশাচালক। রিয়া ডিডিসি গার্লস হাই স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পড়েন। তিনিও বাবাকে ছোটবেলায় হারিয়েছেন। মামার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করেন।
অন্য দিকে, পাঁচ বছর আগেই বাবাকে হারিয়েছেন অনাদিবাবুর বাগান এলাকার বাসিন্দা মোম মাঝি। তিনি নবদ্বীপে স্নাতকোত্তর পড়ছেন। নিজের হাত খরচের জন্য নিজে টিউশনও পড়ান। আর মা লতা মাঝি পরিচারিকার কাজ করেন। এই অবস্থায় বহু কষ্টে খেলাধুলো চালিয়ে যাচ্ছেন মোম। এই পাঁচজনই পড়াশোনার পাশাপাশি কাটোয়া শহরের কলেজপাড়া এলাকার একতা সমাজবন্ধু স্পোর্টিং ক্লাবে নিয়মিত অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
উত্তরপাড়ায় এই খেলার আয়োজন করে সৌরভ হেল্থ সেন্টার। এই সংস্থার তরফে কাটোয়ার পাঁচ কন্যাকে ‘স্ট্রং ম্যান’ খেতাবও দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ২৫ জুলাই মুর্শিদাবাদ রাজ্যস্তরের এই প্রতিযোগিতায় অন্য জেলাকে পিছনে ফেলে এই দুঃস্থ ছাত্রীরাই প্রথম স্থান অধিকার করেছিল। তাঁদের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এখানে জিতলেও জাতীয় স্তরে কীভাবে খেলব, তা নিয়েই চিন্তায় আছি। কারণ, জাতীয় স্তরে খেলতে গেলে অনেক টাকার প্রয়োজন!’’ অভাবকে পিছনে ফেলে সফল হওয়ায় খুশি তাঁদের কোচ স্বপন আচার্য। তিনি তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy