বিশ্বস্ত সূত্রের দাবি, ‘জ়িনত’ বাঘিনিকে সিমলিপালের কোর অরণ্যে ছাড়তে ওড়িশা প্রচুর ভাবনাচিন্তা, ইতস্তত করছে। তাদের আশঙ্কা, আবার যদি সে পশ্চিমবঙ্গে আসে, এ রাজ্যের প্রশাসন তাকে আর ফেরত দিতে চাইবে না। একটি বাঘিনিকে নিয়ে দুই রাজ্যের মধ্যে এমন টানাপড়েন শেষ কবে দেখা গিয়েছে, মনে পড়ে না।
বলিউড নায়িকা জ়িনত আমনের সঙ্গে টক্কর দিতে পারে তাঁর সমনামী এই বাঘিনির ‘স্টারডম’, মনোযোগ তার পাওয়ারই কথা। তবে বাঘ-বাঘিনি বা অন্য বন্যদের কোনও নাম দেওয়া সাধারণত বন দফতর পছন্দ করে না। তার নানা কারণ আছে, তবে একটা কথা প্রায়ই চলে যে, এতে একটি পশু গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়, অন্যদের অবহেলিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু কোনও শ্বাপদ যখন খ্যাতনামা, সেলেব্রিটি হয়ে যায়, তার কারণ থাকে। দেখা যায়, আলাদা কিছু করার ক্ষমতা আছে তার। জ়িনতের ক্ষেত্রে যেমন অদ্ভুত ‘সারভাইভাল ইনস্টিংক্ট’ আর বুদ্ধির ছাপ দেখা গেল। খাঁচার পাশ দিয়ে ঘুরে গেলেও ধরা দিচ্ছিল না, মানুষের সঙ্গে ঝামেলাও এড়িয়ে গেল নিরাপদে। আকৃতি বা প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যময় নাম ওদের ব্যক্তিত্বকে শাণিত করে। ন্যাস্টি, চার্জার ইত্যাদি ডাকেই তাদের উত্তপ্ত হুঙ্কার শোনা যায়। মটকাসুর নামে মানসচক্ষে ফুটে ওঠে অতিকায় মুখবিবর। নামের গুণেই বাঘের মায়া দ্বিগুণ হয়, আর জঙ্গলে সেই মায়াজাল বিছিয়ে দিলে এমন তারকা বাঘ-বাঘিনির গল্প আরও মেলে। কেউ সাফারির জিপের খুব কাছে চলে আসত, কেউ এলাকা দখলের লড়াইয়ে কোনও ভয়ানক বাঘকে হটিয়ে দিয়েছিল, কেউ লড়েছিল কুমিরের সঙ্গে। এদের সকলের আচরণে প্রমাণ, বাঘ তার বিশাল মাথায় কতখানি বুদ্ধি ধরে, তা আমাদের ধারণার বাইরে। সে ধৈর্য ধরে ছক কষে, বোকা বানায়, সে হৃদয়বত্তারও অধিকারী। ভ্রু কুঁচকে ওঠার আগেই বলে রাখি, এই সব কাহিনিকে পুরোপুরি বিজ্ঞানের কেঠো মাপদণ্ডে যাচাই করতে চাইলে মুশকিল। কারণ, বনের খবরের অনেকটাতেই মিশে থাকে কিংবদন্তি আর লোকবিশ্বাস। সেগুলোকে উড়িয়ে দিলে কিন্তু জঙ্গলের রহস্যের অনেকটাই অধরা থেকে যায়।
ছোটা ভীম আর পূজারি
কোনও বালখিল্য কার্টুনের গল্প নয়। মানুষের অন্যায়ের জেরে জঙ্গল ও বন্যপ্রাণ কী ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তার সাম্প্রতিকতম নিদর্শন। মধ্যপ্রদেশের বান্ধবগড় ন্যাশনাল পার্কে রাজত্ব করত ‘ছোটা ভীম’। বিশাল শরীর ও অপরিমেয় শক্তির জন্য তার বাবার নাম ছিল ‘ভীম’। ছেলে ছোটা ভীমও আয়তনে ভয়াবহ। অকুতোভয় আলফা মেল। পর্যটকের দিকে তাকিয়ে পোজ় দিত স্বচ্ছন্দে, মাঝরাস্তায় বসে থাকত সদর্পে। ‘বামেরা’, ‘মুকুন্দা’-র মতো দাপুটে পুরুষ বাঘকে তাড়িয়ে খিতৌলি জ়োনের বিরাট এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করেছিল। সেখানে অন্য পুরুষ বাঘ ঢুকলে মৃত্যুদূত হয়ে দেখা দিত। তাই তার নিজের ভাই ‘পূজারি’ও ছোটা ভীমের রাজত্ব এড়িয়ে চলত। এই পূজারি নাকি জলাশয় থেকে উঠে এমন ভাবে গাছ জড়িয়ে নখের আঁচড় দিত, মনে হত নমস্কার জানাচ্ছে। সেই থেকে তার এমন নাম।
২০২৪-এর শেষে ছোটা ভীমের গলায় ‘ক্লাচ ওয়্যার’ আটকে থাকতে দেখেন পর্যটকরা। চোরাশিকারিদের খুব পছন্দের ফাঁদ। পান্নার জঙ্গলে দু’বছরের সদ্য তরুণ, শক্তিশালী এক বাঘ ক্লাচ ওয়্যার-এ জড়িয়ে মারা যায়। ফাঁসি যাওয়ার মতো করে তার দেহ ঝুলছিল। বছর দশেকের ছোটা ভীম ফাঁসি না গেলেও তার গলায় গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল। বন দফতর এসে দেখে, সামনের পা-টাও ভেঙে গিয়েছে। উদ্ধার করে ভোপালের বন বিহার ন্যাশনাল পার্কে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা চলে। নামে ন্যাশনাল পার্ক হলেও ব্যবস্থাপনায় চিড়িয়াখানা। জেলও বলা যায়। রুগ্ণ, নিন্দিত পশুদের আশ্রয়, সময় সময়ে খাবার দিয়ে যায় বন দফতর। অতএব, এক দিন যার এলাকার ত্রিসীমানা থেকে নীলগাই, বনগরু ছিনিয়ে নেওয়ার স্পর্ধা হত না কারও, অনুমান করা চলে, তার দিন কাটত বালতি ভরে আনা মাংসের অপেক্ষায়। বহু চেষ্টা, চিকিৎসা ব্যর্থ করে গত ২ ফেব্রুয়ারি মারা গিয়েছে ছোটা ভীম।
রাজা যখন অসুস্থ, তখনই তার রাজ্য দখলে হাজির হয়েছিল প্রতিদ্বন্দ্বীরা। সাংঘাতিক যুদ্ধের পর ডি-ওয়ানকে হারিয়ে এলাকা এখন পূজারির। যুদ্ধে বলি হয়েছে ছোটা ভীমের দুই শিশুপুত্র। যদি তারা বড় হয়ে বাবার এলাকা ছিনিয়ে নেয়, সেই সম্ভাবনাই খতম করে দিয়েছে নতুন রাজা। ছোটা ভীমের মৃত সন্তানদের মা তারা-ও এখন পূজারির কবলে। মানুষের লোভ এক বাঘ-পরিবার আর পুরো জঙ্গলের ছন্দটাকেই নষ্ট করে দিল।
তেলিয়া লেকের ভয়ঙ্করী
বাঘেদের এলাকা দখলের বিষয়টি এত সাংঘাতিক যে নিজের বাবা, মা-কে জখম করে, ক্ষেত্রবিশেষে মেরে ফেলেও রাজত্ব কায়েম করে। কোনও পুরুষ বাঘ তার এলাকার মধ্যে অন্য পুরুষ বাঘকে ঢুকতে দেয় না। তবে, দু’-তিনটি বাঘিনি থাকে সেই এলাকায়। তারাও গণ্ডি নিয়ে সংবেদনশীল, এক বাঘিনির রাজত্বে অন্য বাঘিনি এলেই ‘টেরিটোরিয়াল ফাইট’ শুরু। জোড়ের সময় বাদে পূর্ণবয়স্ক বাঘ-বাঘিনিরা একা থাকে, একাই টহল দেয়, একাই অন্যদের মারে। বাঘেরা ‘অ্যাম্বুশ হান্টার’। শিকারের পিছু নেয় লুকিয়ে, নিঃশব্দে। শরীর গুটিয়ে ছোট্ট করে, জঙ্গলের সঙ্গে মিশে থেকে দূরত্ব কমায়। তার পর কাছাকাছি চলে এসে আচম্বিতে লাফিয়ে ওই বিশাল শরীরটার ওজন ফেলে শিকারের ঘাড় মটকে দেয় বা টুঁটি ছিঁড়ে দেয়। কিন্তু জঙ্গলের এই প্রচলিত নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছিল তাড়োবা ন্যাশনাল পার্কের চার বাঘিনি-বোন। তাদের এক জনকে স্বচক্ষে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। মোহারলি গ্রাম-এলাকার তেলিয়া লেকের ধারে নিশ্চিন্তে শুয়েছিল সে। এক-দেড়শো মিটার দূরে ঝিলের অপর পাড়ে জিপসি থামিয়ে গাইড বলেছিলেন “ও-ই ‘সোনম’। ‘মায়া’ বাঘিনি নিখোঁজ হওয়ার পর এই জঙ্গলের পাটরানি।” পড়ন্ত সূর্যের আলোয় বাইনোকুলারে সাইটিং অস্পষ্ট, ক্যামেরার টেলিফোটোলেন্সেও বাধা ছিল ঘাস, পাথর। জলাশয়ের পাড় দিয়ে রাস্তা নেই। পুরোটাই দুর্ভেদ্য গুল্মবন। অগত্যা, ঝিলের ঢাল ধরে এগোনোর অনুরোধ করতেই গাইড কেঁপে উঠলেন। কারণ, জিপসির চাকা জলে পড়লেই অথৈ বিপদ। এই বাঘিনি এতটুকু ঝটপট, আগ্রাসন সহ্য করে না। লুকিয়ে পিছু নেওয়ার জন্যও কুখ্যাত।
দ্রুত নিরাপদ দূরত্বে যাওয়ার সময় তিনিই শুনিয়েছিলেন জগদ্বিখ্যাত তেলিয়া লেকের বোনেদের গল্প— ‘সোনম’, ‘লারা’, ‘গীতা’, ‘মোনা’। ‘ওয়াঘদোহ্’ ওরফে ‘স্কারফেস’ আর ‘মাধুরী’র সন্তান। সোনম বরাবরই তেড়িয়া। শাবকরা মোটামুটি দেড়-দু’বছরের হলে মায়ের থেকে আলাদা হয়ে জঙ্গলে নিজেদের ‘টেরিটরি’ খুঁজে নেয়। এ ক্ষেত্রেও বোনেরা জঙ্গলে ছড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, দেখা গেল শিকারে দড় হয়নি। খাবার খুঁজতে সমস্যা হচ্ছিল। কিছু দিন বাদে গাইডরা অবাক হয়ে দেখেন, তেলিয়ার ধারে ফিরে এসেছে চার বাঘিনি। বোনেরা দলবদ্ধ হয়ে শিকার করছে, ভাগ করে খাচ্ছে! বাঘের এই আচরণ অত্যন্ত বিরল। ফলে, বহু তথ্যচিত্রনির্মাতা এই ঘটনা রেকর্ড করতে ছুটে আসেন। কিন্তু, মোটামুটি করোনার সময় থেকে আবার তেলিয়া লেক কেড়ে নিয়েছে সোনম। লারা জঙ্গলের প্রান্তে (বাফার) সরে গিয়েছে। মোনা, গীতার খবরই মেলে না। তাদের কী হল, জানেন শুধু জঙ্গলের ঈশ্বর। এর চেয়ে বেশি কৌতূহলী হলে, কী ঘটতে পারে, সে শিক্ষাও পেয়েছি সে দিনই।
মোহারলি এলাকার জঙ্গলে প্রবেশদ্বারের বাইরেই বই, স্যুভনিরের দোকান। সেখানে থেকে আমাদের রিসর্ট এক মিনিটের হাঁটাপথ। বাঘ-দর্শনের পর রুমে ফিরে, ক্যামেরা রেখে, জঙ্গলের আরও গল্প আহরণের উদ্দেশ্যে ফিরেছিলাম স্যুভনির-শপে। বই খুঁজতে মগ্নচিত্ত, সম্বিৎ ফিরল দোকানির তাড়ায়। রাত নামছে, তিনি বাড়ি ফিরবেন। এর পর সামনের রাস্তায় সোনম, তার অপরূপ সুদর্শন আর আগ্রাসী সঙ্গী ‘ছোটা দাড়িয়েল’ দু’জনই উঠে আসতে পারে। তড়িঘড়ি দোকান থেকে বেরিয়েই বুঝলাম, আমরা ভীষণ বিপদে। চত্বরের সব আলো নিভে গিয়েছে। গেটের ভিতরের জঙ্গল আর বাইরের পিচরাস্তা সেই নিকষ অন্ধকারে একাকার। দুর্দম বাঘের দেশে সেই এক মিনিটের রাস্তা হাঁটলাম হাতিয়ারহীন, মোবাইল জ্বালিয়ে। দোকানি বলে দিলেন, “কিছু হয় না। শুধু নাকে বোঁটকা গন্ধ লাগলে জোরে জোরে সাড়া দেবেন।” সে রাতে শ্বাস নিয়েছিলাম রিসর্টের দরজায় ফিরে।
পদ্মবিলের রানিমা
বাঘেদের রোমাঞ্চকর কাহিনি, শিকার করার আশ্চর্য কৃৎকৌশলের পরিচয় বুঝি সবচেয়ে বেশি শোনা যায় রণথম্ভোরে। আশির দশকে ‘প্রজেক্ট টাইগার’-এর দাক্ষিণ্যে যখন আস্তে আস্তে বাঘ বাড়ছে, তখনও বনে বাঘের ছবি বেশি উঠত না। সেই সুযোগ করে দেয় ‘নুন’। ব্যাঘ্রপ্রজাতির ‘নিশাচর’ নাম খণ্ডন করে দিনের আলোতেই দেখা দিত। কাছাকাছি সময়ে খ্যাতির শীর্ষে ছিল ‘চেঙ্গিজ়’। বাল্মীক থাপারের পর্যবেক্ষণ, ইতিহাস, সাহিত্যে কোত্থাও তার মতো অভিনব কায়দায় শিকারের কথা লেখা নেই।
রণথম্ভোরের লেকগুলোর ধারে লম্বা ঘাসের আড়ালে সে ঘাপটি মেরে থাকত। বনশূকর, সম্বর জল খেতে এলেই ঘাস নড়ে অতি ধীরে ঢেউ খেলে যেত তৃণভোজীর একেবারে কাছ ঘেঁষে। মূর্তিমান বিভীষিকার মতো লাফিয়ে শূন্যে শরীর ছুড়ে শিকারের ঘাড় কামড়ে নিয়ে যেত চেঙ্গিজ় বাঘ। প্রবল গরমে মালিক তালাও বা পদ্মসরোবরের জলে রসালো পদ্মপাতা চিবোতে নামত সম্বর হরিণ। একটু পরেই হ্রদের ধারে চেঙ্গিজ়ের বিরাট মাথাটা উঁকি দিত। কিছু ক্ষণ নৈঃশব্দ্য। তার পর অতর্কিতে সায়রে ঝাঁপ মেরে চিতার বেগে ছুটত সম্বরদের দিকে। জলে আলোড়ন উঠত, ময়ূর কর্কশ ধ্বনিতে চেঁচাত, মেটে হাঁস আর শোনপাখিগুলো ক্যাঁওক্যাঁও করে উড়ে যেত। ছত্রভঙ্গ সম্বরদের মধ্যে দলছুট প্রাণীটিকে মুখে করে পাড়ে সাঁতরে ফিরত সে। কিংবা হরিণদের ঘাবড়ে দিয়ে ওরা যে রাস্তায় পালাবে সেখানে গিয়ে লুকিয়ে থাকত। বহু ভিডিয়োয় ধরা আছে চেঙ্গিজ়ের এই মারণ-অর্কেস্ট্রা। লেকের কুমিরগুলো ছিল তার দু’চক্ষের বিষ। তবে এত নজর কাড়ার পরিণতিতে চোরশিকারিদের খপ্পরে পড়ে দুর্ধর্ষ এই বাঘ।
রণথম্ভোর, জল, কুমির এই সব অনুষঙ্গেই ভেসে ওঠে বিশ্বের বিখ্যাততম বাঘিনি ‘মছলি’র নাম। তার মুখের ডোরাগুলি একজোটে দেখাত মাছের আকৃতির মতো। কেউ বলেন, জলে ঝাঁপিয়ে মাছ ধরত বলে এমন নাম। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি বার ছবি উঠেছে তার। প্রথম থেকেই পর্যটকদের জিপসির কাছে আসতে অভ্যস্ত। সেও কুমিরদের সহ্য করতে পারত না, কারণ সরীসৃপগুলোর নাকি নজর থাকত তার মারা হরিণ আর ছোট্ট শাবকগুলির দিকে। এক বার পদম তালাওয়ের ধারে মছলি তার ছানাদের সম্বর খাওয়াচ্ছিল। তখন প্রায় বারো ফুট লম্বা এক কুৎসিত কুমির চুপচাপ ওদের দিকে এগোতে থাকে। মছলি খানিকক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে দেখল। তার পর সোজা আক্রমণ।
প্রায় দ্বিগুণ আকারের প্রাগৈতিহাসিক জীবটা প্রথমে বাঘিনিকে টানতে টানতে জলে নামিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মছলি ক্ষিপ্রতার সঙ্গে দাঁত আর থাবা মেরেই চলেছিল। কখনও ঘাড়ে, কখনও লেজে। প্রায় এক ঘণ্টা লড়াইয়ের পর ছানাদের কাছে ফিরে এসেছিল মছলি। পর দিন দেখা গেল, কুমিরটাকে নিয়ে ভোজ বসিয়েছে মছলির শাবকেরা। জঙ্গলে সেই প্রথম বাঘ-কুমিরের লড়াই নথিবদ্ধ হল, বিশ্ব জুড়ে মছলির জয়জয়কার। কিন্তু এই যুদ্ধেই নাকি মছলির ছেদক দন্তটি ভেঙে যায়। তার পরও দীর্ঘ দিন রাজবাগ প্যালেস, পদম তালাওয়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছে সে, শিকার ধরেছে, ফের কুমির মেরেছে। তবে, তেজ কমছিল। একটি চোখও অকেজো হয়ে আসে। কিন্তু পর্যটকদের প্রিয়তম এই বাঘিনিকে হারাতে চায়নি রাজস্থানের বন বিভাগ। তাই, তাকে মাংস সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাবা কা গুম্ফা-য় ঢুকে বসে থাকত মছলি, আর খাদ্য-বাহক জিপের আওয়াজ শুনলেই বেরিয়ে আসত। এক সময় পর্যটকের জিপসির পিছনে লুকিয়ে হরিণও ধরেছে। মনুষ্য-সহায়তায় বাঁচিয়ে রাখার কারণে এ যাবৎ জঙ্গলে দীর্ঘতম আয়ু মছলিরই। উনিশ বছর বেঁচেছিল, শেষকালে নাকি মানুষের প্রতি তার বিশ্বাস ও ভালবাসা এতই প্রবল হয়ে ওঠে যে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে রিসর্টগুলির পাশের ঝোপঝাড়ে গিয়ে শুয়ে থাকত। পদব্রজে মানুষ দেখেও নির্লিপ্ত থাকত। এলাকাবাসীর ধারণা, বাঘ-মানুষের সহাবস্থানের শ্রেষ্ঠতম প্রতীক মছলি আসলে জলজহরে আত্মঘাতিনী রাজপুতানার কোনও রানি বা রাজকন্যা। তাই লেক-এর ধারেই তার দেখা মিলত, সন্তান-সন্ততি নিয়ে প্রাসাদের ভগ্নস্তূপে চড়ে বসে থাকত। বাঘরূপেও প্রজাদের প্রতি গভীর মমতা দেখিয়ে গিয়েছে সে। পেঞ্চ-এর ‘মাতরম্’ নামে খ্যাত কলারওয়ালি বাঘিনিকে নিয়েও বনে এই ধরনের দাবি ঘোরে। ২৯টি শাবকের জননী কলারওয়ালি যখন অসুস্থ হত, জিপরাস্তায় উঠে এসে এমন ভাবে বসে থাকত, মনে হত সাহায্য চাইছে। মছলি, কলারওয়ালির মৃত্যুর পর রাজকীয় সম্মানে তাদের দাহ হয়েছিল, ফুলে ফুলে ঢেকে গিয়েছিল দেহ। সঞ্জয় দুবরীর অরণ্যে বনচারীরা সম্ভ্রমের সঙ্গে দেখেন ‘মৌসি মা’ (মাসিমা) বাঘিনিকে। তার বোন ট্রেনে কাটা পড়েছিল। নিজের শাবকদের সঙ্গে বোনের দুধের শিশুদেরও দায়িত্ব নিয়ে, শিকার শিখিয়ে জঙ্গলের উপযুক্ত করে বড় করেছে এই বাঘকন্যা, যা শার্দূল-প্রকৃতির ঠিক বিপরীত। জঙ্গলে ছ’-ছ’টা শিশুকে রক্ষা সহজ নয়।
আর মছলির ছেলেমেয়ে, নাতিপুতিদেরও খুব সুনাম, তারা মানুষকে বিব্রত করে না। তার দুই ছেলে ‘স্লান্ট ইয়ার’ (কানটা কুঁচকে থাকত), ‘ব্রোকেন টেল’-এর (লেজ বাঁকা ছিল) অকালমৃত্যুর পর অরণ্যপ্রেমীরা এই বাঘ-পরিবারের প্রতি আরও অনুরক্ত হয়ে পড়ে। বলে, বহু ঝড়ঝাপটাতেও মছলিদের মহানুভবতা বদলায়নি। এ সব শুধু শোনা কথাই নয়, চোখে দেখাও। এখন রণথম্ভোরের বাঘ-সম্রাজ্ঞী হল ‘অ্যারোহেড’, সে মছলির মেয়ের মেয়ে। দিদিমার মতো তার কপালেও খানিকটা মাছের কাঁটার আকারের রেখা, তবে সেটা তির মনে হয় বলেও নামকরণ হয়েছে অ্যারোহেড। সেও কুমির-ঘাতিনী, মৃত্যুকে হারাচ্ছে বার বার। তাই তাকে ‘মছলি জুনিয়র’ও বলা হয়। ঠিক তিন বছর আগে জঙ্গলের বাইরে রণথম্ভোরের দুর্গের রাস্তায় আমার সামনে অতর্কিতে হাজির হয়েছিল সে। তখন সন্ধে প্রায় সাড়ে ছ’টা, চাঁদ উঠে গিয়েছে। ছায়ান্ধকারে তাকে দেখে পথচারীরা দৌড়চ্ছিল, জিপসি হর্ন দিচ্ছিল। কিন্তু সে সব অগ্রাহ্য করে সোজা এগিয়ে আসছিল। আমি শিউরে উঠে দেখলাম, জঙ্গলের আলো যত কমছে তার দু’চোখ ততই যেন জ্বলে উঠছে। এক বার হঠাৎ ধক করে বড় হয়ে উঠল দুটো আগুনমণি। বোধ হচ্ছিল সত্যিই কোনও সালঙ্কারা রানি এগিয়ে আসছেন। গাইডের সুতীক্ষ্ণ ফিসফিস, চোখের দিকে তাকাবেন না। আমার প্রায় দু’হাতের কাছাকাছি এসে মুখ ঘুরিয়ে খাদের দিকে বাঁক নিল সে। বাঘ-ভেল্কিতে স্থাণুবৎ আমার মনে হল, বলে গেল— যা যা বাড়ি যা।
কল্পনা বা নিছক বাতুলতা ভাবলেন? উনিশ শতকে যখন ভারতের বনে বনে প্রচুর বাঘ, একটি ছোট ছেলে বনমোরগের পিছু নিয়ে কুলঝোপে উঁকি দিতেই সেটি দুলে উঠে বেরোয় বিশাল বাঘ। চলে যাওয়ার আগে তার ঘুরে তাকানোর ভঙ্গিতে ও মুখের হাবভাবে বালকটির মনে হয়, যেন বলে উঠল, “হ্যালো বাচ্চা, কী করছ এখানে?”
সেই ছোট্ট ছেলেটি এ বছর দেড়শো পূর্ণ করল। নাম জিম করবেট।
বাঘের বদলা
ব্যাঘ্রকুলের পর্যবেক্ষণ, শ্রবণশক্তি, স্মৃতিশক্তি নাকি মারাত্মক। পছন্দ-অপছন্দ আছে, মানুষের মুখ চিনে রাখে। মার্কিং ফ্লুয়িড-এর গন্ধেই জেনে নেয় অন্য বাঘের সমগ্র বায়োডেটা। রণথম্ভোরেই শুনেছিলাম এক চমকপ্রদ কাহিনি। প্রবল প্রতাপশালী এক বাঘের বাঘিনির মনে ধরেছিল সেই এলাকায় হঠাৎ ঢুকে পড়া ছোকরাকে। এই ছোকরা বাঘের সৌজন্যে প্রাপ্ত সন্তানদের বাঘিনিটি এই মধ্যবয়স্ক বাঘের ছানাপোনা বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিল। শাবকদের দেহবর্জ্যের ফেরোমনের গন্ধেই বাঘ সব ধরে ফেলে ও বাচ্চাগুলোকে মেরে দেয়। বাঘিনি পালায়। বাঘ তাকে খুঁজে বার করে মারে।
বাঘ কাউকে ছাড়ে না, বাঘ কিচ্ছু ভোলে না। ওদের শত্রুকে শায়েস্তা করার কাহিনি শুনলে হাড় হিম হয়ে যায়। বৈচিত্রময় খাদ্যভান্ডারের জন্য বান্ধবগড়ের টালা জ়োন নিয়ে বাঘেদের মধ্যে প্রায়ই মারপিট লাগে। গত দশকের শুরুতে, সেখানে ‘লংড়ি’ নামের বাঘিনির আড্ডা ছিল। এক পায়ের থাবা ঈষৎ বেঁকিয়ে চলত সে। ‘বিজয়া’ নামের বাঘিনি, কানে খুঁত থাকার জন্য যাকে ‘কানকাটি’ নাম দেওয়া হয়েছিল, সে লংড়িকে চ্যালেঞ্জ জানায়। ধুন্ধুমার মারদাঙ্গার পর কানকাটি মাথা ঝুঁকিয়ে পালায়। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পরে দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে ফিরে আসে। এ বার সে লংড়িকে হারায়, মেরে ফেলে ও তার দেহের খানিকটা খেয়েও নেয়! কিছুটা তফাতে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছিল লংড়ির তিন শাবক। তারা প্রাণভয়ে টালা ছেড়ে অন্যত্র সরে পড়ে।
প্রায় বছর দুয়েক পরে সেই টালা এলাকাতেই ফিরে আসে লংড়ির সন্তান। সে তত দিনে নওজোয়ান। কানকাটির তখন সদ্য শাবক হয়েছে। লংড়ির ছেলে কানকাটির ছেলেদের মারে, আর কানকাটিকে মারার পর তার দেহের খানিকটা খেয়ে আবার খিতৌলি অঞ্চলেই ফিরে যায়। বনকর্মীরা হতভম্ব হয়ে যান। এই ঘটনার বিবরণে, মৃতদেহের ছবি দেখতে চাইলে আপত্তি তুলতে থাকেন। কিন্তু এই আচরণ কি শুধুই প্রতিশোধস্পৃহা, যে বাঘেরা স্বজাতির মাংস ভক্ষণ করে তারা কতটা বিপজ্জনক— সে সব প্রশ্ন অমীমাংসিতই রয়ে যায়।

বীরাঙ্গনা: বারো ফুটের একটি কুমিরকে মেরে ফেলেছিল এই ‘মছলি’। ছবি: আইস্টক।
শেষ বিচার
আর যদি কোনও ভাবে মানুষের প্রতি আক্রোশ তৈরি হয়ে যায়? প্রাণকে পণ্য মনে করা চোরাশিকারি, পশুকে যাঁরা উত্ত্যক্ত, তাচ্ছিল্য করে মজা পান, তাঁদের ঘুম কাড়বে মার্কোভের কিস্সা। পটভূমি ভারত নয়, রাশিয়ার সাইবেরিয়ায় প্রাইমোরি এলাকা। জাপান সাগর-সংলগ্ন বার্চ, পাইন, অল্ডার গাছের পর্বতসঙ্কুল আর্কটিক অরণ্য। শীতে ঢেকে যায় সাদা বরফে। নব্বইয়ের দশকে এই এলাকার অর্থনীতি ও মানুষের হাল ছিল খারাপ। দারিদ্র, দুর্নীতি, কালোবাজারির আখড়া জায়গাটা। চিনের সঙ্গে সীমান্ত খুলে দেওয়ার পর পরিস্থিতিজটিলতর হয়। বাঘের রক্ত, হাড়গোড়, গোঁফের রোমগাছি, চামড়া সব কিছুই চড়া দামে বিকোত চিনের বাজারে। বাঘেদের বলা হত ‘টয়োটা’, একটাকে পেলেই গাড়ির খরচ উঠে আসবে। ১৯৯২-’৯৪-এর মধ্যেই এলাকার আমুর বাঘেদের অন্তত এক-চতুর্থাংশ মারা পড়ে।
নব্বই দশকের মাঝামাঝি এই জঙ্গলের কাছেই কাঠের কেবিনে থাকত ভ্লাদিমির মার্কোভ। মৌমাছি পালনের অছিলায় চালাত অবৈধ শিকার। ১৯৯৭-র ডিসেম্বরের গোড়ায় এক দিন জঙ্গলে তার বিচরণ হল নিষ্ফলা। পেটে জ্বলন্ত খিদে নিয়ে কেবিনে ফেরার সময় তার কুকুরগুলো তাজা গন্ধ পেয়ে দৌড়ে যায়, মার্কোভ দেখে বড়সড় একটা শূকর পড়ে আছে। তখনই কোনও বাঘ তাকে মেরেছে। ঘরে তৈরি বন্দুকের অহঙ্কারে মত্ত মার্কোভ বিশ্বের বৃহত্তম বাঘ আমুর টাইগারের চেয়েও নিজেকে পরাক্রমী আর দলভারী মনে করে সেই মাংসের অনেকখানি কেটে নেয়। কেউ বলেন, বাঘটা তখনই গর্জন করে ছুটে আসে ও লোকটা তাকে গুলি ছুড়ে ঘায়েল করে। আবার কেউ বলেন, বাঘটা পরে এসে ঘ্রাণ টেনে ওদের পিছু নেয়। মার্কোভ তত ক্ষণে কেবিনে ফিরে কিছুটা মাংস রান্নার জন্য সরিয়ে রেখেছে। কিছুটা নিয়ে লোকালয়ে গিয়েছে বিক্রি করবে বলে। বাঘ এসে কেবিনে ঢুকে যেখানে যেখানে মাংস আর মার্কোভের গন্ধ পায়, সব ধ্বংস করে দেয়। স্নানঘরের মগটাও চিবিয়ে দেয়। তার পর হয়তো কেবিন ছেড়ে বাইরে শত্রুদের খুঁজতে যায়। মার্কোভ ফিরে এসে দেখে, কেবিনের বাইরে একটা বাঘ দাঁড়িয়ে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করছে। সম্ভবত, তখনই সে গুলি ছুড়ে বাঘটাকে আরও খেপিয়ে দেয়।
তদন্তের সময় সে রাতের ঘটনা নিয়ে মার্কোভের বন্ধুরা পরস্পরবিরোধী কথা বলেছে। হয়তো, বাঘ পিছু নিয়েছে শুনেই আতঙ্কে তারা যে মার্কোভকে তাড়িয়ে দিয়েছিল— সেই দোষ ঢাকতে চাইছিল। তারা বলেছে, মার্কোভ অসংলগ্ন কথা বলছিল। বন্ধুরা তাকে রাতটা থেকে যেতে বললে বা গাড়ি এলে তাতে চেপে ফিরতে বললে সে জানায়, বনে তার কুকুরগুলো রয়ে গিয়েছে। না ফিরলে বাঘ তাদের মেরে দেবে। এক বয়স্ক লোক বলেন, “মানুষ বিনা কারণে বাঘের ক্ষতি করলে ‘অম্বা’ জেগে যায়। মনে হচ্ছিল, ওকে কেউ জঙ্গলের দিকে টানছিল। এমন ক্ষেত্রে মানুষকে ধরার আগে বাঘ তার আত্মাটা কব্জা করে ফেলে। ওকে অনেক বার বলেছিলাম, তৈগা ছেড়ে পালিয়ে যাও।”
এই সাইবেরীয় কিংবদন্তির অম্বার সঙ্গে কোথাও যেন উত্তর ভারতের মা শেরাওয়ালি অম্বে ভবানীর প্রভূত মিল। যারা প্রকৃতির সঙ্গে অন্যায় করে, তাদের জীবনে প্রবেশ করে ব্যাঘ্রবাহনা মহামায়া প্রেরিত অজেয় কোনও বাঘ।
মার্কোভের ফেরার রাস্তায় কোনও উপদ্রবই হয়নি। কিন্তু সে কেবিনে ফিরতে না ফিরতেই, বন্দুক তাক করার আগেই বাঘটা এক লাফে ঘাড়ে পড়ে। সে কেবিনটাকে খানিক ইঁদুরকলের মতো ব্যবহার করেছিল, পাশে প্রায় ১২-৪৮ ঘণ্টা মতো নাগাড়ে বসে মার্কোভের অপেক্ষা করছিল। যেন নিশ্চিত, আজ নয়তো কাল শত্রু ফিরবেই। তার দেহের উত্তাপে জায়গাটার বরফ গলে গিয়েছিল। অনুসন্ধানকারীরা এসে রক্তমাখা জামাকাপড়ের মধ্যে মার্কোভের অবশিষ্টাংশ পান। দেখে মনে হচ্ছিল, বাঘটা তাকে খেতে নয়, নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। এই বাঘ কিছু দিন পরে আবার এক চোরাশিকারিকে মারে। এ বারে ভুক্তাবশেষ ছিল একটি শার্টের পকেটে এঁটে যাওয়ার মতো। প্রশাসনের তরফ থেকে তল্লাশি চালিয়ে বাঘটাকে খুঁজে মারা হয়। কিন্তু অম্বা নদীর শামান বুড়োরা বলেছিলেন, “ওকে কত দেখেছি! এগারো-বারো ফুট লম্বা, আমুর প্রজাতির দৈত্যাকৃতি বাঘ। মানুষখেকো হলে আমাদেরও মারত। কিন্তু ও রুশদের, শত্রুদের বেছে বেছে মারছিল।”
পৃথিবীর সব গল্পের শিরোমণি সত্যি বাঘের ঘটনা। আর সেই গল্পে ঠাসা রয়েছে ভারতের অরণ্যানী। আগামী শুক্রবার, ২১ মার্চ আন্তর্জাতিক অরণ্য দিবসের প্রাক্কালে এমন কতগুলো ঘটনা সাজানো রইল যেখানে বাঘ বনের নায়ক, রাজা বা রানির ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু এই সব গল্পের চেয়ে অনেক বেশি মারাত্মক সেই ঘটনাগুলো, যেখানে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে বাঘ আর মানুষ। স্বাধীনতার আগে ঘটে যাওয়া মর্মন্তুদ কাহিনিগুলির অনেক ক’টাই আমাদের বইয়ে পড়া, জানা। কিন্তু স্বাধীনতার পরে, দেশের বনে বাঘ বেড়ে চলার ফলে যে সব সম্মুখসমরের উপাখ্যান রোজ জন্মাচ্ছে, তার অনেকটাই এখনও অগ্রন্থিত। সভ্যতা এগোচ্ছে, মানুষ আধুনিক হচ্ছে আর নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পাল্টে যাচ্ছে বাঘের স্বভাব। কিছু দিন আগেই দুধওয়া জঙ্গলের পাঁচ-সাত কিলোমিটার দূরের লখিমপুর খেরিতে ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত মানুষকে তুলে নিয়ে যেতে চেষ্টা করেছে এক বাঘিনি। বনে বনে বাঘ ফিরছে, দেশের মূল ভূখণ্ডও কাঁপছে নরখাদকের তাণ্ডবের পূর্বাভাসে। এরাও কি অরণ্যের নায়ক? নাকি খলনায়ক? এ ক্ষেত্রেও কি অম্বা জেগে গিয়েছে? চলবে আমাদের সন্ধান। রাত পড়লে অম্বেজ়ারির জঙ্গলে কেন বেরোয় তাড়োবার ‘বাঘোবা’? রণথম্ভোরের ‘উস্তাদ’, করবেটের ‘ঢিটু’, পিলিভিটের সঙ্কট, মোহানের মানুষখেকো, সুন্দরখালের শয়তানের মূল রহস্য কোনখানে? কেন তারা হয়ে উঠল বনের ত্রাস?
কিন্তু সে সব অন্য কাহিনি... অন্য আর এক দিন!
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)