Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
চিয়েলিনিও বলছেন, বাড়াবাড়ি শাস্তি

এর চেয়ে জেলে ঢুকিয়ে দিলেই পারত: মারাদোনা

ফিফার কঠোর নির্বাসনের রায় ঘাড়ে চাপার পর ব্রাজিল থেকে মন্তেভিডিওর প্রথম ফ্লাইটেই দেশে ফিরে গিয়েছেন লুই সুয়ারেজ। কামড়-কাণ্ডে ফুটবলসমাজের অনন্ত নিন্দেমন্দ মাথায় নিয়ে। কিন্তু উরুগুয়ে ফিরে সুয়ারেজ নির্ঘাত অবাক হবেন, আচমকা বিশ্বের দুই কিংবদন্তি ফুটবলারকে নিজের পাশে দেখে!

ছেলে বেঞ্জামিন ও মেয়ে ডেলফিনাকে কোলে নিয়ে মন্তেভিডিওয় নিজের মামার বাড়িতে সুয়ারেজ। ছবি: এএফপি।

ছেলে বেঞ্জামিন ও মেয়ে ডেলফিনাকে কোলে নিয়ে মন্তেভিডিওয় নিজের মামার বাড়িতে সুয়ারেজ। ছবি: এএফপি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৪ ০৩:৪১
Share: Save:

ফিফার কঠোর নির্বাসনের রায় ঘাড়ে চাপার পর ব্রাজিল থেকে মন্তেভিডিওর প্রথম ফ্লাইটেই দেশে ফিরে গিয়েছেন লুই সুয়ারেজ। কামড়-কাণ্ডে ফুটবলসমাজের অনন্ত নিন্দেমন্দ মাথায় নিয়ে। কিন্তু উরুগুয়ে ফিরে সুয়ারেজ নির্ঘাত অবাক হবেন, আচমকা বিশ্বের দুই কিংবদন্তি ফুটবলারকে নিজের পাশে দেখে!

তাঁদের নাম? দিয়েগো মারাদোনা এবং ব্রাজিলের রোনাল্ডো।

তবে এর চেয়েও বড় চমক সুয়ারেজের জন্য অপেক্ষা করছিল! উরুগুয়ে-ইতালি ম্যাচে বিপক্ষের যে ডিফেন্ডারকে সুয়ারেজ কামড়ে দিয়েছিলেন, সেই চিয়েলিনি পর্যন্ত ‘অপরাধী’র পাশে দাঁড়িয়ে পড়েছেন!

মারাদোনা: সুয়ারেজ বিপক্ষ প্লেয়ারকে কামড়ে ফুটবল খেলাটাকে যত না কলঙ্কিত করেছে, সেই অপরাধে ফিফার ওকে দেওয়া শাস্তির বহরটা আরও বেশি লজ্জার। এর চেয়ে সুয়ারেজকে হাতকড়া পরিয়ে গুয়ান্তানামোর জেলে ঢুকিয়ে দিলেই তো পারত ফিফা! এক জন চ্যাম্পিয়ন ফুটবলারের কেরিয়ারের মেয়াদ ছোট করে দেওয়ার মতো অন্যায় কাজ বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা কোন যুক্তিতে করল?

রোনাল্ডো: কামড়ালে ব্যথা লাগে জানি। আমার বাচ্চারা আমায় মাঝেমধ্যে কামড়ায়। তখন আমার মনে হয়, ওদের একটা অন্ধকার ঘরে বন্ধ করে রাখি। আর সেই ঘরে একটা বিরাট নেকড়ে ঢুকিয়ে দিই। এক জন প্রাপ্তবয়স্ক ফুটবলারকে চার মাস সব ধরনের ম্যাচ খেলতে না দেওয়ার শাস্তিটাও আমার মতে অনেকটা ওই রকমই। সুয়ারেজকেও যেন বিরাট নেকড়ের সঙ্গে একটা অন্ধকার ঘরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে!

চিয়েলিনি: চার মাস সমস্ত ধরনের ফুটবল খেলা থেকে সুয়ারেজকে নির্বাসিত করার শাস্তিটা মনে হয়ে একটু বেশিই হয়ে গিয়েছে! তার মানে নভেম্বরের আগে ও কোনও ক্লাবের হয়েও খেলতে পারবে না। আগামী মরসুমের অর্ধেকটাই সুয়ারেজের নষ্ট হয়ে যাবে। না, না। ফিফার সিদ্ধান্তে আমার আনন্দ পাওয়ার কোনও কারণ নেই। সুয়ারেজের প্রতি কোনও বিদ্বেষ বা প্রতিশোধ নেওয়া গেল-র মতো মনোভাবও নেই আমার।

কলঙ্কিত নায়কের সমর্থনে। ছবি: এপি।

সুয়ারেজের কঠোর শাস্তিতে যে তাঁর পরিবার বা উরুগুয়ে ফুটবল সংস্থা ক্ষুব্ধ হবে সেটাই স্বাভাবিক। সুয়ারেজের ঠাকুমা লিলা পিরিজ দ্য রোজা বলেছেন, “প্রত্যেকে বুঝতে পারছে ফিফার অভিসন্ধি। ওরা সুয়ারেজকে বিশ্বকাপ থেকে তাড়াতে চেয়েছিল। সেটা ওরা একেবারে নিখুঁত ভাবে করেছে। বিশ্বকাপ যদি একটা বাড়ি হয়, তা হলে সেই বাড়ি থেকে সুয়ারেজকে কুকুরের মতো দূর করে দেওয়া হয়েছে।” আর উরুগুয়ে ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট উইলমার ভালদেসের কথায়, “মনে হচ্ছে, উরুগুয়েকেই বিশ্বকাপ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে ফিফা।”

তবে এহেন বলবর্ধককারী সব প্রতিক্রিয়ায় সুয়ারেজ যে খুব তাজা হয়ে উঠছেন তাও নয়। বরং তাঁর আইনজীবী আলেকজান্দার বালবি বলেছেন, “সুয়ারেজ সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে।” যদিও তাঁর জন্য ভাল খবর, নির্বাসিত সুয়ারেজকেও আগামী মরসুমে দলে পেতে চাইছে বার্সেলোনা। মেসি-নেইমারের পাশে তারা আক্রমণে তৃতীয় ফলা করতে চায় সুয়ারেজকে। আর্জেন্তিনা-ব্রাজিল-উরুগুয়ে, ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে লাতিন আমেরিকান ত্রিভুজ নিয়ে আক্রমণে ঝাঁপানোর পরিকল্পনা নিচ্ছে বার্সা। কিন্তু ফিফার শাস্তির জেরে নভেম্বরের আগে বার্সার গেমপ্ল্যান কার্যকর হওয়ার সুযোগ নেই। লিভারপুলও সুয়ারেজ ইস্যুতে নড়েচড়ে বসেছে। ইতিমধ্যেই তারা আইনি পরামর্শ নিয়েছে তাদের ক্লাবে সুয়ারেজের ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, নির্বাসিত সুয়ারেজকে নিয়েও লিভারপুল-বার্সেলোনায় আগামী দিনে দড়ি টানাটানি চলবে।

বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়া আর পরের চার মাস সমস্ত ধরনের ফুটবল খেলার উপর নিষেধাজ্ঞা ছাড়াও ঠিক এই মুহূর্তে সুয়ারেজের যেটা ক্ষতি, সেটা পুরোপুরি আর্থিক। এক বিখ্যাত অনলাইন বেটিং সংস্থা বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, এই মুহূর্ত থেকে সুয়ারেজের সঙ্গে সমস্ত বাণিজ্যিক সম্পর্ক তারা ছেদ করল। ‘আডিডাস’ আবার চলতি বিশ্বকাপে সুয়ারেজকে নিয়ে তাদের সমস্ত ক্রীড়া সরঞ্জামের বিজ্ঞাপন বাতিল করে দিয়েছে। বিশ্বকাপের পর সিদ্ধান্ত নেবে, সুয়ারেজকে আদৌ আর বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করবে কি না!

অন্য বিষয়গুলি:

chiellini fifaworldcup suarez maradona
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE