উল্টোরথের দিন বানিয়ে ফেলুন রকমারি নিরামিষ ওড়িয়া খাবার। ছবি: সায়ন্তনী মহাপাত্র।
উল্টোরথ উপলক্ষে আষাঢ়ের দিনে আকাশে আকাশে মেঘেদের চলাচল দেখতে দেখতে দাদা বলরাম আর বোন সুভদ্রাকে সঙ্গে নিয়ে মাসির বাড়ি থেকে ঘরে ফিরবেন প্রভু জগন্নাথ। শাস্ত্রে বলে ‘রথস্থ বামনং দৃষ্টা পুনর্জন্ম না বিদ্যতে’ অর্থাৎ রথের উপর অধিষ্ঠিত জগন্নাথের বামন রূপ দর্শন মানুষকে পুনর্জন্ম গ্রহণ থেকে রক্ষা করে। রথের রশি খানিক ছুঁয়ে দেখতে তাই তো মানুষের এখনও এত হুড়োহুড়ি। ব্রহ্ম পুরাণ, স্কন্দ পুরাণ, পদ্ম পুরাণ, কপিল সংহিতার মতো প্রাচীন শাস্ত্রে এই রথযাত্রা ঘিরে কত গল্প, কত কাহিনী।
পদ্ম পুরাণের মতে মালবরাজ ইন্দ্রদ্যুম্নের স্ত্রী গুণ্ডিচার নামেই গুণ্ডিচা মন্দির, যেখানে জগন্নাথদেব তাঁর ভাইবোনকে সঙ্গে নিয়ে এই কয়েক দিন কাটান। কৃষ্ণের পরমভক্ত রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের স্বপ্নে ভগবান তাঁকে তাঁর মন্দির তৈরি করতে বলেন, যেখানে তিনি নীলমাধব রূপে পূজিত হবেন। কিন্তু বিগ্রহের সেই রূপ খোঁজ করতে গিয়ে রাজা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হন। শেষে কারিগরের রূপে স্বয়ং জগন্নাথ নিজে সেই মূর্তি গড়ার দায়িত্ব নেন, কিন্তু শর্ত রাখেন যে, বিগ্রহ তৈরির কাজ সম্পন্ন না হলে কেউ সেই কক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না। কৌতূহলী রানি গুণ্ডিচা ধৈর্য রাখতে না পেরে বিগ্রহ দর্শনের আশায় ঢুকে পড়েন সেই ঘরে। তাই তো পুরীর জগন্নাথ মন্দিরর বিগ্রহগুলির এমন অসমাপ্ত রূপ। প্রভুর সেবা করার আশায় পরে শ্রীধাম তৈরী করার পর, রাজা এই গুণ্ডিচা মন্দির তৈরী করেন।
আবার কেউ বা বলেন গুণ্ডিচা দেবীর মন্দির দেখে প্রভু এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, বছরের কিছু দিন এই মন্দিরে কাটিয়ে যাবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ফলস্বরূপ এ মন্দির অনেকের কাছেই প্রভুর বাগানবাড়ি নামেও পরিচিত।
এই এত কাহিনির মাঝে প্রভুর মাসির বাড়ি যাবার কাহিনীটিও বেশ মনকাড়া। বলা হয় দেবী গুণ্ডিচা, দুর্গার আর এক রূপ। মা শীতলার মতো তিনিও মানুষকে বসন্ত এবং অন্যান্য চর্মরোগ থেকে রক্ষা করেন। সম্পর্কে তিনি জগন্নাথের মাসি। রথযাত্রা আর উল্টোরথের মাঝে এই ক’দিন তিনি স্নেহে-যত্নে ভরিয়ে রাখেন জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রাকে। রান্না করে পরিবেশন করেন তাদের প্রিয় খাবার। মাসির বাড়ির আদর- যত্ন, ভাল-মন্দ খাওয়াদাওয়ার শেষে আবার দায়িত্বে ফেরার কালে জগন্নাথদেবের মন উদাস হয়ে যায়। লোকে যতই বলুক ‘চিড়া বলো, পিঠা বলো, ভাতের মতো নয়। মাসি বলো, পিসি বলো মায়ের মতো নয়।’ কেবল জীবনযুদ্ধে ক্লান্ত মানুষই জানে শৈশব আমাদের জীবনের কী পরম আশ্রয়! আর আমাদের শৈশব লালিত হয় যে মানুষগুলির আদর ভালোবাসায়, গাছের মতো ছায়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে তারা আমাদের অপেক্ষায় থাকে আজীবন। তাদের মমতার ছায়া নিমেষে ফিরিয়ে আনে শৈশবের সেই দিনগুলি।
জগন্নাথদেবেরও হয়তো বা তাই! শ্রীধামে দেবরূপে আসীন মহাপ্রভু এই ক’দিন ভক্তের ভগবান থেকে হয়ে ওঠেন প্রাণের দেবতা। সাধারণ মানুষের মত মাসির স্নেহের আশ্রয়ে তিনিও হয়তো বা খোঁজেন শৈশবের সেই নির্মল শান্তির আশ্রয়। রথযাত্রা থেকে বহুরা (উল্টোরথ) যাত্রার এই ক’দিন তাই অমর হয়ে থাকে ভক্তি, বিশ্বাস এবং সম্পর্কের প্রতীক হয়ে।
বাংলার মতো ওড়িশার খাবারও ভীষণ ভাবে নির্ভরশীল স্থানীয় মরসুমি শাকসব্জির উপর। উল্টোরথ উপলক্ষে তাই রইল কলিঙ্গের কিছু নিরামিষ রান্নার প্রণালী।
ছাচিন্দ্রা জান্হী রাই (চিচিঙ্গে, ঝিঙার সর্ষে দিয়ে তরকারি)
উপকরণ:
২ টি চিচিঙ্গে
২ টি ঝিঙে
এক মুঠো ডালের বড়ি
১ টেবিল চামচ সর্ষে
১ মুঠো কাঁচা চিনাবাদাম
৩ টেবিল চামচ সর্ষের তেল
১ চা চামচ পাঁচফোড়ন
৩-৪টি কাঁচালঙ্কা
স্বাদমতো নুন, মিষ্টি
প্রণালী:
চিচিঙ্গের খোসা ছাড়ি ১/২'' মাপে কেটে নিন। ঝিঙের খোসা ফেলে ১'' মাপে কেটে রাখুন। এ বার সর্ষে, বাদাম আর ২ টি কাঁচালঙ্কা বেটে রাখুন। কড়াইয়ে তেল গরম করে বড়ি লাল করে ভেজে তুলে রাখুন। বাকি তেলে পাঁচফোড়ন আর লঙ্কা ফোড়ন দিন। ফুটে উঠলে সব্জি আর নুন দিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখুন। ৫-৭ মিনিট পরে ঢাকা খুলে সব্জি আধ সেদ্ধ হয়ে জল শুকিয়ে আসলে তাতে মশলা দিন। মশলা ভাল করে কষিয়ে নিয়ে সামান্য জল আর ভাজা বড়ি দিয়ে দিন। শেষে নুন মিষ্টি দিয়ে নামিয়ে নিন।
ডালমা
উপকরণ:
১/২কাপ অড়হর ডাল
২ টেবিল চামচ ছোলার ডাল
১/৪ কাপ মুগ ডাল
কাঁচা সব্জি (বেগুন, মিষ্টি আলু, কচু, পেঁপে, কাঁচকলা , বরবটি, কুমড়ো ইত্যাদি পরিমাণ মতো)
১ চিমটে হিং
১ চা চামচ জিরে
২-৩ টি শুকনো লঙ্কা
১/২ চা চামচ মেথি
১/২ চা চামচ পাঁচফোড়ন
১ টেবিল চামচ ঘি
২ টি তেজপাতা
১ টেবিল আদা বাটা
আধ বাটি কোরানো নারকেল
স্বাদমতো হলুদ, নুন ও চিন
প্রণালী:
সব ডাল মিশিয়ে সেদ্ধ করে নিন। ডুমো করে কাটা সব্জি, নুন, হলুদ দিয়ে আলাদা করে সেদ্ধ করে নিন। খেয়াল রাখবেন, সব্জি যেন গলে না যায়। এ বার মেথি, জিরে আর শুকনো লঙ্কা তাওয়ায় সেঁকে আধভাঙা করে রাখুন। কড়াইয়ে ঘি গরম করে তাতে লঙ্কা, পাঁচফোড়ন আর হিং ফোড়ন দিয়ে সেদ্ধ করা ডাল ঢেলে দিন। নুন, মিষ্টি আর আদা বাটা দিয়ে ফোটান। নামানোর আগে ভাজা মশলা আর নারকেল কোরা মিশিয়ে দিন।
আমড়া রাই খাট্টা
উপকরণ:
৭-৮ টি আমড়া
২ টি শুকনো লঙ্কা
১ চা চামচ আদা
১ টি কারিপাতা
পরিমাণ মতো নুন, হলুদ
স্বাদমতো গুড়
১ টেবিল চামচ সর্ষের তেল
প্রণালী:
আমড়া কেটে ১ কাপ জল দিয়ে নুন দিয়ে সেদ্ধ করে নিন। একটি কড়াইয়ে তেল গরম করে পাঁচফোড়ন আর শুকনো লঙ্কা আর কারিপাতা ফোড়ন দিন। এ বার সেদ্ধ করা আমড়া জল-সহ ঢেলে দিন। থেঁতো করা আদা, নুন, হলুদ দিয়ে ফুটতে দিন। স্বাদমতো গুড় দিয়ে রস ঘন হলে নামিয়ে পরিবেশন করুন।
পোড়া পিঠা
উপকরণ:
দেড় আতপ কাপ চাল
৩/৪ কাপ বিউলির ডাল
আধ কাপ নারকেল কুচি
আধ কাপ কোরানো নারকেল
২০০ গ্রাম গুড়
১ মুঠো কাজু কিশমিশ
৩ টেবল চামচ ঘি
১/২ চা চামচ গোলমরিচ গুঁড়ো
১ চা চামচ থেঁতো করা আদা
১ চা চামচ এলাচ গুঁড়ো
১ চা চামচ থেঁতো করা মৌরি
প্রণালী:
চাল, ডাল ধুয়ে ৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। তার পর ভাল করে বেটে নিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখুন ৫-৬ ঘণ্টা। এ বার ঢাকা খুলে তাতে ঘি ছাড়া বাকি সব উপকরণ মিশিয়ে নিন। গুড় শক্ত হলে সামান্য জলে পাক দিয়ে মেশান। একটি তলাভারী পাত্রে ৩-৪ টি কলাপাতা বিছিয়ে দিন। উপরের পাতায় ভাল করে ঘি মাখিয়ে নিন। এ বার পাতার উপর মিশ্রণটি ঢেলে উপরে সামান্য ঘি মাখানো আর একটি পাতা দিয়ে ঢেকে দিন। পাত্রটি ভাল করে ঢাকা বন্ধ করে কম আঁচে রান্না হতে দিন প্রায় ৪০ মিনিটে। তার পর পুরো পিঠেটি উল্টে নিয়ে আবার রান্না করেন ১০ মিনিট মতো। পিঠেটি ভাল করে সেদ্ধ হয়ে গেলে গ্যাসের আঁচ বন্ধ করে ঢাকা দিয়ে রাখুন। ঠান্ডা হলে কেটে পরিবেশন করুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy