Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

একটা [ভয়] কষ্ট লজ্জা

হলে পৌঁছে শুনলাম, আজ তো কেমিস্ট্রি নয়, আজ তো অঙ্ক। কী!!! কী করে হয়! আমি এত ভুল রুটিন টুকলাম? হৃদি টপ করে খসে পড়ল দশ তলা থেকে এক তলায়। বিনবিন করে ঘাম শুরু হয়ে গেল। গত পাঁচ-ছ’ দিন তো অঙ্কর দিকে তাকাইনি। আর ওই যে ডিফারেন্সিয়াল ইকোয়েশন আমি নিশ্চয়ই কিচ্ছু পারব না। আর মনের কু ডাকার যা জোর, তেমনটা বাঘা কোকিলেরও নেই। ঠিক তাই। কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। লিমিট অবধি কষতে পারছি না। ঘাড় দিয়ে গরম স্রোত, চোখ দিয়ে জল। সব ঝাপসা। কোশ্চেন পেপারের লাইনগুলো ওপরে-নীচে ওঠানামা করছে। আমি কেন কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। আরে, কিছু তো পারব। কিছু তো অঙ্ক করেছিলাম, তা হলে?

সঞ্চারী মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

হলে পৌঁছে শুনলাম, আজ তো কেমিস্ট্রি নয়, আজ তো অঙ্ক। কী!!! কী করে হয়! আমি এত ভুল রুটিন টুকলাম? হৃদি টপ করে খসে পড়ল দশ তলা থেকে এক তলায়। বিনবিন করে ঘাম শুরু হয়ে গেল। গত পাঁচ-ছ’ দিন তো অঙ্কর দিকে তাকাইনি। আর ওই যে ডিফারেন্সিয়াল ইকোয়েশন আমি নিশ্চয়ই কিচ্ছু পারব না। আর মনের কু ডাকার যা জোর, তেমনটা বাঘা কোকিলেরও নেই। ঠিক তাই। কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। লিমিট অবধি কষতে পারছি না। ঘাড় দিয়ে গরম স্রোত, চোখ দিয়ে জল। সব ঝাপসা। কোশ্চেন পেপারের লাইনগুলো ওপরে-নীচে ওঠানামা করছে। আমি কেন কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। আরে, কিছু তো পারব। কিছু তো অঙ্ক করেছিলাম, তা হলে?

আমি ডাহা ফেল? বুকে একটা বড় পাথর মনে হয় চেপে বসছে। হাত ঘেমে উত্তরপত্র ভিজিয়ে দিচ্ছে। যেটুকু যা করতে পারছি, সেগুলো আমারই ঘাম লেগে মুছে যাচ্ছে? ঈশ্বর! এই লেভেলে পেছনে না লাগলে হচ্ছিল না? খুব জোর গলা ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করল। পারলাম না। হার্টবিট বন্ধ হবেই, কেউ রুখতে পারবে না। মায়ের কথা খুব মনে পড়ল। মা বলেছিল, ‘বাবু, একটু মন দিয়ে পড়, তোর মাথা আছে। তুই ভাল রেজাল্ট করবি।’ আর আমি গর্দভ, রুটিন টুকতে ভুল করলাম। আমার, আমার... রাগে চেয়ার ছেড়ে উঠতেই ধড়মড়িয়ে একটা শব্দ হল। আমি খাটের ওপর উঠে বসলাম। কিছুতেই মনে পড়ছে না, আজ যেন কী পরীক্ষা! উচ্চ-মাধ্যমিক তো বটেই, কিন্তু কী পেপার? কেমন যেন গুবলে যাচ্ছে সব কিছু। তার পর আস্তে আস্তে পাখার ঘোরাটা বুঝতে পারি। ক্লাসরুমে আমাদের ঘরের মতোই পাখা চলছে? না কি আমি ভুল দেখছি? গোটা তিরিশ সেকেন্ডে মালুম হয়, আজ আমার কোনও পরীক্ষা নেই। হয়তো বা এ জীবনে আর ও রকম কোনও ফার্স্ট পেপার, সেকেন্ড পেপার দিতে হবে না। যাক বাবা।

কিন্তু না, পরীক্ষা বার বার ফিরে আসে। আর সেই সেই দিনকার স্বপ্নগুলোকে আমি প্যাশনেটলি ঘেন্না করি। কেন এখনও সকালে মাঝে মাঝে আমি পরীক্ষার স্বপ্ন দেখি? কেন আমার মনে হয় আজও আমার কোনও পরীক্ষা আছে? আমার শিরদাঁড়া দিয়ে গরম স্রোত, আমার বুক ধড়ফড়, শরীর আনচান।

এক মনোবিদ বন্ধু লম্বা-চওড়া লেকচার দিয়েছিল, কনশাস-সাবকনশাস, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভয়, রেসপনসিবিলিটি। হয়তো সবই ঠিক। কিন্তু যে দিনগুলোয় আমি ওই স্বপ্নটা দেখি, আমি তো স্রেফ ভয় পাই, পেট গুড়গুড় করে, আমিও প্রাণপণ ছুটতে থাকি আর আমার পেছনে কোশ্চেন পেপার। ওই ভয়কে ফোঁসফোঁসিয়ে প্রাণায়াম করে আর নিজের সঙ্গে লজিকাল রিজনিং খেলে তাড়ানো যায় না বাবা।

খুব রাগ হয়। ভিতুর ডিম! নিজের ওপর কোনও কন্ট্রোল নেই? কেন পড়িসনি উচ্চ মাধ্যমিকে? অথচ তার পর তো কত পড়েছি, কই কোশ্চেন কমন পড়েছে, এমন কোনও স্বপ্ন কেন দেখি না? জীবনের অনেক ফিল্ডে হেরো বলে? না কি মাল্টিটাস্কিং ঠিক করে করতে পারছি না বলে? সব হেরে-যাওয়া শেষ অবধি উচ্চ মাধ্যমিককেই প্রতীক হিসেবে বেছে নিচ্ছে কেন? ওটাতেই সবচেয়ে ভয় পেয়েছিলাম? মনে মনে প্রশ্নগুলো তোলাপাড়া করি, কিন্তু ঠিক জানি, যে দিন আমার সাবকনশাস চাইবে, বা যথাযথ পেট গরম বা হৃদয় গরম বা কে জানে কী কুকাণ্ড হবে, সেই নিশ্চিত ফেলের অঙ্ক পরীক্ষাটা দিতে বসতে হবে ফের।

অন্য বিষয়গুলি:

anandabazar rabibasariya sanchari mukhopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE