বুমেরাং পিচকে লক্ষ্মীর ‘আদর’। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
ঘাস ওড়ানো নয়, রেলের বিরুদ্ধে সেমিফাইনাল হেরে ব্যাটসম্যানদেরই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিলেন বাংলার কোচ অশোক মলহোত্র এবং অধিনায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্ল।
রাতে আনন্দবাজারকে অশোক বলে দিলেন উইকেট নয়, টিমকে হারিয়েছে তাঁর ব্যাটসম্যানদের মানসিকতা। বলে দিলেন, তালতলার হয়ে ক্লাব ম্যাচে পারফর্ম করা আর ইডেনে নেমে বাংলাকে ম্যাচ জেতানো, দুটোর মধ্যে আকাশপাতাল তফাত। ক্ষিপ্ত অশোক বলছিলেন, “কীসের উইকেটের কথা বলছেন? যারা উইকেটের প্রসঙ্গ তুলছে, তারা ম্যাচ কী দেখেছে না দেখেছে জানি না। আমার টিমের চারটে প্লেয়ার লক্ষ্মী, দিন্দা, মনোজ আর ঋদ্ধিমান। প্রত্যেক ম্যাচে কি এদেরই পারফর্ম করে যেতে হবে? বাকিরা তা হলে কী করতে আছে?” এখানেই না থেমে অশোকের ফের বিস্ফোরণ, “তালতলার হয়ে নেমে পারফর্ম করা এক জিনিস। আর বাংলার হয়ে পারফর্ম করা আর এক জিনিস। আরে, কেউ কেউ তো ভয় পেয়ে যাচ্ছে! ব্যর্থতার ভয়। উইকেট সেখানে কী করবে? এই বছর এত জুনিয়র প্লেয়ার খেলানো হল, একমাত্র সুদীপ (চট্টোপাধ্যায়) ছাড়া এক জনও কেউ কিছু করতে পেরেছে? কেউ তো জানেই না যে উইকেটে কী ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়! তবু ওদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। তার পরেও পারছে না।”
অশোক পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছেন, ‘ঘাস ওড়ানো ঘাস ওড়ানো’ বলে যে আওয়াজ তোলা হচ্ছে, তা মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়। বলছেন, “আরে বাবা, মাঠে নেমে তো তোমাকে রান করতে হবে। উইকেটে যদি কিছুই না থাকে, তা হলে ওদেরও পাঁচটা উইকেট পড়ত কি? আড়াইশো রান তুমি তুলবে না এই উইকেটে?”
অধিনায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্ল আবার সাংবাদিকদের অবাধ স্বাধীনতা দিয়ে গেলেন ব্যাটসম্যানদের নিয়ে ‘বিশেষণ’ বাছার! বললেন, “আপনারা যা খুশি লিখুন। আমার, গোটা টিমের ব্যাটিং নিয়ে জঘন্য থেকে শুরু করে কুৎসিত, যা যা মনে আসে, লিখে যান। পাটা উইকেট ছিল। সেখানে তিরিশ ওভারে ১০৫ উঠবে? কোনও যুক্তি নেই। কোনও অজুহাতও তাই দিচ্ছি না। সোজা কথা, ব্যাটিংটা কী ভাবে করতে হয়, সেটাই আমরা জানতাম না।” সঙ্গে আরও সংযোজন, “ব্যাটসম্যানদের কেউ দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারেনি। রেল সেখানে একটা টিম হিসেবে খেলে গিয়েছে। ওদের দেখে আমাদের শেখা উচিত।”
চলতি মরসুমের দল নির্বাচনের সময় যাঁদের বাদ দেওয়া হয়েছিল, এ বার কি তাঁদের ফেরানোর ভাবনাচিন্তা করবেন? লক্ষ্মীর জবাব, “কাকে বাদ দিয়ে কাকে ঢোকাব? সবাই তো এক। যারা বাদ গিয়েছে, তারা যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছিল। যারা এখন দলে আছে, তাদেরও প্রচুর সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। তার পরেও কেউ সেটাকে কাজে লাগাতে পারছে না। দলে বদল করেও কোনও উন্নতি দেখছি না।”
তবে বাংলার থিঙ্কট্যাঙ্ক পিচকে দোষী সাব্যস্ত না করলেও প্রাক্তনদের কেউ কেউ করছেন। বাংলার রঞ্জিজয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলছিলেন, “ঘাসটা উড়িয়ে ঠিক হয়নি। আমি রেলের অনুরীত সিংহ নিয়ে কেন ভাবতে যাব? ঘাস উড়িয়ে উইকেটটা প্রথমে হয়ে গেল ডাবল পেস্ড। পরে টিপিক্যাল ইডেন গার্ডেন্স উইকেট স্লো ব্যাটিং ট্র্যাক।” বাংলার কাটা ঘায়ে আবার নুনের ছিটে দিয়ে গেলেন রেলওয়েজ কোচ অভয় শর্মা। মাসদুয়েক আগে রঞ্জি যুদ্ধে হেরে ইডেন থেকে ফেরার যন্ত্রণা ভুলে হাসতে হাসতে রেল কোচ বলছিলেন, “সত্যি বলতে কী, ম্যাচের আগের দিন উইকেটটা দেখে আমরা ভীষণ খুশি হয়েছিলাম। ওর আগে রেল পরপর দুটো টস জিতেছে। ল অব অ্যাভারেজ বলছে, তৃতীয় বার হয়তো টসটা আমাদের পক্ষে যেত না। সেখানে আগের উইকেটটা থাকলে আমাদের অসুবিধেই হত। আমাদের টিমে দু’জন খুব ভাল স্পিনার আছে, ওরা ইডেনের পরিবেশটা দারুণ কাজে লাগিয়েছে।”
কোচের খুশির কারণ আরও আছে। বাংলাকে হারানোর পুরস্কার শুধু মাঠে নয়, মাঠের বাইরে থেকেও এল। রেল ক্রিকেটারদের প্রোমোশন। ফোর্থ ক্লাস স্টাফ ক্রিকেটাররা বাংলা-বধের পর ক্লার্ক!
ফাইনালে কর্নাটক
বিজয় হাজারের অন্য সেমিফাইনালে ঝাড়খণ্ডকে ২১ রানে হারিয়ে ফাইনালে উঠল কর্নাটক। সল্টলেক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে প্রথমে ব্যাট করে ৩২৩-৬ তোলে কর্নাটক। রবিন উত্থাপা আবার সেঞ্চুরি করলেন (১৩৩)। জবাবে লড়াই করলেও ৩০২-৯ স্কোরে থেমে যায় ঝাড়খণ্ড ইনিংস। ইশাঙ্ক জাগ্গি ১৪১ করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy