রবিবার রাতে ফোনে কথা বলতে বলতে রাজকুমার শর্মার মনে হচ্ছিল ভারত অধিনায়ক নন, ফোনের ওপারে যেন কথা বলছে কট্টর কোনও ভারত সমর্থক! এতটাই নাকি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে হারের যন্ত্রণা, এতটাই নাকি আফসোস ছিল বিরাট কোহলির গলায়।
ম্যাচের আগে গুরু-শিষ্যের সাধারণত কথা হয় না। সেটা হয় ম্যাচের পরে, প্রায় নিয়ম করে। বাংলাদেশ থেকে রবিবার রাতেও ফোনটা এসেছিল দিল্লিতে। বিরাট কোহলি ফোন করেছিলেন তাঁর ছোটবেলার কোচ রাজকুমার শর্মাকে। কী বলছিলেন ক্যাপ্টেন কোহলি?
“ও খুব আফসোস করছিল। বিরাট হারতে একেবারেই ভালবাসে না। তার উপর পাকিস্তানের কাছে হারের তো একটা আলাদা যন্ত্রণা থাকবেই। রবিবারের ম্যাচটা দেখে আর পাঁচ জন ভারতীয় সমর্থকের মনের যা অবস্থা হয়েছিল, বিরাটের সঙ্গে কথা বলে মনে হল ওর অবস্থাটাও ঠিক সে রকম,” দিল্লি থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে বলছিলেন রাজকুমার। রবিবারের মহাযুদ্ধ নিয়ে কোহলির কোচের ব্যাখ্যা, “বিরাট কিন্তু সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছে। আসলে ওর কপালটাই খারাপ। শাহিদ আফ্রিদির দুটো মিস-হিট ম্যাচটা বের করে নিয়ে গেল। ওই শট যে কোনও দিকে যেতে পারত। কিন্তু আফসোসের ব্যাপার, ভাগ্য কাল বিরাটের সঙ্গে ছিল না। আনলাকি ছাড়া আর কী বলব বলুন?”
এই প্রথম গোটা একটা টুর্নামেন্টে নেতৃত্বের দায়িত্ব বিরাটের উপর। যে সিরিজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটো ম্যাচ খেলে ফেলেছে টিম ইন্ডিয়া শ্রীলঙ্কা আর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। যে দুটো ম্যাচই ছিল ক্যাপ্টেন কোহলির ‘লিটমাস টেস্ট’। সিরিজে ভারত টিকে থাকতে পারবে কি না, সময় বলবে। আপাতত গুরুর চোখে কেমন লাগল শিষ্যর নেতৃত্ব? রাজকুমার যথেষ্ট খুশি, “বিরাটের নেতৃত্বে কোনও কিছুর খামতি দেখলাম না। ধোনি যেমন মাঠে কোনও রকমের আবেগ দেখায় না, একদম ঠান্ডা থাকে, বিরাট সে রকম নয়। ওকে দেখে মাঝে মাঝে সৌরভের ক্যাপ্টেন্সি মনে পড়ে যাচ্ছিল। হ্যাঁ, বিরাট অনেকটাই দাদা ‘মোড’-এর ক্যাপ্টেন। সৌরভের প্যাশন, সৌরভের আগ্রাসনটা ওর মধ্যে আছে। কিন্তু ওই যে বললাম, এই টুর্নামেন্টে ভাগ্যটাই বিরাটের সঙ্গে নেই। যার জন্য ভারত টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যেতে বসেছে।” একটু থেমে তাঁর আরও সংযোজন, “দেখুন, টিম ইন্ডিয়া এখন প্রচুর ভাঙাগড়ার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ট্রানজিশন বলতে যা বোঝায়। সাত নম্বর স্লটে একজন ভাল ফিনিশারের অভাব খুব ভুগিয়েছে ভারতকে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি নেই, যুবরাজ সিংহ নেই, সুরেশ রায়না নেই। আর একটা কারণ হল, এশিয়া কাপ টিমে যে সব তরুণদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তারা সে ভাবে সুযোগটা কাজে লাগাতে পারছে না।”
“বিরাটকে দেখে মাঝে মাঝে সৌরভের ক্যাপ্টেন্সি মনে পড়ে যাচ্ছিল... সৌরভের প্যাশন, সৌরভের আগ্রাসনটা ওর মধ্যে আছে।” —রাজকুমার শর্মা
অতীতে ধোনি কোথাও কোথাও ইঙ্গিত দিয়েছেন, ২০১৫ বিশ্বকাপের পর তিনি কোনও একটা ফর্ম্যাটে নেতৃত্ব ছেড়ে দিতে পারেন। কোহলির কোচ কি মনে করেন বিশ্বকাপের পর তাঁর শিষ্যকেই অধিনায়ক করে দেওয়া উচিত? “না, না। আমি এটা নিয়ে কী বলব? এটা তো নির্বাচকদের উপর নির্ভর করে আছে। আর ধোনি আলাদা জাতের ক্যাপ্টেন। যত দিন খেলবে, তত দিন ও-ই অধিনায়ক হিসেবে আমার এক নম্বর পছন্দ। দুটো বিশ্বকাপ এনে দিয়েছে। টেস্টে দেশকে এক নম্বরে নিয়ে গিয়েছে। সত্যিই দুর্দান্ত ক্যাপ্টেন। ওকে সরিয়ে বিরাটকে আনার কোনও প্রশ্নই ওঠে না,” বলার সঙ্গে সঙ্গেই প্রায় জুড়ে দেন, “তবে হ্যাঁ, একটা কথা বলতে পারি। বিরাট কিন্তু নেতৃত্ব নিতে একদম তৈরি। ওর অধিনায়কত্ব করার ক্ষমতাটা দুর্দান্ত। নির্বাচকদের এটুকু বলতে পারি, ভারত অধিনায়ক হিসেবে ধোনি আর বিরাট দু’জন দারুণ বিকল্প পেয়ে গিয়েছেন আপনারা।”
সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে তুলনা শুরু হয়ে গিয়েছে ব্যাটসম্যান বিরাটের। ভবিষ্যতে সচিনের ব্যাটিং রেকর্ড কোহলি ভাঙতে পারবেন কি না, তা নিয়ে মন্তব্য করতে চান না রাজকুমার। তবে সচিনের কেরিয়ারের চিত্রনাট্যের সঙ্গে একটা ব্যাপারে তাঁর ছাত্রের মিল থাকবে না বলেই মনে করেন বিরাটের কোচ। সেটা কী? ক্যাপ্টেন কোহলি এবং ব্যাটসম্যান কোহলি--দু’জনকে একসঙ্গেও সমান ঝকঝকে দেখাবে। রাজকুমার বলছেন, “বিরাট চ্যালেঞ্জ নিতে ভীষণ ভালবাসে। তাই ক্যাপ্টেন্সি আর ব্যাটিং, দুটো জিনিস একসঙ্গে সামলানোটাকে ও চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নেবে। আর বিরাটকে আমি যা চিনি, নেতৃত্বের দায়িত্ব পেলে ও আরও বেশি করে প্রতিজ্ঞা নেবে। যাতে অধিনায়কত্ব ওর ব্যাটিংয়ে নেতিবাচক প্রভাব না ফেলতে পারে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy