ব্রাজিল এখান থেকে কোথায় যেতে পারে! একটা চ্যাম্পিয়ন টিম ১-৭ হারের ধাক্কা থেকে কী ভাবে বাঁচবে! দেশটার আত্মায় ফুটবল। তারা কী ভাবে এখন তৃতীয় হওয়ার লড়াই করতে উদ্বুদ্ধ হবে! খুব কঠিন প্রশ্ন! যার কোনও যুতসই উত্তর নেই।ইতিহাস নিশ্চয়ই এই দলটাকে মনে রাখবে। এবং দলের প্রতি সদস্যকেও। কিন্তু আমার মতে শুধু বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে সাত গোল হজম করার জন্যই এই টিমকে মনে রাখার দরকার নেই। ‘সন্মানের জন্য খেলা’ ধারণাটা এই মুহূর্তে ওদের কাছে একেবারে অপ্রাসঙ্গিক নয়। ব্রাজিল এখন আগের ম্যাচে লজ্জার স্কোরলাইন থেকে যতটা সম্ভব বেরিয়ে দাঁড়িয়ে ওঠার নিশ্চয়ই চেষ্টা করবে।
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, কোনও বড় টুর্নামেন্টে সেমিফাইনালে উঠে তার পর তিন-চার নম্বর হওয়ার জন্য খেলতে কারওরই ভাল লাগে না। আমাদের ইংল্যান্ডের এ রকম অবস্থা হয়েছিল ইতালিয়া’৯০-এ, যখন উদ্যোক্তা দেশের বিরুদ্ধে নিজের শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলেছিলাম আমি। চব্বিশ বছর পরেও আমি বেশ মনে করতে পারছি যে, সেই ম্যাচে ফোকাসড্ থাকতে কী প্রচণ্ড সমস্যা হয়েছিল। তার দু’দিন আগেই ফাইনালে ওঠার অত কাছে গিয়েও সেটা না পারায়। আর এই ব্রাজিলের মতো সে দিন আমাদের কোনও অজুহাত দেওয়ার ছিল না।
নব্বই বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে আমরাও জার্মানির কাছে হেরেছিলাম। তবে পেনাল্টি শুটআউটে। টাইব্রেকারে আমরা দু’টো মিস করেছিলাম আর জার্মানরা চারটে গোল করেছিল। ইতালি ম্যাচে ওদের সমর্থকেরা পুরোপুরি জাতীয় দলের পিছনে ছিল। যা তৃতীয় স্থান পাওয়ার ম্যাচেও বাড়তি উত্তেজনা তৈরি করেছিল। আর আমাদেরও সেমিফাইনালের হতাশা মুছে ফেলে ম্যাচে লড়াই দেওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছিল। শেষমেশ আমরা একটা বিতর্কিত পেনাল্টিতে ১-২ হেরেছিলাম। কিন্তু আমাদের সমর্থকেরা লুটন-এ হাজারে হাজারে এসে দলের জন্য গলা ফাটিয়েছিল, কাপের অত কাছাকাছি ইংল্যান্ড এসেছিল বলে। যেটা এখনও আমার কাছে দেশে ফেরার একটা অপ্রত্যাশিত স্বাগতম ছিল! তবে ব্রাজিল সমর্থকেরা এই মুহূর্তে অতটা দয়ালু মানসিকতায় হয়তো নেই। কিন্তু ওদের জাতীয় দলের মনে রাখা উচিত যে, এখান থেকে গোটা ব্যাপারটা একমাত্র ভালর দিকেই যেতে পারে। কারণ, ১-৭-এর চেয়ে খারাপ আর কী হতে পারে! সে কারণে, নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে আজ ম্যাচ শুরুর বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে ব্রাজিলের উচিত সমর্থকদের বোঝানোর চেষ্টা করা যে, এখনও আমরা ভাল খেলার ক্ষমতা রাখি। সেমিফাইনাল দুঃস্বপ্ন থেকে বেরিয়ে এসে, নিজেদের বিহ্বল অবস্থা কাটিয়ে ওদের উচিত বাস্তবে মনোনিবেশ করা। আর সেই বাস্তব হল, আজকের ম্যাচটা জেতা। সে ক্ষেত্রে ওরা কিন্তু টুর্নামেন্টটা জিতেই শেষ করবে!
তবে একেবারে আতসকাঁচের নীচে ফেলে দেখলে আমি বুঝতে পারছি, ব্রাজিল গোলকিপার জুলিও সিজারের মনে অবস্থা এখন ঠিক কী রকম! আমার খেলোয়াড়জীবনে এ রকম অবস্থায় দু’বার পড়েছি। একবার ষাটের দশকে লিস্টার সিটিতে যখন খেলতাম আর পরেরটা আশির দশকে যখন আমি সাউদাম্পটনে। দু’বারই সাত গোল খাওয়া টিমের গোলের নীচে আমি ছিলাম। কিন্তু সঙ্গে এটাও দু’বারই আমার মালুম হয়েছিল যে, কোনও রকম পাহারা ছাড়া একজন গোলকিপারের কী করুণ দশা হয়! দু’বারই আমার সামনের ডিফেন্স লাইন পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল আর প্র্যাকটিসে যেমন ধুপধাপ গোলে বল মারা হয়, তেমনই বিপক্ষ আমাদের গোলে পরের পর শট মেরেছিল। সত্যি বলতে কী, ফমের্র্র বিচারে আজ নেদারল্যান্ডসের জয়ের কথাই ভাবা হচ্ছে। আর্জেন্তিনার কাছে শেষ মুহূর্তে হারায় ওরা নিশ্চয়ই আরও ফুঁসছে। ওরা নিশ্চয়ই কিছু প্রমাণ করার চেষ্টা করবে এই ম্যাচে। ব্রাজিলের আবার তেমনই এই ম্যাচে কিছু হারাবার নেই, সবটাই প্রাপ্তি। সে জন্য বিশ্বকাপের তৃতীয় স্থানের প্লে-অফ, যেটাকে আপনারা যারা গুরুত্বহীন লড়াই বলে ভাবছেন, কে বলতে পারে, ভরা উত্তেজনা আর প্রচণ্ড লড়াইয়ের ম্যাচ হবে না?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy