সিআইএ সূত্রে খবর, রহমান যে তথ্য পাচার করেছেন, তা কেবলমাত্র ‘পঞ্চনেত্র’ (ফাইভ আই) ভুক্ত রাষ্ট্রগুলির গোয়েন্দাদের কাছে থাকার কথা। আমেরিকা ছাড়া সেই তালিকায় রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউ জ়িল্যান্ড এবং ব্রিটেন। এরা প্রত্যেকেই যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু দেশ। ঘটনার কথা জানাজানি হওয়ায় তাঁদের কাছেও মুখ পুড়েছে ওয়াশিংটনের।
গোয়েন্দাদের দাবি, মূলত ন্যাশনাল জিওস্প্যাশিয়াল ইনটেলিজেন্স এজেন্সি (এনজিএ) দ্বারা সংগৃহীত তথ্য পাচার এবং ফাঁস করেছেন রহমান। কৃত্রিম ফৌজি উপগ্রহের ছবি বিশ্লেষণের কাজ করে থাকে আমেরিকার এই সংস্থা। ইরানে প্রত্যাঘাতের জন্য যুদ্ধবিমান নিয়ে লাগাতার মহড়া চালায় ইজ়রায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ)। সেই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ সম্বলিত রিপোর্ট সিআইএকে পাঠিয়েছিল ওই সংস্থা।
নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ফাঁস হওয়া নথিগুলি গত বছরের (পড়ুন ২০২৪) ১৫ ও ১৬ অক্টোবরের। ইরানের প্রতি সহানুভূতিশীল টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলিতে সেগুলি ছড়িয়ে দেওয়া হয়। নথিতে আমেরিকার গুপ্তচর উপগ্রহের পাঠানো ছবি ও তার ব্যাখ্যা রয়েছে। শিয়া মুলুকটির উপর হামলা চালাতে কী ভাবে আইডিএফ প্রস্তুতি নিচ্ছে, কোন কোন হাতিয়ারের ব্যবহার হতে পারে, সেই সংক্রান্ত তথ্যও ছিল সেখানে।
পাশাপাশি, অনুসন্ধান ও উদ্ধারকাজের অনুশীলনেও জোর দিয়েছিল ইহুদি ফৌজ। শিয়া মুলুকে ঢুকে আক্রমণ শানালে প্রত্যাঘাত আসার আশঙ্কা রয়েছে। সেই কথা মাথায় রেখে আগাম প্রস্তুতি নেয় ইজ়রায়েল। আইডিএফের আশঙ্কা ছিল, ফের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাবে শিয়া সেনা। প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসাবে ‘বায়ু প্রতিরোধ ব্যবস্থা’ (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম) তৈরি রাখে ইহুদি সেনা।
দ্বিতীয় নথিতে উল্লেখ করা হয়েছিল, কৌশলগত এলাকায় আইডিএফ হাতিয়ার ও গোলা-বারুদ সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে। ফাঁস হওয়া রিপোর্টে ইহুদি ফৌজের অনুশীলনের উল্লেখ থাকলেও কোনও উপগ্রহচিত্র ছিল না। শুধু বলা হয়েছিল, উপগ্রহচিত্র আমেরিকার গোয়েন্দারা ভাল করে পর্যালোচনা করেছেন। তবে ইরানের উপর কত বড় আকারের আক্রমণ ইজ়রায়েল শানাবে, সেই ব্যাপারে তাঁরা নিশ্চিত নন।
সিআইএ গুপ্তচরের থেকে ইজ়রায়েলি হামলার পরিকল্পনার বিষয়টি কানে যেতেই সময় নষ্ট করেনি তেহরান। সঙ্গে সঙ্গে গোটা দুনিয়ার সামনে বিষয়টি নিয়ে আসে ইরানি প্রশাসন। পাশাপাশি, এই ইস্যুতে সরাসরি হুমকি দেয় তারা। ইজ়রায়েল আক্রমণ শানালে পরিণাম ভুগতে হবে বলে শাসিয়েছিল পশ্চিম এশিয়ার ওই শিয়া মুলুক। ফলে বাধ্য হয়ে ‘অপারেশন তেহরান’ থেকে সরে আসে ইহুদি সেনা।
ইজ়রায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, মোট তিনটি পর্যায়ে ইরানের ‘ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস’কে (আইআরজিসি) নিশানা করে ইহুদি বায়ুসেনা। প্রথমে শিয়া দেশটির ‘আকাশ সুরক্ষা ব্যবস্থা’ (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম) গুঁড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ধ্বংসের লক্ষ্য ছিল আইডিএফ-এর।
আমেরিকার সংবাদমাধ্যমগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রথমে ইরানের রাজধানী তেহরান এবং তার অদূরের কারাজ় শহরকে নিশানা করেছিল ইজ়রায়েলের বায়ুসেনা। যুদ্ধবিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমাবর্ষণ করায় কেঁপে ওঠে ওই দুই এলাকা। হামলায় ‘এফ-১৬আই সুফা’ এয়ার ডিফেন্স জেট ও হানাদার ‘হেরন’ ড্রোনের নতুন সংস্করণও ব্যবহার করা হয়।
ইজ়রায়েলি সংবাদ সংস্থা ‘নিউজ় টুয়েলভ’ লিখেছিল, ওই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দ্বিতীয় দফার হামলা শুরু করে আইডিএফ। এ বার ইহুদি বায়ুসেনার নিশানায় ছিল শিরাজ় শহর। সেখানে আইআরজিসির সামরিক ঘাঁটিগুলিকে উড়িয়ে দিতে যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া হয় ক্ষেপণাস্ত্র। এ ছাড়া ইলম এবং কুর্জ়েস্তান প্রদেশে অন্তত ২০টি লক্ষ্যে আঘাত হানে ইহুদি সেনা। রাডার নজরদারিকে ফাঁকি দিতে উচ্চ প্রযুক্তির জ্যামার ব্যবহার করেছিল আইডিএফ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy