SC lawyer Apoorva Shukla confessed that she killed husband Rohit Shekhar Tiwari dgtl
Crime
অতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষাই কি দায়ী? স্বামী হত্যায় ধৃত অপূর্বার কেরিয়ার কিন্তু হাই প্রোফাইল
আইনি মারপ্যাঁচ জানা সত্ত্বেও পুলিশের চোখে ধুলো দিতে পারলেন না অপূর্বা শুক্ল।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৯ ১৬:৫৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
পেশায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। ওঠাবসা ছিল কেন্দ্রীয় রাজনীতিতেও। তাই আইনি মারপ্যাঁচ ভালই জানেন। তা সত্ত্বেও পুলিশের চোখে ধুলো দিতে পারলেন না অপূর্বা শুক্ল। স্বামী রোহিত শেখর তিওয়ারির খুনে তাঁকে গ্রেফতার করল সিট।
০২১৮
প্রয়াত কংগ্রেস নেতা নারায়ণ দত্ত তিওয়ারির ছেলে রোহিত শেখর। পুত্র হিসাবে স্বীকৃতি পেতে একসময় প্রভাবশালী বাবাকেও কোর্টে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। টানা ছ’বছর লড়াইয়ের পর পিতৃ পরিচয় আদায় করে ছেড়েছিলেন।
০৩১৮
দেশের হাই প্রোফাইল রাজনৈতিক পরিবারের এই ঘটনা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয় সেই সময়। রোহিতের মৃত্যুও এ বার হাই প্রোফাইল খুনের তালিকায় ঢুকে পড়ল। স্বামীকে খুন করেছেন বলে বুধবার স্বীকার করেছেন তাঁর স্ত্রী অপূর্বা শুক্ল।
০৪১৮
অপূর্বা ইনদওরের মেয়ে। সেখানেই পড়াশোনা। তাঁর বাবা পিকে শুক্ল জবলপুর হাইকোর্টের ইনদওর বেঞ্চের অভিজ্ঞ আইনজীবী। ২০১৫ সালে অপূর্বাও সেখানে প্র্যাকটিস শুরু করেন। ২০১৬-তে চলে আসেন সুপ্রিম কোর্টে। একটি ম্যাট্রিমোনিয়াল সাইটে রোহিতের সঙ্গে আলাপ তাঁর। পরে কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনের যুব শাখার সভাপতিও হন অপূর্বা।
০৫১৮
শুরুতে উত্তরাখণ্ডে জাঁকজমক করে বিয়ের পরিকল্পনা ছিল রোহিত ও অপূর্বার। কিন্তু মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ নিয়ে দিল্লির ম্যাক্স সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে এনডি তিওয়ারিকে ভর্তি করানো হলে, সাত তাড়াতাড়ি দিল্লিতেই বিয়ে সেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।
০৬১৮
গত বছর ১১ মে সাতপাকে বাঁধা পড়েন রোহিত ও অপূর্বা। পরে হাসপাতালে গিয়ে এনডি তিওয়ারির আশীর্বাদ নেন নবদম্পতি। কিন্তু বিয়ের অল্পদিনের মধ্যেই দু’জনের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয় বলে জানা গিয়েছে। প্রায়শই ঝগড়া হত তাঁদের মধ্যে। যার জেরে একই বাড়িতে আলাদা আলাদা ঘরে থাকতে শুরু করেন তাঁরা।
০৭১৮
রোহিতের মা উজ্জ্বলা শর্মা জানান, বিয়ের আগে এক প্রেমিক ছিল অপূর্বার। কিন্তু উচ্চাকাঙ্ক্ষী অপূর্বা তাঁর ছেলেকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁদের পারিবারিক সম্পত্তির উপরও অপূর্বার পরিবারের নজর ছিল বলে অভিযোগ তোলেন তিনি।
০৮১৮
উজ্জ্বলা শর্মা আরও জানান, বড় ছেলে সিদ্ধার্থ ও রোহিতের নামে দক্ষিণ দিল্লির অভিজাত ডিফেন্স কলোনির তিন তলা বাংলোতেও নজর ছিল অপূর্বার। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এনডি তিওয়ারির সঙ্গে থাকা অফিসার অন স্পেশ্যাল ডিউটি রাজীবের ছেলেকে সম্পত্তির ভাগ দিতে চেয়েছিলেন সিদ্ধার্থ, যাতে বেঁকে বসেন অপূর্বা।
০৯১৮
সেই নিয়ে ইদানীং রোহিত ও অপূর্বার মধ্যে অশান্তি চরমে উঠেছিল বলেও জানা গিয়েছে। সামনের মাসে তাঁদের বিবাহবার্ষিকী ছিল। তার আগে ১৬ এপ্রিল বাংলোর মধ্যে নিজের ঘরে খুন হন রোহিত শেখর।
১০১৮
শুরুতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে জানা গিয়েছিল। কিন্তু এইমসে ময়নাতদন্তের পর জানা যায়, শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় তাঁকে। তদন্তে নেমে বাংলোর সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করে পুলিশ। তাতে ১৫ এপ্রিল রাতে মত্ত অবস্থায় রোহিতকে বাড়ি ফিরতে দেখা যায়। নেশার ঘোরে সিঁড়ির দেওয়াল ধরে দোতলায় ওঠেন তিনি।
১১১৮
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ডিনার সারেন রোহিত। সেই সঙ্গে মদ্যপানও করেন। তার দু’ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যু হয় তাঁর। নিয়মিত ঘুমের ওষুধও খেতেন তিনি। তাই হত্যাকারীকে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না তাঁর।
১২১৮
ডিফেন্স কলোনির ওই বাংলোয় দোতলার পাশাপাশি দু’টি ঘরে থাকতেন রোহিত ও অপূর্বা। আর একটি ঘরে থাকতেন তাঁদের ড্রাইভার অখিলেশ। তিনতলায় সার্ভেন্টস কোয়ার্টারে ঘরে স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে থাকতেন বাড়ির পরিচারক গোলু। রোহিতের দাদা সিদ্ধার্থ থাকতেন একতলার একটি ঘরে। বাংলোর পিছন দিকের আর একটি ঘরে থাকতেন একজন পরিচারিকা।
১৩১৮
ঘটনার রাতে রোহিত ছাড়াও দোতলায় ছিলেন অপূর্বা ও অখিলেশ। সিসিটিভি ফুটেজে গোলুকেও দোতলায় যেতে দেখা যায়। চালক ও পরিচারকের সাহায্যেই মুখে বালিশ চাপা দিয়ে অপূর্বা রোহিতকে খুন করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। খুনের পর ৯০ মিনিটের মধ্যে সমস্ত প্রমাণও তিনি সরিয়ে ফেলেন বলে অভিযোগ। মুছে ফেলেন ফোনের কল রেকর্ডস এবং মেসেজ।
১৪১৮
১৬ এপ্রিল বিকাল ৪টে বেজে ৪০ মিনিট নাগাদ ডিফেন্স কলোনির ওই বাংলো থেকে সাকেতের ম্যাক্স হাসপাতালে ফোন যায়। তড়িঘড়ি অ্যাম্বুল্যান্সে রোহিতকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
১৫১৮
জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন বাংলোর পরিচারক গোলু জানান, ঘুম ভেঙেছে কিনা দেখতে রোহিতের ঘরে ঢোকেন তিনি। সেখানে নাক দিয়ে রক্ত বেরনো অবস্থায় তাঁকে পড়ে থাকতে দেখেন। সঙ্গে সঙ্গে অপূর্বাকে খবর দেন। তিনি হাসপাতালে খবর দেন।
১৬১৮
কিন্তু ময়নাতদন্তে জানা যায়, রাত ১টা-২টোর মধ্যে মৃত্যু হয় রোহিতের। রোহিতকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেরি হওয়া নিয়ে তাই শুরু থেকেই প্রশ্ন উঠছিল। রোহিতের মা অভিযোগ তোলেন, ঘুমের ওষুধ খেলেও বিকাল ৪টে পর্যন্ত ঘুমানোর কথা নয়। ঘর থেকে বেরোচ্ছে না দেখেও কেউ খোঁজ নিতে গেল না কেন?
১৭১৮
১৬ এপ্রিল ম্যাক্স হাসপাতালে চেকআপ করাতে গিয়েছিলেন রোহিতের মা উজ্জ্বলা। সেখানেই ফোনে রোহিত অসুস্থ বলে খবর পান তিনি। কিন্তু তিনি বাংলোয় এসে পৌঁছনোর আগেই অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে ছেলেকে হাসপাতাল পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে দাবি তাঁর। শোকসভা মিটে গেলে এ নিয়ে আরও সবিস্তার তথ্য দেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
১৮১৮
অপূর্বার পরিবার যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাঁর বাবা পিকে শুক্ল সংবাদমাধ্যমকে জানান, যে মেয়ে কখনও কাউকে বকাঝকাও করেনি, সে খুন করতে পারে বলে বিশ্বাস করেন না তিনি।