What are India’s concerns after China and Russia deepen ties dgtl
China-Russia Relationship
ভারতের ‘বন্ধু দেশের’ সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে ‘শত্রু দেশের’! লাভ-ক্ষতির অঙ্ক কষছে নয়াদিল্লি
চিনের মতিগতি বুঝতে গত মাসেই পৃথক সফরে বেজিং গিয়েছিলেন আমেরিকার বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং অর্থ সচিব জানেট ইয়ালেন। আমেরিকার তরফে চিনের সঙ্গে সম্পর্ক খানিক ‘স্বাভাবিক’ করার চেষ্টা হলেও, তা বাস্তবে খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২৪ ১৩:১২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৫
সম্প্রতি আরও ছ’বছরের জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। তার পরে এই দফায় প্রথম বিদেশ সফরে দু’দিনের জন্য চিন গিয়েছেন তিনি।
০২১৫
বেজিংয়ে দাঁড়িয়ে পুতিন এবং চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এক সুরে আমেরিকাকে আক্রমণ শানিয়েছেন। দুই দেশের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মস্কো-বেজিং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ‘নতুন যুগের সূচনা’ হয়েছে।
০৩১৫
বৈঠকে জিনপিং পুতিনকে জানিয়েছেন, ভূকৌশলগত রাজনীতির ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন ঘটানোর যে সুযোগ দুই দেশ পেয়েছে, তা বহু দিন দেখা যায়নি। মনে করা হচ্ছে, এই বক্তব্যের মূল নির্যাস হল আমেরিকার নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার পাল্টা আরও একটি ব্যবস্থাকে খাড়া করা।
০৪১৫
দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার সংঘাত চলছে। এই আবহে দুই শক্তিধর দেশের হৃদ্যতাকে সন্দেহের চোখেই দেখছে আমেরিকা। ওয়াশিংটনের ধারণা এই যে, চিনের প্রযুক্তি এবং সমরাস্ত্রকে কাজে লাগিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে ক্রমশ আগ্রাসন বৃদ্ধি করছে পুতিনের দেশ।
০৫১৫
চিনের মতিগতি বুঝতে গত মাসেই পৃথক সফরে বেজিং গিয়েছিলেন আমেরিকার বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং অর্থ সচিব জানেট ইয়ালেন। আমেরিকার তরফে চিনের সঙ্গে সম্পর্ক খানিক ‘স্বাভাবিক’ করার চেষ্টা হলেও, তা বাস্তবে খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি।
০৬১৫
চিন এবং রাশিয়া মুখে অবশ্য দাবি করছে যে, তাদের ‘কষ্টার্জিত’ সুসম্পর্ক সংশ্লিষ্ট এলাকার উন্নতিতে সহায়ক হবে এবং এতে তৃতীয় কোনও দেশের ক্ষতি হবে না। প্রকাশ্যে এ কথা বলা হলেও আমেরিকা মনে করছে, চিন থেকে আমদানির পরিমাণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করছে মস্কো।
০৭১৫
ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের উত্তর-পূর্ব খারকিভ অঞ্চলে অভিযানের গতি বাড়িয়েছে রাশিয়া। পেন্টাগন মনে করছে, রাশিয়ার এই সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে চিনের হাত। চিন, উত্তর কোরিয়া, জাপানকে সঙ্গে নিয়ে আমেরিকার বিরুদ্ধে নতুন কোনও অক্ষ তৈরির চেষ্টা করছে কি না, সে দিকে নজর রাখছে জো বাইডেনের দেশ।
০৮১৫
চিন-রাশিয়ার এই নয়া ঘনিষ্ঠতার দিকে সজাগ নজর রেখেছে ভারতও। ভারত এখনও গোটা বিশ্ব থেকে যে সমরাস্ত্র আমদানি করে, তার ৬০-৭০ শতাংশই আসে রাশিয়া থেকে। সীমান্তে চিনা সেনার ‘আগ্রাসন’ রুখতে রাশিয়ার এই অস্ত্রের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল ভারত।
০৯১৫
চিনের সঙ্গে হৃদ্যতা বৃদ্ধি করায় রাশিয়ার অস্ত্র বিক্রির উপরে আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা চাপায় কি না, তা নিয়েও সন্দেহের দোলাচলে রয়েছে নয়াদিল্লি। সে ক্ষেত্রে ভারতে অস্ত্রের জোগানে টান পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
১০১৫
তার থেকেও বড় যে প্রশ্নটা দেখা দিচ্ছে তা হল, চিন-ভারত সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হলে রাশিয়া কার পক্ষ নেবে? অতীতে বহু সঙ্কটে বন্ধু ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে সাবেক সোভিয়েট ইউনিয়ন। তবে ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে নয়াদিল্লির পাশে দাঁড়ালেও ১৯৬২-র ভারত-চিন যুদ্ধে সে ভাবে বন্ধুর পাশে দাঁড়ায়নি মস্কো।
১১১৫
তা ছাড়া, অনেকেই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে, সেই রাম কিংবা অযোধ্যার মতো সেই সোভিয়েটও আর নেই। এখন যা আছে তা হল, পুতিনের রাশিয়া। সাবেক সোভিয়েটের মতো সেই আদর্শগত বন্ধন আজকের রাশিয়ার নেই।
১২১৫
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে মাঝে ভারতের নাম নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছিল। দুই দেশের কাছেই ভারত আস্থাভাজন হওয়ায় সেই জল্পনা আরও জল-হাওয়া পেয়েছিল।
১৩১৫
কিন্তু বেজিংয়ে পৌঁছেই পুতিন জানিয়ে দিয়েছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে চিন যে চেষ্টা করছে, তার জন্য তিনি জিনপিং সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ। নয়াদিল্লি মনে করছে, ভারত এই সংঘাত থামাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিলে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে দেশের কদর আরও একটু বাড়ত। কিন্তু চিন রাশিয়া-ঘনিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে সেই সম্ভাবনায় জল ঢালবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
১৪১৫
চিনের অবিসংবাদী কমিউনিস্ট নেতা মাও জে দং জীবিত থাকাকালীন অবশ্য চিনের সঙ্গে রাশিয়ার খুব একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল না। ঠান্ডা যুদ্ধের পর দুই দেশের সম্পর্ক অনেকটা স্বাভাবিক হয়।
১৫১৫
তবে এখন আমেরিকাকে রুখতে যে ভাবে দুই দেশের সম্পর্ক ক্রমশ ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, তাতে আগামী দিনে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একাধিক চমকপ্রদ ঘটনা ঘটতে চলেছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। এই পরিস্থিতিতে ভারতও পরিস্থিতির উপর নিবিড় ভাবে নজর রাখারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।