Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
Novel

বৃশ্চিকবৃত্ত

চায়ের কাপে শেষ চুমুকটা দিয়ে টেবিল ছেড়ে ঊঠে দাঁড়াল তাওড়ে। ঠোঁটের কোণে ধূর্ত একটা হাসি।

ছবি: দীপঙ্কর ভৌমিক।

ছবি: দীপঙ্কর ভৌমিক।

সুপ্রিয় চৌধুরী
শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২১ ০৭:১৯
Share: Save:

ভোর ছ’টা। নোনাখালের জল ঢাকা পড়ে আছে ভিজে কুয়াশার চাদরে। সুন্দরী-গরান-বাইনের জঙ্গল জুড়েও সেই ধূসর রঙের চাদর। শ্রীপর্ণার দিকে তাকাল রুদ্র, বলল, “শরীরের যত্ন নিয়ো। সাইকেল চালিয়ো না একদম। ডাক্তারবাবুদের প্রেসক্রিপশন মেনে আয়রন ট্যাবলেট আর যা-যা ওষুধ আছে, খেয়ো নিয়ম করে। রুটিন চেকআপগুলো করিয়ো। টাইমে ভ্যাকসিন নিয়ো।”

জবাবে মুচকি হাসল শ্রীপর্ণা, “যত কথা আজ বললে, জীবনে এক সঙ্গে এতগুলো কথা বলোনি কোনও দিন, অন্তত আমার সঙ্গে। যাকগে! বেটার লেট দ্যান নেভার!” দীর্ঘশ্বাস ফেলল শ্রীপর্ণা, “এই বাহানায় তবু তো বললে। চিন্তা কোরো না, আমি একদম ঠিক থাকব। তুমি সাবধানে থেকো।”

মুখ ঘুরিয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা মাঝিচাচার দিকে তাকাল রুদ্র। বলল, “তোমরা সবাই দিদিমণির খেয়াল রেখো চাচা।”

“ও নিয়ে আপনে মোট্টে চেন্তা করবেন না বাবু। দিদিমণি আমাদের ফেরেস্তার মতো। আমাদের এই গরিবগুর্বো গাঁ-গেরামের কত মেয়ে বৌদের জেবন বেত্তান্তটাই পালটে দেছেন উনি! আমাদের জান দিয়েও ওনাকে মেহফুজ রাখব আমরা...” বলতে বলতে সামনে এগিয়ে এল মাঝি, “আমারও একটা আর্জি ছেল আপনার কাছে। আমাদের গাঁ থেকে হুই উত্তরে কোশখানেক দূরে একটা দ্বীপ। কুনো নাম নাই। হেইখানে রাজা দক্ষিণ রায়ের থান আর মা বনবিবির মাজার। বাঘের রাজা আর রানি। খুব জাগ্রত তেনাদের ওই থান আর মাজার। ভর দিনের বেলায় কেঁদো কেঁদো সব বড়মিয়াঁ এসে শুয়ে থাকে ওনাদের থান-মাজারে। সম্বচ্ছর ওই দ্বীপে পা ছোঁয়ানোর হেম্মত হয় না কোনও সুমুন্দির পুতের। কেবল একটা দিন ছাড়া। মাছ-কাঁকড়া ধরা, জঙ্গলে কাঠ কাটা কী মধু পাড়ার মরসুম এলে জেলে, মউলে, বাউলেরা সব গাঁ-গেরাম ঝেঁইট্যে দল বেইন্ধে যায় ওই দ্বীপে। পটকা ফাটিয়ে, কাড়া-নাকাড়া বাজাতে বাজাতে। ওঁয়াদের থান-মাজারে সিরনি আর পুজো দিতে। মানত করে তাগা বাঁধে ওই থান আর মাজারের পাশে হেই বিশাল সে এক বটগাছের গায়ে। সেই তাগার সুতোর খানিকটা অংশ ছিঁড়ে রেখে দেয় নিজেদের কাছে। তার পর দিনের আলো থাকতি থাকতি ফিরে আসে গাঁয়ে। মোদের পেত্যেকের বিশ্বাস, অই তাগা শরীলে বাঁধা থাকলি পরে বাঘ-কুমির-কামঠ-সাপ তো দূরের কথা, জিন-পরি-দানো-অপদেবতারাও আপনার কোনও ক্ষতি কইরতে পারবেনি। দিদিমণির কাছে শুনেছি, যে কাজে আপনি যাচ্ছেন, সেখেনে পদে পদে বিষম বেপদ। আমার খুব খোয়াইশ, আপনার হাতে তেনাদের থান-মাজারের সেই তাগা বেইন্ধে দি। তা হলেই আপনাকে ছোঁয়ার হেম্মতটুকু হবে না কোন সুম্মুন্দির পুতের।”

অবাক হয়ে বুড়ো মাঝির দিকে তাকিয়ে ছিল রুদ্র। বাবা রাঘবনাথ ব্যানার্জি। টাউন থানার দুঁদে মেজোদারোগা। তীব্র শাক্তধর্মে বিশ্বাসী। ভয়ঙ্কর কালীভক্ত। তাঁর সন্তান হয়েও কোনও ধর্মে কোনও কালেই বিন্দুমাত্র বিশ্বাস ছিল না নাস্তিক রুদ্রনারায়ণ ব্যানার্জির। আর আজ এই অশিক্ষিত নিরক্ষর আর অসম্ভব সরল এই বৃদ্ধ মানুষটি একটা সুতো বেঁধে দিতে চাইছে ওর হাতে, যা কিনা যে কোনও বিপদ থেকে ওকে বাঁচাবে। এক বার জিজ্ঞেস করার তীব্র ইচ্ছে হল, এই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ তো এই তাগা হাতে বেঁধে জঙ্গলে যায় মাছ-কাঁকড়া ধরতে, কাঠ কাটতে আর মধু পাড়তে। তবু তাদের অনেকেই প্রত্যেক বছর বাঘ-কুমির-কামঠের পেটে যায় কেন? কিন্তু সেই ইচ্ছেটা গো-হারা হেরে গেল বৃদ্ধ মাঝির ওই অসম্ভব সরল আর বিশ্বাসমাখা মুখটার দিকে তাকিয়ে। হেসে হাতখানা বুড়ো মাঝির দিকে বাড়িয়ে দিল রুদ্র, “পরিয়ে দাও।”

মুহূর্তের মধ্যে যেন শতসহস্র বিদ্যুতের ঝলক মাঝির মুখে, “রাজা দক্ষিণ রায় আর মা বনবিবি সব বেপদ-খতরা থেইক্যে মেহফুজ রাখবেন আপনাকে। চলেন এ বার।”

ভুটভুটির ইঞ্জিন স্টার্ট দেওয়ার শব্দ। যন্ত্রের টানে এগিয়ে গেল নৌকো। ভোরের কুয়াশাঘেরা আবছায়ায় ঘাটলার পাড়ে দাঁড়ানো অলৌকিক মানবী! একদৃষ্টে সে দিকে তাকিয়ে রইল রুদ্র, যত ক্ষণ না নৌকোটা বাঁকের আড়ালে চলে যায়।

রাত আটটা পঁয়ত্রিশ। ছত্রপতি শিবাজি এয়ারপোর্টের রানওয়ের মাটি ছুঁল কলকাতা-মুম্বইগামী বিমান। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স, লাগেজপত্তরের ঝামেলা চুকিয়ে লাউঞ্জ গেটের বাইরে এসে দাঁড়াল রুদ্র। পাশে সন্তোষী, সুনীল আর মজিদসাহেব। তারকটার জন্য খারাপ লাগছিল রুদ্রর। কিছুতেই আনা গেল না ছেলেটাকে। আলাদা ভাবে গাড়ি বা তার ড্রাইভারকে অন্য কোনও স্টেটে নিয়ে যাওয়ার কোনও অপশন নেই, বিশেষ ভাবে যখন সেই রাজ্যে অতিথিদের জন্য আলাদা করে সর্বক্ষণের একটা গাড়ি আর এক জন চালকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দমদমে ওদের সবাইকে তুলে দিতে এসে মুখখানা ভার করে দাঁড়িয়ে ছিল তারক। সামনে এগিয়ে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রেখেছিল রুদ্র, বলেছিল, “মন খারাপ করিস না তারক। ফোর্সের রুল অনুযায়ী তোকে ওখানে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা অনেক চেষ্টা করেও ম্যানেজ করা গেল না।”

“না না স্যর, আমি মন খারাপ করিনি। আপনি তো চেষ্টা করলেন অনেক। তার পর আর আপনার কী করার আছে!” তবে মুখে এ কথা বললেও ওর ভেতরটা যে ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে বেশ বুঝতে পারছিল রুদ্র। একটা টিমের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে টানা কাজ করার পর হঠাৎ সেখান থেকে বাদ পড়ে যাওয়ার যন্ত্রণা যে এক জনকে কতটা কষ্ট দিতে পারে সেটা অনুভব করতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। কিন্তু কিছু করার নেই! দীর্ঘশ্বাস ফেলল রুদ্র!

এই সব চিন্তাভাবনার মাঝখানেই সামনে এগিয়ে এলেন এক জন। মাঝারি উচ্চতা। নির্মেদ টান-টান চেহারা। হেসে রুদ্রর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন, “ওয়েলকাম টু মুম্বই। আয়্যাম এসিপি ললিত শিন্ডে। মিট মাই কোলিগস, ইনস্পেক্টর রবিন ডিসুজ়া অ্যান্ড ইনস্পেক্টর যশবন্ত তাওড়ে। পাশে দাঁড়ানো দু’জনের দিকে তাকালেন এসিপি শিন্ডে।”

এগিয়ে এসে রুদ্রদের সবার সঙ্গে করমর্দন করল দুই ইন্সপেক্টর। একটু দুরে এয়ারপোর্ট পেভমেন্টের ধারে পার্ক করা মুম্বই পুলিশের লোগোওয়ালা সাদার ওপর হলুদ-কালো বর্ডার দেওয়া দুটো
টয়োটা কোয়ালিস।

“আগরকর!” সে দিকে তাকিয়ে হাঁক দিল ইনস্পেক্টর যশবন্ত তাওড়ে। দ্বিতীয় গাড়িটার সামনে থেকে এগিয়ে এল একটা অল্পবয়সি ছেলে। বছর কুড়ি-বাইশ। লম্বা ছিপছিপে একহারা চেহারা।

“ইয়ে বিনোদ আগরকর,” ছেলেটার দিকে আঙুল দেখাল ইনস্পেক্টর তাওড়ে। “যিতনা দিন আপলোগ ইহাঁ রহিয়েগা, ইয়ে বান্দা আপকা গাড়িকা ড্রাইভার হায়। কুছ ভি জরুরত হোগা, ইসকো বোলিয়েগা।”

“আপলোগ যাইয়ে ইসকে সাথ, গেস্ট হাউস মে আরাম কিজিয়ে। টুমরো শার্প অ্যাট টেন থার্টি, ফির মিলেঙ্গে হাম সব। বাতেঁ করেঙ্গে কেস কে বারেমে। গুড নাইট। বিনোদ,” আগরকরের দিকে তাকালেন শিন্ডে, “সাহাবলোগোঁকো হেডকোয়ার্টার কা গেস্ট হাউস মে লে যাও। উনকো কোই তকলিফ না হো।”

“ইয়েস স্যর!” মাটিতে পা ঠুকে স্যালুট করল বিনোদ। তার পর এগিয়ে এসে রুদ্রর হাত থেকে ট্রলিব্যাগটা নিয়ে এগিয়ে গেল গাড়ির দিকে। পিছনে পিছনে রুদ্র আর টিমের সবাই।

মুম্বই হেডকোয়ার্টারের কনফারেন্স রুমে বিশাল টেবিলটার দু’পাশে সার দিয়ে বসে ছিল সবাই। সকাল থেকে মিটিং চলছে। বিকেল চারটে নাগাদ আড়মোড়া ভেঙে উঠে দাঁড়ালেন এসিপি শিন্ডে। চোখ টেবিলের বাঁ পাশে বসা রুদ্রর দিকে।

“মিস্টার ব্যানার্জি, আপনাদের আর আমাদের সমস্ত এক্সপিরিয়েন্স, ডকুমেন্টস অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন রিপোর্টস কম্পাইল করে যা উঠে আসছে সেটা হল, উসমান কালিয়া, দ্য নটোরিয়াস গ্যাংস্টার, ওর গ্যাংয়ের হাত রয়েছে এর পিছনে। কলকাতায় আপনারা যাদের অ্যারেস্ট করেছেন, তাদের সঙ্গেও মুম্বইয়ের কি-লিঙ্কের রোল প্লে করত একা উসমানই। ওকে জালে তুলতে পারলে তবেই বুঝতে পারব ওহ শালা আকেলে ইয়ে কাম কর রহা হ্যায়, না ইসকে পিছে অওর বড়া কোই মছলি হ্যায়,” পকেট থেকে রুমাল বার করে কপালের ঘাম মুছলেন শিন্ডে, তার পর বললেন, “আজ হি উসমান কা ডেরা মে রেড মারেঙ্গে হামলোগ। কলকাতা অ্যান্ড মুম্বই পোলিস জয়েন্ট রেড করেগা। বহোত বড়া ফোর্স লেকে নিকালনা পড়েগা হামলোগোঁকো। বহোত জলদি সব কুছ অ্যারেঞ্জ করনা হ্যায়।”

বলেই ফোনে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন এসিপি। বাকিরাও নিজেদের মধ্যে কথা বলতে লাগল নিচু গলায়, “ম্যায় আভি আ রহা হুঁ”, বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল ইন্সপেক্টর
যশবন্ত তাওড়ে।

হেডকোয়ার্টারের পিছন দিকে যে রাস্তাটা ক্রফোর্ড মার্কেটের দিকে চলে গেছে, অফিস থেকে বেরিয়ে সে দিকেই হাঁটা লাগাল তাওড়ে। প্রথম মোড়টার ডান দিকে ঘুরেই একটা ইরানি চায়ের হোটেল। দরজা দিয়ে ঝট করে ভেতরে সেঁধিয়ে গেল তাওড়ে। বাঁ দিকের দেয়াল ঘেঁষে গোটাদুয়েক খালি টেবিল। একদম কোণের টেবিলটায় বসল তাওড়ে। এসে দাঁড়াল হোটেলবয় ছেলেটা।

“ক্যা লিজিয়েগা সাব?”

“এক কাটিং চায়,” গম্ভীর গলায় বলল তাওড়ে। অর্ডার নিয়ে চলে গেল ছেলেটা। চার দিকটা ভাল করে এক বার ভাল করে দেখে নিয়ে পকেট থেকে মোবাইলটা বার করল তাওড়ে। তার পর নম্বর ডায়াল করে কানে লাগাল।

লাইনের ও পার থেকে বাবুরাওয়ের গলা, “জয় মহারাষ্ট্র! ক্যা খবর তাওড়েসাহাব?”

“বহোত বড়া লফড়া হো গিয়া বাবুরাওজি!” ভয়ঙ্কর উত্তেজিত শোনাচ্ছিল তাওড়ের গলা, “কালিয়া উসমান কা ওহ যো নেপালি লওন্ডিলোগোঁকা চামড়া চোরিওয়ালা ধান্দা, কলকত্তা মে ওহ ধান্দাকা সারা সেয়ানালোগ, পোলিসবালোকে হাত পাকড়া গয়া। লকআপমে উসমানকা নাম ভি
বতা দিয়া উনহোনে। উঁহা সে পোলিস আয়া হ্যায় উসমান কো পাকড়নে কেলিয়ে। এসিপি শিন্ডে কে হাত মে কেস হ্যায়। আজ হি রেড পড়েগা উসমান কা আড্ডে মে।”

“দেখিয়ে তাওড়েসাহাব,” লাইনের ও প্রান্তে বরফের মত ঠান্ডা শোনাল বাবুরাওয়ের গলা, “ওহ শালা শিন্ডে, বহোত ইমানদার আদমি। আপ ভি জানতে হ্যায় ইয়ে বাত। উসকো পারচেজ় করনা না-মুমকিন হ্যায়। আগর কালিয়া শালা পাকড়া গয়া, তো হাম সবলোগ ফাঁস জায়েঙ্গে। আপ ভি নহি বাচিয়েগা।” বলে কয়েক সেকেন্ড চুপ করে রইল বাবুরাও। ফের যখন বলা শুরু করল তখন একদম খাদে নেমে গেছে গলা, “ইন হালত মে এক হি রাস্তা খুলা হ্যায় হাম সব কে সামনে। কালিয়া উসমান কো ইন্ডিয়া সে ফারার হোনা পড়েগা আভ্‌ভি। হাম উসমান কো খবর ভেজ রহে তুরন্ত। আপ লগে রহিয়ে আপনা টিমকে সাথ। কালিয়া আগর ভাগ সকা, তো ঠিক হ্যায়। নেহি তো মওকা মিলতে হি ফেক এনকা‌উন্টার মে মার দিজিয়ে সালেকো।”

ও প্রান্তে কেটে গেল লাইনটা।

চায়ের কাপে শেষ চুমুকটা দিয়ে টেবিল ছেড়ে ঊঠে দাঁড়াল তাওড়ে। ঠোঁটের কোণে ধূর্ত একটা হাসি। শালা বাবুরাও পাটিল! কামিনা হারামি! পলিটিশিয়ানের বাচ্চা! এত দিনের শাগরেদ উসমান কালিয়া। বিপদ বুঝে তাকেও খালাস করে দিতে চাইছে! এটাই দুনিয়া। আর এই সাপের দুনিয়ায় শালা সাপ হয়েই বাঁচতে হবে। চায়ের কাপের নীচে দামের সঙ্গে আরও দশ টাকার একটা নোট রেখে হোটেল থেকে বেরিয়ে গেল তাওড়ে।

অন্য বিষয়গুলি:

Novel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy