বাবাকে মিস্টু বলেছিল, তোমার ছাত্রী মানে তোমার মেয়েরই মতো। তার জন্য লড়াই শুরু করে ঠিকই করেছ।
কামদুনির ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলনে নামার পর কামদুনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রদীপ মুখোপাধ্যায় যখন শাসকের ভয়ঙ্কর আক্রমণের মুখে, তখনও মেয়ে মিস্টুই সাহস জুগিয়েছিল। আবার বলেছিল, লড়াই ছেড়ো না বাবা।
প্রদীপবাবুদের লড়াই সফল হয়েছে। কামদুনির ধর্ষকদের কঠোরতম সাজা ঘোষণা করেছে আদালত। এ বার মিস্টুর লড়াইও সফল হল।
শতপর্ণা মুখোপাধ্যায় তথা মিস্টু বাবাকে মনেজ জোর জোগানোর পাশাপাশি নিজের লক্ষ্যেও এগিয়ে যাচ্ছিল নীরবে। স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা গোটা পৃথিবী থেকে পাঁচ জন পড়ুয়াকে বেছে নিয়েছে ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর তত্ত্ব নিয়ে গবেষণামূলক ইন্টার্নশিপ করার জন্য। সেই পাঁচ জনের অন্যতম কামদুনির প্রতিবাদী শিক্ষক প্রদীপ মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে শতপর্ণা ওরফে মিস্টু। এখানেই শেষ নয়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়ার ইচ্ছাও অনেক দিন ধরে নিজের মনে লালন করে আসছিল শতপর্ণা। উচ্চমাধ্যমিক (আইএসসি) পরীক্ষার প্রস্তুতির ফাঁকেই অক্সফোর্ডে প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়েছিল সে। সেই পরীক্ষার ফলও প্রকাশিত হয়েছে। সারা পৃথিবী থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশ নেওয়া পড়ুয়াদের মধ্যে শতপর্ণার স্থান দ্বিতীয়। এত ভাল রেজাল্ট যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই মেধাবী শতপর্ণার বিলেতে থাকা ও পড়াশোনার সব খরচ বহন করবে। সঙ্গে মাসে মোটা অঙ্কের সাম্মানিকও দেওয়া হবে তাকে।
আরও পড়ুন:
সাঁওতালি অনুবাদে শরত্চন্দ্র, পুরস্কার তালা টুডুর
শুক্রবার থেকে শতপর্ণার আইএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। প্রদীপবাবুর ছোট্ট পরিবারে এখন ব্যস্ততা তুঙ্গে। কিন্তু মধ্যমগ্রামের মতো শহরতলি থেকে ১৭ বছরের শতপর্ণা সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় যা করেছে, তা প্রায় অসাধ্যসাধনের সমান। এক বছর আগে কৃষ্ণগহ্বর তত্ত্ব নিয়ে নিজের ভাবনাচিন্তা লিখে শতপর্ণা ই-মেল পাঠিয়েছিল নাসায়। নাসা কর্তৃপক্ষ শতপর্ণাকে সম্প্রতি চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছে, গোটা পৃথিবী থেকে যে পাঁচ জনকে মহাকাশ গবেষণার ইন্টার্নশিপের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে শতপর্ণা এক জন। অক্সফোর্ডে পড়ার জন্য যে প্রবেশিকা পরীক্ষা শতপর্ণা দিয়েছিল, তাতেও সে সফল। জাপানের এক পড়ুয়া প্রথম হয়েছে সেই পরীক্ষায়। শতপর্ণা মুখোপাধ্যায় দ্বিতীয়।
অগস্টেই বিলেত রওনা দিচ্ছে প্রদীপ মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে। বাবাকে প্রেরণা জুগিয়েছে কামদুনির লড়াইয়ের জন্য। নিজের লড়াইতে প্রেরণা খুঁজে নিয়েছে নিজেই। মধ্যমগ্রামের মুখোপাধ্যায় পরিবারে সাফল্য আজ সব ক্ষেত্রেই। তবু মনটা খারাপ প্রদীপবাবু ও তাঁর স্ত্রী সন্ধ্যাদেবীর। মেয়েটাকে বেশ কয়েক বছরের জন্য অনেক দূরে পাঠাতে হবে যে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy