এই জঙ্গলেই গড় বানানোর কথা ভাবলেন ব্রিটিশরা। কলকাতায় তাঁদের ঘাঁটি মজবুত করতে হুগলি নদীর তীরে দুর্গের প্রয়োজনীয়তা প্রথম বোধ করেছিলেন উইলিয়ম হেজেস। ১৬৮২-১৬৮৪ তিনি ছিলেন বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মী। পরে জোব চার্নকের মৃত্যুর পরে ১৬৯৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতে এসেছিলেন স্যর জন গোল্ডসবরো। তখন ক্ষমতার মসনদে মুঘল বংশ। তাঁদের অনুমতি না নিয়েই হুগলি নদীর তীরে পছন্দসই জায়গা মাটির দেওয়ালে ঘিরে দেওয়া হল গোল্ডসবরোর নির্দেশে।
এই দুর্গকে তাঁর আক্রমণের মূল লক্ষ্য করেছিলেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা। ইংরেজদের সঙ্গে দৌত্যে ব্যর্থ সিরাজ কলকাতা আক্রমণে উদ্যত হলেন।১৭৫৬ সালের ১৬ জুন ৩০ হাজার সৈন্যের বিশাল বাহিনী নিয়ে সিরাজ হাজির হলেন কলকাতার উপকণ্ঠে। ১৮ জুন তাঁর বাহিনীর কাছে লালদিঘির যুদ্ধে পরাজিত হল ব্রিটিশরা। ফোর্ট উইলিয়াম দখল করলেন সিরাজ। কলকাতার নাম রাখলেন ‘আলিনগর’।
সিরাজকে পদানত করলেও ব্রিটিশরা তাদের ফোর্ট উইলিয়ামকে আগের চেহারায় ফিরিয়ে আনতে পারেনি। নতুন দুর্গের জন্য জায়গা নির্বাচন করা হয়। পলাশীর যুদ্ধের পরে মীর জাফরের সেলামির টাকায় গোবিন্দপুরের ওই জীর্ম গ্রামের বসতি উঠিয়ে তৈরি হয় নতুন ফোর্ট উইলিয়াম বা নতুন গড়। গ্রামবাসীদের স্থানান্তরের জন্য নতুন জমি দেওয়া হয় তালতলা, কুমারটুলি, শোভাবাজারের মতো তুলনামূলকভাবে তৎকালীন কম গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়।
অতীতের জঙ্গলঘেরা জায়গা থেকে গড়ে ওঠা নতুন গড়ের মাঠ হয়ে ওঠে ব্রিটিশ ও ইউরোপীয়দের প্রিয় জায়গা। প্রান্তবাসীদের আগেই সরানো হয়ে গিয়েছিল। ক্রমে শ্বেতাঙ্গদের দাপটে সরে যেতে থাকেন বাঙালি ধনীশ্রেণিও। দেব পরিবার সরে যায় শোভাবাজারে। টেগোররা ভদ্রাসন করে জোড়াসাঁকো আর পাথুরিয়াঘাটায়। ঘোষালরা চলে যায় ভূকৈলাস, বা আজকের খিদিরপুরে।
ব্রিটিশ শাসনে গড়ের মাঠকে সাজানো হয়েছিল তাদের বীরদের মূর্তিতে। লর্ড কার্জন, লর্ড মিন্টো, লর্ড নর্থব্রুক, লর্ড ক্যানিংয়ের মূর্তি স্থাপিত হয়েছিল সেখানে। স্বাধীন ভারতে কলকাতায় ময়দানে স্থাপিত হয় মহাত্মা গাঁধী, রাজা রামমোহন রায়, চিত্তরঞ্জন রায়, জওহরলাল নেহরু, সুভাষচন্দ্রবসু, শ্রী অরবিন্দ, মাতঙ্গিনী হাজরা, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার-সহ স্মরণীয় ভারতীয়দের মূর্তি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy