নিরাময়কারী: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের তৈলচিত্র। ডান দিকে, তাঁর হাতে লেখা সেই ডায়েরির কিছু পাতা (প্রতীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংগ্রহ থেকে)
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তখন জেরবার ম্যালেরিয়া জ্বরে। লখনউয়ের ক্যানিং কলেজে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু অসুস্থ শরীরে কলকাতা থেকে একটানা লখনউ যাওয়া অসম্ভব। ঠিক করলেন, পথে কর্মাটাঁড়ে বিদ্যাসাগরের বাড়ি কয়েক দিন থেকে শরীরটাকে ঠিক করবেন। সেখানে জল-হাওয়া বড় স্বাস্থ্যকর।
জামতাড়া আর মধুপুর স্টেশনের মাঝখানে কর্মাটাঁড়। জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতে বীতশ্রদ্ধ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৭৩ সালে সেখানে বাগানঘেরা একটি বাড়ি কেনেন। বাড়ির নাম ‘নন্দন কানন’। জীবনের শেষ ১৮ বছর কলকাতা ছেড়ে সেখানেই মূলত সাঁওতালদের মধ্যে থাকতেন। ১৮৭৮-এর সেপ্টেম্বরে সেখানে পৌঁছন হরপ্রসাদ।
এক দিন বিকেলে তিনি বিদ্যাসাগরকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছেন না। হঠাৎ দেখেন, আলপথ ধরে হনহন করে তিনি হেঁটে আসছেন। ঘেমে গিয়েছেন। হাতে একটা পাথরের বাটি। কোথায় গিয়েছিলেন জানতে চাইলে বিদ্যাসাগর বললেন, এক সাঁওতাল কিশোরের নাক দিয়ে ক্রমাগত রক্ত পড়ছিল। তার মা ছুটতে-ছুটতে এসেছিলেন ডাকতে। মাইল দেড়েক দূরে সেই গ্রামে হোমিয়োপ্যাথিক ওষুধ দিতে গিয়েছিলেন। এক ডোজ়েই রক্ত পড়া কমে গিয়েছে। ‘‘এঁরা তো মেলা ওষুধ খায় না, তাই অল্প ওষুধেই উপকার হয়। কলকাতার লোকের ওষুধ খেয়ে-খেয়ে পেটে চড়া পড়ে গিয়েছে। মেলা ওষুধ না দিলে তাঁদের উপকার হয় না।’’
সমাজসংস্কারক, শিক্ষাবিদ পরিচয়ের অন্তরালে থেকে যাওয়া কর্মকাণ্ড তাঁর হোমিয়োপ্যাথি-চর্চা। কলকাতায় এর সূত্রপাত হলেও বিস্তৃত রূপ পেয়েছিল কর্মাটাঁড়ে। ডুবে থাকতেন হোমিয়োপ্যাথিতে। পুরোদস্তুর ডাক্তারবাবুর ভূমিকায় তাঁকে পেয়েছিলেন সেখানকার আদিবাসী মানুষজন। বাড়ির বৈঠকখানাই ছিল তাঁর অবৈতনিক ডিসপেন্সারি।
ভাই শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন প্রায়ই গিয়ে থাকতেন সেখানে। দাদাকে সাহায্য করতেন। তাঁর লেখাতেও পাওয়া যায়, ভোরবেলা থেকে বেলা দশটা পর্যন্ত রোজ বিদ্যাসাগর সাঁওতাল রোগীদের দেখতেন, বিনা পয়সায় ওষুধ দিতেন। পথ্য হিসেবে সাবু, বাতাসা, মিছরি খাওয়াতেন। ফের বিকেল থেকে রাত অবধি চলত রোগীদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে দেখা, যার জন্য দিনে অনেক সময় তাঁকে তিন মাইলেরও বেশি হাঁটতে হত এবং রাত জাগতে হত। এক বার রাজনারায়ণ বসু দেওঘরে এসেছেন। বিদ্যাসাগরের একটি বিশেষ কাজে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার কথা। কোনও দিন কথার খেলাপ না-করা মানুষটি কিন্তু সে বার যেতে পারলেন না। কারণ, কলেরা-আক্রান্ত ৬৪ বছরের অশ্বিনী হেমব্রমকে বাঁচাতে তখন তিনি দিন-রাত এক করে ফেলছেন। চিঠিতে সে কথা জানিয়েছিলেন রাজনারায়ণকে।
এই কর্মাটাঁড়-পর্বেই নিয়মিত একটি ডায়েরিতে তাঁর রোগী ও তাঁদের চিকিৎসার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব লিখে রাখতেন বিদ্যাসাগর। অনেকটা এখনকার দিনের বেড-টিকিট বা প্রেসক্রিপশনের মতো। রোগীর নাম, উপসর্গ, তাঁকে কোন ওষুধ কত বার দিলেন এবং রোগ কবে সারল— সব কিছু তাঁর নিজের হাতে কালি-কলমে ইংরেজিতে লিখে গিয়েছেন। ৯৬ পাতার ডায়েরি। কালো কালিতে লেখা। আরও কিছু পাতা ছিল, কিন্তু কালের দংশনে হারিয়ে গিয়েছে। পাতাগুলি তামাটে। ১৮৮০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১৮৮৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন বছর সময়সীমায় বিভিন্ন রোগীর কেস-হিস্ট্রি তাতে লিপিবদ্ধ। রোগীদের মধ্যে তাঁর স্ত্রী, নাতনির মতো নিকটাত্মীয়দেরও নাম রয়েছে।
এমন কোনও ডায়েরি যে বিদ্যাসাগরের আছে, সে-কথা তাঁর পরিবারের উত্তরপুরুষদের অনেকের কাছেই অজানা ছিল। এবং সে ডায়েরি পরিবারের কারও কাছেই ছিল না। ঘটনাচক্রে এমন মূল্যবান ঐতিহাসিক দলিল খুঁজে পাওয়ার গল্প শোনাচ্ছিলেন হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসক প্রতীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সম্পর্কে বিদ্যাসাগরের নাতির ছেলে বা প্রপৌত্র। সম্পর্কটা আর-একটু স্পষ্ট করে বলা যাক। বিদ্যাসাগরের খুবই স্নেহভাজন ছিলেন তাঁর ছোট ভাই ঈশানচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। বিদ্যাসাগরের মৃত্যুর ঠিক পরের বছর জন্ম নেন ঈশানচন্দ্রের ছেলে পরেশনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি পরবর্তী কালে খ্যাত হন চিকিৎসক ‘পি ব্যানার্জি (মিহিজাম)’ নামে। জ্যাঠামশাইয়ের হোমিয়োপ্যাথি চর্চাকে তিনিই পরিবারের ধমনিতে চালনা করেছিলেন।
পরেশনাথের ছেলে প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ও খ্যাতনামা হোমিয়োপ্যাথ ছিলেন। এলগিন রোডে নেতাজি ভবনের ঠিক উল্টো দিকের বাড়িটি ছিল তাঁর। সেখানেই থাকতেন ও প্র্যাকটিস করতেন। তাঁরই ছেলে প্রতীপ। তিনিও সেই পুরনো ধাঁচের বাংলো প্যাটার্নের বাড়িতেই প্র্যাকটিস করেন। প্রতীপবাবু ও তাঁর স্ত্রী রিঙ্কুদেবীর সঙ্গে কথা হচ্ছিল সেই বাড়িরই এক তলার লাইব্রেরি রুমে বসে। তাঁরাই জানালেন, ২০১৫ সালে ঠিক হল, বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারে হোমিয়োপ্যাথি চর্চার ১৫০ বছর পালন করা হবে। কিছু অনুষ্ঠান, প্রদর্শনী ইত্যাদি হবে। তাই এই সংক্রান্ত পুরনো নথিপত্রের খোঁজ শুরু হল। তখন এশিয়াটিক সোসাইটির তৎকালীন কিউরেটর জানালেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের একটি ব্যক্তিগত ডায়েরি রয়েছে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কাইভে। প্রতীপবাবুরা রবীন্দ্রভারতী কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখলেন। এক সপ্তাহের মধ্যেই উত্তর এল, এবং জানানো হল যে, বিষয়টি সত্যি। বিদ্যাসাগরের হোমিয়োপ্যাথি চর্চার ডায়েরি রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবারে। প্রতীপবাবুদের সেই ডায়েরি হাতে নিয়ে দেখার ও তার পাতার ছবি তোলার অনুমতি দিয়েছিল রবীন্দ্রভারতী। সেই ছবিই এখন বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের অমূল্য সম্পদ।
কী ভাবে সেটি ঠাকুর পরিবারে গেল, সে সম্পর্কে ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত ‘দ্য গোল্ডেন বুক অব বিদ্যাসাগর’-এ লেখা রবীন্দ্রভারতী মিউজ়িয়ামের প্রাক্তন কিউরেটর সমর ভৌমিকের লেখার উল্লেখ করা যেতে পারে। সেখানে তিনি লিখেছেন, কলকাতায় থাকার সময় বিদ্যাসাগরের হোমিয়োপ্যাথি-চর্চার প্রথম প্রমাণ পাওয়া যায় ১৮৬৪ সাল নাগাদ। তিনি মেট্রোপলিটান স্কুলের ছাত্রদের ও কলকাতার কয়েকজনের চিকিৎসা করেছিলেন। সেই চিকিৎসার বর্ণনাসমৃদ্ধ কতগুলি ছেঁড়া ডায়েরির পাতা পাওয়া গিয়েছিল। তবে তার অনেক পরে ষাটের দশকে বিদ্যাসাগরের উত্তরপুরুষ ক্ষিতিপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী মঞ্জুশ্রী দেবী একটি ৯৬ পাতার ডায়েরি রবীন্দ্রভারতীকে দান করেন। সেটিই ছিল ওই ডায়েরি।
বিদ্যাসাগরের পৌত্রীর পুত্র ছিলেন ক্ষিতিপ্রসাদ। বড় ছেলে নারায়ণচন্দ্রের মেয়ে মতিমালা দেবী ও যামিনীমোহন চট্টোপাধ্যায়ের ছেলে ক্ষিতিপ্রসাদের বিয়ে হয় মঞ্জুশ্রী দেবীর সঙ্গে। মঞ্জুশ্রী আবার ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৌত্রী তথা সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় মেয়ে। এই ভাবেই মিলে গিয়েছিল বিদ্যাসাগর ও রবীন্দ্রনাথের পরিবার। ডায়েরি চলে এসেছিল এক পরিবার থেকে অন্য পরিবারে।
ডায়েরিটি ভাল করে পড়়লে বোঝা যায়, বিদ্যাসাগর রোগীদের লক্ষণ-ভিত্তিক চিকিৎসা করতেন। কতগুলি ভাগে লক্ষণকে ভাগ
করা হয়েছিল। যেমন, দীর্ঘস্থায়ী লক্ষণ, অস্থায়ী লক্ষণ, শরীরের গঠনভিত্তিক লক্ষণ ও পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্কিত লক্ষণ। রোগী হিসেবে এমন অনেকের নাম পাওয়া যায় যাঁরা খুব সম্ভবত তাঁর নিকটাত্মীয়। যেমন, দিনময়ী দেবী (স্ত্রীর নাম), শরৎকুমারী (মেয়ে), কুমুদিনী (মেয়ে), ভবসুন্দরী (বৌমা), মৃণালিনী (নাতনি)। এ ছাড়া হরমোহন, মোক্ষদা দেবী, সুরেশচন্দ্র, তারকনাথ সান্যাল, প্রিয়মোহন, সুখদা দেবী, হেমলতা, সারদা, রাধাকৃষ্ণ—এই রকম অনেকের নাম রোগীর তালিকায় রয়েছে।
প্রতিটি পাতায় প্রথমে রোগীর নাম, তার পর তাঁর রোগের ও উপসর্গের বিবরণ, পরের কলামে কী কী ওষুধ তাঁকে দেওয়া হচ্ছে এবং একেবারে শেষে তিনি কবে সুস্থ হলেন—এই ভাবে বিস্তারে নোট নিয়েছেন বিদ্যাসাগর। যেমন—
‘‘শরৎকুমারী দেবী: হিক্কাকাফ, নসিয়া ইন দ্য মর্নিং অ্যান্ড আফটার মিল ভমিটিং অফ ফুড অ্যাওয়েকেনস ফ্রম স্লিপ উইথ আ স্টার্ট। ১৫।১০।৮০। সালফার ৩০, নাইট অ্যান্ড মর্নিং। নো ইমপ্রুভমেন্ট।
দিনময়ী দেবী: থিন ওয়াটারলি ইভাকুয়েশনস-কটিং পেনস ইন দ্য বাওয়েলস-ভায়োলেন্ট চিলস, এক্সেসিভ হিট অ্যান্ড থার্স্ট। ১৫।১০।৮০। অ্যাকোনাইটাম ১। এভরি টু আওয়ার্স। কিওরড ১৬।১০।৮০
ভবসুন্দরী: কপিয়াস, টেনাশিয়াস, ইয়োলোইশ ডিসচার্জ ফ্রম দ্য ফিমেল জেনিটাল অর্গ্যানস, ২৬।১।৮১ অ্যাকোনাইটাম ৬, থ্রাইস ডেইলি। ১।২।৮১ সিপিয়া ৩০। থ্রাইস ডেইলি। কিওরড ১৫।২।৮১।
মোক্ষদা দেবী: ক্যানসার ইন দ্য ইউটেরাস অফ থ্রি ইয়ার্স। স্ট্যান্ডিং-কন্টিনিউয়াস ফিভার-গ্রেট ডিসগাস্ট ফর অল ফুড-এক্সেসিভ বার্নিং ইন দ্য ইউটেরাইন রিজিয়ন-লেফ্ট লেগ ভেরি মাচ সোলেন অ্যান্ড পেনফুল রেস্টলেসনেস ডে অ্যান্ড নাইট। অ্যাসেটিকাম অ্যাসিডাম ১, আর্সেনিকাম ৩০।’’
এই ভাবেই চলেছিল ডায়েরিতে লেখা। শঙ্করীপ্রসাদ বসুর ‘রসসাগর বিদ্যাসাগর’ বইয়ে রয়েছে— ‘‘নিজে বহু অসুখে ভুগেছেন তার যন্ত্রণা, অপরকে ভুগতে দেখার যন্ত্রণা পণ্ডিত বিদ্যাসাগরকে ‘চিকিৎসক’ বিদ্যাসাগর করে তুলেছিল।’’ প্রখ্যাত চিকিৎসক মহেন্দ্রলাল সরকারকে অ্যালোপ্যাথি থেকে হোমিয়োপ্যাথি প্র্যাকটিসে সরিয়ে আনার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা ছিল বিদ্যাসাগরের। সুকিয়া স্ট্রিটে ডাক্তার চন্দ্রমোহন বসুর কাছে ঈশ্বরচন্দ্র হোমিয়োপ্যাথি শিক্ষা নিয়েছিলেন। শব ব্যবচ্ছেদ শেখার জন্য নরকঙ্কালও সংগ্রহ করেছিলেন বেশ কিছু। বহু বই কিনে প্রায় একটা লাইব্রেরি বানিয়ে ফেলেছিলেন। তাঁর হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসা নিয়ে প্রতীপবাবুর মুখে শোনা গেল দুর্দান্ত এক গল্প, যার উল্লেখ শঙ্করীপ্রসাদের বইতেও রয়েছে।
বিদ্যাসাগরের হাঁপানি ছিল। শীতকালে বাড়ত। তাই শীতে দু’বেলা গরম চা খেতেন। এক দিন চা খাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হাঁপের টান একদম কমে গেল। ঈশ্বরচন্দ্র অবাক! গৃহভৃত্যকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘আজ চায়ে কি আদার রস মিশিয়েছিলে?’’
ভৃত্য না বললেন এবং স্বীকার করলেন যে, তাড়াহুড়োয় আজ কেটলি না-ধুয়েই চা করে ফেলেছিলেন। বিদ্যাসাগর তাঁকে কেটলি আনতে বললেন। আনার পর কেটলির ভিতর পরীক্ষা করে তিনি স্তম্ভিত হলেন! অবশিষ্ট চায়ে দু’টো আরশোলা পড়ে রয়েছে। মাথায় বিদ্যুৎ খেলে গেল। আরশোলা বেশি জলে সেদ্ধ করার পর, তাকে অ্যালকোহলে ফেলে ছেঁকে ডাইলিউট করে হোমিয়োপ্যাথির মতে ওষুধ বানিয়ে নিজে ও অন্যদের দিয়ে পরীক্ষা করে দেখলে কেমন হয়, তাতে হাঁপানি, সর্দি সারে কি না! লোককে না জানালেই হল ওষুধে কী আছে। ভাবনাকে কাজে পরিণত করতে দেরি করেননি। জানা যায়, সেই ওষুধে অনেকের রোগের উপশম করেছিলেন বিদ্যাসাগর!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy