সারা বছর মানুষ অন্য রকম খাবারের স্বাদ নিতে আসেন সান্ট্যা়’স ফ্যান্টাসিতে। ছবি-সংগৃহীত
বাঙালির বারোমাসে তেরোপার্বণ। বারোমাসই কোনও না কোনও উৎসবে মেতে থাকে বাঙালি। উৎসব-উদ্যাপনের একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে খাওয়াদাওয়া। বাড়িতে হোক বা রেস্তরাঁ, বাঙালির রসনাতৃপ্তিতে ঘুরে ফিরে এসেছে আলু দেওয়া বিরিয়ানি, মোগলাই, কন্টিনেন্টাল কিংবা চিনা খাবার। স্বাদবদলের ইচ্ছে যে হয়নি এমন নয়। হাতের কাছে তেমন বিকল্প না পেয়ে, খুশি থাকতে হয়েছে সেই থোড়-বড়ি-শুক্তো-ইলিশ-মাংস-চিংড়িতে। ২০১২, পরিবর্তনের আবহে কলকাতার মানুষও এক অচেনা স্বাদের খোঁজ পেলেন। কলকাতায় চালু হল আদিবাসী খাবারের রেস্তোঁরা ‘সান্ট্যা়’স ফ্যান্টাসি’। আদিবাসী খাবারের এই রেস্তরাঁর ব্লু-প্রিন্ট তৈরি হয়েছিল অবশ্য চাঁদিপুর থেকে।
লোভনীয় সব খাবার ছেড়ে কেন আদিবাসী খাবারের রেস্তরাঁ গড়ার ঝোঁক তৈরি হল, আনন্দবাজার অনলাইনকে তা জানালেন ‘স্যান্টা’স ফ্যান্টাসি’-র কর্ণধার কৌশিক ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের চাঁদিপুরে একটি হোটেল ছিল। পর্যটকদের নিয়ে প্রায়ই আমরা ভিতরকণিকা, সিমলিপালের মতো বিভিন্ন উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে যেতাম। দীর্ঘ দিন ধরে সে সব অঞ্চলে যাওয়াআসা করার ফলে, সেখানকার স্থানীয় আদিবাসীদের খাবারদাবারের সঙ্গে পরিচিত হয়ে গিয়েছিলাম। ওঁদের রান্নার ধরন একেবারে আলাদা। খরগোশ, পাখি এমন কিছু প্রাণী শিকার করে তাদের চামড়া ছাড়িয়ে বাঁশের মধ্যে ভরে আগুনে পুড়িয়ে খেতে দেখতাম। ভাবনাটা ওই আদিবাসীদের কাছ থেকেই পাওয়া। আমি নিজে খেয়েও দেখেছিলাম। একেবারে অন্য রকম স্বাদ পেয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, যদি কিছু করতেই হয় তা হলে এমন কিছু খাবারের রেস্তরাঁই তৈরি করব। উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে আদিবাসীদের খাবার নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করলাম। বিরিয়ানি, চাইনিজের রেস্তরাঁ কলকাতায় ছেঁয়ে গিয়েছে । অন্য রকম কিছু করার ইচ্ছে থেকেই স্যান্টা’স ফ্যান্টাসির জন্ম।’’
শুরুতে নতুন এই প্রয়াস আপন করে নেয়নি কলকাতা। বুঝতে সময় লেগেছিল। রেস্তরাঁ চালু হওয়ার দু’বছর পর ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। এ প্রসঙ্গে কৌশিক বলেন, ‘‘পুজো, বিভিন্ন উৎসব-উদ্যাপনে তো বটেই, সারা বছর মানুষ অন্য রকম খাবারের স্বাদ নিতে আসেন এখানে। কোনও কিছুই শুরুতে বিপুল সাফল্য পায় না। তবে খাবারের মান যদি সত্যিই ভাল হয়, তা হলে আজ না হলে কাল সেই বার্তা অনেকের কাছে পৌঁছে যাবেই। তবে কত দিন লাগছে সেটাই দেখার।’’ পরিশ্রম আর টিকে থাকার ইচ্ছেই সাফল্য এনে দেয় বলে মনে করেন রেস্তঁরা কর্ণধার।
সামুদ্রিক এবং আদিবাসী— দু’ধরনের খাবারই পাওয়া যায় এই অভিনব রেস্তরাঁয়া। আদিবাসী খাবারের মধ্যে রয়েছে ওড়িশার কালাহান্ডি জেলার বাঁশপোড়া মটন, উত্তর-পূর্ব ভারতের জনপ্রিয় খাবার জাডো, কুকরা কা মাসু, আস্যাচুম ছাড়াও মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ডের খাবার পাওয়া যায় এখানে। বর্তমানে এই রেস্তরাঁর মোট পাঁচটি শাখা শহরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। খাবারের দামও মধ্যবিত্তের সাধ্যের মধ্যে। এই রেস্তরাঁর রকমারি আদিবাসি খাবারের ভিড়ে, চাহিদা বেশি বাঁশপোড়া মটন আর সরু চাকলি রুটির। আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে রেস্তরাঁর কর্ণধারের কাছে বাঁশপোড়া মটনের রেসিপি জানতে চাওয়া হয়েছিল। তিনি বললেন। তবে পুরোটা নয়। কিছুটা রেখেঢেকে।
এই বিশেষ পদের উপকরণ বলতে, সেদ্ধ করে ছাড়িয়ে রাখা কচি পাঁঠার মাংস, উত্তর-পূর্বের বিখ্যাত লঙ্কা ভুট জালোকিয়া (প্রচন্ড ঝাল এবং দুর্দান্ত সুঘ্রাণ), হলুদ এবং কিছু বিশেষ মশলা। মাংস এবং সব উপকরণ একসঙ্গে মাখিয়ে ২৪ ঘণ্টা ম্যারিনেট করে রাখতে হবে। এতেই অর্ধেক নরম হয়ে যাবে মাংস। পরের দিন একেবারে কচি বাঁশের মধ্যে ম্যারিনেট করা মাংস পুড়ে আগুনের পুড়িয়ে নিলেই তৈরি বাঁশপোড়া মটন। এর সঙ্গে পরিবেশন করা হয় সরু চাকলির রুটি। যেটি তৈরি হয় মূলত চালের গুঁড়ো, ডিম, স্প্রিং অনিয়নের মতো কয়েকটি উপকরণ দিয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy