Know Debraj Chakraborty the TMC Councillor who is also the Husband of Singer Aditi munshi dgtl
Debraj Chakraborty and Aditi Munshi
দেবরাজ আর অদিতির দাম্পত্য কেমন? প্রেমের রসায়নে কতটা ‘রোম্যান্স’ আর কতটা ‘পলিটিক্স’!
মিষ্টি হাসি, লক্ষ্মী ঠাকুরের মতো ছোটখাটো চেহারার অদিতিকে বাংলা চিনেছে কীর্তনের সুরে। ২০১৮ সালে সেই অদিতির সঙ্গে দেবরাজের বিয়ে হয়।
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতাশেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:৪০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৪
তিনি বিধাননগর পুরসভার দীর্ঘ দিনের কাউন্সিলর। অধুনা মেয়র পারিষদও। ঘাম-রক্ত ঝরিয়ে নিজের জায়গা তৈরি করেছেন বলে মনে করেন তাঁরই দলের একাংশ।
০২২৪
যদিও কেউ কেউ ভাবেন, তৃণমূল কাউন্সিলর দেবরাজ চক্রবর্তীর মাথায় হাত রেখেছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যাঁর হাত ধরে তৃণমূলে দেবরাজ দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেছিলেন ।
০৩২৪
তবে এ সব তো তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়। গোটা বাংলা দেবরাজকে চেনে অন্য এক পরিচয়ে। বাংলার আমজনতার কাছে তিনি কীর্তনশিল্পী অদিতি মুন্সীর স্বামী।
০৪২৪
মিষ্টি হাসি, লক্ষ্মী ঠাকুরের মতো ছোটখাটো চেহারার অদিতিকে বাংলা চিনেছে কীর্তনের সুরে। ২০১৮ সালে সেই অদিতির সঙ্গে দেবরাজের বিয়ে হয়।
০৫২৪
প্রচারের আড়ালে থেকে দলের সংগঠনের মেরুদণ্ড শক্ত করায় বিশ্বাসী দেবরাজের নাম আজ জানে বাঙালি। অদিতি আগেই পৌঁছে গিয়েছেন বাংলার ঘরে ঘরে। তাঁর স্বর মন ছুঁয়েছে আপামর বাঙালির।
দেবরাজ কে? এই প্রশ্নই বাংলার সাধারণ মানুষ প্রথম জানতে চেয়েছিল অদিতির সঙ্গে বিয়ের খবর প্রকাশ্যে আসার পর। তার পর যদিও তাঁর কাজের কথা জেনেছেন আগ্রহীরা।
০৮২৪
জেনেছেন, আড়ালে থাকলেও দেবরাজ আসলে রাজ্যের শাসকদলের এক জন ‘দাপুটে’ নেতা। রাজনীতিতে নিজের জায়গা করে নিতে জেলও খাটতে হয়েছে তাঁকে।
০৯২৪
যুব তৃণমূলের নেতা হিসাবে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন। উত্তর ২৪ পরগনার জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতিও ছিলেন। পরে রাজারহাট-গোপালপুরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দুর আপ্তসহায়ক হিসাবেও কাজ করেন।
১০২৪
তৎকালীন মন্ত্রী পূর্ণেন্দুকে জেঠু বলে ডাকতেন দেবরাজ। সেই পূর্ণেন্দুর কাছেই ২০১৩ সালে বিধাননগর পুরসভার উপনির্বাচনের টিকিটের দরবার করেছিলেন, পাননি। ২০১৫ সালেও তাঁর একই অনুরোধ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন পূর্ণেন্দু।
১১২৪
বিধাননগরে ভোটে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে তৎকালীন মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু ও তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেনের সঙ্গে চরমে উঠেছিল দেবরাজের বিবাদ। শোনা গিয়েছিল, সেই বিবাদের জেরেই তৃণমূলের টিকিট পাননি তিনি।
১২২৪
এর পরে তৃণমূল ছাড়ার সিদ্ধান্ত। ২০১৫ সালে কংগ্রেসের হাত ধরেন দেবরাজ। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর হাত থেকে দেবরাজ তুলে নেন কংগ্রেসের পতাকা। বিধাননগর পুরনিগম এলাকার ৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কংগ্রেসের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি।
১৩২৪
যদিও সেই সিদ্ধান্তের জন্য খেসারতও কম দিতে হয়নি দেবরাজকে। ভোটের দিন তাঁকে মারধর করে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। রাতে ছেড়ে দিয়ে আবার পরের দিন দক্ষিণ দমদমের এক তৃণমূল কাউন্সিলরকে মারধরের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় দেবরাজকে।
১৪২৪
শোনা যায়, থানায় বসেই দেবরাজ এসএমএস পাঠিয়েছিলেন পূর্ণেন্দুকে— ‘জেঠু, আমি অ্যারেস্ট হলাম। ভুল কিছু করিনি। তা-ও হলাম। প্রেসকে সব বলব তোমার আর দোলাদির ব্যাপারে। এত নীচে নামবে আমি জানতাম না। থ্যাঙ্ক ইউ।’
১৫২৪
শেষ পর্যন্ত অবশ্য সংবাদমাধ্যমকে কিছু বলেননি দেবরাজ। তাঁর হয়ে বলেছিল তাঁর ভোটের ফল। ৩১২ নম্বর ভোটে জিতেছিলেন বিধাননগর পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে। জামিনে মুক্ত হয়ে কংগ্রেসের কাউন্সিলর হিসাবে শপথ নেন।
১৬২৪
তবে কয়েক মাসের মধ্যেই ‘হাত’ ছেড়ে ফের ঘরের ছেলে ফিরে আসেন ঘরে। তৃণমূলে ভবনে এসে তৃণমূলের তৎকালীন যুব সভাপতি অভিষেকের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘাসফুলের পতাকা হাতে তুলে নেন।
১৭২৪
কয়েক মাসের মধ্যেই অভিষেকের ‘অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত হন দেবরাজ। ধীরে ধীরে রাজনীতির ময়দানে নিজের জায়গা পাকা করেন। বিধাননগর তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলার এক জন ‘দাপুটে’ নেতা হিসাবেও পরিচিত হন।
১৮২৪
এর কিছু দিন পরেই ২০১৮ সালে অদিতির সঙ্গে বিয়ে। জ্যাংড়া এলাকার বাসিন্দা দেবরাজ। অদিতি থাকতেন বাগুইআটিতে। কাছাকাছি এলাকা। কিন্তু বিয়ের আগে দেখা হলেও সে ভাবে আলাপ হয়নি। বাড়ি থেকে দেখাশোনা করেই বিয়ে। এখন অবশ্য সেই অদিতি বিধায়ক।
ঘটনাচক্রে যে পূর্ণেন্দু এক সময়ে দেবরাজকে টিকিট দিতে চাননি, সেই পূর্ণেন্দুকেই সরিয়ে দেবরাজের স্ত্রীকে টিকিট দেয় তৃণমূল। নিন্দকেরা বলেন, দেবরাজই স্ত্রীর জন্য আর্জি জানিয়েছিলেন দলের কাছে। কিন্তু নিন্দকদের মুখ কবেই বা বন্ধ করা গিয়েছে!
২১২৪
কাট টু ২০২৩-এর নভেম্বর মাসের শেষ দিনের সকাল। রাজারহাটের বাড়ি থেকে কাজে বেরিয়েছিলেন দেবরাজ। সাধারণ পোশাক। ৯টা ৪০ নাগাদ বাড়ির সামনে আসতেই চমক। তাঁকে রাস্তা থেকেই টেনে আনল সিবিআই। বাড়িতে তল্লাশি চালাল সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে।
২২২৪
অদিতি বাড়ি ছিলেন কি না জানা নেই। তাঁকে দেখা যায়নি। তবে বৃহস্পতিবার সকালে অন্য দিনের মতো বিধানসভার করিডোরে শাড়ি পরা ছোটখাটো চেহারার লক্ষ্মী ঠাকুরের মতো মেয়েটিকে মিষ্টি হেসে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। দল নিয়মিত আসার ফরমান জারি করেছে। সেই ফরমান না থাকলেও নিয়মিত বিধানসভায় আসেন রাজারহাট-গোপালপুরের বিধায়ক। বৃহস্পতিবার আসেননি।
২৩২৪
আসবেনই বা কী করে? স্বামী দেবরাজের সঙ্গে দিনভর জুড়েছিল সিবিআই। তাঁর নিজের গানের স্টুডিয়োতেও তল্লাশি চালিয়েছে দেবরাজকে সঙ্গে নিয়ে। এই অবস্থায় কাজে যাওয়া কি সম্ভব!
২৪২৪
সম্ভব নয়, কারণ স্টেজে যতই কীর্তনের সুরে তিনি শান্তি দিন শ্রোতাদের, তাঁর নিজের জীবনে সেই শান্তির সুরে বার বার মিলে যায় রাজনীতি। তবু কীর্তন আর রাজনীতির সুর মিলে তৈরি হয় অন্য রকম রোম্যান্স।