ল্যান্ডার বিক্রম থেকে রোভার প্রজ্ঞানের চাঁদের মাটিতে নামার মুহূর্ত। ছবি: পিটিআই।
কী ভাবে তার পেট থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে এসে চাঁদের মাটিতে পা রেখেছে রোভার ‘প্রজ্ঞান’, ল্যান্ডার ‘বিক্রম’ সকালেই সেই ভিডিয়ো পাঠিয়েছে। আর শুক্রবার সন্ধ্যায় ইসরো জানাল, চাঁদের মাটিতে ঠিক কতটা পথ পেরোল ‘প্রজ্ঞান’। পাশাপাশি, তার অগ্রগতির গতিপ্রকৃতিও জানিয়েছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। কোথাও কোনও বিচ্যুতি নেই। ইসরোর ছকে রাখা পরিকল্পনামাফিকই এখনও পর্যন্ত এগোচ্ছে ভারতের তৃতীয় মনুষ্যবিহীন চন্দ্র অভিযান।
গোটা বিশ্বকে অবাক করে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নেমেছে ভারতের চন্দ্রযান-৩। গত বুধবার। ওই দিন বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিট থেকে তাকে চন্দ্রপৃষ্ঠে নামানোর মূল কাজ আরম্ভ হয়। অবতরণ প্রক্রিয়ায় লাগে মোট ১৯ মিনিট। ঘড়ি ধরে, নিঁখুত ভাবে সন্ধ্যা ৬টা ৪মিনিটে চাঁদের মাটিতে প্রথম বার পা রাখে ‘বিক্রম’। তার পর চাঁদের পিঠে বসে কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম। তার পর বিক্রমের পেটের কাছে খুলে যায় একটি জানলা। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ওই জানলা দিয়ে গড়গড়িয়ে নেমে আসে রোভার ‘প্রজ্ঞান’। তার গড়িয়ে নামার ভিডিয়ো তোলে ‘বিক্রম’। ওই ভিডিয়োই শুক্রবার সকালে প্রকাশ করে ইসরো। বেলা পড়লে জানা গেল, চাঁদের মাটিতে নামাই শুধু নয়, গড়গড়িয়ে এগোতেও শুরু করে দিয়েছে রোভার। ইসরো জানিয়ে দিল, ৮ মিটার মতো দূরত্ব অতিক্রম করে ফেলেছে ‘প্রজ্ঞান’। এ বার কেবলই এগোনোর পালা।
শুক্রবার ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ১৯ মিনিটে ইসরো এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে জানায়, পরিকল্পনামাফিক রোভার ‘প্রজ্ঞান’ চলাফেরা করতে শুরু করে দিয়েছে। রোভারটি সফল ভাবে ৮ মিটার পথ অতিক্রম করে ফেলেছে। প্রজ্ঞানের পে-লোড ‘এলআইবিএস’ এবং ‘এপিএক্সএস’ চালু করে দেওয়া হয়েছে।
চাঁদের দক্ষিণ মেরু পৃথিবীবাসীর কাছে এত দিন অনাবিষ্কৃত ছিল। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে প্রথম মহাকাশযান অবতরণ করাল ভারতই। সেই সঙ্গে চাঁদে ‘সফ্ট ল্যান্ডিং’ করানোর ক্ষেত্রে সফল দেশগুলির ‘এলিট’ তালিকায় জুড়ে গিয়েছে ভারতের নাম। এর আগে এই কৃতিত্ব ছিল কেবল আমেরিকা, রাশিয়া এবং চিনের।
চন্দ্রপৃষ্ঠে হাঁটছে প্রজ্ঞান
চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের পর নিজের কাজ করতে শুরু করে দিয়েছে রোভার ‘প্রজ্ঞান’। সন্ধ্যায় ইসরো এক্স-এ জানায়, পরিকল্পনামাফিকই এগোচ্ছে সে। ইতিমধ্যেই চাঁদের পাথুরে মাটিতে ৮ মিটার পথ অতিক্রমও করে ফেলেছে। তবে এ হাঁটা সাধারণ হাঁটা নয়, হাঁটার পাশাপাশি খুঁটিয়ে দেখা চাঁদের মাটির বৈশিষ্ট্য। খতিয়ে দেখা পৃথিবীর উপগ্রহের ভূপ্রকৃতিও। সেই ইঙ্গিত মিলেছে ইসরোর বার্তাতেও। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে, ‘এলআইবিএস’ এবং ‘এপিএক্সএস’— প্রজ্ঞানের ভিতরে দু’টি পে-লোড চালু হয়ে গিয়েছে। প্রজ্ঞান তো হেঁটে বেড়াবে চাঁদের মাটিতে, তা হলে পে-লোডের কাজ কী? বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ‘এপিএক্সএস’ বা ‘আলফা পার্টিকল এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার’, যার কাজ হল চাঁদের মাটির রাসায়নিক গঠন এবং মাটির নীচে লুকিয়ে থাকা খনিজ ভান্ডারের গঠনের বিজ্ঞানসম্মত অনুমান। আপাতত সেই কাজও করতে শুরু দিয়েছে এপিএক্সএস। এপিএক্সএস ছাড়াও আরও একটি পে-লোড কাজ করছে। তা হল, ‘এলআইবিএস’ বা ‘লেসার-ইনডিউসড ব্রেকডাউন স্পেকট্রোস্কোপ’। এই পে-লোডটি চাঁদের মাটি এবং শিলার মৌলিক গঠন অর্থাৎ ম্যাগনেশিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম, সিলিকন, টাইটেনিয়াম প্রভূতি রাসায়নিক কী রূপে মিশে রয়েছে, তা নিরুপণ করবে। চাঁদে যে সময় বিক্রম পা রেখেছিল, তখন সেখানে সবে ভোরের আলো ফুটেছে। পৃথিবীর সময় অনুযায়ী আগামী ১৪ দিন সেখানে দিনের আলো থাকবে। এই সময়ের মধ্যে চাঁদের মাটিতে ঘুরে ঘুরে রোভার তথ্য সংগ্রহ করবে। ‘বিক্রম’ সেই তথ্য পাঠাবে পৃথিবীতে। সৌরশক্তিতে কাজ করবে ‘বিক্রম’ এবং ‘প্রজ্ঞান’। আপাতত বিক্রম অবতরণস্থলেই দাঁড়িয়ে থাকবে। ভারত থেকে যাবতীয় বার্তা সরাসরি পৌঁছবে বিক্রমে। তার পর ‘বিক্রম’ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে সেই বার্তা বেছে প্রয়োজন অনুসারে পাঠাতে থাকবে চন্দ্রপৃষ্ঠে ঘুরে বেড়ানো রোভার প্রজ্ঞানে। অর্থাৎ, ভারতের মাটিতে বসে বিজ্ঞানীরা নিয়ন্ত্রণ করবেন চাঁদের মাটিতে ঘুরে বেড়ানো রোভারটিকে। এ ছাড়াও আরও একটি কাজ করে যাবে ‘বিক্রম’— তা হল গোটা পরিস্থিতির প্রতি মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করা। ঠিক যে ভাবে বিক্রমের পেট থেকে ‘প্রজ্ঞান’ গড়িয়ে নেমে চলতে শুরু করে চাঁদের মাটিতে, সে ভাবেই রোভারের প্রতি মুহূর্তের নড়াচড়ার স্থির এবং চলচ্চিত্রও ধরে রাখবে সে। এক্স হ্যান্ডলে ইসরো আরও জানিয়েছে, প্রোপালশন মডিউল, ল্যান্ডার মডিউল এবং রোভারের সমস্ত পে-লোডই কাজে নেমে পড়েছে। অর্থাৎ, ইসরোর বিজ্ঞানীদের পরিকল্পনা মতোই চাঁদের মাটিতে কাজ করতে শুরু করে দিয়েছে চন্দ্রযান-৩।
‘প্রজ্ঞান’ নামল চাঁদের মাটিতে
চাঁদের মাটি ছোঁয়ার পরেই ক্যামেরা চালু করে দিয়েছিল ‘বিক্রম’। আরও অনেকের সঙ্গে সেই ছবি নাসা প্রকাশ করে। তার পর থেকেই প্রহর গোনার পালা শুরু, বিক্রমের পেট থেকে রোভার ‘প্রজ্ঞান’ বেরিয়ে আসছে কখন? সেই কৌতূহলের নিরসন ঘটিয়ে চাঁদের মাটিতে সফল ভাবে প্রজ্ঞানের অবতরণের ভিডিয়ো পাঠাল ‘বিক্রম’। সেই ভিডিয়ো এক্সে ছড়িয়ে দেয় ইসরো। দেখা যায়, বিক্রমের পেটের কাছাকাছি একটি জানলা খুলে গেল। তা থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে এসে চাঁদের মাটিতে নামল ‘প্রজ্ঞান’। ভিডিয়োটি শেয়ার করে ইসরো এক্সে লিখেছে, “চন্দ্রপৃষ্ঠে রোভার প্রজ্ঞানের অবতরণ। ল্যান্ডার বিক্রম থেকে বেরিয়ে চাঁদের মাটি ছুঁল সে। সেই ভিডিয়ো তুলল ল্যান্ডার বিক্রম।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy