ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাঙালির ইতিহাসের অন্যতম চিরস্মরণীয় মনীষী। পরনে ধুতিচাদর, পায়ে চটিজুতো, মাথায় সামনের দিকে কামানো— ছবি, ভাস্কর্য সর্বত্র সেই চিরপরিচিত মূর্তি। সমস্ত উনিশ শতক জুড়ে সাহেবসুবোদের পোশাকের সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের পুরুষদের পোশাকের একটা ফিউশন চোখে পড়েছিল। পোশাক নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষার সে আমলে নিতান্ত ব্যতিক্রমী পুরুষ বিদ্যাসাগর। নিতান্ত সাদামাটা সাবেকি পোশাকেই বর্ণময়, দীপ্ত তাঁর রূপ। আজও তাঁর কর্মকাণ্ড মানুষকে অনুপ্রেরণা দেয়, ভরসা জোগায়।
বিদ্যাসাগর মশাইয়ের সমকালে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের পোশাকে বিচিত্র বিন্যাস। বিদ্যাসাগরের অকৃত্রিম বন্ধু মধুসূদন চলনে বলনে পোশাকে কেতাদুরস্ত সাহেব। বিদ্যাসাগর ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকার সূত্রে ঠাকুরবাড়ির সাংস্কৃতিক কাজকর্মে যুক্ত হয়ে পড়েন এবং ১৮৫৮ সালে সম্পাদনার দায়িত্ব নেন। তখন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চোগা-চাপকান বা পাগড়ি কিংবা জ্যোতিরিন্দ্রনাথের পায়জামার সঙ্গে এক খণ্ড কাপড় জুড়ে করা মালকোঁচা-পায়জামা, মাথায় শোলার টুপির সঙ্গে পাগড়ির মিশেলে তৈরি শিরোভূষণ বিদ্যাসাগরকে একটুও প্রভাবিত করতে পারেননি। নিতান্ত সাদামাটা গ্রামীণ পোশাক বাপঠাকুরদার মতোই অঙ্গসজ্জা করতেন তিনি।
নেটিভদের পোশাককে ইংরেজরা বিশেষ প্রশংসার চোখে দেখত না। ইংরেজদের ধারণা, তাদের পোশাক প্রগতিশীল, শালীন, রুচিসম্পন্ন, পৌরুষ ও সভ্যতার প্রতীক। বিকানেরের মহারাজা ১৯১৭ সালে ইউরোপ থেকে দেশীয় পোশাকে ভারতে ফিরলেন। পাসপোর্টের ছবির সঙ্গে তাঁর দেশীয় পোশাক পরা চেহারার মিল না খুঁজে পেয়ে পাসপোর্ট চেয়ে পাঠায় ইংরেজ সরকার। উনিশ শতকে একেবারে গোড়ার দিকে সাধারণ পরিবহণে দুটো ভাগ ছিল— নেটিভ ও ইউরোপিয়ান। অনেক হিন্দুই মনে করতেন সাহেবি পোশাক, বিলিতি খাদ্য বা কালাপানি পার হওয়ার মতো বিজাতীয় ব্যাপার। আবার ইংরেজদের হৌসে চাকরি করা বাঙালিরা অনেকে পরতেন ধুতি কোট ও চাদর। বিবেকানন্দের ভাই মহেন্দ্রলাল দত্ত তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন যে, তখন উৎসবে, অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত ব্যক্তিরা পরতেন চিনা কোট। বুকটা লম্বা ঘেরের কাপড় দিয়ে মোড়া, সামনে গোলাকার হাড়ের বোতাম। কলকাতার হাড়কাটা গলিতে এই বোতাম তৈরি হত। কেউবা পিরান পরতেন। বৃদ্ধেরা বেনিয়ানও পড়তেন, তাতে বুকটা দু’ভাঁজ করে ফিতে দিয়ে বাঁধা হত। এই সব পোশাকের সমারোহে ধুতি-চাদর পরা বিদ্যাসাগর ছিলেন একেবারে বেমানান।
বিদ্যাসাগরের ঠাকুরমা দুর্গা দেবী টেকুয়া ও চরকায় সুতো কেটে সেই সুতো বেচে দিন চালাতেন। তাঁর স্বামী রামজয় তর্কভূষণ দেশত্যাগী হয়েছিলেন। সে কালে অনেক অসহায়া মহিলা এ ভাবে সংসার চালাতেন। বিলাসে বীতস্পৃহ নাতি বিদ্যাসাগরের মোটা কাপড় ও চাদরই ছিল সম্বল। মা চরকায় সুতো কেটে কাপড় তৈরি করে পাঠাতেন। সেই কাপড় পরে কলেজ যেতেন ঈশ্বরচন্দ্র শর্মা। ‘মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই’ গানটি লেখা হওয়ার আগে তা সার্থক করে তুলেছিলেন বিদ্যাসাগর।
তিনি চিরকাল চটিজুতো পায়ে দিতেন, মোটা চাদর গায়ে দিতেন, পূজারি পুরোহিতদের মতো মাথা কামাতেন, চিঠির শিরোনামে লিখতেন ‘শ্রীদুর্গা শরণং’, ‘শ্রীশ্রীহরি সহায়’। এ সবের মধ্যে দিয়েই প্রকাশ পেত তাঁর তেজোদ্দীপ্ত স্বদেশিয়ানা। আত্মাবমাননার বিনিময়ে অনুগ্রহ লাভ তাঁর কাছে ছিল ঘৃণার বিষয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথায়, ‘ব্রাহ্মণ পণ্ডিত যে চটিজুতা ও মোটা ধুতিচাদর পরিয়া সর্বত্র সম্মান লাভ করেন, বিদ্যাসাগর রাজদ্বারেও তাহা ত্যাগ করিবার আবশ্যকতা বোধ করেন নাই। তাঁহার নিজের সমাজে যখন ইহাই ভদ্রবেশ, তখন তিনি অন্য সমাজে অন্য বেশ পরিয়া আপন সমাজের ও সেই সঙ্গে আপনার অবমাননা করিতে চাহেন নাই। সাদা ধুতি ও সাদা চাদরকে ঈশ্বরচন্দ্র যে গৌরব অর্পণ করিয়াছিলেন, আমাদের বর্তমান রাজাদের ছদ্মবেশ পরিয়া আমরা আপনাদিগকে সে গৌরব দিতে পারি না। বরঞ্চ এই কৃতকর্মের উপর দ্বিগুণতর কৃষ্ণকলঙ্ক লেপন করি। আমাদের এই অবমানিত দেশে ঈশ্বরচন্দ্রের মতো এমন অখণ্ড পৌরুষের আদর্শ কেমন করিয়া জন্মগ্রহণ করিল, আমরা বলিতে পারি না।’ এই ধুতি-চাদরকে খাঁটি বাঙালিয়ানার নিদর্শন বলে মেনে নিয়েছিলেন বিদ্যাসাগর। তাঁর পিতৃদেব ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের পোশাক ছিল একই রকম। গ্রামে যে পোশাক ব্যবহার করেছেন শহরেও তাই। তাঁর ছেলের শহরে কলেজে পড়ার সময়ও ওই একই পোশাক। সংস্কৃত কলেজের ছাত্র ঈশ্বরচন্দ্র। ভারী সুনাম। এ কলেজের অধ্যাপক প্রেমচন্দের একখানা হাতে লেখা পুঁথি ছিল। সাহিত্যদর্পণের টীকা। তা কলেজে থাকত। প্রেমচন্দের বারণ সত্ত্বেও পাঠের প্রয়োজনে পুঁথির পাতা খুলে নিয়ে চলেছেন বিদ্যাসাগর। পথে বৃষ্টি, পা পিছলে পড়ে গিয়ে ঠনঠনিয়া কালিবাড়ির কাছে সর্বাঙ্গ ভিজে গেল। ভিজল বইপত্র আর পুঁথিও। চাদর একমাত্র রক্ষাকর্তা। ভুনোওয়ালার দোকানে ঢুকে জ্বলন্ত উনুনের পাশে ভিজে চাদর বিছিয়ে শুকনো করে বাঁচালেন পুঁথি।
হ্যালিডে সাহেব তখন বাংলার ছোটলাট। এ দেশের মেয়েরা যাতে লেখাপড়া শিখতে পারে, সে বিষয়ে তিনি উদ্যোগী হলেন। শিক্ষার উন্নয়ন ও বিস্তার নিয়ে আলোচনার জন্য মাঝে মাঝে হ্যালিডে সাহেব বিদ্যাসাগরকে ডেকে পাঠাতেন। বিদ্যাসাগর যেতেন নিজস্ব পোশাকে— পরনে থানধুতি, গায়ে বিদ্যাসাগরী চাদর, পায়ে তালতলার চটি। হ্যালিডে সাহেবের অনুরোধে বিদ্যাসাগর দুই-তিন বার পেন্টুলুন চোগা চাপকান পরেছিলেন কিন্তু সে সব পরে তাঁর ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। মনে হল সঙ সেজেছেন! এই পোশাকে সকলের চোখ এড়িয়ে ছোট লাটের বাড়ি গেছেন। মনে বড়ই অস্বস্তি। সোজাসুজি ছোটলাটকে বলে বসলেন, এই ভাবে সঙ সেজে আসা সম্ভব নয়, তাই এটাই শেষ সাক্ষাৎ। হ্যালিডে সাহেব তাঁকে আশ্বস্ত করে বললেন, পণ্ডিত যে পোশাকে আসতে চান, সেই পোশাকে আসবেন। শেষজীবনে চিকিৎসকের কথায় মাঝে মাঝে ফ্ল্যানেলের জামা ও উড়ানি ব্যবহার করতে হয়েছে। এমনও ঘটেছে বিদ্যাসাগরের অশৌচ, বাবা মারা গেছেন। বিশেষ প্রয়োজনে তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছেন হ্যালিডে সাহেব, তিনি অশৌচের বেশেই গেছেন সাহেবের কাছে।
পোশাকের মতোই অবিচ্ছেদ্য তাঁর চটিজুতোও। কলকাতা শহরে উনিশ শতকের মিশ্র সংস্কৃতিতে পোশাকআসাক, বর্ণময় ব্যক্তিদের উপস্থিতি— এই সব কিছুর মধ্যে বিদ্যাসাগর তাঁর নিজস্বতা এবং গ্রামীণ সত্তার নিখাদ ঔজ্জ্বল্যটি বজায় রেখেছিলেন। বাদুড়বাগানের বাড়িতে বিদ্যাসাগরের সঙ্গে যখন শ্রীরামকৃষ্ণের দেখা হল, তখন রামকৃষ্ণদেবের পরনে লংক্লথের জামা, লালপেড়ে ধুতি, বার্নিশ করা চটিজুতো। জামার বোতাম খোলা। এর জন্য দারুণ দুশ্চিন্তা। শ্রীম পরমহংসদেবকে বললেন, যাঁর কাছে যাচ্ছেন তাঁর এ সব বিষয়ে ভাবনা নেই। বিদ্যাসাগরের সে দিন পরনে থান ধুতি, হাতকাটা ফ্লানেলের জামা, গলায় পৈতে, মাথায় চার দিক কামানো, বাঁধানো দাঁত। বিদ্যাসাগর চটিজুতো বিলিতি বার্নিশের মতো করে বুরুশ করতেন। তামাক খেতেন। হুঁকো চব্বিশ ঘণ্টা তাঁর হাতে ধরা থাকত। নস্যও নিতেন। মনের আনন্দে ভাব বিনিময় করলেন দুই মহাপুরুষ। যৌবনে সংস্কৃত কলেজের প্রিন্সিপাল হিসেবে সেখানকার এক অংশে যখন তিনি থাকতেন, সেখানে কুস্তির জমি তৈরি ছিল। নিয়মিত কুস্তি করতেন। বীরসিংহ গ্রামে গেলে মালকোঁচা মেরে কবাডি খেলা তাঁর দৈনন্দিন কর্মের মধ্যে পড়ত।
এই চটিজুতো পরা নিয়েও নানা বিপত্তি। ১৮৭৪ সাল। জাদুঘর ও এশিয়াটিক সোসাইটি, পার্ক স্ট্রিটে একই বাড়িতে ছিল। সুরেন বাঁড়ুজ্জেকে সঙ্গে নিয়ে হিন্দি ভাষার কবি হরিশ্চন্দ্রকে জাদুঘর দেখাতে গেছেন তিনি। বিদ্যাসাগরের সেই আদি ও অকৃত্রিম পোশাক। দ্বাররক্ষী নির্দেশ দিল, বাড়ির বাইরে তাঁকে চটিজুতো খুলে রেখে ঢুকতে হবে। অথচ সাহেবি পোশাক পরলে সাত খুন মাপ! সঙ্গীদের নিয়ে ফিরে এলেন বিদ্যাসাগর। চিঠি লিখে প্রতিবাদ করলেন। এ নিয়ে চিঠি চালাচালিও চলল। কিন্তু তিনি আর কখনও এশিয়াটিক সোসাইটি বা জাদুঘরে যাননি। এ বিষয়ে ‘ইংলিশম্যান’ পত্রিকা লিখেছিল— ‘বিদ্যাসাগরের মতন একজন পণ্ডিতের প্রতি যখন এইরূপ ব্যবহার, তখন এশিয়াটিক সোসাইটিতে আর কোন পণ্ডিত যাইতে চাহিবেন না।’ ‘সাধারণী’ পত্রিকায় এই ঘটনা লেখা হয় ‘জুতা বিভ্রাট’ নামে (১৮৭৪ সালের ১০ জুলাই)।
বহুবিবাহ বিরোধী আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করানোর জন্য বর্ধমান রাজবাড়িতে গেলে সেই একই অভিজ্ঞতা। চটিজুতো বাইরে রেখে ভিতরে যাওয়া। অবশ্য এ রকম নির্দেশ দেওয়ায় সেখানকার দারোয়ানের চাকরি যায়। বিদ্যাসাগর এক দিন শিবনাথ শাস্ত্রীকে বলেছিলেন, “দেখ; ভারতবর্ষের এমন কোন লোক নেই যার নাকে এই চটিজুতা পায়ে টক করে লাথি না মারতে পারি।” সুদৃঢ় আত্মবিশ্বাস, নিজের কাজের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা এবং সংশয়হীন বিবেকের অধিকারী না হলে এমন কথা বলা যায় না। প্রয়োজনে পায়ের চটি হাতে নিয়ে গুন্ডা প্রহার করার কথাও ভেবেছেন অকুতোভয় বিদ্যাসাগর। তাঁর মেট্রোপলিটান কলেজে দু’দল ছাত্রের মধ্যে মারামারিতে তিনি চটি হাতে মারকুটে ছাত্রদের তাড়া করায় মস্তান নেতা দলবল নিয়ে কেটে পড়েছিল।
বিদ্যাসাগর পোশাকের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিত্ব বাঙালির হৃদয়ে এমন ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গেছে যে, নাটক বা ফিল্মেও এই পোশাক ছাড়া বিদ্যাসাগর চরিত্র ভাবা অসম্ভব। ঈশ্বরচন্দ্র তেজস্বী পুরুষ। বাঙালির আইকন। স্বদেশি ভাষা ও সাহিত্যের শ্রীবৃদ্ধির জন্য তিনি ইংরেজদের সঙ্গে বার বার আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নানা কাজ আদায় করেছেন। ধুতি-চাদর কিংবা চটি তো উপলক্ষ, এ সব কিছুর অন্তরালে ছিল দেশ ও জাতি সম্পর্কে তীব্র গর্ববোধ। রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর মতে ‘চটিজুতার প্রতি তাহার (বিদ্যাসাগরের) একটা আত্যন্তিক আসক্তি ছিল বলিয়াই তিনি যে চটিজুতা ভিন্ন অন্য জুতা পায়ে দিতেন না, এমন নহে। আমরা যে স্বদেশের প্রাচীন চটি ত্যাগ করিয়া বুট ধরিয়াছি, ঠিক তাহা দেখিয়াই যেন বিদ্যাসাগরের চটির প্রতি অনুরাগ বাড়িয়া গিয়াছিল। বাস্তবিকই এই চটি জুতাকে উপলক্ষ মাত্র করিয়া একটা অভিমান, একটা দর্প তাঁহার অভ্যন্তর হইতে প্রকাশ পাইত।’
কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত তাঁর কবিতায়, গদ্যে যে অটুট বাঙালিয়ানার সন্ধান দিয়েছিলেন তা বজায় ছিল ঈশ্বরচন্দ্র শর্মার জীবনেও। ক্যালকাটা রিডিং রুম লাইব্রেরির অধিবেশনে সভাপতি ছিলেন বিদ্যাসাগর। সেখানে ডব্লিউ সি ব্যানার্জি, অর্থাৎ উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় রুমালে নাকঝাড়াটাও ইংরেজি কায়দায় করতেন, সেখানে সেই সাহেবিয়ানার যুগে, দেশি পোশাকে থেলো হুঁকো হাতে সবাইকে হাসাতেন তিনি। কারও বলার পালা এলে তিনি এমন ভাবে ‘এই বার তুমি একটু বল বাবা, বল তুমি একটু বল’ বলে সম্বোধন করতেন, তাঁর ভঙ্গি দেখে উমেশচন্দ্র পর্যন্ত সাহেবি কায়দার মুখ টিপে হাসি ভুলে গিয়ে গলা খুলে হো হো করে হেসে উঠতেন। পরের অনুকরণের সমস্ত ছদ্মবহিরঙ্গ পেরিয়ে বাঙালিয়ানার নির্ভুল নির্যাসটুকু বন্ধু দেশবাসীর মনে পৌঁছে দিতে তিনি জানতেন। আর এখানেই তাঁর ধুতি, চাদর এবং চটির জিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy