Poveglia, the most haunted island in the world dgtl
Poveglia Island
কখনও শ্মশান, কখনও মানসিক হাসপাতাল, বিশ্বের ‘সবচেয়ে ভূতুড়ে’ এই দ্বীপে পাঠানো হত মরার জন্য
১৩০০ খ্রিস্টাব্দে প্লেগ মহামারির আকারে ছড়িয়ে পড়লে প্লেগে আক্রান্ত রোগীদের পভেলিয়াতে পাঠিয়ে দেওয়া হত।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৩ ১০:৫৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
সমুদ্রে ঘেরা দ্বীপে কাছের মানুষের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে কে না চান! কিন্তু ইটালির পভেলিয়া দ্বীপের কাহিনি সুখানুভূতি তো দেয়ই না, বরং ভয় ধরায়। কথিত আছে, পভেলিয়ায় কাউকে পাঠানো হলে ধরে নেওয়া হত যে, তাঁর মৃত্যু ঘনিয়ে আসছে।
০২২০
ইটালির উত্তরাংশে ভেনিস এবং লিডোর মধ্যবর্তী এলাকায় রয়েছে পভেলিয়া দ্বীপ। ৪২১ খ্রিস্টাব্দের আগে এই দ্বীপের কোনও খোঁজ পাওয়া যায় না।
০৩২০
কানাঘুষো শোনা যায়, এই দ্বীপে জনবসতির লেশমাত্র ছিল না। কোনও এক আক্রমণকারীর হাত থেকে বাঁচতে পভেলিয়া দ্বীপে এসে আশ্রয় নেন কয়েক জন।
০৪২০
১৪ শতক পর্যন্ত পভেলিয়ার বাসিন্দা খুব একটা বেশি ছিল না। নির্জনতার কারণে এই দ্বীপ থেকে একে একে সকলে চলে যেতে শুরু করেন। এই দ্বীপকে পরবর্তী কালে নিভৃতবাসের জন্য বেছে নেওয়া হয়।
০৫২০
১৩০০ খ্রিস্টাব্দে প্লেগ মহামারির আকারে ছড়িয়ে পড়লে প্লেগে আক্রান্ত রোগীদের পভেলিয়াতে পাঠিয়ে দেওয়া হত। কথিত আছে, প্রায় এক লক্ষেরও বেশি প্লেগ আক্রান্ত রোগী এই দ্বীপে মারা গিয়েছেন।
০৬২০
এমনকি যাঁদের সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় থাকত না, তাঁদেরও পভেলিয়া দ্বীপে পাঠিয়ে দেওয়া হত। তাঁরা ধরেই নিতেন যে, তাঁদের মৃত্যু আসন্ন।
০৭২০
রোগীরা মারা যাওয়ার পর পভেলিয়াতেই তাঁদের দেহ জ্বালিয়ে দেওয়া হত। গোটা দ্বীপ যেন আস্ত এক শ্মশানে পরিণত হয়েছিল সেই সময়। সাধারণ মানুষ এই দ্বীপের সামনে দিয়ে যাতায়াত করতেও ভয় পেতেন।
০৮২০
১৭৯৮ সাল থেকে ১৮১৪ সাল পর্যন্ত আবার স্থায়ী নিভৃতবাসে পরিণত করা হয় পভেলিয়াকে। নেপোলিয়ন বোনাপার্টের শাসনকালে এই এলাকায় অসুস্থ রোগীদের সেবা-শুশ্রূষা করার জন্য পাঠানো হত।
০৯২০
১৯২২ সালে এই দ্বীপে মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্র গড়ে ওঠে। কানাঘুষো শোনা যায়, মানসিক ভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের নিজেদের পরিবার থেকে আলাদা রাখার জন্য পভেলিয়াতে পাঠিয়ে দেওয়া হত।
১০২০
আবার অনেক রোগীকে নিয়ে গবেষণাও করা হত পভেলিয়ার মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্রে। মানসিক চিকিৎসালয়টি ‘ভূতুড়ে’ বলে দাবি করেছেন অনেকেই।
১১২০
পভেলিয়াতে এক রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে মৃত্যু হয় এক চিকিৎসকের। দ্বীপের একটি টাওয়ার থেকে ঝাঁপ দিয়ে মারা যান তিনি। অনেকের দাবি, ‘প্রেতাত্মা’র ভয়ে মানসিক স্থিতি হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। তাই টাওয়ার থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।
১২২০
চিকিৎসক মারা যাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই মানসিক চিকিৎসালয়টি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৯৬৮ সালে ওই চিকিৎসালয়ের দরজা চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।
১৩২০
পরে পভেলিয়ার জমি চাষবাসের জন্য ব্যবহার করা হলেও এখানকার থমথমে পরিবেশে বেশি দিন কাজ করতে পারেননি কৃষকেরা। চাষের জমিগুলি ছেড়ে তাঁরা আবার বাড়ি ফিরে যান।
১৪২০
বহু বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল পভেলিয়া দ্বীপ। গির্জা, মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্র, হাসপাতাল, টাওয়ার এবং একটি খালের ধ্বংসাবশেষ ইতিহাসের সাক্ষী হিসাবে রয়ে গিয়েছে পভেলিয়াতে।
১৫২০
২০১৪ সালে লুইগি ব্রুগনারো নামের ইটালির এক ব্যবসায়ীকে সরকারের তরফে দ্বীপটি ৯৯ বছরের জন্য লিজ় দেওয়া হয়েছিল। এই দ্বীপ জুড়ে একটি বিলাসবহুল হোটেল তৈরি করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
১৬২০
নিলামে ৫ কোটি টাকা দিয়ে এই দ্বীপটি কিনেছিলেন লুইগি। কিন্তু হোটেল তৈরির পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যায়। একাংশের দাবি, নিলামে চড়া দাম না ওঠার কারণে এর মালিকানাই নাকি হস্তান্তরিত হয়নি।
১৭২০
আবার অনেকের দাবি, এই পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যা যা শর্ত মেনে চলা উচিত ছিল তা মেনে চলেননি লুইগি। তাই আবার পরিত্যক্ত অবস্থায় ফিরে যায় পভেলিয়া।
১৮২০
২০১৫ সালে একটি বেসরকারি সংস্থা পভেলিয়ায় একটি উদ্যান, রেস্তরাঁ, হোটেল থেকে শুরু করে স্টাডি সেন্টার তৈরি করার পরিকল্পনা করে। কিন্তু কোনও এক অজানা কারণে সেই পরিকল্পনাও ব্যর্থ হয়ে যায়।
১৯২০
পভেলিয়া দ্বীপে কেউ প্রবেশ করলে তাঁরা অলৌকিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হবেন তাই সরকারের তরফে এত বিধিনিষেধ রয়েছে। এমনকি, স্থানীয় মৎস্যজীবীরা মাছ ধরতে যাওয়ার সময়ও এই এলাকা এড়িয়ে যান।
২০২০
অধিকাংশের মতে, এই দ্বীপ বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জায়গা। সাধারণ মানুষ এই এলাকায় সহজে যেতে পারেন না। পর্যটকদের যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে এক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে বিশেষ অনুমতি নিয়ে পভেলিয়া দ্বীপের আশপাশে ঘুরে আসা যায়। কিন্তু সকলকে এই অনুমতি দেওয়া হয় না।