—প্রতীকী চিত্র।
চার বছর পরে ফের এক যুগসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে ভারত। চাঁদে তার পা পড়বে কি না, তা জানতে আর কয়েক ঘণ্টা বাকি। ২০১৯ সালেও এমনই এক সন্ধিক্ষণ এসেছিল। কিন্তু সে বার অবতরণ সফল হয়নি। এ বার অবশ্য ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) আরও প্রস্তুত হয়ে অভিযান করেছে। তাই সাফল্যের সম্ভাবনা বেশি। যদিও মহাকাশ অভিযান এমনই দুরূহ বিষয় যে সাফল্য ও ব্যর্থতার ফারাক সেখানে চুলচেরা। তাই অবতরণে ইসরো সফল হবে নাকি ব্যর্থ, সে বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী বৃথা। তার চেষ্টা করাও এক জন বিজ্ঞানীর কাছে অনুচিত।
‘অনুচিত’ কথাটি বলার পিছনে নৈতিকতা যেমন আছে, তেমনই আছে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও। আমেরিকান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’-য় দীর্ঘদিন কাজের সুবাদে সাফল্যের অভিজ্ঞতা যেমন আছে, তেমন ব্যর্থতাও পেয়েছি। ১৯৯৩ সালে নাসায় জীবনের প্রথম অভিযানই ব্যর্থ হতে দেখেছি। এই ধরনের অভিযানে এত ধরনের প্রযুক্তি, এত ধরনের যন্ত্র-যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয় যে বিষয়টি জটিল থেকে জটিলতর হয়ে পড়ে। আর অবতরণ হল সব থেকে কঠিন পর্যায়। প্রতিটি পদক্ষেপ একেবারে নিখুঁত না হলে মুশকিল। এখানে ১০০ শতাংশ সাফল্যই পাশ মার্ক। এক চুল কম হলেও চলবে না।
এই জটিল অবতরণের পথ পেরোতে গিয়ে ভুল যে কোনও সংস্থার ইঞ্জিনিয়ারিং দলের হতে পারে। উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে রাশিয়ার চন্দ্রাভিযান তো সোমবারই ব্যর্থ হয়েছে। অথচ মহাকাশ অভিযানে তারাই প্রবীণতম সদস্য। এ বছরই ইজ়রায়েল এবং জাপানের দু’টি বেসরকারি সংস্থার মহাকাশ অভিযান ব্যর্থ হয়েছে। আবার নিখুঁত হলে যে বিরাট উন্নত মানের প্রযুক্তি ছাড়াও অভিযান সফল হতে পারে তার উদাহরণ খোদ ইসরোর মঙ্গল অভিযান। কাজেই শেষ পদক্ষেপ না ফেলা পর্যন্ত কিছুই বলা যায় না। তবে এক জন ভারতীয় হিসাবে আশা করবই যে ইসরো সফল হবে।
এ সব প্রযুক্তির জটিল কচকচি থাকবেই। তবে তার বাইরেও ভারতের চন্দ্রাভিযানের একটি বিশেষ দিক আছে। চন্দ্রযান-২ চাঁদে পাখির পালকের মতো আলতো করে নামতে চেয়েছিল। বিজ্ঞানের ভাষায় আমরা তাকে বলি, সফট ল্যান্ডিং। এ বারও ইসরোর লক্ষ্য একই। ধরে নিচ্ছি, ইসরো সফল ভাবেই চাঁদের মাটিতে পা ফেলবে। সে ক্ষেত্রে মহাকাশ অভিযানে ভারতের নতুন কৃতিত্ব হবে সফ্টল্যান্ডিং। এই পরীক্ষায় পাশ করলে আগামী দিনে মঙ্গল গ্রহ কিংবা গ্রহাণুতে নামতে পারবে ভারত।
এ কথা অবশ্য স্পষ্ট করে দেওয়া উচিত যে চাঁদে যে ভাবে ল্যান্ডারকে (ইসরোর প্রাণপুরুষ বিক্রম সারাভাইয়ের নামে নামকরণ করা হয়েছে) ইসরো নামাতে চলেছে, সেই একই কায়দা মঙ্গলের ক্ষেত্রে না-ও হতে পারে। কারণ, প্রতিটি গ্রহ বা উপগ্রহের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি আলাদা, ভূপ্রকৃতি ভিন্ন ধরনের এবং পৃথিবী থেকে দূরত্বের তারতম্যের কারণে ল্যান্ডারের সঙ্গে সঙ্কেত আদানপ্রদানে সময়ের ফারাক হয়। তাই প্রতিটি অবতরণের পরিকল্পনাই আলাদা ভাবে করতে হয়। তবে এটা বলাই যায় যে চাঁদে অভিযান সফল হলে ভিন গ্রহের মাটিতে আলতো করে পা ফেলার মূল ব্যাকরণ ভারতীয় বিজ্ঞানীরা শিখে ফেলবেন।
সেটা কম বড় প্রাপ্তি নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy