Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Chandrayaan-3

চাঁদের দেশে ঢুকে পড়ছে আমাদের চন্দ্রযান, এখন শুধু সেই কাজটাই রইল বাকি

আমার কাজ চন্দ্রযানকে ‘পথ দেখিয়ে’ নিরাপদে চাঁদে নিয়ে যাওয়া। সোমবার গভীর রাতে সে যখন পৃথিবীর কক্ষপথে ছেড়ে চাঁদের উদ্দেশে রওনা দিল, তখন সেমিফাইনালটা জিতলাম। এ বার আমার আসল পরীক্ষা।

ISRO Scientist Tushar Kanti Das writes after Chandrayaan-3 enters the Lunar Orbit

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

তুষারকান্তি দাস
তুষারকান্তি দাস
তিরুঅনন্তপুরম শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২৩ ০৫:৩৭
Share: Save:

রুপোলি থালায় পা রাখার দিকে আরও এক কদম এগিয়ে গেলাম আমরা। পৃথিবীর ‘মায়া’ কাটিয়ে ফেলল আমার চন্দ্রযান। এ বার ঢুকে পড়বে চাঁদের ‘মায়াবৃত্তে’। এত দিন পৃথিবীর কক্ষপথে ছিল। এ বার চাঁদের কক্ষপথের দিকে রওনা দিল চন্দ্রযান-৩। আর কয়েক দিনের অপেক্ষা। আমার ‘সন্তান’ তার পরেই ‘ভূমিষ্ঠ’ হবে চাঁদে। আগের বারের ভুল শুধরে নিতে দিনরাত এক করে পরিশ্রম করেছি আমরা। সে বার অন্তিম মুহূর্তে সব গোলমাল হয়ে গিয়েছিল। চাঁদের মাটি ছোঁয়ার সেই কাজটাই এ বার আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় কাজ। সেই কাজটাই বাকি রইল। আমাদের স্থির বিশ্বাস, এ বার নিজের ‘পায়ে’ দাঁড়াতে পারবেই প্রজ্ঞান।

১৪ জুলাই শ্রীহরিকোটা থেকে যখন আমাদের রকেট উড়ল, তখন থেকেই শুরু হয়েছে আমার পরীক্ষা। আমার মূল কাজ চন্দ্রযানকে ‘পথ দেখিয়ে’ নিরাপদে চাঁদে নিয়ে যাওয়া। সোমবার গভীর রাতে সে যখন পৃথিবীর ‘মায়া’ কাটাল, তখন আমি যেন সেমিফাইনালটা জিতলাম। এর পরেই আমার আসল পরীক্ষার শুরু। প্রজ্ঞানকে নিরাপদে চাঁদে নামাতে হবে। চাঁদের কক্ষপথে ঢুকে পড়ার পর চন্দ্রযানের গতি ধাপে ধাপে কমিয়ে আনা প্রাথমিক কাজ। আমাদের পরিভাষায় এই প্রক্রিয়াকে বলে এলবিএন (লুনার বাউন্ড ম্যানুভার নাম্বার)। এলবিএনের বিভিন্ন ধাপে চন্দ্রযানের গতি কমানো হয়। চাঁদ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে থাকা অবস্থায় কাজ শেষ হবে প্রোপালশন মডিউলের।

এর পর কাজ শুরু হয় ল্যান্ডার মডিউলের। এই মডিউলই ঠিক করে কী ভাবে চাঁদের বুকে বিক্রমের মাধ্যমে নামবে প্রজ্ঞান। চাঁদের মাটি থেকে ৩০ কিমি উপর থেকে ২০ মিনিট ধরে পালকের মতো নামবে বিক্রম। তার গতি নিয়ন্ত্রণে কখনও করা হবে রাফ ব্রেকিং (আচমকা গতি নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি), কখনও কন্ট্রোলড ব্রেকিং (ধীরে ধীরে গতি নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি)। মাটি ছোঁয়ার পর খুলে যাবে দরজা। সেই দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসবে প্রজ্ঞান। এই পর্যায়েই সমস্যা হয়েছিল গত বার।

সেই খারাপ দিনটা ছিল ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯। সারা দেশের নজর ছিল টেলিভিশনের দিকে। চাঁদের মাটিতে নামার কথা ছিল রোভার প্রজ্ঞানের। পরবর্তী কয়েক দিন চাঁদে পরীক্ষানিরীক্ষা চালানোর কথা ছিল তার। কিন্তু হিসাবের সামান্য ভুলচুকে শেষ মুহূর্তে নেমে আসে বিপর্যয়। নামার মুহূর্তে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। চাঁদের মাটিতে পৌঁছনোর মুখেই অকেজো হয়ে যায় ল্যান্ডার বিক্রম। ধ্বংস হয় প্রজ্ঞানও।

এ বার তাই আমরা অনেক সতর্ক। আগামী ২৩ বা ২৪ অগস্টের মধ্যে চাঁদের মাটিতে নামতে পারে তৃতীয় চন্দ্রযানের সৌরচালিত ল্যান্ডার বিক্রম। সেখান থেকে সৌরচালিত রোভার প্রজ্ঞান বেরিয়ে চাঁদের মাটি ছোঁবে। চাঁদের মাটির চরিত্র, বিভিন্ন খনিজ পদার্থের উপস্থিতি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করবে। পাশাপাশি, যে অঞ্চল দিয়ে প্রজ্ঞান চলাচল করবে সেখানকার চাঁদের জমিতে অশোকস্তম্ভ এবং ইসরোর প্রতীক আঁকা হবে।

প্রজ্ঞান চাঁদের বুকে ‘বেঁচে’ থাকবে ১৪ দিন। ১৪ দিন অবশ্য পৃথিবীর হিসাবে। চাঁদের হিসাবে মাত্র এক দিন। এর পরেই ‘মৃত্যু’ হবে প্রজ্ঞানের। আপাতত আমার পাখির চোখ আমার চন্দ্রযানকে সঠিক পথ দেখানো। স্বপ্ন সফল হতে অপেক্ষা আর কয়েক দিনের। ব্যক্তিগত আবেগ থেকে ‘আমার চন্দ্রযান’ কথা লিখে ফেললাম। আসলে এর গড়ে ওঠা, উৎক্ষেপণ থেকে শুরু করে নামা পর্যন্ত বহু বিজ্ঞানী, বহু কর্মীর অক্লান্ত পরিশ্রম আর মেধা কাজ করেছে, এখনও করছে। আমাদের চন্দ্রযান এ বার সফল হবেই।

(লেখক ইসরোর বিজ্ঞানী, চন্দ্রযান প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত)

অন্য বিষয়গুলি:

ISRO Lunar Orbit
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE