পঞ্চম ওভারের শেষ বল যেন পুরনো কোহলির ঝলক পাওয়া গেল। নাসিমের ১৪৪ কিমি প্রতি ঘণ্টার বলটি কোনও ভাবেই হাফ ভলি ছিল না। শরীর আর পায়ের চেয়ে অনেকটা দূরে তখনও বল। কোহলির ব্যাট এগিয়ে গেল সে দিকেই। ক্রিকেটীয় পরিভাষায় ‘অন দ্য রাইজ়’ কভার ড্রাইভ করলেন কোহলি। ব্যাটের মোক্ষম জায়গায় বল লাগতেই তার আর কূলকিনারা পাওয়া যায়নি। বাউন্ডারি। কোহলির পক্ষেই সম্ভব।
কোহলি ফিরতে মাঠে নামেন শ্রেয়স আইয়ার। পাকিস্তানের জোরে বোলাররা যখন আগুন ঝরাচ্ছেন, তখন এই পিচে ব্যাট করা সহজ নয়। সে কথা শ্রেয়স বোঝেনও ভাল মতো। নবম ওভারের শেষ বলটি শর্ট রেখেছিলেন হ্যারিস রউফ। পুল করতে গিয়ে শ্রেয়স মিড উইকেটে দাঁড়িয়ে থাকা ফখর জ়ামানের হাতে বল জমা দিয়ে ফেললেন। ৯ বলে ১৪ রান করে ফিরলেন শ্রেয়স।
সামান্য হলেও ধারাবাহিকতা দেখা যাচ্ছিল শুভমন গিলের খেলায়। অযথা তাড়াহুড়ো নেই। বলের মান মেপে খেলার চেষ্টা। রউফের ১৪৭ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টার বলটি অফ স্টাম্পের সামান্য বাইরে পড়ে আরও বাইরের দিকে যাচ্ছিল। পা এগিয়ে বলটি ঠেকাতে চেয়েছিলেন গিল। কিন্তু ব্যাটের ভিতরের অংশে লেগে বল উইকেট ভেঙে দেয়। গিল টিকে ছিলেন বটে কিন্তু কখনওই তাঁকে স্বস্তিতে লাগেনি।
ভারতীয় ব্যাটিংয়ের প্রথম পর্ব যদি হয় প্রথম ২০ ওভার। তা হলে দ্বিতীয় পর্বে খানিক হলেও খেলা ধরে ভারত। সৌজন্যে বাঁহাতি ঈশান কিশন এবং ডানহাতি হার্দিক পাণ্ড্য। খেলা যত গড়াল, জোরে বোলারদের বিষ ততই পাল্লা দিয়ে কমল। পাকিস্তান দলে সাকলিন মুস্তাকের মানের স্পিনার নেই। ফলে শুধুমাত্র স্পিনারদের দিয়ে ভারতের মিডল অর্ডারকে শাসন করা এই পাকিস্তানের পক্ষে সম্ভব না।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছিলেন ছক্কা মেরে। ভারতের নতুন প্রজন্মের অন্যতম প্রতিশ্রুতিবান তারকাদের মধ্যে অন্যতম ঈশান। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মহা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেও রাখলেন পরিণত ভাবনাচিন্তার ছাপ। স্পিনারদের রেয়াত করলেন না। জোরে বোলারদেরও পাল্টা আক্রমণে গেলেন। তবে তাড়াহুড়ো করলেন না। ফলও পেলেন হাতেনাতে।
ঈশান পাশে পেলেন বহু যুদ্ধের পোড়খাওয়া হার্দিককে। দল যখন চাপে, তখন হার্দিকের উপর সকলের নজর ছিল। হার্দিক দেখালেন, তিনিই পারেন। খেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাঝের ওভারগুলিতে ঈশানকে আগলে রাখলেন। খুচরো রান নিয়ে স্কোরবোর্ড সচল রাখলেন। এ ভাবে পঞ্চাশ পেরিয়ে গেলেন অনায়াসে। কোনও ঝুঁকি না নিয়ে কী করে দলের রানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, তার নিদর্শন রাখলেন গুজরাতকে আইপিএল দেওয়া অধিনায়ক।
হার্দিক জানতেন, বল নরম হলেই পাক জোরে বোলারদের জারিজুরি খতম। সে জন্য ধৈর্য ধরে রাখছিলেন। বল খেলছিলেন মাথার নীচে। বাইরের বল তাড়া করতে দেখা গেল না এক বারও। এই হার্দিক দিনকে দিন মিডল অর্ডারের কোহিনূর হয়ে উঠছেন। অনেকেই বলে থাকেন, যুবরাজের আগ্রাসী ভাব আর ধোনির মস্তিষ্ক— এই দুইয়ের অনবদ্য মিশেল রয়েছে হার্দিকের মধ্যে। চাপের ম্যাচে তা আবার করে দেখালেন হার্দিক।
ভারতের রান রেট ক্রমশ চড়ছে দেখে পাক অধিনায়ক বাবর আজ়ম রউফকে ফিরিয়ে আনেন। ৩৭তম ওভারে ব্যাক অফ লেংথ বলে সপাটে পুল করেন ঈশান। ব্যাটের তলার দিকে লেগে বল সোজা উঠে যায় উপরে। আজ়ম সেই ক্যাচ ফস্কাননি। চাপের মুখে দাঁড়িয়ে ঈশানের দুর্দান্ত ইনিংস ভরসা জোগায়। ফেরার সময় বাঁহাতি ব্যাটারের সংগ্রহ ৮২ রান। খেলেছেন ৮১টি বল।
মাঝের ওভারগুলিতে দুরন্ত খেলে আপাত কঠিন হয়ে ওঠা ম্যাচ তুলনামূলক সহজ হয়ে গিয়েছে। এ বার শেষ ১০ ওভারের চ্যালেঞ্জ। ক্রিজে হার্দিকের সঙ্গে রবীন্দ্র জাডেজা। ৪০তম ওভারে হার্দিক রউফকে প্রথম বলে যে ঝোড়ো স্ল্যাশ করলেন তাতে জোরের চেয়ে বেশি ছিল অদম্য জেদ। খেলা হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রমাদ গুনছিলেন সম্ভবত বাবর।
শেষ চেষ্টা করতেই হত বাবরকে। নিয়ে এলেন শাহিনকে। আর এসেই বাজিমাত! হার্দিককে একটি নির্বিষ স্লোয়ার বলে তুলে নিলেন শাহিন। অথচ বলে যে জুজু ছিল না, তা হার্দিকের চেয়ে ভাল বুঝবেন কে! সময়ের গোলমালে স্লোয়ারের বলি হয়ে গেলেন গোটা ইনিংস ধরে দলকে টানা হার্দিক। তার পর কেবলই উইকেট হারানোর বৃত্তান্ত। ভারত ৫০ ওভার পুরো খেলতে পারেনি। পাকিস্তানকে জিততে গেলে করতে হবে ২৬৭ রান। শেষরক্ষা হবে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy