Advertisement
E-Paper

জন্মের পর সপ্তাহ তিনেক শিশু কাঁদলেও কেন বেরয় না চোখের জল?

তা শৈশবেই হোক বা পরিণত বয়সে, আমরা কেঁদে ফেলি মূলত চারটি কারণে। খুব দুঃখ পেলে। খুব রেগে গেলে। গভীর ভালবাসায় হৃদয় টলমল করে উঠলে। আর গভীর আনন্দে। যার একটা আলাদা নামও রয়েছে। আনন্দাশ্রু!

যে কান্নায় নেই কোনও চোখের জল! অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস

যে কান্নায় নেই কোনও চোখের জল! অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১২:৫০
Share
Save

জন্মের পর তার প্রথম কয়েকটা দিনের কান্নাকাটিতে কখনও কি কোনও শিশুর চোখের কোল বেয়ে গালে ও চিবুকে জল গড়িয়ে পড়তে দেখেছেন? দেখেননি তো?

অথচ, কানফাটানো কান্নার শব্দই জানিয়ে দেয়, কোনও শিশু পৃথিবীর আলো দেখেছে। ভূমিষ্ঠ হয়েছে। এও বুঝিয়ে দেয়, শিশুটি জন্মেছে সুস্থ শরীরে। তার শরীরের ‘ঘড়ির কাঁটা’ ঠিকঠাকই চলছে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় শিশুদের এই কান্নাকে বলা হয়, ‘বেবি ক্রাই’। অথচ, সেই কান্নায় শিশুর চোখ থেকে এক বিন্দু জলও গড়িয়ে পড়ে না। কেন?

আমরা কেন কাঁদি?

সেই কারণটা জানতে হলে প্রথমে বুঝতে হবে আমরা কেন কাঁদি? কী ভাবে আমাদের চোখের কোল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। গালে ও চিবুকে। সেই চোখের জল বা অশ্রুবিন্দু আমাদের চোখকে ভাল রাখে। ভিজিয়ে রাখে। সজীব রাখে। এমনটাই বলেন বিশেষজ্ঞরা।

সদ্যোজাত কাঁদছে, কিন্তু বেরচ্ছে না চোখের জল। দেখুন ভিডিয়ো

তা শৈশবেই হোক বা পরিণত বয়সে, আমরা কেঁদে ফেলি মূলত চারটি কারণে। খুব দুঃখ পেলে। খুব রেগে গেলে। গভীর ভালবাসায় হৃদয় টলমল করে উঠলে। আর গভীর আনন্দে। যার একটা আলাদা নামও রয়েছে। আনন্দাশ্রু!

শরীরের বাড়তি চাপ কমায় চোখের জল

স্যাক্রেমেন্টোতে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চিলড্রেন্স হসপিটালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সেজ টিম্বারলিনের কথায়, ‘‘দুঃখে হোক বা রাগে অথবা অনুরাগে কিংবা আনন্দে, আমাদের মনের স্বাভাবিক অবস্থার উপর একটা চাপ (স্ট্রেস) তৈরি হয়। বলা ভাল, বাড়তি চাপ। কিন্তু প্রকৃতি ও পরিবেশ সব সময়েই থাকতে চায় স্বাভাবিকতায়। একটা স্থিতাবস্থায়। তাই সেই বাড়তি চাপটা কমিয়ে ফেলাটাই তখন মূল লক্ষ্য হয়ে ওঠে আমাদের শরীরের। চোখের জলের মাধ্যমে আমাদের শরীর সেই বাড়তি চাপটা কমিয়ে ফেলে আমাদের স্বাভাবিকতায় ফিরিয়ে নিয়ে যায়।’’

আরও পড়ুন- ধূসর ফুসফুসে বিপন্ন হচ্ছে শহরের শৈশব​

আরও পড়ুন- সন্তান মোটা হয়ে যাচ্ছে? মেদের জুজু তাড়ান এই সব উপায়ে​

তাই কিছুটা কাঁদলেই আমাদের রেহাই মেলে শরীরের। কথায় কথায় আমরা এও বলি, ‘‘কেঁদে দুঃখটা একটু হাল্‌কা করে নাও।’’

চোখের জল বের করে দেয় বাড়তি হরমোনও

বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাঁদলেই আমরা কিছুটা স্বাভাবিকতায় ফিরে আসি। সেই স্বাভাবিকতা যে শুধুই আমাদের শরীর আর মনের, তা-ই নয়; ওই সময় স্বাভাবিকতায় ফিরে আসতে বেরিয়ে আসা চোখের জলই চোখকে সুস্থ ও সবল রাখতে সাহায্য করে। চোখকে ভিজিয়ে রেখে।

আমাদের শরীরের যে কোনও অনুভূতির পিছনেই রয়েছে বিভিন্ন ধরনের হরমোনের ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া। তাই বিভিন্ন ধরনের হরমোনের নিঃসরণের জন্যই আমরা দুঃখ পেলে কাঁদি, আবেগে কাঁদি আবার আনন্দেও কেঁদে ফেলি। দুঃখ, আবেগ বা আনন্দে আমাদের শরীর ও মনে যে বাড়তি চাপটা তৈরি হয়, তা হয় মূলত বিভিন্ন ধরনের হরমোনের নিঃসরণের দরুন।

কলকাতার বিশিষ্ট চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ হিমাদ্রি দত্তের কথায়, ‘‘চোখ থেকে জল বেরিয়ে আসলে তার সঙ্গে সেই নিঃসৃত হরমোনও বেরিয়ে যায় আমাদের শরীর থেকে। ফলে, শরীর ও মনের বাড়তি চাপটা কমে যায়। তাই চোখে থেকে বেরিয়ে আসা জল যে শুধুই আমাদের চোখকে ভাল, সুস্থ, সতেজ রাখে, তা-ই নয়; শরীরে সৃষ্টি হওয়া হরমোনের বাড়তি নিঃসরণকে শরীর থেকে বের করে দিয়ে সেই নির্দিষ্ট হরমোনের মাত্রা শরীরে স্বাভাবিক রাখে।’’

সদ্যোজাতের কান্নায় কেন বেরয় না চোখের জল?

কিন্তু জন্মের সময় থেকেই তো দিনে ঘন্টায় ঘণ্টায় কাঁদে শিশু। অথচ, অন্তত সপ্তাহ তিন-চারেক সদ্যোজাতের চোখ দিয়ে জল পড়ে না বিন্দুমাত্র। কেন?

হিমাদ্রি বলছেন, ‘‘সদ্যোজাতের চোখে অশ্রুনালী থাকে বটে; কিন্তু জন্মের পরপরই তা পুরোপুরি গড়ে ওঠে না। জন্মের পর শিশুর সেই অশ্রুনালীর পুরোপুরি গড়ে উঠতে সময় লাগে কম করে সপ্তাহ তিন-চারেক। অশ্রুনালীর গঠন সম্পূর্ণ হয় না বলেই দুঃখে, আবেগে, অস্বস্তিতে, আনন্দে শিশু কেঁদে উঠলেও তার চোখের কোল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে না তার গালে ও চিবুকে। শিশু তার মনের কথা বোঝাতেও কাঁদে। কিন্তু সেই সময় তার চোখের কোলেই জমা হয়ে থাকে অশ্রুবিন্দু। যা সদ্যোজাতের চোখকে ভিজিয়ে রাখতে সাহায্য করে। চোখকে রাখে সুস্থ ও সজীব।’’

জন্মের পর তিন থেকে চার সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই শিশুর অশ্রনালীর গঠন সম্পূর্ণ হয়ে যায়। তখন শিশু কাঁদলেই তার চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসে। তা গড়িয়ে পড়ে শিশুর গাল ও চিবুকে।

Newborn Babies Pediatrician Tears অশ্রু সদ্যোজাত

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}