তখন সতীর্থ। দ্রাবিড় ও ধোনি।
টেস্ট ক্রিকেট থেকে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির অপ্রত্যাশিত অবসরের দিন তিনি মুখ খোলেননি। ধোনির সিদ্ধান্ত ঘোষণার চব্বিশ ঘণ্টা পরে ভারতের প্রাক্তন টেস্ট অধিনায়ককে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন রাহুল দ্রাবিড়। বললেন, ধোনি কখনওই সাজানো-গোছানো বক্তৃতায় বিশ্বাস করতেন না। দৃষ্টান্তের মাধ্যমে দলকে নেতৃত্ব দিতেন।
“ধোনির নেতৃত্বে খেলাটা আমি উপভোগ করেছি। ওর যে ব্যাপারটা আমার খুব ভাল লাগত সেটা হল, ওর মধ্যে লুকোনো কোনও কিছু ছিল না। ওর মধ্যে যা দেখতেন, তাই পেতেন। কোনও ঘোরপ্যাঁচ ছিল না ওর মনে। সব সময় দৃষ্টান্ত দিয়ে নেতৃত্ব দিত। ওর ক্যাপ্টেন্সির আর একটা জিনিস আমার ভীষণ ভাল লাগত। ধোনি নিজে যেটা করতে পারবে না, সেই কাজটা ও কোনও দিনই অন্য কাউকে করতে বলত না,” এক ক্রিকেট ওয়েবসাইটের সাক্ষাত্কারে বলেছেন দ্রাবিড়। তিনি আরও বলেন, নিজের পারফরম্যান্সকে নজির হিসেবে তুলে ধরে টিমমেটদের সম্মান অর্জন করেছিলেন ধোনি।
“সত্যি বলতে কী, ধোনির কাজটা ছিল একদল সিনিয়রকে পরের স্তরে নিয়ে যাওয়া। পাশাপাশি টিমের নতুন সদস্যদের নিয়ে তরুণ ক্রিকেটারদেরও একটা গ্রুপ তৈরি করা,” বলে দ্রাবিড় আরও যোগ করেছেন, “টিমের সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখাটা ধোনির মধ্যে খুব একটা দেখিনি। কিন্তু ও যেটা বলছে, সেটা নিজে করে দেখিয়ে টিমের সবার সম্মান অর্জন করার চেষ্টা করত। কোনও দিন কোনও কিছু থেকে পিছিয়ে যেতে দেখিনি ওকে। অলঙ্কার মেশানো বক্তৃতা বা বড়-বড় কথা ওর নেতৃত্বের অংশ ছিল না। ও বরং পছন্দ করত কাজ করে দেখাতে, দৃষ্টান্ত দিতে।”
ঝাড়খণ্ড-পুত্রের সাফল্য যে ছোট শহরের ক্রিকেটারদের একটা গোটা প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে, তার জন্যও ধোনির বিশেষ কৃতিত্ব প্রাপ্য বলে মনে করেন দ্রাবিড়। তাঁর কথায়, “ভেবে দেখুন তো, রাঁচির মতো ছোট একটা শহর থেকে এসে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়া, নব্বইটা টেস্ট খেলা কী বিরাট ব্যাপার। ধোনি নেতৃত্বের চাকরিটাকে অন্য একটা উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। ধোনিকে সবার ভাল না-ও লাগতে পারে। কিন্তু ও নিজেকে নিয়ে খুব স্বচ্ছন্দ। আর অধিনায়ক হিসেবে ওর সাফল্যটা ওর কাছ থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।” সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “আর হ্যাঁ, ধোনি মূর্তিমান অনুপ্রেরণাও। আজ যদি দেশের ছোট ছোট শহরের বাচ্চারা বড় কিছু করে দেখানোর স্বপ্ন দেখে, তা হলে সেটায় ধোনির অবদান কম নয়। শুধু ক্রিকেট নয়, সব ক্ষেত্রেই।”
সিরিজের মাঝপথে অবসরের এই আকস্মিক ঘোষণায় অবাক দ্রাবিড়ও। “সত্যি, সিরিজের মধ্যে ধোনি এটা করবে, ভাবতে পারিনি। ভেবেছিলাম সিরিজের পরে হয়তো ব্যাপারটা নিয়ে ও ভাবনাচিন্তা করবে। যখন সাত-আট মাস ভারতের কোনও টেস্ট সিরিজ খেলার ছিল না,” বলে দ্রাবিড় আরও যোগ করেছেন, “তবে এমএস-কে যা চিনি, মনে হয় না সিরিজটা বেঁচে থাকলে ও এখন এই সিদ্ধান্তটা নিত। সিরিজটা হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছে দেখে বোধহয় ওর মনে হয়েছিল যে, যখন অবসর নিতেই হবে তো এখনই সঠিক সময়। বিরাট কোহলি তা হলে অস্ট্রেলিয়ায় আর একটা টেস্টে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পাবে। ঋদ্ধিমান সাহা আর একটা টেস্ট খেলার সুযোগ পাবে। দেশের টেস্ট টিম ভবিষ্যতের দিকে আর একটু এগোবে।”
আর ধোনির নেতৃত্ব নিয়ে দ্রাবিড় বলেছেন, “ভারতে ক্যাপ্টেন্সি করার সময় ও কখনও রক্ষণাত্মক ছিল না। স্পিনার থাকলেই অ্যাটাক করত। সব সময় ম্যাচটাকে ফয়সালার দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করত। শুধু বিদেশে, তা-ও গত তিন-চার বছরে মনে হয় ওর একটা অন্য ধারণা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আমার মনে হয় ধোনি ভাবত কুড়িটা উইকেট নেওয়ার মতো রসদ ওর বোলিং আক্রমণে নেই। আর তার জন্যই হয়তো এ রকম অনেক সময় এসেছে যখন ধোনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারিনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy