ছবি কুনাল বর্মণ।
পূর্বানুবৃত্তি: বাড়ির মালিক শচীন্দ্রনাথ সেনের সঙ্গে একটু কৌশল করেই বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন অমরেন্দ্রনাথ। দীনেশ যক্ষ্মায় আক্রান্ত। এই ছোঁয়াচে রোগকে ভয় না পেয়েই তাকে সাহচর্য দেয়, সাধ্যমতো সেবা করে এই বাড়িরই একটি মেয়ে। তার নাম স্বর্ণপ্রভা। সে ছাত্রী সংঘে থাকতে লাঠিখেলা শিখেছিল দীনেশের কাছে। দীপালি সংঘে থাকাকালীন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের কাছে শিখেছে বন্দুক চালানো। সে দীনেশকে জানায়, সে বিপ্লবীদের এই আস্তানার আশপাশে সন্দেহজনক লোকজনকে ঘোরফেরা ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখেছে। সম্ভবত তারা পুলিশের লোক। সে দীনেশদের পালিয়ে যেতে বলে। আত্মগোপনকরার জন্য দীনেশের হাতে দেয় বেলঘরিয়ারএকটি ঠিকানা। নলিনী আর জগদানন্দর সঙ্গে গোপনে পালানোর পরিকল্পনা করে দীনেশ।
দীনেশ উঠতে উঠতে বলে, “স্বর্ণপ্রভার কাছ থেকে ঠিকানাটা নিয়ে আসি...”
ঘরে ঢুকেই তার বিছানার দিকে চোখ পড়ে। দেখে, বিছানায় এক টুকরো কাগজ একটা ছোট্ট পাথর চাপা দিয়ে রাখা আছে। খুব সাবধানে পাথরটা সরিয়ে কাগজটা হাতে তুলে নেয় দীনেশ। কাগজটিতে এক জনের নাম, ঠিকানা দেওয়া আছে। ভাল করে নাম ও ঠিকানায় চোখ বুলিয়ে দীনেশ কাগজটা ভাঁজ করে তার পিরানের বুকপকেটে রেখে দিল। তার পর ঘরে খানিক ক্ষণ পায়চারি করতে করতে গেয়ে উঠল, “অয়ি ভুবনমনোমোহিনী, মা,/ অয়ি নির্মলসূর্যকরোজ্জ্বল ধরণী জনকজননিজননী॥/ নীলসিন্ধুজলধৌতচরণতল, অনিলবিকম্পিত-শ্যামল-অঞ্চল,/ অম্বরচুম্বিতভালহিমাচল...”
আর গাইতে পারল না। কাশি শুরু হল। সেই কাশির দমকে মনে হল, প্রাণটাই বুঝি তার বেরিয়ে যাবে। কোনও রকমে ঘটিতে ঢাকা দিয়ে রাখা জল খেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। খুব কাশির শব্দে পাশের ঘর থেকে নলিনী ও জগদানন্দ এসে দেখল যে, দীনেশ বিছানায় শুয়ে হাঁপাচ্ছে। জগদানন্দ জিজ্ঞেস করল, “শরীর খারাপ লাগছে?”
দীনেশ হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, “নিজেদের রিভলভার লোডেড রেখো।”
সারা রাত ঘুমোল না দীনেশ। ঘুমোতে পারল না। তবু শেষ রাতে একটু চোখ লেগে গিয়েছিল তার। তন্দ্রা কেটে গেল স্বর্ণপ্রভার আর্তচিৎকারে। দীনেশ বিছানা থেকে উঠে দরজা খুলে দেখল, স্বর্ণপ্রভা দাঁড়িয়ে। তার চোখেমুখে ভয়।
দীনেশ বলল, “কী হয়েছে?”
স্বর্ণপ্রভা বলল, “সর্বনাশ হয়েছে দীনেশদা, পুলিশ সারা বাড়ি ঘিরে ফেলেছে। আশপাশের বাড়ির ছাদেও পুলিশ মোতায়েন আছে। ওরা যে কোনও সময়ে এ বাড়িতে ঢুকবে।”
দীনেশের চোয়াল শক্ত হল। স্বর্ণপ্রভাকে বলল, “তুমি নীচে যাও। পুলিশ দরজা ভেঙে ঢুকলে ঢুকুক, কিন্তু তোমরা দরজা খুলবে না।”
“দীনেশদা...” স্বর্ণপ্রভা কিছু বলতে গেল, কিন্তু দীনেশ তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “যাও স্বর্ণ। এখন নষ্ট করার মতো সময় নেই।”
স্বর্ণপ্রভা চলে যাওয়ার পরই দীনেশ পাশের ঘরে এল। কিছু বলার আগেই নলিনী বলল, “আমরা শুনেছি। পালানোর আর কোনও উপায় নেই।”
দীনেশ বলল, “ফাইট টু দ্য এন্ড। লেট দেমকাম ইন।”
দীনেশ নিজের ঘরে ফিরতে ফিরতেই শুনল নীচের তলায় দরজা ধাক্কা দেওয়ার শব্দ। দীনেশ প্রস্তুতি নিয়ে নিল। পকেট থেকে তার মাউজ়ার রিভলভারটি বার করে বিড়বিড় করে বলল, “দেন এগেন... বন্দে মাতরম্।”
ভারী বুটের শব্দ শুনতে পেল দীনেশ... ওরা আসছে... আসুক... উই থ্রি উইল ফিনিশ দেম... ওরা তার ঘরের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে... এক জন পরিষ্কার বাংলায় তাদের আত্মসমর্পণ করতে বলছে... এক বার নয়, বেশ কয়েক বার।
খুব সাবধানে রিভলভার তাক করে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেল দীনেশ। তাকে এগোতে দেখে, অন্য দু’জনও তার পাশে এসে দাঁড়াল। আবছা অন্ধকারে দীনেশ এক জনকে লক্ষ্য করে গুলি চালাল। একটা আর্তনাদ শুনল। শুরু হল গুলির লড়াই। আক্রমণ ও প্রতি-আক্রমণের মধ্যেই বাঙালি পুলিশ অফিসারটি বলে চলেছেন তাদের আত্মসমর্পণ করতে।
জগদানন্দ বলল, “কী করবে, দীনেশ?”
দীনেশ উত্তর দিল, “লড়াই, শেষ বুলেট পর্যন্ত।”
দীনেশের ডান হাতে গুলি এসে লাগল। রিভলভার ছিটকে পড়ল মাটিতে। নলিনীর পায়েও গুলি লেগেছে। দীনেশ কোনও রকমে রিভলবার তুলে আবার লড়াই শুরু করেছে। যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গেলেও নলিনী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় জগদানন্দ বলল, “আমার গুলি শেষ হয়ে গেছে।”
দীনেশ বলল, “ঘরে গিয়ে অপেক্ষা করো...”
দীনেশেরও গুলি শেষ। নলিনীরও।
সিঁড়ি ভেঙে ওরা উপরে আসছে... ভারী বুটের শব্দ আবার...
দীনেশ সশব্দে বলে উঠল, “বন্দে মাতরম্...”
বিরাট পুলিশ বাহিনী এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল দুই অসহায় আহত যুবকের উপর। তৃতীয় জনকে ধরার জন্য একটা দল তত ক্ষণে দালান পেরিয়ে ঘরের দিকে যাত্রা করেছে।
৪২
উমানাথের বড় মেয়ে সুহাসিনীর পুতুলের আজ বিয়ে। সেই উপলক্ষে বাড়িতে আজ এলাহি ব্যবস্থা। প্রতিবেশীদের প্রায় সকলেই নিমন্ত্রিত। উমানাথ নিজে গিয়ে নেমন্তন্ন করে এসেছেন তাদের। কিছু কিছু বাড়িতে শশিকান্তকেও যেতে হয়েছে। এই পুতুলের বিয়েতে খামোখা লোক খাওয়ানো ব্যাপারটা শশিকান্তর মোটেই পছন্দ নয়। তাও কাকার কথামতো কিছু বাড়িতে সে-ও নেমন্তন্ন করে এসেছে। গজেন ঘোষালের বাড়িতে নেমন্তন্ন করতে এসে তাকে কিছু বাঁকা কথাও শুনতে হয়েছে। গজেন ঘোষাল উমানাথের বাল্যবন্ধু। কিন্তু এখন তেমন সদ্ভাব নেই দু’জনের মধ্যে। ব্যভিচারী বেপরোয়া উমানাথকে সে যে অপছন্দ করে, তা জানেন উমানাথ। তাই নিজে না গিয়ে শশীকে পাঠিয়েছেন তাকে নেমন্তন্ন করতে।
শশী তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে নেমন্তন্ন করতেই, গজেন ঘোষাল জিজ্ঞেস করলেন, “উপলক্ষটা কী?”
“বোনের পুতুলের বিয়ে,” শশী উত্তর দিয়েছিল।
“বোন... তোমার তো বোন নেই! দিদির তো বিয়ে হয়ে গেছে।”
“কাকার মেয়ে।”
“তাই বলো। উমানাথের মেয়ের পুতুলের বিয়ে। পয়সা হয়েছে তো, নিজেকে উমানাথ এখন ছাতুবাবু মনে করে। কিছু পয়সা তো ওড়াতে হবে। এই ভাবে ওড়াচ্ছে। অথচ, পাটের ব্যবসাটা তো তোমার বাবার। তাকেও তো দেখেছি আমি। ওই রকম সজ্জন মানুষ আমি আর দেখিনি...” বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন গজেন ঘোষাল।
শশিকান্ত সুযোগ বুঝে বলল, “আমি আসি কাকা। আমাকে আরও কয়েকটা বাড়ি যেতে হবে।”
“হ্যাঁ, এসো,” গজেন ঘোষাল বলে।
গজেনকাকার নিন্দার মুখ। কিন্তু কথাগুলো সত্যি। তার উপায় থাকলে, এই পুতুলের বিয়ে নামক লোক-দেখানো আড়ম্বরে সে থাকত না। পিসিকে সে বলেওছিল এ কথা। পিসি তার মাথায় হাত দিয়ে বুঝিয়েছেন। বলেছেন, “ভাল না লাগলেও তোকে থাকতে হবে। জলে থেকে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করে কোনও লাভ আছে কি?”
শশিকান্ত কোনও উত্তর দেয়নি।
বোনকে শশিকান্ত কম ভালবাসে না। এই বয়সে সে তো পুতুল খেলবেই। তার দিদি যখন ছোট ছিল, সেও পুতুল নিয়ে খেলত। তার পুতুলেরও বিয়ে হত। কিন্তু বাড়ির বড়রা তো তাতে মাথা ঘামাত না। আসলে ফুর্তির একটা উপলক্ষ চাই। তাই কাকা বোনের এই পুতুলের বিয়েটাকে বেছে নিয়েছেন।
উমানাথের মেয়ের পুতুলটি আকারে বেশ বড়। দেখলে মনে হয় সত্যিকারের একটি ছোট মেয়ে। সাহেবদের দোকান থেকে অনেক দাম দিয়ে তাকে কিনে নিয়ে আসা হয়েছিল।
পাশের বাড়ির রাণুর ছেলে-পুতুলের সঙ্গে তার বিয়ে। হিসেব মতো, বিয়ের পর এ বাড়ি ছেড়ে তার রাণুদের বাড়িতে চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু মেয়ের পুতুল যাতে না হাতছাড়া হয়, সে ব্যবস্থাও করেছেন উমানাথ। ঠিক হয়েছে, বিয়ের পর রাণুর পুতুল এ বাড়িতে ঘরজামাই থাকবে। রাণুকে অন্য একটি পুতুল কিনে দেওয়া হবে।
বিয়ের বহর যত, আয়োজন তত নেই। দু’টি মালা, কাগজের টোপর ও একটু সিঁদুর রাখা হয়েছে। দু’বাড়ির মহিলাদের উদ্যোগে দুই পুতুলের শুভদৃষ্টি ও মালাবদলের পর সিঁদুরদান পর্বও শেষ হল।
ও দিকে কোমরে গামছা বেঁধে গায়ের ছেলের দল লেগে গেছে পরিবেশন করতে। উমানাথ নিজে তাদের তদারকি করছেন। খাওয়াদাওয়া করে গাঁয়ের লোক প্রশংসায় পঞ্চমুখ উমানাথের। এমন বড়মানুষি তারা আর দেখেনি।
ছাতুবাবু-লাটুবাবুর বড়মানুষির কথা তারা শুনেছে, কিন্তু উমাবাবুর বড়মানুষি তারা স্বচক্ষে দেখছে। এ সব শুনে, উমানাথ আহ্লাদে আটখানা। যদিও সেটা তিনি প্রকাশ করছেন না। শুধু তাঁর চেয়ারটিতে বসে, পুরুষ্টু গোঁফে হাত বোলাতে বোলাতে স্মিত হাসি হেসে এই সব প্রশংসা উপভোগ করে চলেছেন।
ঠিক এমন সময় উমানাথের বাড়ির সম্মুখে একটি পুলিশের গাড়ি এসে দাঁড়াল। গাড়ি থেকে নেমে এল দু’জন বাঙালি পুলিশ অফিসার। এক জন পুলিশ অফিসারকে উমানাথের চেনা চেনা লাগল। ভদ্রলোক রডা কোম্পানির অস্ত্র লুটের ঘটনায় তাঁর গদি তল্লাশিতে এসেছিল। তার মানে এরা কলকাতা থেকে এসেছে। উমানাথের মন কু গাইল। এরা কি পাপড়িবাই সম্পর্কে কোনও খোঁজ-খবরে এসেছে? হপ্তাখানেক আগে পাপড়িবাইয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেছে। ও সব মেয়েছেলেদের এমনই হয়। তা ছাড়া, উমানাথ অনেক দিন ওই পাড়ায় যানওনি... ভাবতে ভাবতে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছেন তিনি। পুলিশ অফিসার দু’জন নীচ থেকে তাকে দেখতে পাচ্ছে। তাদের মধ্যে এক জন উমানাথকে জিজ্ঞেস করল, “এটা কি শশিকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি?”
পুলিশের মুখে শশিকান্তর নাম শুনে উমানাথ হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। মনে মনে ভাবল, তা হলে ওই হারামজাদা শশীর জন্য আজ ওরা এ বাড়িতে এসেছে। নিশ্চয়ই কোনও জায়গায় গন্ডগোল পাকিয়ে এসেছে। পইপই করে বারণ করা হয়েছিল দেশোদ্ধারে না থেকে নিজের কাজ করতে। এখন বোঝা যাচ্ছে, কাকার কথা কানে তোলেনি। তুললে, আজকে পুলিশ তাকে খুঁজতে এ বাড়ি আসত না।
দু’জন পুলিশ অফিসার তত ক্ষণে উপরে উঠে এসেছে। বাড়িতে উৎসবের পরিবেশ মুহূর্তে কেমন যেন বদলে গেল। পুলিশে সকলেরই ভয়। দু’-এক জন কৌতূহল দেখিয়ে পুলিশের আশপাশে দাঁড়ালেও বেশির ভাগ লোকই চোখ এবং কান খোলা রেখে দূরে দূরে থাকল।
উমানাথ এসে দাঁড়িয়েছেন দুই পুলিশ অফিসারের কাছে।
এক জন অফিসার জিজ্ঞেস করল, “আপনি?”
উমানাথ বললেন, “এ বাড়ির বর্তমান কর্তা বলতে পারেন। নাম উমানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।”
“শশিকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় আপনার কে হন?” অফিসারটি বললেন।
“ভাইপো। মেজদার ছেলে। মেজদা গত হয়েছেন সাত-আট বছর হয়ে গেল।”
“ছেলেটি নিশ্চয়ই বাড়িতে আছে। আপনার বাড়িতে তো অনুষ্ঠান দেখছি আজ।”
“আছে তো, অবশ্যই আছে। আমি এক্ষুনি তাকে ডেকে পাঠাচ্ছি।”
উমানাথ একটি ছেলেকে শশিকান্তকে ডেকে আনতে পাঠিয়ে, পুলিশ দু’জনকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “নিশ্চয়ই বিপ্লবী কাজকর্মে জড়িয়েছে শশী। অনেক সতর্ক করেছি। আমি আর কী করতে পারি? আমি তো দূর করে দিতে পারি না! এ বার দেখছি, তা-ই করতে হবে।”
যে পুলিশ অফিসারটি এত ক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়েছিল, এ বার সে কথা বলে উঠল। বলল, “সতর্ক করেছিলেন কেন? এর আগে এমন কোনও ঘটনা কি ঘটেছিল?”
উমানাথ চুপ করে যান। বুঝতে পারেন, প্রসঙ্গটা তাঁর না তোলাই উচিত ছিল। তবে তুলেছেন যখন, বলে ফেলাই ভাল। পুলিশ অফিসারটি আবার বলে, “কী হল, আপনি যে চুপ করে গেলেন?”
উমানাথ তাড়াতাড়ি বলেন, “কয়েক বছর আগে দক্ষিণেশ্বর বোমা মামলায় পুলিশ শশীকে এক বার ধরে নিয়ে যায়। আবার ছেড়েও দেয়, কারণ ও সে ভাবে যুক্ত ছিল না।”
এত সব কাণ্ড যখন ঘটে চলেছিল, শশী তখন তার ঘরে গভীর ভাবে মগ্ন জার্মান দার্শনিক নিটশে-কে নিয়ে। নিটশে-র ‘বিয়ন্ড গুড অ্যান্ড ইভিল’ বইটি শেষের দিকে সে তখন। পুলিশ এসেছে শুনে তার মাথায় উঠল নিটশে। বইটা বন্ধ করে সে তখন দ্রুত উপরে উঠে এল। তাকে আসতে দেখে, উমানাথ মন্তব্য করলেন, “আমার গুণধর ভাইপো এসে গেছে, এ বার তার সঙ্গে কথা বলুন।”
“বেশ, আপনি কাজ থাকলে যেতে পারেন, আপনাকে আমাদের প্রয়োজন নেই,” এক জন পুলিশ অফিসার বলল।
উমানাথ তবুও সেখান থেকে না সরে, একটি চেয়ার টেনে সেখানেই বসে পড়লেন। উদ্দেশ্য, শশীর সঙ্গে পুলিশের কী কথা হয়, তা শোনা।
“আপনার নাম শশিকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়?” এক জন পুলিশ অফিসার বললেন।
শশিকান্ত মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল।
“আপনার কাকার মুখে শুনলাম, আপনাকে দক্ষিণেশ্বর বোমা মামলায় পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছিল?” অফিসারটি বলল।
শশিকান্ত অবাক হল। সে তার কাকার দিকে তাকাল। উমানাথ অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল।
শশিকান্ত বলল, “বেশ কয়েক বছর আগের ঘটনা। আমাকে প্রেসিডেন্সি জেলে জিজ্ঞাসাবাদ করেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তারা বুঝেছিল, মামলায় অভিযুক্তদের সঙ্গে আমার যোগ নেই। এত দিন পরে সেই ব্যাপারে আবার আমাকে...”
শশিকান্তকে কথা শেষ করতে না দিয়ে, পুলিশ অফিসারটি বলল, “না না, ওটা ক্লোজ়ড চ্যাপ্টার। আমরা এসেছি অন্য ব্যাপারে আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে।”
“বেশ, বলুন কী জানতে চান?” শশিকান্ত পুলিশ অফিসারের চোখে চোখ রেখে বলল।
অফিসার জিজ্ঞেস করল, “আপনি দীনেশচন্দ্র মজুমদার বলে কাউকে চেনেন?”
“এমন কোনও নাম আমার মনে পড়ছে না।”
“পড়বে, নিশ্চয়ই মনে পড়বে। সামনাসামনি আপনাদের দু’জনের দেখা হলে, তখন নিশ্চয়ই আপনি দীনেশ মজুমদারকে চিনতে পারবেন। না-ই যদি চেনেন, আপনার নাম-ঠিকানা লেখা কাগজ তার পকেটে এল কী করে? আজ ভোররাতে পুলিশ অ্যাকশনে কর্নওয়ালিস স্ট্রিটের একটি বাড়ি থেকে সে ও আরও অনেকে ধরা পড়েছে। আপনি প্রস্তুত হয়ে নিন, প্রেসিডেন্সি জেলে যেতে হবে।”
ক্রমশ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy