পৃথিবীতে ফিরে এলেও মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস, বুচ উইলমোরদের এখন ঘরে ফেরায় ঢের দেরি।
সুনীতা ও তাঁর তিন সঙ্গী নভশ্চরকে এখন হিউস্টনে নাসার সদর দফতর ‘জনসন স্পেস সেন্টার’-এ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে চলবে ৪৫ দিনের ‘রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রাম’। দীর্ঘ মহাকাশবাসের পরে পৃথিবীর পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার পরীক্ষা।
দীর্ঘ মহাকাশবাসের ফলে পৃথিবীতে ফেরার পরে মহাকাশচারীদের পেশির দুর্বলতা, হৃদ্যন্ত্রে সমস্যা, দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে পারে। মহাকাশ স্টেশনে মাধ্যাকর্ষণ কম থাকায় শরীরের তরল অংশ মাথার দিকে চলে যায়। এতে হৃদ্যন্ত্রের উপর চাপ পড়ে। চাপ বাড়ে মস্তিষ্কেও। শরীরের নীচের অংশে তরলের ঘাটতি হওয়ায় নভশ্চরদের পা রোগা ও দুর্বল হয়ে যায়। আর ভারী হয়ে যায় মাথা। মুখ ফুলে যায় অনেকের। এই ঘটনাকে ‘পাফি-হেড বার্ড লেগ’ সিনড্রোম বলে। পাশাপাশি, দীর্ঘদিন মহাকাশে পায়ে হাঁটা চলার অভ্যাস না থাকায় পায়ের পাতা শিশুদের মতো নরম হয়ে যায়। পরতের মতো চামড়া উঠতে শুরু করে। যার নাম ‘বেবি ফিট সিনড্রোম’। ফলে হাঁটাচলা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
আগামী ৪৫ দিন এ সবের মোকাবিলার জন্য তিন দফায় চিকিৎসা চলবে সুনীতাদের। শরীরচর্চা ও ফিজ়িয়োথেরাপির মাধ্যমে তাঁদের সুস্থ করা হবে।
এর পরের সময়টা তাঁরা পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে কাটাবেন। মহাকাশে থাকার সময়েই সুনীতা বলেছিলেন, পরিবার ও পৃথিবীর জন্য কতটা মন খারাপ হয় তাঁর। সুনীতা জানিয়েছেন, ঘরে ফিরে পোষ্য দুই ল্যাব্রাডর কুকুরকে নিয়ে আগের মতো সমুদ্রে সাঁতার কাটতে চান। এত দিন তাঁর স্বামী মাইকেল জে উইলিয়ামস, প্রাক্তন মার্শাল, সুনীতার প্রিয় পোষ্যদের দেখাশোনা করেছেন।
এর পরের সময়টা মহাকাশ সংক্রান্ত গবেষণায় ডুবে যেতে চান সুনীতা। দীর্ঘ মহাকাশবাসের অভিজ্ঞতা, গবেষণা, প্রতিকূলতা এবং শিক্ষা— সবটুকু দিয়ে নাসার ভবিষ্যৎ অভিযাত্রীদের সমৃদ্ধ করতে চায়। বিভিন্ন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান, অনুপ্রেরণামূলক বক্তৃতা, ভবিষ্যতের নভশ্চর, প্রযুক্তিবিদ এবং মহাকাশ উৎসাহীদের তৈরি করার কাজে সুনীতা মন দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
সুনীতাদের মহাকাশ থেকে ফেরাতে কত টাকা খরচ হয়েছে, তা প্রকাশ্যে এসেছে। সুনীতারা যে যানে পৃথিবীতে নেমেছেন, সেই ড্রাগন ক্যাপসুলের খরচ ধরলে তা প্রায় ভারতীয় মুদ্রায় ১২ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)