ঘরে রাখলেই ‘নিশ্চিত মৃত্যু’! বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই সব বিখ্যাত ছবিগুলি নাকি ‘ভূতুড়ে’
এমন কিছু ছবির কথা আবিশ্ব ছড়িয়ে রয়েছে, যারা হয় ভূতুড়ে, নয় অভিশপ্ত। তাদের নিয়ে পল্লবিত রয়েছে নানান কাহিনি।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৩ ০৮:০৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৪
ভয়ের সিনেমায় মাঝেমধ্যেই দেখা মেলে এ ধরনের ছবির। এদের নেপথ্যে লুকিয়ে থাকে কোনও না কোনও অভিশাপের কাহিনি। কোনও ছবি আবার নিজেই ‘ভৌতিক’। তবে সিনেমায় কী না হয়! বাস্তবে তেমন কিছু ঘটে না বলেই মনে হয়। কিন্তু এমন কিছু ছবির কথা আবিশ্ব ছড়িয়ে রয়েছে, যারা হয় ভূতুড়ে, নয় অভিশপ্ত। তাদের নিয়ে পল্লবিত রয়েছে নানান কাহিনি।
ছবি: পিক্সাবে
০২১৪
আমেরিকার টেক্সাসের হোটেল গালভেজের এক হলওয়ের শেষ প্রান্তে টাঙানো রয়েছে স্প্যানিশ সেনাধ্যক্ষ বার্নাদো দে গালভেজ (১৭৪৬-১৭৮৬)-এর একটি প্রতিকৃতি। অনেকেই নাকি ফ্ল্যাশ সহযোগে এই প্রতিকৃতির ছবি তুলতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন। ছবি ডেভেলপ হয়ে আসার পর সেখানে একটি নরকরোটি ফুটে উঠেছে বলে অনেকের দাবি। স্থানীয় কিংবদন্তি, কেউ যদি প্রয়াত সেনাধ্যক্ষের কাছে বিনীত অনুরোধ করেন ছবি তোলার জন্য, তা হলে নাকি এ রকম কোনও গন্ডগোল ঘটে না।
ছবি: উইকিপিডিয়া
০৩১৪
ব্রিটিশ চিত্রশিল্পী এবং ভাস্কর স্যর এডউইন হেনরি ল্যান্ডসিয়ার (১৮০৩-১৮৭৩) বিখ্যাত ছিলেন পশুদের প্রতিকৃতি আঁকার কারণে। বিশেষ করে কুকুর, ঘোড়া এবং হরিণের ছবি আঁকার কারণে তাঁর খ্যাতি ছিল। ১৮৬৪ সালে তিনি একটি ছবি আঁকেন, যার নাম ‘ম্যান প্রপোজেস, গড ডিসপোজেস’। এই ছবিটিকে ঘিরে পল্লবিত হয় বেশ কিছু কিংবদন্তি।
(সঙ্গের ছবিটি ১৮৫২ সালে স্যর ফ্রান্সিস গ্রান্টের আঁকা ল্যান্ডসিয়ারের প্রতিকৃতি। ছবি: উইকিপিডিয়া)
০৪১৪
‘ম্যান প্রপোজেস, গড ডিসপোজেস’ ছবিটি ব্রিটিশ অভিযাত্রী ক্যাপ্টেন স্যর জন ফ্র্যাঙ্কলিনের উত্তর মেরু অভিযানের উপরে আধারিত। ১৮৪৫ সালে এই দু’টি জাহাজ নিয়ে উত্তর মেরুর উদ্দেশে যাত্রা করেন ফ্র্যাঙ্কলিন। কিন্তু সেই অভিযান ব্যর্থ হয়। জাহাজগুলি বিপর্যস্ত হয়। অধিকাংশ অভিযাত্রীই মারা যান। (সঙ্গের ছবিটি টমাস ফিলিপসের আঁকা স্যর জন ফ্র্যাঙ্কলিনের প্রতিকৃতি।
ছবি: উইকিপিডিয়া
০৫১৪
এই বিপর্যস্ত অভিযানকেই ক্যানভাসে ধরে রাখেন ল্যান্ডসিয়ার। অবশ্যই এই ছবি তাঁর কল্পনাপ্রসূত। দু’টি মেরুভালুক-সহ অভিযাত্রী জাহাজ দু’টির ধ্বংসাবশেষই ছিল ছবিটির বিষয়বস্তু। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়্যাল হলওয়ের সংগ্রহে এখন রয়েছে ছবিটি। অনেকেরই ধারণা, ছবিটি ‘ভূতুড়ে’। ১৯২০ বা ’৩০-এর দশকে ওই হলে পরীক্ষা চলাকালীন এক ছাত্র নাকি তার নিজের চোখে একটি পেন্সিল গেঁথে দেন। তার অব্যবহিত আগে তিনি নাকি তাঁর উত্তরপত্রে লিখেছিলেন, “মেরুভালুকগুলোই আমাকে এ কাজ করতে বাধ্য করেছে।” ছাত্রটি পরে আত্মহত্যা করেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের নথিতে এমন কোনও মৃত্যুর ঘটনা পাওয়া যায় না। ১৯৬০-এর দশকে এই ছবিটি নিয়ে জল্পনা আরও গড়ায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছবিটি ঢেকে রাখতে বাধ্য হন।
ছবি: উইকিপিডিয়া
০৬১৪
ফিলিপিন্সের চিত্রকর হুয়ান লুনা (১৮৫৭-১৮৯৯) তাঁর স্ত্রী পাজ়ের একটি প্রতিকৃতি আঁকেন ১৮৯০ সালে। শোনা যায়, এই ছবিটি আঁকতে আঁকতেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে পাজ়কে হত্যা করেন লুনা। এর পর নাকি পাজ়ের আত্মা ছবিটিতে ভর করে। ছবিটি যিনিই কিনেছেন, তিনি হয় দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন, নয়তো দেউলিয়া হয়েছেন অথবা তাঁর সন্তান মারা গিয়েছে। ছবিটি নিয়ে অবশ্য অন্য একটি মতও রয়েছে। সেটি এই যে, ছবিটি আদৌ লুনার স্ত্রীর প্রতিকৃতি নয়। এটি জনৈকা ফরাসি অভিজাত মহিলার প্রতিকৃতি। এবং ভৌতিক কাহিনিটি আদতে মনগড়া।
ছবি: উইকিপিডিয়া
০৭১৪
নরওয়ের প্রখ্যাত শিল্পী এডওয়ার্ড মুঙ্খ (১৮৬৩-১৯৪৪)-এর আঁকা ‘ডেথ অ্যান্ড দ্য চাইল্ড’-এর একটি কপি। ছবিটি ‘দ্য ডেড মাদার’ নামেও পরিচিত। মৃতা মায়ের সামনে ভীত-সন্ত্রস্ত শিশুকন্যার প্রতিকৃতিকে ঘিরে এমন রটনা রয়েছে যে, মেয়েটির চোখ নাকি ছবির দর্শককে অনুসরণ করে। ছবিটির কাছেকাছি গেলে নাকি এক রকম অদ্ভুত শব্দও শুনতে পাওয়া যায়। ছবিটি এক সময়ে যাঁরা কিনেছিলেন, তাঁরা জানিয়েছিলেন যে, শিশুটি নাকি মাঝেমাঝেই ছবি থেকে উধাও হয়ে যায়। মুঙ্খের মা ও বোন যক্ষায় মারা যান। সেই বেদনাবোধ থকেই এই ছবি এঁকেছিলেন মুঙ্খ।
ছবি: উইকিপিডিয়া
০৮১৪
আর্মেনিয়ান-আমেরিকান চিত্রকর আর্শিল গোর্কি (১৯০৪-১৯৪৪)-র ১৯৩৮ পর্যন্ত যাবতীয় কাজই অভিশপ্ত বলে রটনা রয়েছে। জানা যায়, এই সব ছবি টাঙাতে গেলেই বার বার দেওয়াল থেকে পড়ে যায়, কোনওটিতে আবার আগুন লেগে যায়। ১৯৬২ সালের ১ মার্চ গোর্কির ১৫টি বিমূর্ত ছবি সহ একটি বিমান উড়ানের দু’মিনিটের মধ্যে ভেঙে পড়ে। বিমানের সাতাশি জন যাত্রী ও ৮ কর্মীর সকলেই এই দুর্ঘটনায় মারা যান। অ্যান্টনি হোলস্ল্যাগ নামের এক চিত্র-গবেষকের মতে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন অটোমান সাম্রাজ্যে বসবাসরত আর্মেনীয় জনগোষ্ঠীর অসংখ্য মানুষকে সিরিয়ার মরুভূমিতে নিয়ে গিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়। এই গণহত্যা নাকি গোর্কিকে তাড়া করে বেড়াত। সেই কারণেই তাঁর আঁকা ছবিগুলি আজও প্রতিশোধস্পৃহা বহন করে চলেছে।
(সঙ্গের ছবিগুলি গোর্কি ও তাঁর আঁকা ‘দি আর্টিস্ট অ্যান্ড হিজ মাদার’, সূত্র: উইকিপিডিয়া)
০৯১৪
‘অভিশপ্ত’ হিসাবে কুখ্যাত ছবিগুলির মধ্যে সব থেকে বেশি রটনা রয়েছে ইটালীয় চিত্রকর জভান্নি ব্রাগোলিন (১৯১১-১৯৮১)-এর আঁকা ‘দ্য ক্রাইং বয়’ সিরিজ়টিকে ঘিরে। ক্রন্দনরত বালকের প্রতিকৃতির অগণিত প্রিন্ট সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে রয়েছে। ১৯৮০-র দশকে এই প্রিন্টগুলি অনেকেই কিনেছিলেন। ক্রেতাদের বেশির ভাগের বাড়িতেই নাকি তার পর আগুন লাগে। বাড়িগুলি অগ্নিদগ্ধ হলেও ছবিগুলি নাকি অবিকৃত থেকে যায়। এই ছবিকে নিয়ে গুজব এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, ছবির প্রচুর প্রিন্ট একত্র করে সেগুলি পুড়িয়ে ফেলা হতে শুরু করে। ইংল্যান্ডের বিল্ডিং রিসার্চ এস্ট্যাবলিশমেন্ট নামে এক সংস্থা পরে জানায় যে, এই ছবি আঁকার সময় এমন এক রকমের বার্নিশ ব্যবহৃত হয়েছিল, যা সহজে আগুনকে আকৃষ্ট করতে পারে। সেখান থেকেই এই অগ্নিকাণ্ডগুলি ঘটেছিল বলে ধারণা।
১০১৪
আমেরিকান চিত্রকর বিল স্টোনহ্যাম ১৯৭২ সালে আঁকেন ‘দ্য হ্যান্ডস রেজ়িস্ট হিম’ ছবিটি। এক বালক এবং তার পাশে দাঁড়ানো এক মেয়েপুতুল। তারা দাঁড়িয়ে রয়েছে কাচের একটা দরজার সামনে। কাচের ও পাশে অসংখ্য হাত। এমনিতেই ছবিটা গা-ছমছমে। স্টোনহ্যাম জানিয়েছিলেন, ছবির বালকটি তাঁরই ৫ বছর বয়সের প্রতিকৃতি। আর দরজাটি জাগ্রত বাস্তবতা এবং কল্পিত ও অসম্ভবের জগতের মাঝখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে। পুতুলটি যেন বালকটিকে এই দুই বাস্তবতার মাঝখানে দাঁড়িয়ে সঙ্গ দিচ্ছে, তাকে হয়তো দিশা বাতলে দিচ্ছে। এই ছবিটিকে ঘিরে ভৌতিকতার কাহিনি পল্লবিত হয়ে শুরু করে। বলা হতে থাকে, ছবির বালক এবং পুতুল নাকি নড়াচড়া করে, কখনও কখনও ক্যানভাস ছেড়ে তারা বেরিয়েও যায়।
১১১৪
১৯৯০-এর দশকে আমেরিকান সিরিয়াল কিলার জন ওয়েন গেসি তেত্রিশ জন তরুণকে ধর্ষণ, নিপীড়ন এবং হত্যা করেন। তিনি নিজেকে ‘পোগো দ্য ক্লাউন’ বলে পরিচয় দিতেন। একটি ক্লাউন কাবে তিনি ক্লাউন হিসেবে মনোরঞ্জনের জীবিকাও কিছু দিন অর্জন করেছিলেন। ক্লাউনের চেহারায় নিজেকে আঁকেন গেসি। ছবিতে সইও করেন। পরে তাঁর মৃত্যুদণ্ড হয়। ২০০১ সালে ছবিটি কেনেন সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব নিক্কি স্টোন। কিন্তু ছবিটি কেনার অব্যবহিত পরেই তাঁর প্রিয় কুকুরটি মারা যায় এবং তাঁর মায়ের ক্যানসার ধরা পড়ে। তিনি এক বন্ধুকে ছবিটি রাখতে দেন। সেই বন্ধুর এক ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। এর পরে আর এক বন্ধু ছবিটি নিয়ে যান। তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। ছবিটিকে আর কখনও টাঙানো হয়নি। এর অভিশপ্ত চরিত্রের গল্প ক্রমেই পল্লবিত হতে থাকে।
ছবি: ফেসবুক ও উইকিপিডিয়া থেকে
১২১৪
ইউক্রেনের চিত্রকর স্বেতলানা টেলেটস ১৯৯৬ সালে আঁকেন ‘দ্য রেন উওম্যান’ নামের এই ছবিটি। স্বেতলানা জানিয়েছিলেন, ছবিটি আঁকার আগে যখনই তিনি ফাঁকা ক্যানভাসের সামনে বসতেন, তখনই মনে হত কেউ তাঁকে দেখছে, তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এক রকম আবিষ্ট অবস্থাতেই তিনি এই ছবিটি আঁকেন। বিক্রি হওয়ার পর বেশ কয়েক বার হাতবদল ঘটে ছবিটির। যাঁরাই এটি কিনেছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গেই কিছু না কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে থাকে। সের্গেই স্কাশকভ নামের এক সঙ্গীতশিল্পী ছবিটি কেনার পর রীতিমতো আতঙ্কে ভুগতে শুরু করেন। এক ধর্মযাজক জানান, ছবিটির মধ্যে কোনও শয়তানি অস্তিত্ব ঢুকে রয়েছে। আজও ছবিটি বহু মানুষের আলোচনার বিষয়।
ছবি: ফেসবুক থেকে
১৩১৪
২০১০ সালে এক অজ্ঞাতপরিচয় শিল্পীর আঁকা ‘দি অ্যাঙ্গুইশড ম্যান’ নামের একটি ছবি সমাজমাধ্যমে ঘোরাফেরা করতে শুরু করে। ছবিটির মালিক সন রবিনসন নামে এক ব্রিটিশ নাগরিক। তাঁর দাবি, ছবিটি আঁকার সময় শিল্পী নাকি নিজের রক্ত ব্যবহার করেছিলেন এবং আঁকা শেষ হলে তিনি আত্মহত্যা করেন। ইউটিউবে ছবিটি নিয়ে একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি দাবি করেন যে, ছবিটি তাঁর বাড়িতে আসার পর থেকে তিনি মাঝেমাঝেই কান্না ও গোঙানির শব্দ শুনতে পান।
ছবি: ফেসবুক থেকে
১৪১৪
উপরে বর্ণিত কাহিনিগুলির সত্যতা কতখানি, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকেই। বেশ কিছু মানুষের মতে, এগুলি নেহাতই জনশ্রুতি বা গণমনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া গল্প। সম্ভবত এই সব ছবির কোনওটির পিছনে রয়েছে রহস্যময় ইতিহাস, কোনওটি নিজেই গা-ছমছমে অনুভূতির জন্ম দেয়। কোনওটি আবার সমাজমাধ্যমে ঘোরাফেরা করতে করতে তার ‘ভৌতিক’ বা ‘অভিশপ্ত’ চরিত্রটি অর্জন করে ফেলেছে। তবে নেহাত গালগল্প বলে নাকচ করে দেওয়ার আগে কিন্তু এদের কাহিনি শুনতে মন্দ লাগে না।