Simala Prasad an IPS officer who acted in Bollywood film dgtl
Simala Prasad
একাধারে আইপিএস, বলিউডের গৎভাঙা অভিনেত্রী! অবসরে কবিতাও লেখেন তিনি
বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বর্ণপদক পাওয়া এই মেধাবী ছাত্রী স্কুল-কলেজে শীর্ষ স্থানাধিকারী ছিলেন বরাবর। আইপিএস হওয়ার পরীক্ষা ইউপিএসসি প্রথম বারের চেষ্টাতেই উতরে গিয়েছিলেন।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৩ ১৭:২৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
একাধারে তিনি কড়া শাসক। দশ হাতে জেলার ভাল-মন্দ সামলান। অপরাধীরা সমঝে চলেন তাঁকে। অন্য দিকে তিনিই বলিউড অভিনেত্রীও। ক্যামেরার সামনে স্বচ্ছন্দ। তাঁর অভিনীত ছবির প্রশংসা হয় কান চলচ্চিত্রোৎসবেও। আবার ইনিই প্রথম চেষ্টায় উতরে যান ইউপিএসসি।
০২২২
নাম সিমালা প্রসাদ। মধ্যপ্রদেশের এই কন্যা এক খাকি উর্দিধারী। আইপিএস অফিসার। বর্তমানে মধ্যপ্রদেশের বেতুল জেলার এসপি তিনি। তবে শুধু সেটুকু বললে তাঁর গল্প বলা হয় না। ঝকঝকে চেহারার এই আইপিএস কর্তার পড়াশোনা থেকে কেরিয়ার, এমনকি পারিবারিক পরিচিতিও বেশ তাকলাগানো।
০৩২২
অভিনয়ের পেশা ছেড়ে আইপিএস হননি সিমালা। তাঁর ক্ষেত্রে গল্পটা একটু অন্য রকম। আইপিএস কর্তা হিসাবে ছ’বছর কাটিয়ে ফেলার পর তাঁর কাছে সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব আসে।
০৪২২
২০১০ সালের মধ্যপ্রদেশ ব্যাচের আইপিএস অফিসার সিমালা। তার পরের ৬ বছরে একাধিক জেলার দায়িত্ব পেয়েছেন। সফল ভাবে শাসকের দায়িত্ব পালনের জন্য প্রশংসিতও হয়েছেন। এই সময়ে দিল্লির একটি অনুষ্ঠানে তাঁকে দেখেন বলিউডের অন্য ধারার ছবির পরিচালক জ়াইঘাম ইমাম।
০৫২২
সিমালার মার্জিত সৌন্দর্য এবং আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চান ইমাম। তাঁকে নিজের ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন।
০৬২২
তত দিনে ইমামের প্রথম কাজের প্রশংসা করেছেন বলিউডের অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন। একদা সাংবাদিক জ়াইঘাম নিজের লেখা উপন্যাস থেকে নিজেই চিত্রনাট্য লিখে, পরিচালনা করে নিজের প্রযোজনায় বানিয়েছিলেন সেই ছবি। সেই ছবির নাম ‘দোজ়খ’। ছবির উদ্বোধন করেছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং জয়া বচ্চন। সে ছবি কলকাতা চলচ্চিত্রোৎসব-সহ দেশের বিভিন্ন চলচ্চিত্রোৎসবে তো বটেই বিদেশেও সামালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছিল।
০৭২২
ইমাম তাঁর দ্বিতীয় ছবির কাজও শুরু করে দিয়েছিলেন। সেই ছবিরই মূল চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সিমালাকে প্রস্তাব দেন পরিচালক। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়ে রাজিও হয়ে যান সিমালা।
০৮২২
আইপিএস অফিসারের হাজার রকমে কাজ, দায়িত্বও। তার মধ্যে অভিনয়! সিমালা কাজ থেকে দিন কয়েকের ছুটি নিয়ে শুটিং শেষ করেন।
০৯২২
ছবির নাম ‘আলিফ’। ছবির মূল চরিত্র মাদ্রাসায় পড়া একটি শিশু। সিমালা অভিনয় করেন তার দিদি শাম্মির চরিত্রে। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ছবিটি মুক্তি পায়। কুইন্সল্যান্ড চলচ্চিত্রোৎসব-সহ বহু বিদেশি চলচ্চিত্রোৎসবে ছবিটি প্রশংসিত হয়। বিদেশে পুরস্কারও পায় ছবিটি। সমালোচকরা বলেছিলেন, বলিউডের সমুদ্রে ‘আলিফ’ একটা মুক্তোর মতো।
১০২২
এর পর জ়াইঘাম তাঁর পরের ছবি ‘নক্কাশ’-এও একটি চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন সিমালাকে। ছবিটি প্রথম ছবি দু’টির শেষাংশ। বাকি দু’টি ছবির মতোই বারাণসীর পটভূমিতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে তৈরি। এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন কুমুদ মিশ্র, শারিব হাসমি, রাজেশ শর্মার মতো বলিউডের খ্যাতনামী চরিত্রাভিনেতারা। ছবিটি কান চলচ্চিত্রোৎসবে পুরস্কার পায়। সিমালা এই ছবিতেও ছিলেন মূল চরিত্রে। এক জন সাংবাদিকের ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
১১২২
কোনও ছবিতেই নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেননি। মূল ধারার বাণিজ্যিক বলিউড ছবিও নয়। তার পরও কেন এই ছবিতে কাজ করেছিলেন সিমালা। এ প্রশ্নের উত্তর মেলানো যেতে পারে সিমালার স্কুল-কলেজ জীবন এবং পরবর্তী সময়ের শখের সঙ্গে। ছোট থেকেই নাটকে অভিনয় করেছেন। নাচতেও ভালবাসতেন সিমালা।
১২২২
ওড়িশি নাচের তালিম নিয়েছেন। সুযোগ পেলেই মঞ্চে উঠে পড়তেন ছাত্রী সিমালা। পরে পেশাজীবন শুরু হওয়ার পরও থিয়েটারে অভিনয় করেছেন। মঞ্চে উঠে নৃত্য পরিবেশনাও করেছেন। সেই সিমালা অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়ে কী করে ফিরিয়ে দেবেন!
১৩২২
তবে সিমালা যেমন তাঁর শখপূরণে কোনও কমতি রাখেননি, তেমনই পড়াশোনাতেও তাঁর আগ্রহের খামতি ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বর্ণপদক পাওয়া এই মেধাবী ছাত্রী স্কুল-কলেজে শীর্ষ স্থানাধিকারী ছিলেন বরাবর।
১৪২২
আইপিএস হওয়ার পরীক্ষা ইউপিএসসি প্রথম বারের চেষ্টাতেই উতরে গিয়েছিলেন। যে পরীক্ষাকে দেশের অন্যতম কঠিন প্রতিযোগিতামূলক তথা পেশাদারি পরীক্ষা বলে গণ্য করা হয় তার জন্য কোনও প্রথাগত প্রশিক্ষণও নেননি সিমালা। নিজেই পড়াশোনা করে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।
১৫২২
পরীক্ষায় পাশ করার পর আইপিএস হওয়া। তবে সিমালা তার আগে মধ্যপ্রদেশের সরকারি চাকরির পরীক্ষা মধ্যপ্রদেশ পিএসসিও পাশ করেছেন। মধ্যপ্রদেশের ডিএসপি হয়েছেন। রেকর্ড বলছে, সেই পরীক্ষাতেও প্রথম বারের চেষ্টাতেই উত্তীর্ণ হয়েছিলেন সিমালা।
১৬২২
বর্তমানে বেতুলের প্রশাসক হলেও রতলাম, ডিন্ডোরি-সহ একাধিক জেলার দায়িত্ব সামলেছেল সিমালা। এর মধ্যে ডিন্ডোরি মধ্যপ্রদেশের অন্যতম মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকা। মধ্যপ্রদশের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট বলছে ডিন্ডোরিতে সিমালা দায়িত্বে থাকাকালীন মাওবাদী কার্যকলাপে রাশ টেনেছিলেন। তার জন্য প্রশংসিতও হয়েছিলেন উচ্চমহলে।
১৭২২
১৯৮০ সালের ৮ অক্টোবর ভোপালে জন্ম। সিমালার বেড়ে ওঠার অনেকটা জুড়েই রয়েছে ভোপাল।
১৮২২
বাবা ভগীরথ প্রসাদও আইএএস অফিসার। দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। আবার ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মধ্যপ্রদেশের ভিণ্ড থেকে নির্বাচিত সাংসদও ছিলেন তিনি। সিমালা জানিয়েছেন, ছোট থেকেই বাবাকে দেখে আইপিএস বা আইএএস হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি।
১৯২২
সিমালার মা মেহরুন্নিসা পারভেজ একজন লেখিকা। সিমালা মনে করেন তাঁর মধ্যে যে সৃষ্টিশীলতা রয়েছে তা মায়ের থেকেই পাওয়া। নাচ-অভিনয়-পড়াশোনার পাশাপাশি মাঝেমধ্যেই কবিতাও লেখেন তিনি।
২০২২
লকডাউন চলাকালীন সিমালার লেখা কবিতা ‘ম্যায় খাকি হুঁ..’ সাড়া ফেলেছিল দেশে।
২১২২
সিমালার কাজ এবং তাঁর অনেক দায়িত্ব একসঙ্গে সামলানোর ক্ষমতার প্রশংসা করেছেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও।
২২২২
তবে সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপাশি এ ভাবে শাসনের কাজ সমান্তরাল ভাবে চালিয়ে যাওয়া সিমালার ভক্ত ছড়িয়ে রয়েছে দেশ জুড়েই। সমাজমাধ্যমে সক্রিয় তিনি। ইনস্টাগ্রামে সিমালার অনুরাগী সংখ্যা ১১ হাজারেরও বেশি।