Advertisement
০৭ এপ্রিল ২০২৫
F-35 vs SU-57

মার্কিন এফ ৩৫-এর হয়ে বিজ্ঞাপনে ইহুদিরা, কড়া টক্কর রুশ এসইউ ৫৭-এর, কার প্রেমে মজবে দিল্লি?

আমেরিকার এফ-৩৫ লাইটনিং টু না কি রাশিয়ার এসইউ-৫৭ ফেলন, শেষ পর্যন্ত কোন মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান কেনার দিকে নয়াদিল্লি ঝুঁকবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের লড়াকু জেট নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করলেন নয়াদিল্লির ইজ়রায়েলি রাষ্ট্রদূত।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৫ ১৪:৪০
Share: Save:
০১ ২০
F-35 vs SU-57

লড়াইয়ের রং বদলাতে চাই পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান। চোখের সামনে রয়েছে দু’টি বিকল্প। আমেরিকা না রাশিয়া, শেষ পর্যন্ত কোন দেশের লড়াকু বিমান ভারতীয় বায়ুবীরদের হাতে তুলে দেবে কেন্দ্র? বেঙ্গালুরুর ‘অ্যারো ইন্ডিয়া শো’ শেষ হতেই এই নিয়েই তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ব্যাপারে মুখে রা কাড়েনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।

০২ ২০
F-35 vs SU-57

যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-৩৫ লাইটনিং টু এবং রুশ নির্মিত এসইউ-৫৭ ফেলন। বর্তমানে পঞ্চম প্রজন্মের এই দুই যুদ্ধবিমানকে পাখির চোখ করেছে ভারতীয় বায়ুসেনা। সূত্রের খবর, লড়াকু জেটের স্বল্পতা মেটাতে দু’টির মধ্যে যে কোনও একটিকে বেছে নেবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। তার পরই এগুলি কিনতে মস্কো বা ওয়াশিংটনের সঙ্গে চুক্তি সারবে নয়াদিল্লি।

০৩ ২০
F-35 vs SU-57

এই আবহে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছে ইজ়রায়েল। ভারতের অবশ্যই আমেরিকার তৈরি এফ-৩৫ লাইটনিং টু কেনা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন নয়াদিল্লির ইহুদি রাজদূত রুভেন আজ়ার।

০৪ ২০
F-35 vs SU-57

আজ়ার বলেছেন, ‘‘যুদ্ধবিমান কেনার ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত কী কী সুবিধা মিলছে, সে দিকে নজর রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমি বলব, নয়াদিল্লির এফ-৩৫ বেছে নেওয়া উচিত। আমাদের কাছে এই লড়াকু জেটের কয়েকটি স্কোয়াড্রন রয়েছে। এগুলি আমাদের আকাশকে নিরাপত্তা দিচ্ছে। পশ্চিম এশিয়ায় আকাশের যুদ্ধে আমরা সব সময়ে এগিয়ে থেকেছি। এর অন্যতম প্রধান কারণ হল এফ-৩৫।’’

০৫ ২০
F-35 vs SU-57

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের অবশ্য দাবি, ইজ়রায়েলি রাষ্ট্রদূতের এ হেন মন্তব্যের নেপথ্যে রয়েছে একাধিক কারণ। প্রথমত, এফ ৩৫-এর নির্মাণকারী সংস্থা লকহিড মার্টিনের শেয়ারে বিপুল লগ্নি রয়েছে ইহুদি শিল্পপতি এবং ধনকুবেরদের। দ্বিতীয়ত, ভারতীয় বায়ুসেনার সঙ্গে সখ্য বাড়াতে চাইছে ইজ়রায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ)। সে ক্ষেত্রে দুই বাহিনীর একই ধরনের যুদ্ধবিমান হলে মহড়া বা লড়াইয়ের সময়ে যোগাযোগ রেখে হামলা চালাতে সুবিধা হবে তাঁদের।

০৬ ২০
F-35 vs SU-57

এ ছাড়া আরও একটি কারণ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পাশে দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে এফ-৩৫ বিক্রির কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইজ়রায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অত্যন্ত ভাল। সেই বন্ধনকে আরও মজবুত করতে লড়াকু জেটটি নিয়ে আমেরিকার হয়ে আগাম বিজ্ঞাপন চালাচ্ছে পশ্চিম এশিয়ার ইহুদি রাষ্ট্র।

০৭ ২০
F-35 vs SU-57

এখন প্রশ্ন হল, দু’টির মধ্যে কোন যুদ্ধবিমান হতে চলেছে ভারতীয় বায়ুসেনার প্রথম পছন্দ? বিশেষজ্ঞদের কথায়, সে ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে নিজেদের সর্বশেষ মতামত জানাবেন বায়ুসেনার পদস্থ কর্তারা। দীর্ঘমেয়াদি প্রযুক্তিগত সমস্যার দিকটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তাভাবনা করতে হবে তাঁদের।

০৮ ২০
F-35 vs SU-57

২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ঘরের মাটিতে উন্নত হাতিয়ার তৈরির উপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফলে বর্তমানে বিদেশ থেকে অস্ত্র আমদানির ক্ষেত্রে প্রযুক্তি হস্তান্তরের শর্ত রাখছে কেন্দ্র। আর সেই নিরিখে রুশ ‘এসইউ-৫৭ ফেলন’-এর পাল্লা সামান্য ভারী বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা।

০৯ ২০
F-35 vs SU-57

এসইউ-৫৭র মূল নির্মাণকারী সংস্থা হল ‘ইউনাইটেড এয়ারক্র্যাফ্‌ট কর্পোরেশন’। তবে স্টেলথ ক্যাটেগরির দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট এই যুদ্ধবিমানের নকশা তৈরি করেছে বিখ্যাত রুশ লড়াকু বিমান কোম্পানি ‘সুখোই’। ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে এই যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে আসছে রুশ বায়ুসেনা।

১০ ২০
F-35 vs SU-57

স্টেলথ ক্যাটেগরির হওয়ায় এসইউ-৫৭কে রাডারে চিহ্নিত করা বেশ কঠিন। মাঝ আকাশে অন্য লড়াকু বিমানের সঙ্গে ‘ডগফাইট’ হোক বা আকাশপথে আক্রমণ শানিয়ে মাটিতে থাকা শত্রুঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া, সবেতেই এই যুদ্ধবিমানের জুড়ি মেলা ভার। এ ছাড়া ‘ইলেকট্রনিক যুদ্ধ’-এর সুবিধাও পাবেন এসইউ ৫৭-এর যোদ্ধা পাইলট।

১১ ২০
F-35 vs SU-57

ভারতীয় বায়ুসেনা দীর্ঘ দিন ধরেই এই সংস্থার তৈরি এসইউ-৩০এমকেআই নামের যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে আসছে। এক কথায়, সুখোইয়ের সঙ্গে এ দেশের বিমানবাহিনীর আত্মার সম্পর্ক রয়েছে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের কথায়, এসইউ-৫৭ থেকে রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি নানা মারণাস্ত্র ব্যবহারের সুযোগ থাকছে। এর মধ্যে অন্যতম হল ‘ব্রহ্মস’ এবং প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ‘ডিআরডিও’-র তৈরি ‘অস্ত্র’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র।

১২ ২০
F-35 vs SU-57

অন্য দিকে পঞ্চম প্রজন্মের এফ-৩৫ এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট যুদ্ধবিমান। আক্রমণের পাশাপাশি ইলেকট্রনিক যুদ্ধ থেকে শুরু করে নজরদারি— একাধিক কাজে একে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। ছোট রানওয়ে দিয়ে দিব্যি একে আকাশে ওড়ানো যায়। এতে রয়েছে ভার্টিক্যাল ল্যান্ডিং বা উল্লম্ব ভাবে নীচে নেমে আসার সুবিধা। অর্থাৎ, রানওয়ে ছাড়াই লড়াকু বিমানটিকে মাটিতে নামাতে পারবেন পাইলট।

১৩ ২০
F-35 vs SU-57

আকারের নিরিখে এফ ৩৫-এর থেকে এসইউ-৫৭ কিছুটা বড়। রুশ লড়াকু বিমানটির গতিবেগ বেশি। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২,৬০০ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারে এসইউ-৫৭। অন্য দিকে এফ ৩৫-এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ১,৯৩০ কিলোমিটার/ঘণ্টা। পাল্লার দিক থেকেও কিছুটা এগিয়ে রয়েছে এসইউ-৫৭। প্রায় ৩,৫০০ কিলোমিটার দূরের শত্রুঘাঁটি ধ্বংস করতে সক্ষম এই রুশ যুদ্ধবিমান। আর এফ ৩৫-এর পাল্লা ২,৮০০ কিলোমিটার।

১৪ ২০
F-35 vs SU-57

কিন্তু স্টেলথ ক্যাটেগরির নিরিখে এফ ৩৫কে বেশি নম্বর দিয়েছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা। মার্কিন জেটটিকে রাডারে চিহ্নিত করা প্রায় অসম্ভব। শুধু তা-ই নয়, হামলার সময় এফ-৩৫ থেকেই শত্রুর রাডারকে জ্যাম করতে পারবেন এর পাইলট। মাঝ আকাশে ডগফাইটে আবার এগিয়ে এসইউ-৫৭। অতি ক্ষিপ্রতায় ডিগবাজি খেতে পারে এই রুশ যুদ্ধবিমান।

১৫ ২০
F-35 vs SU-57

এফ ৩৫-এর দাম ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ এসইউ-৫৭-এর থেকে সামান্য বেশি। নিজেদের বিমানের প্রযুক্তি হস্তান্তরে রাজি নয় আমেরিকা। অন্য দিকে প্রযুক্তি হস্তান্তরের ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছে মস্কো। এসইউ-৫৭ যুদ্ধবিমান ভারতের মাটিতে তৈরি হলেও আপত্তি নেই, জানিয়ে দিয়েছে ক্রেমলিন।

১৬ ২০
F-35 vs SU-57

এখনও পর্যন্ত ৯০০-র বেশি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান তৈরি করেছে আমেরিকা। সেখানে মেরেকেটে ২০ থেকে ২৫টি এসইউ-৫৭ লড়াকু জেট নির্মাণ করতে পেরেছে রাশিয়া। গত তিন বছর ধরে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে রয়েছে মস্কো। ভারতীয় বায়ুসেনা এসইউ-৫৭ পছন্দ করলে এর সরবরাহের ক্ষেত্রে দেরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে এফ-৩৫ আরও আগে হাতে পাবে নয়াদিল্লি।

১৭ ২০
F-35 vs SU-57

দু’টি লড়াকু বিমানের ক্ষেত্রেই দাম নিয়ে কোনও চূড়ান্ত কথাবার্তা হয়নি। সূত্রের খবর, রাশিয়ার তরফে ‘এসইউ ৫৭’-এর দাম কমানোর প্রস্তাব পেয়েছে নয়াদিল্লি। অন্য দিকে সরসারি না-হলেও ঘুরপথে একই রকমের প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে ওয়াশিংটনও।

১৮ ২০
F-35 vs SU-57

গত কয়েক বছরে দু’টি যুদ্ধবিমানই লড়াইয়ের ময়দানে তাদের শক্তি দেখিয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধে এসইউ-৫৭ লড়াকু জেট থেকে হাইপারসোনিক (শব্দের পাঁচ গুণের বেশি গতিশীল) ক্ষেপণাস্ত্র চালায় রুশ বায়ুসেনা। আর পশ্চিম এশিয়ায় ইরান দুই সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও হিজ়বুল্লাহর কোমর ভাঙতে বার বার শোনা গিয়েছে আইডিএফের ওড়ানো এফ ৩৫-এর গর্জন।

১৯ ২০
F-35 vs SU-57

বর্তমানে পর্যাপ্ত যুদ্ধবিমানের অভাবে ভুগছে ভারতীয় বায়ুসেনা। এই পরিস্থিতিতে এফ-৩৫ লাইটনিং টু এবং এসইউ ৫৭ ফেলন-এর মধ্যে কোনটিকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত প্রতিরক্ষা চুক্তি হয়, সে দিকে তাকিয়ে রয়েছে গোটা দেশ। সম্প্রতি সেনার আধুনিকীকরণে ব্যয়বরাদ্দ বাড়িয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ফলে বাজেট বাড়িয়ে দু’টি বিমানই কেনার দিকে ঝুঁকতে পারে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।

২০ ২০
F-35 vs SU-57

এ বছর ভারত সফরে আসবেন রুশ প্রেসিডেন্ট রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আবার ‘কোয়াড’ বৈঠকে যোগ দিতে পা রাখবেন দিল্লিতে। তাঁরা এ দেশে এলে যুদ্ধবিমান সংক্রান্ত প্রতিরক্ষা চুক্তি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী করবেন বলেও মনে করা হচ্ছে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy