Indian Prime Minister Narendra Modi to visit Russia after five years dgtl
US India Relationship
আমেরিকার চাপের কাছে মাথা নত না করে ওয়াশিংটনের ‘শত্রু দেশে’ সফর ঘোষণা মোদীর! কী চাইছে নয়াদিল্লি?
খলিস্তানপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা গুরপতবন্ত সিংহ পন্নুনের ঘটনায় আমেরিকা এবং ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বিতর্কের আঁচ লেগেছে। এ নিয়ে ভারতের উপর লাগাতার চাপ বৃদ্ধি করছিল আমেরিকা।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪ ০৮:০২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
খলিস্তানপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা গুরপতবন্ত সিংহ পন্নুনের ঘটনায় আমেরিকা এবং ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কিছুটা বিতর্কের আঁচ লেগেছে। পন্নুনকে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। তাতে ভারতের দিকেই আঙুল তুলেছিল ওয়াশিংটন।
০২২২
খলিস্তান বিতর্কে ইতিমধ্যে আমেরিকার পড়শি কানাডার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। সেখানে আর এক খলিস্তানপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হরদীপ সিংহ নিজ্জর খুন হয়েছেন। সেই ঘটনায় ভারতের হাত রয়েছে বলে সরাসরি অভিযোগ করেছিল কানাডা।
০৩২২
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সেই মন্তব্য নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল, নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ভারতকে এ ভাবে ব্যবহার করছেন ট্রুডো। তাঁর এই আচরণের নিন্দাও করা হয়েছিল।
০৪২২
ভারত-কানাডা তিক্ততার মাঝে আমেরিকাতেও নতুন করে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে খলিস্তানি বিতর্ক, যার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে পড়ে ভারতও। পন্নুনকে হত্যা করা হয়নি। তবে তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা কারা করেছিল, তার তদন্ত করছে আমেরিকার পুলিশ।
০৫২২
পন্নুন মামলায় ইতিমধ্যে এক ভারতীয় নাগরিককে গ্রেফতার করেছে আমেরিকার পুলিশ। চেক প্রজাতন্ত্রের জেলে বন্দি ছিলেন সেই অভিযুক্ত নিখিল গুপ্ত। আমেরিকার অনুরোধে চেক প্রশাসন তাঁকে তুলে দিয়েছে ওয়াশিংটনের হাতে। অভিযোগ, তিনি পন্নুন হত্যার চেষ্টার চক্রান্তের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন।
০৬২২
এই পরিস্থিতিতে আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সালিভান দু’দিনের সফরে ভারতে এসেছিলেন। বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে।
০৭২২
পন্নুন মামলার চার্জশিটে আমেরিকার তদন্তকারীরা ভারত সরকারের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিকের কথাও উল্লেখ করেছেন বলে খবর। তবে তাঁর নাম নেওয়া হয়নি। চার্জশিটে তাঁকে সিসি-১ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
০৮২২
মনে করা হচ্ছিল, পন্নুন মামলা নিয়ে ভারতের উপর লাগাতার চাপ বৃদ্ধি করছে আমেরিকা। সিসি-১ কে, তাঁর পরিচয় কী, একাধিক প্রশ্নের উত্তর প্রকাশ্যে না এনে তারা নয়াদিল্লিকে চাপে রাখতে চাইছে।
০৯২২
বিশেষজ্ঞদের অনেকের মতে, এই পরিস্থিতিতে আমেরিকার চাপের কাছে মাথা নত না করে পাল্টা ‘আক্রমণাত্মক খেলার’ পথে হাঁটতে চলেছে ভারত। তার ইঙ্গিত মিলেছে নয়াদিল্লির নতুন ঘোষণায়।
১০২২
আমেরিকার ‘শত্রু’ দেশ রাশিয়ায় সফর ঘোষণা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২০১৯ সালে শেষ বার ওই দেশে গিয়েছিলেন মোদী। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। পাঁচ বছর পর আবার সেই বৈঠক হবে।
১১২২
সূত্রের খবর, আগামী ৮ জুলাই রাশিয়ায় যাবেন মোদী। সেখানে পুতিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে তাঁর। গত পাঁচ বছর ধরে যে বৈঠক থমকে রয়েছে, আবার নতুন করে তা চালু করতে চলেছে নয়াদিল্লি।
১২২২
২০০০ সালে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের একটি চুক্তি হয়েছিল। তাতে ঠিক হয়েছিল যে, প্রতি বছর দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা এক বার করে দেখা করবেন এবং দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। ২০১৯ সাল পর্যন্ত চুক্তি অনুযায়ী বৈঠক হয়েছে।
১৩২২
পালা করে প্রতি বছর ভারত এবং রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান একে অপরের দেশে গিয়েছেন। এক বছর মোদী রাশিয়ায় গেলে পরের বছর ভারতে এসেছেন পুতিন। ২০১৯ সালে মোদী রাশিয়া সফরে গিয়েছিলেন। তার পর ২০২০ সালে কোভিড অতিমারি শুরু হয়।
১৪২২
কোভিডের কারণে ২০২০ সালে ভারত-রাশিয়ার বার্ষিক বৈঠক বন্ধ ছিল। ২০২১ সালে ভারতে এসেছিলেন পুতিন। কিন্তু তার পর থেকে নানা কারণে এই বৈঠক বন্ধ থেকেছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ভারতের উপর পশ্চিমের চাপও ছিল বলে মনে করেন অনেকে।
১৫২২
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পুতিনের উপর সম্মিলিত চাপ বৃদ্ধি করে পশ্চিমি দুনিয়া। একাধিক বাণিজ্যিক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। সে সময়ে ভারত কিন্তু সরাসরি রাশিয়ার বিরুদ্ধে কথা বলেনি।
১৬২২
ভারত এ ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করে চলে। সরাসরি রাশিয়ার বিরোধিতা না করলেও তাই দিল্লিকে বার্ষিক বৈঠক থামিয়ে দিতে হয়েছিল বলে বিশেষজ্ঞদের মত। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এই সময়ে কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে গিয়েছে ভারত। পশ্চিমি বিধি উড়িয়ে তেল কেনা হয়েছে পুতিনের দেশ থেকেই।
১৭২২
ফলে ভারত এবং রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কোনও সময়েই নড়বড়ে হয়নি। যুদ্ধের আবহে রাষ্ট্রপ্রধানদের বার্ষিক বৈঠক বন্ধ থাকলেও আবার তা চালু হতে চলেছে ভারতের হাত ধরেই।
১৮২২
বিশেষজ্ঞেরা অনেকে বলছেন, পন্নুনকাণ্ডের আবহে আমেরিকা যখন ভারতকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে, তখন সেই চাপে পিছু হটতে চাইছে না নয়াদিল্লি। বরং মোদীর রাশিয়া সফর পাল্টা চাপে রাখবে আমেরিকাকে।
১৯২২
মোদীর রাশিয়ায় যাওয়া এবং পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্তে যেন আমেরিকাকেই নীরবে কোনও বার্তা দিতে চাইল নয়াদিল্লি। ভারতের নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক নীতির পক্ষেই তা সম্ভব হয়েছে।
২০২২
ভারত তৃতীয় বিশ্বের দেশ হলেও ভারত মহাসাগরীয় এলাকা এবং ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। আমেরিকা এবং রাশিয়া উভয়ের কাছেই ভারতের গুরুত্ব রয়েছে। ভারতের সমর্থন উভয়েরই প্রয়োজন।
২১২২
সাম্প্রতিক অতীতে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতি হিসাবে উঠে এসেছে ভারত। এই মুহূর্তে অর্থনীতির দিক থেকে তারা পঞ্চম স্থানে রয়েছে। ভারতের সামনে রয়েছে আমেরিকা, চিন, জার্মানি এবং জাপান।
২২২২
পরিসংখ্যান বলছে, চলতি অর্থবর্ষের শেষে অর্থনীতির দিক থেকে জাপানকেও টপকে যেতে চলেছে ভারত। ফলে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও ভারতের গুরুত্ব বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত প্রসঙ্গে আমেরিকার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হয়, সেটাই দেখার।