-প্রতীকী ছবি।
বিশ্ব উষ্ণায়নের মাত্রা যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে আর ৮০ বছরের মধ্যে ঋতুগুলি একেবারেই বদলে যাবে। সবক’টি ঋতুর মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে তীব্র দহন জ্বালায় জ্বালাবে শুধুই গ্রীষ্মকাল। উত্তর গোলার্ধে তা চলবে টানা ৬ মাস। কমে যাবে শীতকালের আয়ু। বছরে তা মেরেকেটে হবে ২ মাসেরও কম। কমবে বসন্ত ও শরৎ কালের মেয়াদও। ২১০০ সালে গ্রীষ্মের তাপমাত্রা যেমন ভয়ঙ্কর ভাবে বেড়ে যাবে, তেমনই বেড়ে যাবে উত্তর গোলার্ধের শীতের সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণা এই উদ্বেগজনক খবর দিয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্স’-এ।
গবেষকরা জানিয়েছেন ঋতুগুলির মেয়াদ আর তাদের সময় শুধুই যে উত্তর গোলার্ধে বদলাবে তা নয়, বদলে যাবে দক্ষিণ গোলার্ধেও। কোথাও কিছুটা কম পরিমাণে কোথাও বা বেশি।
তবে ঋতুগুলির সময় আর তাদের মেয়াদের ব্যাপক পরিবর্তনের প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে। তাপপ্রবাহের তীব্রতা, ঝড়ের উন্মত্ততা আর দাবানলের বীভৎসতা ও সেই সব ঘটনার সংখ্যা উদ্বেগজনক ভাবে বেড়ে যাবে। তার ফলে প্রচণ্ড ক্ষতি হবে কৃষিকাজে। ফসল উৎপাদনের পরিমাণ ভীষণ ভাবে কমে যাবে।
পৃথিবীর ঋতুগুলির সময় আর মেয়াদ পরিবর্তনের প্রভাব হবে আরও সুদূরপ্রসারী। গবেষণাপত্রটি জানাচ্ছে, আর ৮০ বছরের মধ্যে পৃথিবীর ক্রান্তীয় (‘ট্রপিক্যাল’) অঞ্চলের দেশগুলির মশা আরও বেশি পরিমাণে মানুষের পক্ষে ক্ষতিকারক ভাইরাস বহন করবে। আর সেই মশককূলের গতিপথ আরও উত্তরমুখী হবে। তারা আরও বেশি পরিমাণে ছড়িয়ে পড়বে উত্তর গোলার্ধের দেশগুলিতে। গ্রীষ্মকালের মেয়াদ ও তীব্রতা অনেক গুণ বেড়ে যাওয়ায় ভাইরাসঘটিত নানা ধরনের সংক্রমণ আরও বেশি পরিমাণে ছড়াবে মশককূল। তাতে কোভিড-১৯-এর চেয়েও বেশি সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে।
গবেষকরা ১৯৫২ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত উত্তর গোলার্ধের প্রতিটি দেশের প্রতি দিনের তাপমাত্রার ইতিহাস পরীক্ষা করে দেখেছেন। কী ভাবে ঋতুগুলির সময় ও মেয়াদ বছরে বছরে বদলাচ্ছে, সেটাই তাঁরা বুঝতে চেয়েছিলেন। তাতে তাঁরা দেখেছেন ’৫২ থেকে ২০১১, এই ৬০ বছরে উত্তর গোলার্ধের দেশগুলিতে গ্রীষ্মকালের তাপমাত্রা বেড়েছে গড়ে ২৫ শতাংশ।
গবেষকরা এ-ও দেখেছেন ওই ৬০ বছরে উত্তর গোলার্ধের দেশগুলিতে গ্রীষ্মকালের মেয়াদ বেড়েছে গড়ে ৭৮ থেকে ৯৫ দিন। মানে, আড়াই মাস থেকে তিন মাসের কিছু বেশি। বসন্তের মেয়াদ গড়ে ১২৪ দিন থেকে কমে গিয়ে হয়েছে ১১৫ দিন। আর শরৎকালের মেয়াদ গড়ে ৮৭ দিন থেকে কমে হয়েছে ৮২ দিন। গ্রীষ্মের তাপমাত্রা যেমন বেড়েছে তেমনই বেড়েছে শীতকালের সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও।
গবেষণাপত্রটি জানিয়েছে, এখন যে হারে উষ্ণায়ন হচ্ছে তা যদি না কমে, তা হলে ২০১১ সালে যে মাসে গ্রীষ্ম ও বসন্ত শুরু হয়েছিল ২১০০ সালে পৌঁছে তা ১ মাস করে এগিয়ে আসবে। আর শরৎ ও শীতকাল শুরু হবে আধ মাস পর (১৫ দিন)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy