অভিনব পদ্ধতিতে শিশুর হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন আমেরিকায়। ছবি- ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌজন্যে।
হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের একটি বহুকাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছনো এই প্রথম সম্ভব হল। এর ফলে হয়তো আগামী দিনে প্রতিস্থাপিত হৃদপিণ্ড অল্প সময় বা অল্প ক’দিনের মধ্যেই অচল হয়ে গিয়ে গ্রহীতার অকাল মৃত্যু ডেকে আনবে না।
আর সেই বহু কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছনো সম্ভব হল একটি নজরকাড়া অস্ত্রোপচারে। মাত্র ছয় মাস বয়সি একটি শিশুর শরীরে।
গবেষক চিকিৎসকদের সেই অভিনব পদ্ধতিতে প্রতিস্থাপিত হৃদপিণ্ড গ্রহীতা ছয় মাসের শিশুটির শরীরে তার নিজের হৃদপিণ্ডের মতোই কাজ করে চলেছে গত ছয় মাস ধরে। শিশুটির শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা তাকে ‘বিদেশি’ ঠাওড়ে অমান্য করেনি। প্রতিস্থাপিত হৃদপিণ্ডকে শিশুটির নিজের বলেই মেনে নিয়েছে এখনও পর্যন্ত। শিশুটি তার প্রথম জন্মদিনটিও কাটাতে পেরেছে হেসে-খেলেই।
পদ্ধতির অভিনবত্ব এইখানেই যে, গবেষকরা শুধুই অন্যের হৃদপিণ্ড এনে শিশুটির দেহে প্রতিস্থাপন করেননি। তার দু’সপ্তাহ পর দাতার শরীর থেকে সংগ্রহ করা থাইমাস কোষ, কলাগুলিকেও সফল ভাবে প্রতিস্থাপন করেন গ্রহীতা শিশুটির শরীরে। যাতে সেই থাইমাস কলাগুলি শিশুটির শরীরে এমন প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে যা অন্যের দেহ থেকে নেওয়া হৃদপিণ্ডটিকে শিশুর নিজস্ব বলেই বোঝাতে পারে। আমেরিকার ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক চিকিৎসকদের সেই নজরকাড়া হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন পদ্ধতি সফল হয়েছে বলে শিশুটির নিজস্ব প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রতিস্থাপনের ছয় মাস পরেও অন্যের শরীর থেকে নেওয়া হৃদপিণ্ডটিকে শিশুটির নিজস্ব বলে মেনে নিতে কোনও আপত্তি করেনি। তাকে শিশুটির নিজস্ব হৃদপিণ্ড বলেই মেনে নিয়েছে।
গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক চিকিৎসাবিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘ক্লিনিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ’-এ।
এখন প্রতিস্থাপিত হৃদপিণ্ড খুব বেশি হলে গ্রহীতার শরীরে ১০ থেকে ১৫ বছর কাজ করে। তার পর অচল হয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, প্রতিস্থাপনের পর যত দিন গ্রহীতা বাঁচেন তত দিন ধরে তাঁকে নিয়মিত জীবনদায়ী ওষুধ খেয়ে যেতে হয়। যাতে তাঁদের কিডনি দুর্বল হয়ে পড়ে। তাঁদের অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত হতে হয়। এই পদ্ধতি সেই সমস্যাও দূর করবে, এমনটাই আশা বিশেষজ্ঞদের একাংশের।
যিনি এই নজরকাড়া পদ্ধতিতে হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দিয়েছেন সেই ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের পিডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের প্রধান জোসেফ টুরেক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, ‘‘আমেরিকার নর্থ ক্যারোলাইনার এই শিশুটির নাম— ইস্টন সিনামোন। জন্মের পর থেকেই তার হৃদপিণ্ডের নানা ধরনের জটিলতা দেখা যায়। সে সব দূর করতে প্রথমে ওপেন হার্ট সার্জারি করা হয় শিশুটির ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালেই। তার বয়স তখন মাত্র পাঁচ দিন। তার পরেও শিশুটির হৃদপিণ্ড স্বাভাবিক হয়নি। তখন হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের কথা ভাবা হয়। কিন্তু এও দেখা যায় শিশুটির দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলার মতো থাইমাস কলারও যথেষ্ট অভাব রয়েছে শিশুটির দেহে। ফলে, বোঝা যায় হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন করলেও শিশুটির শরীর তাকে মেনে নেবে না।’’
এর পরেই শিশুটির হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের সঙ্গে সঙ্গে তাকে দাতার শরীরের থাইমাস কলারও প্রতিস্থাপনের কথা ভাবা হয়। যাতে শিশুর দেহ দাতার হৃদপিণ্ডকে বিদেশি মনে করে বর্জন না করে।
হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের সঙ্গে দাতার থাইমাস কলাও গ্রহীতার শরীরে প্রতিস্থাপন করা হলে গ্রহীতার শরীর তাকে মেনে নেয় কি না তা নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই গবেষণা চলছে ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিভিন্ন প্রাণীর দেহে তা আগে পরীক্ষা করেও দেখা হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে কারও হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন আর থাইমাস কলার অভাব রয়েছে এমন কোনও রোগী পাননি এর আগে পাননি গবেষকরা। তাই ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালেই পরীক্ষাটি করার জন্য আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)-এর জরুরি অনুমোদন চাওয়া হয়। সেই অনুমোদন মেলার পরেই গত বছরের অগস্টে শিশুটির দেহে হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন করা হয়। তার দু’সপ্তাহ পর শিশুটির দেহে প্রতিস্থাপন করা হয় দাতার শরীর থেকে নেওয়া থাইমাস কলা যেগুলি গবেষণাগারে নানা ধরনের রাসায়নিক দ্রবণে রাখা হয়েছিল।
টুরেক জানিয়েছেন, এই পদ্ধতিতে সাফল্য আগামী দিনে শুধু হৃদপিণ্ডই নয়, অন্য যে কোনও অঙ্গ প্রতিস্থাপনে নতুন দিশা দেখাতে পারে। এর ফলে, অন্যের শরীর থেকে নেওয়া কোনও অঙ্গই আর গ্রহীতার শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা বিদেশি বলে বর্জন করবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy