Advertisement
E-Paper

দুই ব্যাক্টিরিয়ার টক্করে বর্জ্য-দূষণ রোধে নয়া দিশা

কম খরচে ও জৈবিক উপায়ে সেই কাজে এ বার অভাবনীয় সাফল্যের দাবি করছে অস্ট্রেলিয়ার এক গবেষক দল। তাতে যুক্ত এক বঙ্গসন্তানও।

কেন অসুস্থ যমুনা? নানা কারণ রয়েছে।

কেন অসুস্থ যমুনা? নানা কারণ রয়েছে। —ফাইল চিত্র।

দেবজ্যোতি চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:৪৪
Share
Save

কালো যমুনার জলে ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা ফেনা। প্রতি বছর সেই ছবি সামনে আসায় শিউরে ওঠেন অনেকে। কতটা দূষিত যমুনা, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখায় ওই ঘটনা।

কেন অসুস্থ যমুনা? নানা কারণ রয়েছে। একটি অবশ্যই শিল্পজাত তরল বর্জ্যের নদীতে মেশা। গোটা বিশ্বে যা মাথাব্যথার কারণ। বর্জ্য-জল ব্যবস্থাপনা বা ‘ওয়েস্টওয়াটার ম্যানেজমেন্ট’ খাতে জলের মতো অর্থ খরচ হচ্ছে। তবে কম খরচে ও জৈবিক উপায়ে সেই কাজে এ বার অভাবনীয় সাফল্যের দাবি করছে অস্ট্রেলিয়ার এক গবেষক দল। তাতে যুক্ত এক বঙ্গসন্তানও।

কলকারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য তরলের ব্যবস্থাপনায় একটি বড় প্রতিবন্ধকতা ফেনা বা তৈরি হওয়া। ফেনা সরিয়ে বর্জ্য তরলকে দূষণহীন করা যেমন ব্যয়সাপেক্ষ তেমন ওই কাজে নানা রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, যেগুলি আদৌ পরিবেশবান্ধব নয়। আসলে নানা দূষকের জন্য ফেনা তৈরি হলেও তাতে বড় হাত রয়েছে ‘গর্ডোনিয়া অ্যামেরি’ নামের এক ব্যাক্টিরিয়ার। কোষপ্রাচীরে থাকা মাইকোলিক অ্যাসিডের জন্য ওই ব্যাক্টিরিয়ার জলবিকর্ষী ধর্ম রয়েছে, যা বর্জ্য তরল বা জলে ফেনার স্থায়িত্ব বাড়ায়।

এখানেই গুরুত্বপূর্ণ অস্ট্রেলিয়ার লা ট্রোব বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলের অনুসন্ধান। কারণ, ওই ব্যাক্টিরিয়াকে ঠেকাতে তা পুরোপুরি একটি জৈবিক পদ্ধতি অনুসরণ করে। তাঁরা ‘গর্ডোনিয়া অ্যামেরি’-কে জব্দ করার উপায় খুঁজে পেয়েছেন ‘মাইকোসিনব্যাক্টর অ্যামালিটিকাস’ নামের অন্য একটি ব্যাক্টিরিয়ায়।

কী ভাবে কাজ করে মাইকোসিনব্যাক্টর?

গবেষণায় যুক্ত মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুল অব বায়োমেডিক্যাল সায়েন্সেস’-এর দেবনাথ ঘোষাল জানাচ্ছিলেন, ওই ব্যাক্টিরিয়া কার্যত ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালায় গর্ডোনিয়ার উপরে। গর্ডোনিয়ার সংস্পর্শে মাইকোসিনব্যাক্টর থেকে কতকগুলি ‘প্রোটিন ফিলামেন্ট’ বেরিয়ে সেটির গায়ে আটকে যায়। পরে মাইকোসিনব্যাক্টর, গর্ডোনিয়ার আরও কাছে চলে আসে এবং একটি প্রোটিন কমপ্লেক্স তৈরি করে ছুরির মতো ফালাফালা করে দেয়। তাঁর কথায়, “মাইকোসিনব্যাক্টরের হানায় মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই নিকেশ হয় গর্ডোনিয়া। গোটা ঘটনা হাই রেজ়োলিউশন মাইক্রোস্কোপিতে চাক্ষুষ করা গিয়েছে।”

অস্তিত্বের সঙ্কট দেখা দিলে রূপ পাল্টায় ব্যাক্টিরিয়া। গর্ডোনিয়াও তার ব্যতিক্রম নয়। দেবনাথ জানাচ্ছিলেন, মাইকোসিনব্যাক্টরের আক্রমণ থেকে বাঁচতে মাইকোলিক অ্যাসিডের খোলস ত্যাগ করছে গর্ডোনিয়া। তাতে গর্ডোনিয়ার গায়ে আটকানোর সুযোগ পাবে না তার ঘাতক। তবে তাতে বর্জ্য-জলে ফেনার স্থায়িত্ব বাড়ানোর সুযোগও আর তার থাকছে না।

এর পরে কী? দেবনাথ বলেন, “পুরোপুরি জৈবিক উপায়ে এবং কম খরচে বর্জ্য-জল ব্যবস্থাপনার এই পদ্ধতি বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে বর্জ্য-জল ব্যবস্থাপনায় যুক্ত প্ল্যান্টগুলিকে এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে উৎসাহিত করা হবে।” পরবর্তী পর্যায়ে কোনও নদী, জলাশয় বা অন্য জলের উৎসের শুদ্ধিকরণে তা দৃষ্টান্ত হতে পারে, আশাবাদী তিনি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bacteria Scientists

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}