Advertisement
E-Paper

অনন্ত পথের যাত্রী

ধারাবাহিক উপন্য়াস ।। পর্ব ১০ ।।

ছবি: রৌদ্র মিত্র।

অবিন সেন

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৫ ১০:২৩
Share
Save

পূর্বানুবৃত্তি: মহাপ্রভুকে সামনে থেকে দেখে, তাঁর মধুর কণ্ঠে কৃষ্ণনাম শুনে প্রায় সম্মোহিত হয়ে পড়লেন রায় রামানন্দ। রামানন্দ তাঁর গৃহে শ্রীচৈতন্যকে আতিথ্য গ্রহণের প্রস্তাব দিলে মহাপ্রভু তা গ্রহণ করলেন। তিনি দশ দিন কাটালেন রামানন্দের গৃহে। বিদায়কালে বলে গেলেন, ফেরার পথে তিনি আবার দেখা করে যাবেন। রায় রামানন্দও যেন পুরীতে তাঁর কাছে যান। অন্য দিকে গভীর রাতে ঘুম ভেঙে উঠে তার কর্তব্যে মন দেয় বটুকেশ্বর। কিশোরী স্ত্রী কুন্তাকে ঘুমন্ত রেখেই সে বেরিয়ে পড়ে তার বাড়ি থেকে। তার পর এসে পৌঁছয় নগরীর উপকণ্ঠের এক বসতিতে। তার গন্তব্য বিম্বাধর শেঠের অট্টালিকা। সেখানে পৌঁছে বটুকেশ্বর দেখা করে প্রধান সেনাপতি গোবিন্দ বিদ্যাধরের সঙ্গে। বটুকেশ্বর বিদ্যাধরের অনুগত। নানা সংবাদের সঙ্গে সঙ্গে সে বিদ্যাধরকে নৃসিংহ উপরায়ের সঙ্গে রাজকুমারী তুক্কার দেখা সাক্ষাৎ হওয়ার কথাটিও জানায়। বিদ্যাধর বটুকেশ্বরকে আদেশ দেন, নৃসিংহ এবং রাজকুমারীকে যেন কেউ কোনও ভাবে বিরক্ত না করে এবং এই সংবাদ যেন মহারাজের কানে না পৌঁছয়।

বিদ্যাধর মনে মনে বললেন, ‘ঘুঘু দেখেছে, এ বার ফাঁদ দেখবে নৃসিংহ।’ উল্লাসে তাঁর চোখ ঝিকমিক করছিল। তিনি এক বার তালি দিলেন।

সেই ছায়ামানুষটি ঘরে এসে উপস্থিত হল। ফর্সা যুবকটির কন্দর্পকান্তি চেহারা। ছিপছিপে কিন্তু বলশালী। চোখেমুখে উগ্র বেপরোয়া ভাব। মাথার কেশ ঘাড়ের কাছে লুটিয়ে আছে। ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যপূর্ণ বঙ্কিম হাসি।

বটুকেশ্বর আনত হয়ে তাঁকে অভিবাদন জানাল।

বিদ্যাধর বললেন, “এঁকে চেনো নিশ্চয়ই!”

বটুকেশ্বর সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়ল। মুখে বলল, “মহারাজ প্রতাপরুদ্রদেবের ভ্রাতুষ্পুত্র বজ্রদেব।”

“হ্যাঁ। এখন থেকে তুমি এঁরও অনুগত থাকবে। আর শোনো, বজ্রদেব শীঘ্রই দাক্ষিণাত্যে যাবে। মহারাজকে বলে আমি একে একটা বাহিনীর সেনাপতি করে দেব। তুমিও এর সঙ্গে দাক্ষিণাত্যে যাবে। তোমার কাজ হবে দাক্ষিণাত্যর অধিপতি রায় রামামন্দের উপরে নজর রাখা। অন্তঃপুরের খুঁটিনাটি খবর তুমি রাখবে।”

একটু থেমে তিনি আবার বললেন, “তোমার আরও একটা কাজ করতে হবে। দক্ষিণে যে সৈন্যরা যুদ্ধ করছে, তাদের মনে একটা অসন্তোষ তৈরি করা। বিশেষ করে যুবরাজ বীরভদ্রদেবের অধীনে যে বাহিনী আছে, তার মধ্যে। দেখো, পুরীতে এ বার ভাল বৃষ্টি হয়নি। তাই খরার ফলে ফসলও ভাল ফলেনি। সাধারণ মানুষের মনে এমনিতেই চাপা ক্ষোভ আছে। তার উপরে রাজকর। যুদ্ধের জন্যে কর চাপানো হচ্ছে। ফলে মানুষের ভিতরে অসন্তোষ বাড়ছে। তোমার কাজ হবে সাধারণ সৈন্যদের ভিতরে এই ক্ষোভটাকে ছড়িয়ে দেওয়া।”

বটুকেশ্বর ঘাড় নাড়ল। সে বুঝতে পারছে, ভিতরে ভিতরে তাকে একটা যুদ্ধ চালাতে হবে। সে জানে না কত দিন তাকে দাক্ষিণাত্যে নির্বাসনে কাটাতে হবে! এক বার কিশোরী কুন্তার মুখটা তার মনের আকাশে ভেসে উঠল।

গোবিন্দ বিদ্যাধর আবার বললেন, “শুনলাম নদে থেকে কে এক তরুণ সন্ন্যাসী নাকি নীলাচলে এসেছে! এসেই সে নাকি পণ্ডিতচূড়ামণি সার্বভৌম ভট্টাচার্যকে বশ করে ফেলেছে!”

বটুকেশ্বর তাঁর কথায় সম্মতি জানাল, “আপনি ঠিকই শুনেছেন রাজন। সে নদের জগন্নাথ মিশ্রের বেটা। নাম নিমাই পণ্ডিত। দামাল ছেলে। নদের কাজির শাসনকে তিনি একাই টলিয়ে দিয়েছিলেন। সন্ন্যাস নিয়ে তিনি এখানে এসে আঠারো দিন ছিলেন। ভট্টাচার্যমশাই তো একেবারে তাঁর অনুগত হয়ে পড়েছিলেন।”

বিদ্যাধর মনে মনে ভাবলেন, ‘সে কেমন সন্ন্যাসী, ভট্টাচার্যমশাইয়ের মতো কঠিন ধাতুকে যে গলিয়ে দিয়েছে!’ তার পর গলা তুলে বললেন, “তা তিনি এখন কোথায়?”

বটুকেশ্বর জানায়, “শুনেছি দাক্ষিণাত্য ভ্রমণে গিয়েছে। তাই আমি আর কোনও খবর রাখিনি।”

গোবিন্দ বিদ্যাধর ব্যস্ত হয়ে বললেন, “না না, একেবারে খবর না রাখলে চলবে না। খবর রাখো...”

বটুকেশ্বর ঘাড় নাড়লে বিদ্যাধর তাকে হাত নেড়ে বিদায় নিতে বললেন।

বটুক আর বজ্রদেব ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে গোবিন্দ বিদ্যাধর একা বসে থাকলেন কিছু ক্ষণ। আজকাল যেন কিছুতেই তিনি শান্তি পান না। সারা রাত তাঁর চোখে এক বিন্দু ঘুম আসে না। মাথার ভিতরে অনবরত কী যেন এক অপূর্ণতা খেলা করে। তিনি উঠে গিয়ে আবার প্রমোদকক্ষে প্রবেশ করলেন। অতুল বৈভবে ঘরটি সজ্জিত। যে মেয়েটি আজকের রাতের জন্যে তাঁর সেবায় নিয়োজিত, সেই রূপবতী মেয়েটি লাল গালিচার উপরে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। এক পাশে একটি সুরার পাত্র উল্টে পড়ে পারসিক গালিচাটিকে ভিজিয়ে দিয়েছে।

বিদ্যাধর বাঁ পা দিয়ে যুবতীটির কোমরের কাছে একটু ঠেলা দিলেন। মেয়েটি তড়িৎ-স্পর্শের মতো উঠে বসল। তার ভঙ্গি দেখে মনে হয়, সে যেন এই জেগে ওঠাটুকুর অপেক্ষাতেই নিদ্রা গিয়েছিল। তার দু’চোখের কাজল ধেবড়ে গিয়েছে। সে কি চোখের জলে! সে দিকে বিদ্যাধরের কোনও খেয়াল নেই।

শয্যায় বসে তিনি এক পাত্র সুরা প্রস্তুত করার আদেশ দিলেন। তার পর এক বার তালি বাজালেন। রক্ষী এলে তাকে বললেন, “এক বার বনমালীকে পাঠিয়ে দাও।”

বনমালী লোকটি একটা গিরগিটির মতো। কুঁজো আর খল।

বনমালী এসে দাঁড়ালে বিদ্যাধর তাঁকে বললেন, “যেমন বলেছি, বটুকেশ্বর আর বজ্রদেবের উপরে কড়া নজর রাখবে।”

বনমালী চলে গেলে প্রহরী দরজাটা নিঃশব্দে ভেজিয়ে দিল।

গোবিন্দ বিদ্যাধর শয্যায় গা এলিয়ে দিলেন। যুবতীটি সুরার পাত্র নিয়ে এসে তাঁর শয্যার পাশে বসলে, তিনি অদ্ভুত এক বুভুক্ষু দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালেন। এই শেষ রাতে শরীরটা তাঁর আবার জেগে উঠতে চাইছে! আহ! কী জ্বালা তাঁর শরীরের। কত কাল তাঁর ঘুম হয় না! তবু শরীরে তাঁর কোনও ক্লান্তি নেই। বরং ক্লান্তিবিহীন এক খিদে অহরহ রাবণের চিতার মতো প্রজ্জ্বলিত হয়ে আছে। তিনি নেশাতুর চোখ তুলে হেসে যুবতীটিকে বললেন, “সুন্দরী, এসো তো দেখি, আদর করো, দেখি কেমন আমাকে ঘুম পাড়াতে পারো!”

১১

নৃসিংহের আজকাল কিছুই ভাল লাগে না। তাঁর মনের ভিতরে কেমন একটা শূন্যতা। যেন শূন্য, অন্ধকার একটা অলিন্দ তাঁকে অনবরত গিলে নিতে আসে। তাঁর মনে হয়, গভীর অন্ধকারের ভিতর থেকে এক বিলাপের সঙ্গীত অহরহ কানের কাছে অনুরণিত হচ্ছে। কিন্তু এর কারণ তিনি ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না।

পিতার মৃত্যুর পর নৃসিংহ একেবারেই একা হয়ে গিয়েছিলেন। আর মাতার কথা তাঁর একেবারেই মনে পড়ে না। সেই কোন ছেলেবেলায় মা তাঁর ইহলোক ত্যাগ করে গিয়েছেন। মায়ের মুখ তাঁর কাছে শুধু একটা ছবি। নৃসিংহ বড় হয়ে উঠেছিলেন পরিচারিকাদের লালন-পালনে। পিতা তো তাঁর বাণিজ্যের কারণে দেশে-বিদেশে সাগরে সাগরে ঘুরে বেড়াতেন।

এই সব সময়ে নৃসিংহের একান্ত অভিভাবক ছিলেন গৃহশিক্ষক তথা পিতৃবন্ধু পণ্ডিত কাহ্নদেব চূড়ামণি। এক অদ্ভুত মানুষ তিনি। যেমন শাস্ত্র-ব্যাকরণ-গণিতে ব্যুৎপত্তি, তেমনই তাঁর দক্ষতা নানাবিধ অস্ত্র সঞ্চালনে। হয়তো তিনিই ছিলেন সেই সময়ে নীলাচলের শ্রেষ্ঠ অসিযোদ্ধা। অস্ত্রচালনায় তাঁর দক্ষতা যে এখনও ম্লান হয়নি, তার পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল ম্লেচ্ছদের পুরী আক্রমণের সময়। যদিও সে ভাবে কোনও দিন তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে অস্ত্র ধরেননি, বরং তাঁর সমস্ত দক্ষতা তিনি ঢেলে দিয়েছিলেন পুত্রসম নৃসিংহের শিক্ষায়। ফলে অসিচালনায় নৃসিংহের দক্ষতা হয়েউঠেছে প্রশ্নাতীত।

কাহ্নদেবের পরামর্শে নৃসিংহ সিংহলের সুদক্ষ তরবারি-যোদ্ধা পিরুমলকে যথেষ্ট অর্থের বিনিময়ে নিজের কাছে এনে রেখেছিলেন অস্ত্র অনুশীলনের জন্য। কারণ কাহ্নদেব বৃদ্ধ হয়েছেন। সেই পিরুমল আজ একান্ত বিশ্বস্ত পার্শ্বচর নৃসিংহের।

গ্রীষ্মের এক ক্লান্ত অপরাহ্ণে তাঁর প্রাসাদ প্রাকারের ভিতরে এক বিস্তৃত উদ্যানে পদচারণা করছিলেন নৃসিংহ। কিন্তু মুখমণ্ডলে তাঁর প্রসন্নতা ছিল না। পদচারণা করতে করতে দেখলেন, দারুণ দাবদাহে নানা দেশ থেকে নিয়ে আসা বিবিধ ফুলের গাছগুলি নিস্তেজ। উদ্যান-পরিচারককে ডেকে তিনি বিরক্ত ভাবে নানা রকমের নির্দেশ দিলেন।

অদূরে একটি পাথরের বেদিতে বসে গণিতের এক দুরূহ সমস্যার সমাধানে মগ্ন ছিলেন কাহ্নদেব। নৃসিংহের মুখের এই অসহিষ্ণু ভাষণ তাঁর কানে পৌঁছলে তিনি মুখ তুলে নৃসিংহের দিকে তাকালেন। বুঝতে পারলেন, কোনও কারণে নৃসিংহের মন বিক্ষিপ্ত। তিনি উঠে নৃসিংহের পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন। কাঁধে হাত রেখে বললেন, “পুত্র, কয়েক দিন থেকেই তোমাকে কেমন অধৈর্য দেখছি। এর কারণ কী?

নৃসিংহ তাঁর দিকে ফিরে তাকালেন। একটু লজ্জিত হলেন। তাঁর চোখেমুখে কি কিছু প্রকাশ হয়ে পড়ল, যা প্রকাশ হওয়ার কথা নয় একেবারেই! তিনি একটু হাসার চেষ্টা করলেন। মেকি হাসি তাঁর মুখে সে ভাবে ফুটল না।

মৃদুকণ্ঠে বললেন, “তাত, না না, কিছু নয়। হয়তো কয়েক দিনের দাবদাহে মাথা উত্তপ্ত হয়ে পড়েছে।”

কথাটা বলার সময়ে তিনি কাহ্নদেবের চোখে চোখ রাখতে পারলেন না।

কাহ্নদেব বুঝলেন, নৃসিংহ তাঁকে খুলে বলতে চাইছেন না। তবে না বললেও তিনি অনুমান করতে পারেন এই চিত্তচাঞ্চল্যের কারণ। তিনি আত্মভোলা মানুষ হতে পারেন, কিন্তু তাঁর এই পুত্রসম শিষ্যের সমস্ত সংবাদ তাঁর নখদর্পণে। সর্বদা তাঁর একটি চোখ রক্ষাকবচের মতো নৃসিংহের সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু তিনি তেমন কিছু বললেন না এই বিষয়ে। শুধু বললেন, “কয়েক দিন তোমার অস্ত্র অনুশীলন হয়নি। শক্তিচর্চায় মনের চাঞ্চল্য শান্ত হয়।”

অদূরে দণ্ডায়মান পিরুমলকে তিনি ইশারায় কাছে ডাকলেন।

নৃসিংহ শান্ত হয়ে মৃদু হাসলেন। প্রস্তাবটি তাঁর খারাপ লাগেনি।

অপরাহ্ণের শান্ত উদ্যানে অসি ঝনঝন করে উঠল। গাছের মাথা থেকে এক ঝাঁক পাখি কিচিরমিচির করে উড়ে গেল দূরে।

সে তো খেলা নয়! নৃসিংহের কাছে যেন নিজের সঙ্গে নিজের মনের একটা লড়াই। সেই লড়াই লড়তে লড়তে নিজের বিক্ষিপ্ত মনের ভিতর থেকে তিনি মুক্তি চাইছিলেন।

বহু দিন পর সেই সময়ে ঈশান কোণ ঘিরে কালো মেঘের একটা পাহাড় যেন সারা আকাশের দখল নিতে এগিয়ে আসছিল। বহু দিন বৃষ্টি হয়নি নীলাচলে। তবে কি ঝড়ের হাত ধরে আজ বৃষ্টি নামবে? তৃষিত মৃতপ্রায় মাটির বুকে প্রাণের আশা জাগবে? আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবলেন কাহ্নদেব চূড়ামণি।

ভাবতে ভাবতেই সারা চরাচর দুলিয়ে এক বাঁধনছাড়া ঝড়ের উল্লাস ধেয়ে এল। ঝড় থেকে বাঁচতে কারওই দৌড়ে প্রাসাদে ফিরে যেতে মন চাইল না। নৃসিংহ অসি কোষবদ্ধ করে দু’হাত তুলে আকাশের দিকে তাকালেন। ঝড়ের সমস্ত প্রাবল্য যেন তিনি সারা শরীর দিয়ে গ্রহণ করতে চাইলেন। সেই সঙ্গে আকাশ কাঁপিয়ে বজ্রনির্ঘোষের সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি নামল। প্রতিটি বৃষ্টির কণা ত্বক ভেদ করে যেন নৃসিংহের শরীরের ভিতরে প্রবেশ করছে। কত দিনের তপ্ত শরীর যেন কিছুটা শান্তি খুঁজে পাচ্ছে। বহু ক্ষণ তাঁরা এই ভাবে বৃষ্টিতে ভিজলেন।

প্রাসাদে ফিরে নৃসিংহ মনে মনে ভাবলেন, আজ সারা রাত বুঝি বৃষ্টি থামবে না। তবে? তাঁর যে বাইরে বেরোনোর ছিল। সে যে মনের ডাক। মেঘে মেঘে কে যেন আরও বেশি করে তাঁকে ডাক পাঠাল। মনে মনে তিনি কালিদাসের দু’টি শ্লোক উচ্চারণ করলেন। সিক্ত বস্ত্র পরিত্যাগ করে একটি উপযুক্ত বস্ত্র পরিধান করলেন তিনি। সঙ্গে নিলেন সুতীক্ষ্ণ একটি ছোরা। মিশরের এক হাবসি ক্রীতদাসের কাছ থেকে এই বিষাক্ত ছোরাটি তিনি কিনেছিলেন। এর সামান্য এক আঁচড়েই নিশ্চিত মৃত্যু। মাথায় পরে নিলেন ভারী একটি পাগড়ি, বৃষ্টি থেকে এটাই তাঁর মাথাকে বাঁচাবে।

নিঃশব্দে একটি কালো ঘোড়ায় চেপে নৃসিংহ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে পথে নেমে পড়লেন। কিন্তু তিনি খেয়াল করলেন না, আরও একটি কালো ছায়া তাঁকে অনুসরণ করছে।

বৃষ্টিতে সমস্ত পথঘাট শুনশান। কোথাও জনমানব চোখে পড়ে না। ঘোড়ার খুরের শব্দ যেন বৃষ্টির শব্দের ভিতরে চাপা পড়ে যাচ্ছে।

ঘুরপথ দিয়ে তিনি রাজপ্রাসাদের পিছন দিকের একটা রাস্তা ধরলেন। সমস্ত রাস্তাটা যেন তাঁর হাতের তালুর মতো চেনা। এই দিকে একটা ছোট পরিখা আছে। পরিখায় সারা বছর একই রকম জল থাকে। হয়তো এর সঙ্গে সুড়ঙ্গপথে চিল্কার কোনও যোগাযোগ আছে।

সেই পরিখার এক পাশে একটি বড় বৃক্ষের আড়ালে তিনি ঘোড়াটিকে বেঁধে রাখলেন। এই দিকে সে রকম ভাবে প্রহরী থাকে না। থাকলেও আজ তারা বৃষ্টি থেকে বাঁচতে কোনও আচ্ছাদিত স্থানে গিয়ে বসে আছে হয়তো।

পরিখাটি খুব প্রশস্ত নয়। তবে তার জল বেশ গভীর। অন্ধকারে বৃষ্টির মধ্যে এক হাত দূরের বস্তুও ভাল করে দেখা যায় না।

নৃসিংহর হঠাৎই মনে হল, এই হঠকারিতার দরকার ছিল না। কিন্তু তাঁর মনের ভিতর থেকে আরও একটা হঠকারী মন তাঁকে যেন বেপরোয়া হতে উৎসাহিত করল। তা ছাড়া তিনি এক বার যেটা ভাবেন, সেটা করেই ছাড়েন।

ক্রমশ

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Novel Literature

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}