ছবি: শুভম দে সরকার
খড়কে কাঠি দিয়ে দাঁতের ফাঁকফোকর থেকে মোচার কুচি বার করছিলেন নীহার বসু। এত ক্ষণ লাঞ্চ ব্রেকে ছিলেন। দু’টো বাজতেই চেম্বারের দরজায় ঠকঠক শব্দ। মনে পড়ল, সুপ্রকাশকে দেখা করতে বলেছিলেন।
অফিসে লাঞ্চ করাই নীহারবাবুর বরাবরের অভ্যেস। অফিসের চার দিকেই ছোট-বড় অনেক রেস্তরাঁ। এত দিন চাইনিজ়, থাই, কন্টিনেন্টাল, মোগলাই— ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে আনিয়ে নিতেন। ভাইরাসের দাপটে এখন সে সব অতীত। খাবার নাহয় গরম আসবে। কিন্তু অ্যালুমিনিয়ামের ফয়েলে কিংবা রবারব্যান্ড অথবা প্লাস্টিকের কাঁটা চামচ কিংবা চামচে যে তিনি বসে নেই, তা কে বলতে পারে! ভয়ে ভক্তিতে বাড়ি থেকে টিফিন আনা শুরু করেছেন কয়েক মাস। নইলে অফিসে বসে মোচার ঘণ্ট আর কোথায় পাবেন!
দাতে ফাঁক থাকলেও পাকতন্ত্রে নেই। দিব্যি হজম করেন। নো পৈটিক প্রবলেম। তবে মুরগি-মটন-সিফুড পুঞ্জিত মুখে আক্কেল দাঁতের আশপাশে আর শ্বদন্তের চোরা গর্তে কিছু অবাঞ্ছিত টুকরো ঢুকে বাগড়া দেয় মাঝে-মাঝে। সে সব ছাড়াবার জন্য ড্রয়ারে টুথপিকের একটা ছোট কৌটো রাখা থাকে।
দরজায় শব্দ শুনে অতএব আরব্ধ মোচামোচন অকালে স্তব্ধ রেখে খড়কে কাঠিটা ডাস্টবিনে ফেললেন নীহার। কম্বুকণ্ঠে বললেন,
“কাম ইন।”
“ডেকে পাঠিয়েছেন?”
“হ্যাঁ। রেডি করেছ মর্গটা?”
“এই তো করছি স্যর।”
“মানে? আর কবে করবে? কখন কী ঘটে কিছু বলা যায়!”
“সেটা ঠিকই। মানুষের জীবন। তবে...”
“তবে?”
“না, মানে বলছিলাম কী... ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর এ সব করলে হত না? আমাদের তো এক্সপার্টের অভাব নেই। অন্য কিছু নয়, চরম কিছু ঘটার আগে এ সব করতে কেমন বাধো-বাধো ঠেকে।”
কথাটা ভুল নয়। কাজটাই খুব অস্বস্তিকর। করতে মন চায় না। তবে খবরের কাগজ বা সাময়িকপত্রে এমন অপ্রিয় বহু কাজ করতে হয়। নির্মম এবং সুচারু ভাবে। ডিমান্ডিং প্রফেশন কি না!
মৃত্যু বলে-কয়ে আসে না। তবে কিনা কখনও-সখনও উল্টোটাও সত্যি। কোনও কোনও মৃত্যু ঢাকঢোল পিটিয়ে না হলেও ছোট ছোট নোটিস, ওয়ার্নিং, কশন দিতে দিতেই আসে। এই দ্বিতীয় শ্রেণির মৃত্যু যদি কোনও বিশিষ্ট মানুষের পিছু নেয়, তবে পরিস্থিতি বেশ ঘোরালো হয়ে ওঠে। সুপ্রকাশের মতো সাংবাদিকদের তখন নাওয়া-খাওয়া মাথায় ওঠে। তখন প্রতি মুহূর্তে নজর রাখতে হয়, তিনি সকালে কেমন আছেন, বিকেলে কেমন আছেন। বিপি, হার্টবিট, সোডিয়াম পটাশিয়াম ব্যালান্স, সকালে ডান চোখ খুললেন না বাঁ চোখ, সুপ খেলেন না ফ্রুট জুস— সমস্ত তথ্য রাখতে হয় করতলগত আমলকির মতো।
শুধু নজর রাখলেই চলে না। মৃত্যুসংবাদ হ্যান্ডলও করতে হয় খুব সাবধানে। এই তো গত বছর, খবর এল বাংলা সিনেমার দুঁদে ভিলেন মল্লিনাথ ভট্চাজ মারা গিয়েছেন। তখন বেশ রাত হয়েছে। কোনও ক্রমে খবরটা ধরানো যাবে বলে মনে হচ্ছিল শেষ শহর সংস্করণে। সুপ্রকাশ তড়িঘড়ি মূল তথ্যগুলোর, মানে কত বয়স হয়েছিল, কাকে কাকে রেখে গেলেন, কী ভাবে মারা গেলেন ইত্যাদির জায়গা ফাঁকা রেখে একটা মোটামুটি কাঠামো তৈরি করে ফেলল। লিখতে লিখতেই ফোনটা কানে নিয়ে চেষ্টা করছিল অভিনেতার বাড়ির লাইনটা ধরার। এ দিকে কম্পিউটার স্ক্রিনে তত ক্ষণে তাঁর অভিনীত সিনেমার নাম, নাটকের নাম লিখে সবে ‘চলচ্চিত্র মহলে শোকের ছায়া’ নামাতে যাবে তখনই লাইনটা লেগে গেল। নিজের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিয়ে গলাটা যথাসম্ভব নরম করে সুপ্রকাশ বলে
“আচ্ছা মল্লিনাথবাবু কি...”
উল্টো দিকে তখন এক্কেবারে ভিলেনি আক্রোশ, “আজ্ঞে না। এখনও মরিনি। আপনাদের খবরটা জানাব বলে ল্যান্ডলাইনের সামনে জেগে বসে আছি।”
“ইয়ে মানে, আসলে আমি তো...”
“তেরো নম্বর। আনলাকি থার্টিন। রাত এগারোটা থেকে শুরু হয়েছে। আপনার আগে বারো জন জানতে চেয়েছেন। পরে কত জনের লাইন আছে তো জানি না। এখন ঘুমের বারোটা বাজিয়ে জনে জনে জানাতে থাকি আর কী! মরিনি মরিনি মরিনি। নইলে আবার কে ছেপে দেবে পটল তুলেছি। তখন আবার বিভিন্ন মহলে বেম্মদত্যির মতো শোকের ছায়ারা ঝপাঝপ নেমে আসতে শুরু করবে। আচ্ছা এই মহলগুলো কোন পাড়ায় বলবেন? দেখে আসব।”
মল্লিনাথের মুখে ‘শোকের ছায়া’ শুনেই বিষম খেয়েছিল সুপ্রকাশ। কোনওক্রমে ‘স্যরি’ বলে ফোন কেটেছিল সে বার।
তবে এ বিভ্রাট তো উড়ো খবরে। অনেক সময় আগে থেকেও প্রস্তুতি শুরু হয়। যে সব সেলিব্রিটি ফট করে ফটো হন না, মানে একটু ধরে ধরে খেলেন, তাঁদের জন্য আয়োজন অন্য। তখন সংবাদপত্র, টেলিভিশন চ্যানেল আগেভাগে তাঁর অবিচুয়ারি, পুরনো ছবি, জীবনপঞ্জি, তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের সাক্ষাৎকার ইত্যাদি সংগ্রহ করে রেখে দেয়। ওই সংগ্রহেরই গালভরা নাম ‘মর্গ’।
সব পেশারই কিছু খিটকেল জার্গন থাকে। এই পেশায় আসার আগে সুপ্রকাশ জানত মর্গ মানে বেওয়ারিশ লাশ, পেল্লাই ড্রয়ারে ঢোকানো। তখন কি বুঝেছিল, পেশা ভেদে মর্গের অর্থ বদলে যাবে!
মর্গে মৃত্যুর পর দেহ রাখা হয়। আর সংবাদপত্রের মর্গে মুমূর্ষুর জন্য বরাদ্দ শব্দ রাখা হয় মৃত্যুর আগেই। এ-ও এক অর্থে শবাগারই। শব্দ-শবাগার। তবে কিনা কারও চোখে পৃথিবীর আলো চিরতরে নিভলে তবেই এই শব্দরা পৃথিবীর আলো দেখে। তফাতটা ওইখানেই।
সুপ্রকাশের আনমনা মুখের দিকে এক বার তাকিয়ে কিঞ্চিৎ তাচ্ছিল্যের সুরেই নীহার বলেন, “তোমার কথা শুনে চললেই হয়েছে আর কী! তখন সময় পাওয়া যাবে? রাইভ্যালরা দেখো আগেভাগে রেডি হয়ে বসে আছে। কিছু ঘটলেই ঝাঁপিয়ে পড়বে। রেডি হয়ে না থাকলে শেষবেলায় গোল দেওয়া যাবে ভেবেছ? স্টেজে মেরে দেওয়ার কথা ভুলে যাও।”
“তা নয়। তবে আমরা একটু বেশি অ্যাপ্রিহেনসিভ হয়ে পড়ছি না! এই তো দেখুন না, বিখ্যাত ফুটবলার গোলা বোস, অভিনেত্রী দিগ্বসনা মিত্র, হরফ পার্টির নেতা বিত্তসুন্দর সমাদ্দার এঁদের সবারই তো মর্গ তৈরি করে রাখা হয়েছিল। কী লাভ হল? সকলেই তো কবাডি কবাডি করে ফিরে এলেন।”
“বাট উই কান্ট টেক আ চান্স।”
“ওকে স্যর।”
“দাঁড়াও দাঁড়াও। আচ্ছা এদের সবার অবিচুয়ারিই তুমি লিখেছিলে?”
“হ্যাঁ। মানে আমাকেই তো বলা হয়েছিল।”
“আর ওই সেলেব্রিটি ডক্টর নবজীবন দত্তরটা?”
“ওটা তো বরুণ লিখেছিল। আসলে সে দিন আমি আসিনি। তাই ওটা ওকে লিখে রাখতে বলেছিলেন। ভাগ্যিস! পরের দিনই তো উনি মারা গেলেন।”
“হোয়াট আ কো-ইনসিডেন্স! যাঁদের অবিচুয়ারি তুমি লিখলে তাঁরা সকলেই মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলেন? স্ট্রেঞ্জ!”
কথাটা ভুল নয়। সুপ্রকাশ এটা ভেবে দেখেনি। সে বলে, “নেহাতই কাকতালীয় ব্যাপার। ঘটনাচক্রে ওই তিন জনেরই ইমিউনিটির জোর ছিল। আপনি হয়তো বলবেন লাক ফেভার করেছে। তার মানে এই নয়, পরের বারও একই ঘটনা ঘটবে।”
“কী বলছ সুপ্রকাশ, এই খবরটা যদি বাজারে এক বার রটে যায় যে, তুমি অবিচুয়ারি লিখলে এ যাত্রা যমের মুখে ছাই দেওয়া যাবে, তা হলে বাজারে তোমার ডিমান্ড বেড়ে যাবে। সেলেবরা হাসপাতালে যাওয়ার আগে তোমার বাড়ি ঘুরে যাবেন। মোটা টাকা অ্যাডভান্স দিয়ে বলবেন, ‘একটা অবিচুয়ারি লিখে রাখুন ভাই, ফিরে এসে বাকিটা পেমেন্ট করে দেব।’ ”
“হ্যাঁ, আর পলিটিক্যাল লিডাররা পাঠাবে বাহুবলী। আমার দিকে মেশিন উঁচিয়ে হুমকি দেবে। তখন আমার দশ টাকার বলপেন বাগিয়ে বলব খবরদার, দ্য পেন ইজ় মাইটিয়ার দ্যান দ্য সোর্ড। হা হা।”
“জোক্স অ্যাপার্ট। যে কথা বলছিলাম... আসলে প্রতিযোগিতার বাজার। তুমি না চাইলেও তোমাকে নামতে হবে। বাই দি ওয়ে, হ্যাভ ইউ ফেসড এনিথিং আনওয়ান্টেড? এত অস্বস্তি কিসের?”
“তেমন কিছু নয়। তবে...”
“তবে?”
“এই যেমন বিত্তসুন্দরের ক্ষেত্রেই ধরুন, ফোন করলাম ওর অপোনেন্ট ধনহরণ গড়গড়িকে। হাসপাতালে বিত্তসুন্দরের তখন যায়-যায় অবস্থা। খুব আগ্রহ নিয়ে সব শুনলেন। তার পর শোকপ্রকাশ করে বললেন, ‘ওঁর মতো ভাল লোক আমার রাজনৈতিক জীবনে দু’টো দেখিনি। আমরা ভিন্ন ভিন্ন আদর্শ নিয়ে আলাদা আলাদা পতাকার তলায় রাজনীতি করি। তাই বলে আমাদের উদ্দেশ্য তো আলাদা নয়। উনি ছিলেন মহান নেতা। তবে অফ দ্য রেকর্ড বলি, মালটা হেবি টেঁটিয়া, শকুন যেন শালা! যবে থেকে কুদৃষ্টি দিয়েছে চালতাবাগানের প্রজেক্টটা গলার কাঁটা হয়ে ঝুলছে। সরলে বাঁচি।’ ”
“নেতা-টেতাদের অমন রাইভ্যালরি থাকেই।”
“কেন, দিগ্বসনার ব্যাপারটাই ধরুন। ওর পয়লা নম্বর কম্পিটিটর তন্বী বসুকে ধরতেই প্রথমে একটু কান্নাকাটি করলেন। মানে, টেলিফোনে তো গ্লিসারিন আর চোখের জল আলাদা করা সম্ভব নয়। তবে খুব আন্তরিক কান্নাই মনে হচ্ছিল। ভাবলাম খুব আঘাত পেয়েছেন।”
“তার পর?”
“ও মা! তার পর দাঁত ঘষটে বললেন, ‘ওর ট্যালেন্ট বলে কিছু আছে! কী ভেবেছে জানি না কিছু! ডিরেক্টরদের সঙ্গে শুয়ে লিড রোল বাগায়। আমার হাড়মাস জ্বালিয়ে খেয়েছে।’ ”
“হা হা। বলো কী! এত শুলে তো বেডসোর হয়ে যাবে হে! শুটিং করবে কী করে!”
“যা বলেছেন স্যর।”
“সব ক্ষেত্রেই প্রতিযোগিতা। সব দিকেই এখন কে কত লুটবে তার হুড়োহুড়ি। আগেকার আদর্শবাদী নেতা তো আর কেউ রইলেন না।”
“না স্যর। এখনও আছেন দু’এক জন। বরেন চাটুজ্জেকে ধরেছিলাম। এখন উনি আর রাজনীতি করেন না। কিন্তু আমাদের মর্গের ব্যাপারটা শুনে বেজায় খাপ্পা হয়ে উঠলেন। প্রথমে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বিত্তসুন্দর কি মারা গেছে?’ আমি ‘না’ বলতেই বললেন, ‘কী বলছেন আপনি? লোকটা এখনও মরেনি, তার আগেই আপনি তার সম্পর্কে বলতে বলছেন। কী বলব আমি? মানুষটা আগে…’ কিছুতেই বলতে রাজি হলেন না।”
“ইন্টারেস্টিং!” বলে নীহার এ বার সরাসরি সুপ্রকাশের চোখে চোখ রেখে বললেন, “দেখো, তোমার আমার কিছু করার নেই। চলতি হাওয়াতেই গা ভাসাতে হবে। অন্যদের পিছনে ফেলতে না পারলে আমরা বাঁচব না হে সুপ্রকাশ। এই মৃত্যুর খবরটাও একটা প্রডাক্ট। সাজিয়ে গুছিয়েই বিক্রি করতে হবে ব্রাদার। নইলে লোকসান।”
নিজের কিউবিকলে ফিরে আসে সুপ্রকাশ। চোখ বন্ধ করে বসে থাকে কিছু ক্ষণ চুপচাপ। করোনা তার শরীর মনের উপর দিয়ে ঝড় বইয়ে দিয়েছে। এই পর পর বড় বড় মানুষদের চলে যাওয়াটা কষ্ট দিচ্ছিল।
করোনা শুরুর পর যখন থেকে মৃত্যুমিছিল আরম্ভ হল, প্রথম দিকে সেটা ছিল ওর কাছে সংখ্যার মতো। রিপোর্ট লিখত, দৈনিক সংক্রমণের বাড়া-কমা, রাজ্যভিত্তিক মৃত্যু, দৈনিক পরীক্ষা কত হল, সুস্থতার হার ইত্যাদি। সংখ্যার বিস্তর বিশ্লেষণ। এখন মাঝে মাঝে মনে হয় ভাইরাসটা ওর খুব কাছাকাছি। দিনদুয়েক ধরে ওর নিজের কাশি হচ্ছে বলেই নয়। চারপাশটা দেখেও সেই অনুভূতিটাই প্রবল হচ্ছে।
প্রথমে স্বল্প পরিচিত দু’-এক জন আক্রান্ত হয়েছে শুনল। এর পর পরিচিত এবং বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যেও ইনি উনি। তার পর অফিসেও আক্রান্ত হলেন দু’-এক জন। এমনকি, আত্মীয়স্বজনদেরও কেউ কেউ।
ক্রমশই ছোট হয়ে আসছিল ওকে ঘিরে চারপাশের সমকেন্দ্রিক বৃত্তগুলো। মারা গেলেন পিসিমা আর এক মামা। শেষ দেখাও হল না। ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মৃত্যুসংবাদ পেল ফোনে। সারা দিন বসে রইল কাঠের মতো।
এক দিন কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা সুপ্রকাশকেও ছুঁয়ে ফেলল লাল মোরগফুলের মতো অজস্র ঝুঁটিবাঁধা ভাইরাসটা। কয়েক দিন পর হাসপাতালে ভর্তি হতেই হল সুপ্রকাশকে।
যে দিন শ্বাসকষ্ট শুরু হল, ঘোর-লাগা চোখে আইসিইউ-তে কী একটা হাতড়ে বেড়াচ্ছিল সুপ্রকাশ। ওর চারপাশে তখন সাদা সাদা মহাকাশচারীরা ইতিউতি উড়ে বেড়াচ্ছিল। আবছা মনে হল, তাকে ঘিরে জনাচারেক কী যেন আলোচনা করছেন। কান পেতেও ঠাহর হচ্ছিল না ওদের কথাগুলো।
শবাগার নাকি শব্দ-শবাগার? কোন মর্গ তাকে ডাকছে? বোধের অতলান্তিকে ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছিল তার চেতনা। আবছা আর ক্ষীণ হতে হতে ফের যেন জেগে উঠছিল পরক্ষণেই। আর সেই সময় মনে হল, নিজের একটা অবিচুয়ারি লিখে ফেলা খুব দরকার। কী যেন সব লেখা থাকে...
দুধের ফেনার মতো সাদা বিছানায় শুয়ে হাতড়াতে থাকে সুপ্রকাশ। মৃত্যুকালে বয়েস হয়েছিল... শোকের ছায়া... শূন্যতা, অপূরণীয় ক্ষতি— পরিচিত শব্দবন্ধগুলো যেন ওর চারপাশে ভিড় করে আসে। কোনও ক্রমে শব্দগুলোকে সাজিয়ে বন্দি করে রাখতে পারলে গোলা বোস, দিগ্বসনা মিত্র বা, বিত্তসুন্দরের মতো হয়ত এ যাত্রা সে-ও...
প্রাণপণ চিৎকার করে সে কাগজ-কলম চাইছিল ভ্রাম্যমাণ শুভ্র অবয়বগুলোর কাছে। কিন্তু সুপ্রকাশ বুঝতে পারছিল না, সেই ডাক আদৌ কোথাও পৌঁছচ্ছে কি না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy