বিশ্বকাপ স্বপ্নে বিভোর ছিলেন দু’জনেই। এদেরই এক জন কলম্বিয়ার রাদামেল ফালকাও চোটের কারণে ছিটকে যান বিশ্বকাপ শুরুর আগেই। আর অন্য জন উরুগুয়ের লুই সুয়ারেজ তো এ বারের বিশ্বকাপের ট্র্যাজিক নায়ক! ইতালি ম্যাচে চিয়েলিনিকে কামড়ে নির্বাসিতই হয়ে গিয়েছেন ব্রাজিল বিশ্বকাপ থেকে। ফালকাওয়ের দেশ বিশ্বকাপে আবার নজর কেড়েছে তাদের দ্রুত গতির আক্রমণ এবং সেই আক্রমণ থেকে গোলের পর দৃষ্টিনন্দন নাচের সুবাদে। তিন ম্যাচে রবেনদের নেদারল্যান্ডসের (১০ গোল) পরেই গোলসংখ্যার বিচারে দ্বিতীয় কলম্বিয়া (৯ গোল)। কলম্বিয়ান কিপার দাভিদ অসপিনাও রয়েছেন দুর্দান্ত ফর্মে। তিন ম্যাচে দু’গোলের বেশি হজম করেননি। জাপানের বিরুদ্ধে একাই বাঁচিয়েছেন অব্যর্থ পাঁচটি গোল। সঙ্গে মারিও ইয়েপেস, জুনিগাদের ‘ব্যাক ফোর’। যা পাহাড়ের মতোই টপকানো কঠিন বলে প্রমাণিত গ্রুপ লিগের ম্যাচে। মাঝমাঠে কার্লোস সাঞ্চেজ, আবেল আগুইলারদের ধ্বংসাত্মক ফুটবল বড় ভরসা কলম্বিয়ার আর্জেন্তাইন কোচ হোসে পেকেরম্যানের।
বিশ্বকাপে কলম্বিয়া এ পর্যন্ত ৪-১-৪-১ ছকে খেললেও পেকেরম্যানের পছন্দের ছক কিন্তু ৪-২-৩-১। যেখানে তিন অ্যাটাকিং মিডিও বড় ভূমিকা নিয়ে থাকেন। আক্রমণে পাসের ফুলঝুরি নিয়ে তৈরি থাকেন হুয়ান কুয়ার্দাদো। আর সেই পাস থেকেই বিপক্ষকে পরানোর জন্য গোলের মালা তৈরিতে সিদ্ধহস্ত বাইশ বছরের জেমস রদরিগেজ। যাঁকে ভালদোরামা বলছেন ‘কলম্বিয়ার ফুটবল ভবিষ্যৎ’। গ্রুপ লিগে কলম্বিয়ার নয় গোলের মধ্যে সাতটাই এসেছে এই দু’জনের পা থেকে। শনিবার উরুগুয়ের বিরুদ্ধে সেই ছকই দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কম যান না জ্যাকসন মার্টিনেজ এবং তিওফিলো গুতিয়েরেজও। অন্য দিকে সুয়ারেজের নির্বাসনের বদলা নিতে মরিয়া দিয়েগো গদিনরা। কলম্বিয়ার সঙ্গে সম্মুখসমরে শেষ ছয় ম্যাচের চারটেতেই জিতেছে উরুগুয়ে। তিন ম্যাচে চার গোল করা উরুগুয়ের হয়ে দুটি গোলই করেন সুয়ারেজ। এই পরিস্থিতিতে সুয়ারেজের বদলি হিসেবে দিয়েগো ফোরলানকেই কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে নামানোর সম্ভাবনা ঘোরাফেরা করছে উরুগুয়ের কোচ অস্কার তাবারেজের মাথায়।
লাতিন আমেরিকান ফুটবলের ঝানু কোচ গ্রুপ লিগের তিন ম্যাচে তিন ফর্মেশনে দলকে খেলিয়েছিলেন। প্রথম ম্যাচে কোস্তারিকার বিরুদ্ধে ৪-৪-২ ছকে হারের পর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে একতরফা ম্যাচ জিতেছিলেন ৪-১-২-১-২ ছকে। আর ইতালির বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচে চলে গিয়েছিলেন তাঁর পছন্দের ৫-৩-২ ছকে। তবে শনিবার এডিনসন কাভানি এবং ফোরলানকে আক্রমণে রেখে তাবারেজ ফিরতে পারেন ইংল্যান্ড ম্যাচের ছকেই। দুই স্ট্রাইকারের ঠিক পিছনেই ‘ফ্রি ম্যান’ লোদেইরো। যাঁর ড্রিবল, দৌড়, দূরপাল্লার শট ব্যাঙ্ক বালান্স উরুগুয়ের। দলে ফিরছেন আক্রমণাত্মক মিডিও ক্রিশ্চিয়ানো রদরিগেজও। কিন্তু এত কিছুর পরেও মাঝমাঠ জমাট নয় উরুগুয়ের। মিস পাসের ছড়াছড়ি। কোচ পেকেরম্যান উরুগুয়ের এই দুর্বলতার সুযোগ নিলে শেষ আট এ বারের মতো অধরাই থেকে যাবে তাবারেজের দলের কাছে। তবে উরুগুয়ে কোচের ভরসা বাড়াচ্ছেন রক্ষণের স্তম্ভ দিয়েগো গদিন। যিনি নিজের দিনে একাই যে কোনও আক্রমণ রুখে দিতে পারেন।
কুড়ি বছর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে অন্যতম ফেভারিট কলম্বিয়া গ্রুপ লিগ থেকেই বিদায় নিয়েছিল। আত্মঘাতী গোল করায় দেশে ফিরে মাফিয়াদের গুলিতে আন্দ্রে এস্কোবার প্রাণ হারিয়েছিলেন ২৮ জুন। ঠিক সেই দিনেই শনিবার মারাকানাতে কলম্বিয়ার লড়াই কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার। সেই মারাকানা! যেখানে পঞ্চাশের বিশ্বকাপ ফাইনালে ব্রাজিলকে স্তব্ধ করে ঘিঘিয়ার গোলে কাপ জিতেছিল উরুগুয়ে। ঘিঘিয়া বলেছিলেন, “মারাকানার দর্শকদের চুপ করিয়ে দিতে পারেন তিন জন পোপ, ফ্রাঙ্ক সিনাত্রা ও ঘিঘিয়া।” এখন দেখার শনিবার মারাকানায় উরুগুয়ে নতুন কোনও ঘিঘিয়াকে খুঁজে পাবে? নাকি শেষ আটে উঠে এস্কোবারকে শ্রদ্ধা জানাবেন জেমস রদরিগেজরা?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy