গ্রাম ঘিরতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জাল। নিজস্ব চিত্র
কথায় বলে, যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধে হয়। আর সেই ভয়টাই ইদানীং এতটাই ঘনিয়েছে, সন্ধে নামতে না নামতেই সুনসান বাজার। জনমনিষ্যিহীন গ্রামের পথঘাট।
তিন দিন আগেও ছবিটা এ রকম ছিল না।
কিন্তু ঝড়খালির নির্মীয়মাণ ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রের নতুন অতিথি, একদা জঙ্গলের ‘রাজপুত্র’ সুন্দরকান্তের হুঙ্কার রাইকিশোরীর কানের ভেতর দিয়ে মরমে পশেছে! আকুল রাইকিশোরী অতএব গভীর রাতে বেরিয়ে পড়ছে অভিসারে। রাতবিরেতে নদী সাঁতরে বেরিয়ে পড়ছে সে। মাতলার চরে দিনের বেলা গ্রামবাসীরা দেখতে পাচ্ছেন বাঘিনির টাটকা পায়ের ছাপ।
গত বৃহস্পতিবার আলিপুর চিড়িয়াখানা থেকে নতুন ঠিকানায় আসার পর থেকেই শুরু হয়েছে দুই বাঘ-বাঘিনীর তর্জন-গর্জন। পরস্পরের নিরাপত্তার খাতিরে দু’জনের মেলামেশায় বাধ সাধায় এই প্রজনন ঋতুতে সঙ্গীর খোঁজে বাড়ছে তাদের হুঙ্কার। ডাকে সাড়া দিয়ে ঝড়খালির ও পারের হেড়োভাঙা জঙ্গল থেকে ঘুরে যাচ্ছে অন্য বাঘ-বাঘিনী। শনিবার মাতলায় মাছ ধরতে গিয়ে ত্রিদিবনগরের কাছে নদীর চরে মৎস্যজীবীরা তাদের পায়ের ছাপ দেখতে পান। শুধু তাই নয়, জঙ্গল থেকেও শুনতে পান পাল্টা হুঙ্কার। জঙ্গলের এ পার-ও পারের প্রেম নিবেদনে এমনই আতঙ্ক ছড়িয়েছে, সন্ধের পর আর কেউ বাড়ির বাইরে বেরোতে সাহস করেছেন না। বেরোলেও দল বেঁধে, লাঠি-টর্চ নিয়ে।
নদী সাঁতরে এলাকায় ঢুকে পড়ায় মেয়েরা মাতলা নদীতে মীন ধরা বন্ধ করে দিয়েছেন। দিনের বেলাতেও চরে যেতে সাহস পাচ্ছেন না তাঁরা। আগে রোজ নদীতে মীন ধরতে যেতেন মিনু কয়াল, হেমন্ত কয়াল। সেই তাঁদেরই গলায় অন্য সুর, “কী জানি, যদি বাঘের হানায় শেষমেশ বেঘোরে প্রাণটা যায়! তাই মীন ধরা বন্ধ করে দিয়েছি।” বাঘের ডাক তাঁদের কাছে অবশ্য নতুন নয়। কিন্তু ক্রমাগত এই গজর্ন-পাল্টা গর্জন ঘুম কেড়ে নিয়েছে বাসন্তীর ঝড়খালি-৪, ত্রিদিবনগর, কানমারি, দ্বিতীয় স্কিমের বাসিন্দাদের। ত্রিদিবনগরের ডি-ব্লকের বাসিন্দা শ্যামলী মিস্ত্রি, রবীন্দ্রনাথ মিস্ত্রিরা বলেন, “এত বাঘের ডাক আগে কখনও শুনিনি। রাতে খোলা দাওয়ায় শুতেও ভয় করছে। ভয়ে ঘরের দরজা-জানলা বন্ধ করে থাকতে হচ্ছে।” রিকশা চালক গোপাল কয়াল বলেন, “সন্ধে নামতেই বাজার ফাঁকা। কোনও যাত্রী নেই। তাই তার আগেই বাড়ি চলে আসছি।” সমবায় বাজার, বালি বাজার, কানমারি বাজারের ব্যবসায়ীদেরও একই অনুযোগ।
আতঙ্কিত গ্রামবাসীরা চাইছেন, বন দফতর যাতে গ্রামের দিকে ৭ কিলোমিটার এলাকা জাল দিয়ে ঘিরে দেন। তা হলে যদি এ পারে বাঘের হানার সম্ভাবনা কিছুটা কমে। এ দিন ঝড়খালিতে গিয়ে দেখা গেল, বনকর্মীরা গ্রামের দিকে জাল নিয়ে যাচ্ছেন ঘেরার জন্য। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বনবিভাগের ডিএফও লিপিকা রায় বলেন, “মানুষের নিরাপত্তার কারণে ত্রিদিবনগরের দিকে জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হচ্ছে। কর্মীরা সব সময় নজরদারি চালাচ্ছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy