Advertisement
E-Paper

পাগল

কাঁটাতারের গা ছুঁয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী। যখন বর্ষাকালে দেশ ভাগ করে থাকা এই পদ্মা নদীতে জলের গোঙানি ওঠে, তখন সে গোঁ গোঁ ডাক এই রেলপথের শেষ মাথায় দাঁড়িয়ে শোনা যায়।

ছবি মহেশ্বর মণ্ডল।

ছবি মহেশ্বর মণ্ডল।

সৌরভ হোসেন

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২৫ ০৯:৩৭
Share
Save

রেললাইনগুলো পুবে যেখানে গিয়ে শেষ হয়েছে, সেখানে দাঁড়িয়ে আছে মইজুদ্দিন। রেলের জমিটা শেষ হলেই পদ্মার চর। চরের পুবে যেখানে ধু ধু সাদা বালি চিকচিক করে, তার গা ছুঁয়ে নো ম্যান’স ল্যান্ড। নো ম্যান’স ল্যান্ডের ডগায় হিজিবিজি জাল বিছিয়ে আছে কাঁটাতার। বড় অদ্ভুত এই কাঁটাতার! ও পারেও যেমন মানুষ, এ পারেও তেমন মানুষ, একই ভাষা, একই মাঠ, একই হাওয়া, তবুও আলাদা দু’খানা দেশ! কাঁটাতারকে তার জাহান্নমের খাঁচা মনে হয়। মানুষের তৈরি কাঁটাতার প্রেম-ভালবাসা তো দূরের কথা, মানুষের ছায়াও গলতে দেয় না।

কাঁটাতারের গা ছুঁয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী। যখন বর্ষাকালে দেশ ভাগ করে থাকা এই পদ্মা নদীতে জলের গোঙানি ওঠে, তখন সে গোঁ গোঁ ডাক এই রেলপথের শেষ মাথায় দাঁড়িয়ে শোনা যায়। মইজুদ্দিন কত দিন সে ডাক শুনেছে! সে এক বার হাতঘড়িটার দিকে তাকাল। তার পর চোখ রাখল মাটিতে চিত হয়ে শুয়ে থাকা রেলপথগুলোর দিকে। স্টেশনের আলোগুলো যেখানে শেষ হয়ে গেছে, তার পশ্চিমের রেললাইনগুলোর ওপর ঘুচুরমুচুর অন্ধকার। রাত তো কম হল না! এগারোটা বাজতে আর মিনিট পাঁচেক। ট্রেনটা আসতেও আর দেরি নেই। ঠিকঠাক এলে এগারোটা তিনেই ঢুকবে। এটাই এই স্টেশনে আসা শেষ ট্রেন। মইজুদ্দিন শেষ ট্রেনটার জন্যও অপেক্ষা করে থাকে। হাতে বড়সড় নাইলনের ব্যাগ। ভিতরে প্যাকেটে মোড়া গুচ্ছের খাবার। জলের বোতল।

নদীর দিক থেকে আসা উড়োঝুড়ো হাওয়াটা গায়ে লাগতেই মাথার উসকোখুসকো চুলগুলো আলুথালু হয়ে গেল। পাকুড় গাছটার ডাল থেকে শুকনো পাতা ঝরার শব্দও কানে ভেসে এল। ফাল্গুনের শুরু। শীতের বাতাসে মিশতে শুরু করে দিয়েছে দখিন হাওয়া। দুই হাওয়ার উলোথুলো ঝগড়ায় বাতাসে ঘূর্ণি ওঠে। সে ঘূর্ণি বাতাস চুল্লুখোর মাতাল বনে যায়। কখনও বাউন্ডুলে হয়, তো কখনও ধুনুচি নাচ নাচে। আজ সব ট্রেন ফাঁকা গেছে। শুধু আজ নয়, গত এক সপ্তাহ ধরে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে মইজুদ্দিনকে। এখন তো তাও কামড়-বসানো শীত নেই। শীতের সময়ও স্টেশনে ঝুপসি মেরে বসে থাকে মইজুদ্দিন। কখনও শালের চাদর মুড়ে তো কখনও জ্যাকেট গায়ে। কুয়াশা ধোঁয়া হয়ে প্লাটফর্ম চত্বরে ঢুকলে মইজুদ্দিনের চোখ তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠে। ঊনষাট বছরের সে, কোটরে-বসা কুতকুতে চোখগুলো ফুঁড়ে ফুঁড়ে দেখে আজ ট্রেন থেকে কেউ নামল কি না। লোকে বলে, মজুপাগলা তার কুতকুতে চোখ দিয়েও বড় কিছু দেখে, আর আমরা আমাদের বড় বড় চোখ থাকা সত্ত্বেও ছোট জিনিস দেখি! আসলে আমরা ছোট দৃষ্টির লোক।

হ্যাঁ, এই তল্লাটের সবাই মইজুদ্দিনকে ‘মজুপাগলা’ বলে। মইজুদ্দিন যা করে, তাতে লোকে তাকে তো ও রকম বলবেই! তেমন কাজই তো করে মইজুদ্দিন। বৌয়ের সঙ্গে কত দিন ঝগড়া-ঝামেলা হয়েছে। তবুও ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো বন্ধ হয়নি। অথচ মইজুদ্দিনের কোনও কিছুর অভাব নেই। এই সীমান্তবর্তী শহরের এক জন সফল ব্যবসায়ী সে। গাড়ি-বাড়ি-ব্যাঙ্ক ব্যালান্স কী নেই তার! এমন কানাঘুষোও শোনা যায়, মইজুদ্দিন নাকি তিনখানা পদ্মার চর কিনে রেখেছে! সে কথা শুনে মইজুদ্দিন ঠাট্টা করে বলে, শুধু নদীর চর কেন, চাঁদেও এক কাঠা জমি কিনে রেখেছি। সে সব অবশ্য ওই ঠাট্টা-মজাকই। সত্য নয়। তবে এ কথা সবাই মানে, মইজুদ্দিন স্টেশনে থলে করে খাবার বওয়ার কাজ না করলে, তিনখানা না হোক, দু’খানা চর কিনতেই পারত। রাষ্ট্র বিক্রি করলে তাদের তল্লাট লাগোয়া পদ্মা নদীখানার অংশটুকুও কিনতে পারত। মইজুদ্দিন অবশ্য ও-সব জমিজমা চর-নদীতে মজে থাকে না, মইজুদ্দিন মজে থাকে মানুষে। তাও আবার শরীর-গতর-মগজে ঠিক মানুষে নয়, মগজের তার-গিঁট উলটপালট থাকা মানুষে! সে মানুষের চোখ আছে, অথচ সাকিন নেই। শরীর আছে, অথচ ছিরি নেই। পা আছে, অথচ দুনিয়া নেই। সে সব মানুষের দুনিয়া হল মইজুদ্দিন। কাঁচামালের কারবারি লালগোলার মইজুদ্দিন শেখ।

ট্রেনটা ঠিক সময়েই ঢুকল। যখন ধিক-ধিক গতিতে এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম কামড়ে দাঁড়াল, তখন ঘড়িতে এগারোটা বেজে চার। লেট বলতে গেলে ওই মিনিট খানেক। যাত্রী সংখ্যা কম। একে তো রাতের শেষ ট্রেন, তার উপর স্টেশনও শেষ স্টেশন, যাত্রী সংখ্যা কম হওয়াটাই স্বাভাবিক। ঝেড়েমুছে ওই চল্লিশ-পঞ্চাশ জন। তার মধ্যে বেশির ভাগ ভিন রাজ্যে খেটে আসা পরিযায়ী শ্রমিক। মইজুদ্দিন ওত পেতে দাঁড়িয়ে থাকল। সজাগ দৃষ্টি ট্রেনের গেটে গেটে, যাদের জন্য হন্যে হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা, তাদের কেউ কোনও গেট দিয়ে নামছে কি না। সব যাত্রী নেমে গেলেও কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করে থাকে মইজুদ্দিন। আজও তার ব্যতিক্রম হল না। প্লাটফর্ম যাত্রীশূন্য হয়ে গেলেও ঠায় দাঁড়িয়ে থাকল সে। তার পর এক বার এ গেটে, এক বার ও গেটে মুখ বাড়িয়ে দেখল ভিতরে কেউ আছে কি না। এ রকমও কয়েক বার ঘটেছে, সব যাত্রী নেমে যাওয়ার পর ট্রেন যখন মূল লাইন থেকে সরিয়ে কারশেডে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখন মইজুদ্দিন দেখে, যাদের জন্য সে চাতকের মতো চেয়ে থাকে, তাদের এক জন গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে!

আজও সেটাই ঘটল। যেই ট্রেনটা হুইসল বাজিয়ে স্টার্ট দেবে, অমনি পিছনের কামরা থাকে এক জন মুখ বাড়াল। মুখটা দেখেই দৌড়ল মইজুদ্দিন। ব্যাগের ভেতরে থাকা খাবার-জলের প্যাকেটগুলো খলবল করে নড়ে উঠল। ট্রেনের চাকাগুলো যেই গড়াতে শুরু করবে, অমনি শেষ কামরার গেটে আধখানা ঝুলতে থাকা মানুষটাকে হাত বাড়িয়ে নামিয়ে নিল মইজুদ্দিন। ট্রেন প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে বেরিয়ে গেলে ফাঁকা প্ল্যাটফর্মে দেখা গেল দু’জন মানুষ। ব্যাগ ঘাড়ে মানুষ খুঁজতে আসা এক জন, আর এক জন ছেঁড়া ময়লা পোঁটলা হাতে শেষ ট্রেনের শেষ যাত্রী। দু’জনের মাথাতেই উসকোখুসকো চুল, দু’জনের মুখেই কাঁচাপাকা চাপ দাড়ি।

*****

উসকোখুসকো চুলের ছেঁড়া ময়লা পোঁটলা বগলে মানুষটিকে নিয়ে যখন ‘আশ্রয়’-এ ঢুকল মইজুদ্দিন, তখন রাত ডাগর হয়ে উঠেছে। মফস্সল শহরের ল্যাম্পপোস্টের আলো নিঝুম দাঁড়িয়ে আছে রাস্তায়। মুক্ত সংশোধনাগারের ওয়াচ টাওয়ারের উপরে উঠলে বর্ডারের সীমান্তরক্ষীদের সার্চলাইট চোখে পড়বে। বর্ষাকাল হলে পদ্মার পাড় ভাঙার শব্দও কানে ভেসে আসত। স্টেশন থেকে ‘আশ্রয়’-এর দূরত্ব বেশি নয়। হাঁটাপথে মিনিট দশেক। মইজুদ্দিন অবশ্য হেঁটে আসে না। স্টেশন চত্বরের বাইরে তার গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। আসলে সে যে মানুষগুলোকে ধরে আনার জন্য স্টেশনে যায়, তাদের হাঁটিয়ে আনা মুশকিল। এ দিক-সে দিক ঢুকে যেতে পারে। মাথা আরও বিগড়ে গেলে আঘাত করতেও পারে। অগত্যা গাড়িই ভরসা। তা ছাড়া গাড়িতে চালক ছাড়াও আরও এক জন লোক থাকে।

‘আশ্রয়’-এর দোতলা বিল্ডিং। ধবধবে সাদা রং করা। বিল্ডিংয়ের রং সাদা কেন? মইজুদ্দিনকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে, এখানে তো জীবনের রং হারানো মানুষগুলো থাকে, তাই সাদা রং। মাস তিনেক ধরে বিল্ডিংটা ফাঁকা। শেষ মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষটিকে যখন বাড়ি ফেরানো হয়েছিল, তখন কার্তিক মাস। মাঠে মাঠে সোনালি রঙের পাকা ধান। চুল-দাড়ি কেটে স্নান-গোসল করে তেল-সাবান মাখিয়ে গায়ের ঝুল-ময়লা পরিষ্কার করে যখন লোকটিকে বাড়ি ফেরানো হয়েছিল, তখন তার গায়ের রংও ছিল ওই পাকা ধানের মতো টকটকে সোনালি।

তেল-শ্যাম্পু দিয়ে মুখের জট-লাগা দাড়ি আর মাথার ঝোপ চুল পরিষ্কার করে দেওয়ার পর যখন আজকের লোকটি খিলখিল করে হেসে উঠল, তখন মইজুদ্দিনও শিশুর মতো হেসে উঠল।

“কিছু পেলি?” মইজুদ্দিন জিজ্ঞেস করল।

“দেখছি,” বলল মুস্তাক। মুস্তাক জরিপের চোখ দিয়ে লোকটার সারা শরীর পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। হাত-পা-গলা-পিঠ-পেট কিচ্ছু বাকি থাকল না। তার পর ঘাড়ের কাছে দৃষ্টি পড়তেই “পেয়েছি!” বলে চিৎকার করে উঠল মুস্তাক। মুস্তাক ‘আশ্রয়’-এর ম্যানেজার। ‘আশ্রয়’এর শুরু থেকেই আছে। লোকটার ঘাড়ের নীচে চামড়া পুড়িয়ে লেখা দু’টি শব্দ। শব্দদুটির মাঝে একটি যোগ চিহ্ন। ভাষা ইংরেজি। লেখাটি হল, ‘ROHIT+MANIKA’। লেখাটি ইংরেজিতে হওয়ায় মইজুদ্দিনের আনন্দ কিছুটা ফিকে হল। এ তো আন্তর্জাতিক ভাষা! দুনিয়ার প্রায় সব দেশের লোকই জানেন। এ তো দেশ-রাজ্য খুঁজে পাওয়া বড্ড দুরূহ। আঞ্চলিক ভাষা হলে জায়গা খুঁজে পাওয়া তাও অনেকটা সহজ হয়। তবুও নামটা তো পাওয়া গেছে! খবরটা দ্রুত দিয়ে দিতে হবে, ভাবল মইজুদ্দিন। চায়ের কাপে শেষ চুমুকটা দিয়েই উঠে পড়ল।

পরের দিন বহুল প্রচারিত দু’টি সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনটি বেরোল। একটি বাংলা, আর একটি ইংরেজি দৈনিকে। লোকটির সুন্দর মুখশ্রীর একটি ছবি বিজ্ঞাপনে দিয়ে মইজুদ্দিনরা জানিয়েছে, ‘লোকটি মানসিক ভারসাম্যহীন। গত ৩ ফাল্গুন লালগোলা স্টেশনে পাওয়া গেছে। টানা চোখ, লম্বা নাক, গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যাম। বয়স আনুমানিক চল্লিশ-বিয়াল্লিশ। ঠোঁটের ওপর একটি কালো তিল আছে। লোকটির ঘাড়ের ওপর ইংরেজিতে লেখা আছে, “ROHIT+MANIKA”। লোকটি লালগোলার বেসরকারি হোম ‘আশ্রয়’-এ রাখা আছে।’ বিজ্ঞাপনটির সঙ্গে ‘আশ্রয়’-এর ঠিকানা আর দুটো ফোন নম্বর দেওয়া আছে।

সারা দিন কোনও ফোন এল না। প্রতিদিনের মতো আজও শেষ ট্রেনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে মইজুদ্দিন। ট্রেনটা ঢুকবে, এমন সময় তার মোবাইলটি বেজে উঠল। অচেনা নম্বর। রিসিভ করতেই ও পার থেকে একটি মহিলা কণ্ঠস্বর, “এটা কি লালগোলার আশ্রয় হোমের ফোন নম্বর?”

মইজুদ্দিন বলল, “হ্যাঁ, এটাই আশ্রয়ের ফোন নম্বর। বলুন...”

ভদ্রমহিলা বললেন, “আমি বারাসত থেকে বলছি। আমার নাম মণিকা।”

মণিকা! নামটা শুনে মইজুদ্দিনের ভিতরটা ধেই করে উঠল। আর তক্ষুনি রাতের ট্রেনটা ঢুকল প্ল্যাটফর্মে। মোবাইলে কথা বলতে বলতেই গেটের দিকে ছুটল মইজুদ্দিন।

*****

দু’জন লোক এসেছেন। সংবাদটা বেরোনোর তিন দিন পর। আসার কথা আগেই ফোনে জানিয়েছিলেন। অফিস রুমে বসেছিল মুস্তাক। লম্বা লোকটি অফিস রুমে ঢুকে বললেন, “নমস্কার। আমরা বারাসত থেকে আসছি।” পিছনে পিছনে ফ্রেঞ্চকাট-দাড়ি বেঁটে লোকটিও ঢুকলেন। আগন্তুক দু’জনকে দেখে মুস্তাক অবাক হল, জিজ্ঞেস করল, “ওই ভদ্রমহিলা আসেননি? যিনি ফোন করেছিলেন। কী যেন নাম, ও হ্যাঁ, মনে পড়েছে, মণিকা।”

“না, আসেনি...” লম্বা ভদ্রলোক বললেন। তার পর আমতা আমতা করে বললেন, “আসলে ও আমাদের বংশের কেউ নয়।”

“তা হলে আপনারা কারা?” মুস্তাক প্রশ্ন করল।

“আমি রোহিতের দাদা আর উনি আমার বন্ধু,” লম্বা ভদ্রলোক বললেন।

“কিন্তু, আপনারা তো কেউ ফোন করেননি? খবরটা পেলেন কী করে?” মুস্তাক জানতে চাইল।

লম্বা ভদ্রলোক বললেন, “খবরটা মণিকাই দিয়েছিল। ওইটুকুই, আর কিছু নয়।”

“মণিকা আপনাদের কেউ নন বলছেন, আবার রোহিতের ঘাড়ের ওপর মণিকার নাম লেখা!” হিসাব মেলাতে পারে না মুস্তাক। এ বার বেঁটে ভদ্রলোক মুখ খুললেন, “রোহিত আর মণিকার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু মণিকা অন্য এক জনকে বিয়ে করে নেয়। সে ধাক্কা সামলাতে না পেরে রোহিত মানসিক ভারসাম্য হারায়। চিকিৎসা চলছিল। দশ বছর আগে হঠাৎ এক দিন ও বাড়ি থেকে হারিয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও আর খুঁজে পাইনি।”

এত ক্ষণে মুস্তাকের কাছে ব্যাপারটা পরিষ্কার হল। কী আজব এ দুনিয়া! যার জন্য কেউ হারিয়ে যায়, সে-ই আবার তাকে খুঁজে দেয়! চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল মুস্তাক। আগন্তুক অতিথিদের উদ্দেশে বলল, “চলুন, আপনাদের লোককে দেখবেন।”

অফিস থেকে বেরিয়ে ওরা পিছনের বাগানের দিকে গেল। পুকুরপাড়ের বাঁধানো শাণটার কাছে দাঁড়িয়ে আছে দু’জন মানুষ। দু’জনের মাথাতেই উসকোখুসকো চুল। মুখে তিন-চার দিনের কাঁচাপাকা দাড়ি। গায়ের গড়নও উনিশ-বিশ। মাথায়ও দু’জন প্রায় সমান সমান।

মুস্তাক আগন্তুকদের উদ্দেশে বলল, “দেখুন, আপনাদের লোককে চিনতে পারছেন কি না।”

লম্বা ভদ্রলোক ধীরপায়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন। তার পর আচমকা মইজুদ্দিনকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। বেচক্করে পড়ে যাওয়া মুস্তাক বলে উঠল, “আরে আরে, এ কী করছেন! উনি তো এই হোমের মালিক।”

“স্যরি, আমি ভেবেছিলাম, এই-ই আমার সেই হারানো ভাই!” ভদ্রলোক লজ্জিত হলেন।

মইজুদ্দিন কিছু বলল না। ঠোঁট টিপে হাসল। তার পর মনে মনে বলল, ‘আপনি ভুল কিছু করেননি। আমিই তো আসল পাগল। না হলে কেউ এমন অদ্ভুত কাজ করে বেড়ায়?’

আশ্চর্য এক উথালপাথাল হাওয়া মইজুদ্দিনের মাথার চুল আরও এলোমেলো করে দেয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bengali Short Story

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}