Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
NASA

আমাদের মতোই আরও একটা সৌরমণ্ডল আছে! জানাল নাসা

নাসার তরফে জানানো হয়েছে, যেহেতু এই সৌরমণ্ডলের চেহারা অবিকল আমাদের মতোই, সেখানকার আটটি গ্রহ সাজানো হয়েছে আমাদের সৌরমণ্ডলের মতোই, তাই সেই মুলুকে প্রাণের হদিশ পাওয়ার সম্ভাবনা জোরাল হয়ে উঠল।

এই সেই আট গ্রহের সদ্য আবিষ্কৃত সৌরমণ্ডল ‘কেপলার-৯০’।

এই সেই আট গ্রহের সদ্য আবিষ্কৃত সৌরমণ্ডল ‘কেপলার-৯০’।

সুজয় চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৫১
Share: Save:

এই ব্রহ্মাণ্ডে ‘কুলীন’-এর মর্যাদা খোয়াল আমাদের সৌরমণ্ডল!

জানা গেল, আমাদের সৌরমণ্ডলের মতোই আরও একটি সৌরমণ্ডল আছে ব্রহ্মাণ্ডে। চেহারায় যা অবিকল আমাদের মতোই। আমাদের সৌরমণ্ডলে যেমন বুধ থেকে নেপচুনকে নিয়ে রয়েছে আটটি গ্রহ (প্লুটো হালে ‘গ্রহ’-এর শিরোপা খুইয়েছে), জানা গেল চেহারায় অবিকল আমাদের মতো সেই সৌরমণ্ডলেও গ্রহের সংখ্যা আট। শুধু তাই নয়, আমাদের সৌরমণ্ডলে গ্রহগুলি ঠিক যে ভাবে একের পর এক সাজানো রয়েছে, ২ হাজার ৪৪৫ আলোকবর্ষ দূরে, ‘ড্রাকো’ নক্ষত্রপুঞ্জে থাকা সেই সৌরমণ্ডলের আটটি গ্রহ রয়েছে একই ভাবে। বুধ, মঙ্গল, শুক্র, পৃথিবীর মতো ছোট চেহারার পাথুরে গ্রহগুলি যেমন আমাদের সৌরমণ্ডলে রয়েছে সূর্যের কাছাকাছি আর বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুনের মতো বড় চেহারার গ্যাস ও বরফে ভরা গ্রহগুলি রয়েছে সূর্যের থেকে দূরে, সদ্য আবিষ্কৃত সৌরমণ্ডলের আটটি গ্রহ ঠিক সেই ভাবেই রয়েছে। এর আগে আমাদের সৌরমণ্ডলের মতো অবিকল চেহারার আর কোনও নক্ষত্রমণ্ডলের হদিশ মেলেনি।

বৃহস্পতিবার ভারতীয় সময় রাত সাড়ে এগারোটায় নাসার সদর দফতরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, এটা একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।

নাসার অ্যাস্ট্রোফিজিক্স ডিভিশনের জ্যোতির্বিজ্ঞানী পল হার্ৎজ বলেছেন, ‘‘অবিকল আমাদের সৌরমণ্ডলের মতো চেহারার এই সৌরমণ্ডলে সাতটি গ্রহের হদিশ আগেই মিলেছিল। এ বার জানা গেল সেখানে রয়েছে অষ্টম গ্রহ। যার নাম ‘কেপলার-৯০-আই’। এই গ্রহটিকে দেখতে অবিকল পৃথিবীর মতো। পাথুরেও। সেটি তার নক্ষত্রকে পাক মারে ১৪.৪ পার্থিব দিনে। তবে সেটি তার নক্ষত্রের (কেপলার-৯০) বেশি কাছে আছে বলে তার গা পুড়ে যাচ্ছে অনেক বেশি তাপে। তাপমাত্রা অন্তত ৮০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট।’’

নাসার তরফে জানানো হয়েছে, যেহেতু এই সৌরমণ্ডলের চেহারা অবিকল আমাদের মতোই, সেখানকার আটটি গ্রহ সাজানো হয়েছে আমাদের সৌরমণ্ডলের মতোই, তাই সেই মুলুকে প্রাণের হদিশ পাওয়ার সম্ভাবনা জোরালো হয়ে উঠল। শুধু তাই নয়, ওই সৌরমণ্ডলের আরেকটি গ্রহ ‘কেপলার-৯০-এইচ’ তার নক্ষত্রের থেকে ঠিক সেই দূরত্বেই রয়েছে, আমাদের পৃথিবী সূর্য থেকে রয়েছে যতটা দূরে। এই গ্রহটিতে জল তরল অবস্থায় থাকতে পারে বা পৃথিবীর মতো পুরু বায়ুমণ্ডলও থাকতে পারে। ফলে, প্রাণের সৃষ্টি বা তার টিকে থাকার পক্ষে সহায়ক হয়ে উঠতে পারে এই গ্রহটির পরিবেশ।

কেপলার টেলিস্কোপ আমাদের সৌরমণ্ডলের বাইরে যে গ্রহগুলির সন্ধান পেয়েছে।

নাসার তরফে এও জানানো হয়েছে, আরও একটি ভিনগ্রহের হদিশ মিলেছে প্রায় আমাদের সৌরমণ্ডলের চেহারারই আরও একটি নক্ষত্রমণ্ডলের। যার নক্ষত্রের নাম ‘কেপলার-৮০’ আর সেই সৌরমণ্ডলে যে ভিন গ্রহটির হদিশ মিলেছে সম্প্রতি, তার নাম ‘কেপলার-৮০-জি’। এই ভিনগ্রহটি ওই সৌরমণ্ডলের ষষ্ঠ গ্রহ। ফলে আগামী দিনে ওই সৌরমণ্ডলে আমাদের মতোই আটটি বা তার বেশি গ্রহের হদিশ মিললেও মিলতে পারে। এ বছরের গোড়ার দিকে ‘ট্রাপিস্ট’ নক্ষত্র মণ্ডলের হদিশ মিলেছিল, যেখানে গ্রহের সংখ্যা সাত। এবং তাতে পৃথিবীর জল বা বায়ুমণ্ডল আছে, এমন অন্তত তিনটি গ্রহের হদিশ মিলেছে।

আরও পড়ুন: রাতের আকাশে পটারের চশমা খুঁজবে কচিকাঁচারা

ভিনগ্রহ খুঁজতে এবং ভিনগ্রহে প্রাণের সন্ধান পেতে ২০০৯ সালে নাসা মহাকাশে পাঠিয়েছিল কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ। সেই টেলিস্কোপ ২০১৩ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর মতো ‘বাসযোগ্য’ প্রায় আড়াই হাজার ভিনগ্রহ আবিষ্কার করেছে। তার আগেও প্রচুর ভিনগ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে। তাদের নিয়ে আমাদের জানা ভিন গ্রহের সংখ্যা প্রায় হাজার চারেক। কিন্তু, এত দিন কোনও ভিনগ্রহের নক্ষত্রমণ্ডলেই আমাদের সৌরমণ্ডলের মতো আটটি গ্রহের সন্ধান মেলেনি।

এই আবিষ্কারটি সম্ভব হয়েছে গুগলের মেশিন লার্নিং পদ্ধতির সাহায্যে। যার নেতৃত্বে রয়েছেন গুগলের সিনিয়র সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার ক্রিস্টোফার শ্যালু ও টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের সাগান পোস্ট ডক্টরাল ফেলো অ্যান্ড্রু ভ্যানডারবার্গ।

কেপলার-৯০ সৌরমণ্ডল সম্পর্কে কী বলছে নাসা? দেখুন ভিডিও

এই মেশিন লার্নিং পদ্ধতিতে নতুন গ্রহের সন্ধান পাওয়া সম্ভব হল কী ভাবে?

মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক ও কেপলার মহাকাশযান প্রকল্পের অন্যতম বিজ্ঞানী ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় শিকাগো থেকে টেলিফোনে আনন্দবাজারকে বলেছেন, ‘‘কেপলার টেলিস্কোপ এখনও পর্যন্ত আমাদের ৩০ হাজার সিগন্যাল পাঠিয়েছে। তার মধ্যে ৯৫ শতাংশ সিগন্যালই অত্যন্ত দুর্বল। পৃথিবীতে বসে সেই সিগন্যাল গুলিকে বিশ্লেষণ করে তার মধ্যে থেকে কোনটা ভিনগ্রহ থেকে আসছে, আর কোনটা আসছে অন্য কোনও মহাজাগতিক বস্তু থেকে, তা বুঝে ওঠা আমাদের পক্ষে সম্ভব হতো না। গুগলের মেশিন লার্নিং পদ্ধতি আমাদের সেই কাজকে সহজ করে তুলেছে বলেই আমাদের সৌরমণ্ডলের মতো অবিকল আর একটি সৌরমণ্ডলের হদিশ পাওয়া সম্ভব হল। সন্ধান পাওয়া গেল আরও দুটি ভিনগ্রহের। এটাই গুগলের বি়জ্ঞানী, গবেষকদের কৃতিত্ব।’’

ছবি ও ভিডিও নাসার সৌজন্যে।

অন্য বিষয়গুলি:

NASA Kepler Kepler Discovery
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE